Tuesday, June 7, 2022

দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট

Is starvation a performing art? এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক বহুযুগ ধরে চলে আসছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক অবধি 'হাঙ্গার আর্টিস্ট'রা পারফর্মার-ই ছিলেন কারণ তারা টাকার বিনিময়ে মানুষের মনোরঞ্জন করতেন। কিন্তু তাদের মনোরঞ্জনের পদ্ধতিটি ছিল অভিনব। তারা খাঁচার মধ্যে একটি চেয়ারে বসে দীর্ঘদিন উপবাস করতেন এবং সেটি দেখতে দর্শকরা টাকা খরচ করে ভিড় জমাতেন। এমনকি রাতেও দর্শক সমাগম হতো। ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে এই অ্যাক্ট খুবই জনপ্রিয় ছিল। যত বেশিদিন একটানা উপোষ (৪০ দিনের বেশি নয় যদিও) করে থাকতে পারবে, তত বেশি ভিড় ও টাকা। এই হাঙ্গার আর্টিস্টদের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছিলাম ফ্রানৎজ কাফকা'র বিখ্যাত ছোটগল্প "আ হাঙ্গার আর্টিস্ট" - এর (১৯২২) মাধ্যমে। ১০০ বছর পর কাফকা'র এই বিখ্যাত ছোটগল্পটি অবলম্বনে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleswar Mukherjee) বানালেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের বাংলা চলচ্চিত্র "দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট"।

বর্তমান পুঁজিবাদ (capitalism) সর্বস্ব সমাজে বাজার অর্থনীতি (market economy) কিভাবে একজন শিল্পীর অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ (control) করে, সেটাই সিনেমাটির মূল বক্তব্য। ছবির মূল চরিত্র দুই তরুণ বন্ধু - ভূতো আর ঘনা। ভূতো রাজনৈতিক ভাবে সচেতন একজন তরুণ যে সমসাময়িক বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর খবরাখবর রাখে। বিশ্বের যে প্রান্তেই কোনো সন্ত্রাস বা অত্যাচারের ঘটনা ঘটুক না কেনো, ভূতো তার প্রতিবাদে অনশন করে এবং ভূতো বেশ কয়েকদিন না খেয়ে থাকতে পারে। ঘনা ভূতোর এই অনশন করার ক্ষমতাকে মূলধন (capital) করে মুনাফা (profit) করবে ঠিক করে এবং সেইমতো ভূতোকে ক্রমাগত বোঝাতে থাকে যে ঠিকমতো প্রচার ও প্রোপাগান্ডা পেলে অনশনও বাজারে বিক্রি হয়। আর সেটা করতে পারলে ভূতো সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে একজন শিল্পী হিসেবে - 'অনশন শিল্পী'! এই সমাজে সবাই চায় মনোযোগ পেতে - ভূতো ঘনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। ঘনা ভূতোকে নিয়ে শো আয়োজন করে এবং সেই শো চারদিকে শোরগোল ফেলে দেয়। প্রচারের সমস্ত আলো তখন ভূতোর ওপর। মূলস্রোত সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যমে তখন শুধুই চর্চার বিষয় ভূতোর অনশন শো। চারদিকে ভূতোকে নিয়ে বিজ্ঞাপন। একটি শো থেকে পরের শো তে ভূতোর অনশন করার দিন সংখ্যা বাড়তে থাকে - মিডিয়া আরো বেশি মাতামাতি করে। কর্পোরেট দুনিয়ার কর্তার চিন্তা "ভূতো ২% ভোট সুইং করাতে পারে!" ভূতো ততদিনে নিজেকে পুরোদস্তুর একজন শিল্পী অর্থাৎ 'অনশন শিল্পী' ভাবতে শুরু করে দিয়েছে এবং প্রচার মাধ্যমের আলোয় থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অনশনের ১৮ দিনের মাথায় যখন ভূতোর মা ভূতোর প্রিয় খাবার নাড়ু নিয়ে আসেন, ভূতো বলে সে "ভাবের ঘরে চুরি করতে পারবেনা " কারণ সে "একজন প্রকৃত শিল্পী"। ভূতোকে ভালোবেসে যখন এক মহিলা সাংবাদিক ভূতোকে নিজের কথা ভাবতে বলে, যখন ভূতোকে বলে যে "stop this madness", ভূতো তাকেও তাড়িয়ে দেয়। ভূতোর মাথায় তখন ২০ দিন না খেয়ে থাকার ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে প্রকৃত অনশন শিল্পী হওয়ার প্রবল বাসনা! দ্য আর্ট অব হাঙ্গারে ভূতো তখন মোহগ্রস্ত! কিন্তু বাজারের নিয়মেই ভূতোর শো তে দর্শক সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, মিডিয়া কভারেজ কমে আসে, বিজ্ঞাপনও কমতে থাকে - ফলে ঘনার মুনাফাও কমতে থাকে। ঘনা ভূতোকে বলে অনশন পাবলিক আর খাচ্ছে না! ঘনার মাথায় তখন নতুন কোন চমকের ভাবনা যা বাজারে খাবে! ঘনা একজন ঘুম শিল্পীর (slumber artist) খোঁজ পেয়ে যায় যে কোনোরকম মদ্যপান ছাড়াই ৭২ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকতে পারে। অতএব ভূতোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ভূতোর ওপর প্রচারের আলো আচমকাই নিভে যায়। শেষ দৃশ্যে ভূতোর হৃদয়বিদারক চিৎকার "লাইট, লাইট - আমি একজন প্রকৃত শিল্পী - আমি একজন প্রকৃত শিল্পী" বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে দেয়।

ভূতোর চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী অনবদ্য। ঘনার চরিত্রে বিশ্বনাথ বসু বেশ ভালো। সাংবাদিক চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা মন্ডল মনে দাগ কাটে। ১৮ মিনিটের একটু বেশি সময়ের "দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট" মাস দেড়েক আগে ইউটিউবে রিলিজ করেছে। ইতি মধ্যেই বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবে (international short film festival) ছবিটি দেখানোও হয়েছে। ধন্যবাদ কমলেশ্বর বাবু ও ফ্যাটফিশ এন্টারটেনমেন্ট কে এরকম একটি ছবি বানানোর জন্য। সিনেমাটি দেখবার ইউটিউব সংযোগসূত্রটি নিচে দেওয়া থাকলো।

https://youtu.be/05fbZhfIYtM

সুমন সিনহা 
০৭/০৬/২০২২



এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...