Showing posts with label প্রিয় বই / Favourite Books. Show all posts
Showing posts with label প্রিয় বই / Favourite Books. Show all posts

Wednesday, April 21, 2021

দূরবীন

প্রিয় বই নিয়ে লিখতে বসে একটা দোলাচলে ভুগছি। একটা বই নিয়ে লিখতে গেলে মনে হচ্ছে অন্যটার প্রতি অবিচার করছি। আজ যে বইটার কথা লিখতে ইচ্ছে করছে সেটা হল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দূরবীন। বিংশ শতাব্দীর দুইয়ের দশক থেকে আটের দশক পর্যন্ত সামাজিক ও মনষ্তাস্তিক পরিবর্তনের চালচিত্র কে তিনটি প্রজন্মের মাধ্যমে একটি নিপুণ শিল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

প্রথম প্রজন্মের নায়ক বিপত্নীক জমিদার হেমকান্ত। প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্না এক পুরোহিতকন্যা রঙ্গময়ীর সাথে হেমকান্তের গোপন প্রণয়কাহিনী দিয়ে প্রথম পর্যায় শুরু। রঙ্গময়ীর হেমকান্ত কে দায়িত্বশীল করে তোলার চেষ্টা, প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন হেমকান্তের পুত্র কৃষ্ণকান্তর প্রতি রঙ্গময়ীর অপার মাতৃস্নেহ, কৃষ্ণকান্তর উজ্জ্বল বাল্যকাল এসব নিয়ে প্রথম প্রজন্মের গল্পের শেষ।
দ্বিতীয় প্রজন্মের নায়ক কৃষ্ণকান্ত। সৌন্দর্য ও চারিত্রিক দৃঢ়তার সংমিশ্রনে এক অসামান্য চরিত্র কৃষ্ণকান্ত, যার অবস্থান পিতা হেমকান্তের বিপরীত মেরু তে। স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ কৃষ্ণকান্তের ব্রহ্মচর্য গ্রহণ ও দেশভাগের পর তার আমূল পরিবর্তন নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়।
তৃতীয় প্রজন্মের নায়ক ধ্রুব। বিংশ শতাব্দীর উপান্তপর্বে এক উদ্ধত ও বিদ্রোহী যুবক ধ্রুব যে বাবার মতই সুপুরুষ কিন্তু মনেপ্রাণে বাবা কে ঘৃণা করে। পিতার সাথে জড়িত সবকিছু থেকে সে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। অন্যদিকে পুত্র তাকে ন্যূনতম সম্মানটুকু না দিলেও পুত্রবধূ রেমির প্রতি কৃষ্ণকান্তর অগাধ বিশ্বাস। রেমির প্রতি ধ্রুবর বেহিসাবি, বেপরোয়া, বেলাগাম ও বদমেজাজী ভালোবাসা ও একই সাথে চূড়ান্ত উদাসীনতা ও উপেক্ষা এক গভীর মনষ্তাস্তিক ভাবনার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে রেমির ভালোবাসা কখনও ফুরায় না, 'মোমবাতির আলোর মতো ভদ্র ও হিম'। পিতার বিরুদ্ধে মারাত্মক রেবেলিয়াস ও ব্যক্তিজীবনে চুড়ান্ত উদাসীন ধ্রুব চরিত্রটির আকর্ষণ কাটানো খুব মুষ্কিল। আর আজ অকপটে স্বীকার করছি কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে বইটি পড়ার পর অনেকদিন ভেবেছি রেমির মতো কি কেউ আসবে আমার জীবনে! বইটি শেষ হচ্ছে ধ্রুবকে লেখা কৃষ্ণকান্তর একটি চিঠি দিয়ে। পুত্রকে লেখা পিতার ওই চিঠিটি একটি অমূল্য সাহিত্যিক সৃষ্টি যার জন্য বইটি একাধিকবার পড়া যায়। তিন প্রজন্মের এই কাহিনীর সাথে সাথে স্বদেশী আন্দোলন ও দেশভাগের উত্তাল সময়গুলো ফুটে উঠেছে দক্ষ হাতের ছোঁয়ায়।
শুধু দূরকেই কাছে আনে না, উল্টো করে ধরলে কাছের জিনিসও দূরে দেখায় দূরবীন! নামকরণের এই সূক্ষ্মতাও অনবদ্য।

সুমন সিনহা
০৩/০৯/২০২০

প্রথম আলো


কাল কিছু কাজ করতে গিয়ে আর লেখা হয় নি। আজ আমার প্রিয় বইয়ের কথা লিখতে গিয়ে যেটা মনে পড়ছে সেটা হল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম আলো। মূলতঃ ১৮৮৩ থেকে ১৯০৭ সাল অবধি এই উপন্যাসের সময়কাল। বাংলার একমাত্র স্বাধীন রাজ্য ত্রিপুরার মানিক্য রাজপরিবারের অন্দরমহল থেকে এই উপন্যাসের শুরু। তারপর বহমান নদীর মতো বইতে বইতে ঢুকে পড়েছে জোঁড়াসাকো ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে। বীরচন্দ্র মানিক্য, দেবেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, কাদম্বরী দেবী, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, জগদীশচন্দ্র বোস সহ অসংখ্য ঐতিহাসিক চরিত্র কে ইতিহাসের ধূলো থেকে উনি তুলে এনেছেন, যাঁদের অনেককেই আমরা 'বিস্মৃতি দিয়ে খতম' করেছি। সাথে সৃষ্টি করেছেন দুটি অসাধারণ কাল্পনিক চরিত্র ভরত ও ভূমিসূতা, যাদের মাধ্যমে উপন্যাসটি আবর্তিত। ইতিহাসের সাথে কল্পনার এই মিলনে যে মহৎ সৃষ্টি, তা অনন্য। সুখ, দুঃখ, অপমান, তাচ্ছিল্য, ঘৃণা, ক্রোধ, লালসা, বিরক্তি - এসব কে ছাড়িয়ে যে আবেদন বারবার নাড়া দিয়ে যায় তা হলো ভালোবাসা ও সত্য। দেশ নামের এক ভাবসত্তা আর পরাধীনতার গ্লানি - দুটোরই অনুভব এক নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটায়।
লেখক কে ধার নিয়ে বলি তীর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় কিছু টা পিছিয়ে আসে প্রথমে, নাহলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। আত্মবিস্মৃত বাঙালি জাতিকে এগিয়ে যেতে গেলে অতীত দর্শন করতেই হবে। সুনীল বাবু চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের সেই অতীত দেখিয়ে গেছেন। বর্তমানে দাঁড়িয়ে যদি সেই অতীতের দিকে পিছু ফিরে না তাকাই, ভবিষ্যৎ তার জবাব দেবে।


সুমন সিনহা     
০২/০৯/২০২০

Tuesday, April 20, 2021

পূর্ব পশ্চিম

আজ যে বইটার কথা লিখতে ইচ্ছে করছে সেটা হল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব পশ্চিম। বাঙালি জীবনের আধুনিক মহাকাব্য বলা যেতে পারে বইটিকে। এই ইতিহাস ভিত্তিক উপন্যাসটি আবর্তিত হয়েছে একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে দুই বাংলার নাগরিক জীবন, রাজনীতি, মুক্তি যুদ্ধ, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে। দেশবিভাগ প্রতিষ্ঠিত সত্য। বাঙালি জাতি দ্বিখন্ডিত হয়েছে কিন্তু পৃথক হয়ে যায়নি। এই কাহিনী কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার ইতিহাস দিয়ে শুরু হলেও সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ছড়িয়ে গেছে পূর্ব গোলার্ধ থেকে পশ্চিম গোলার্ধে। সব কিছুরই বোধহয় একটা পূর্ব - পশ্চিম আছে। এই পৃথিবী যেমন পূর্ব - পশ্চিমে বিভক্ত, সেরকম মানুষের মনেরও একটা পূর্ব - পশ্চিম (বৈপরীত্য) আছে। তার মর্মে প্রবেশ করেছে এই উপন্যাস। সভ্যতা এক সময় পূর্বে ধাবমান ছিল, তারপর একদিন পশ্চিমে বইতে শুরু করলো। পূর্ব - পশ্চিমের এই দ্বন্দ্বেই বোধহয় অতীনের পশ্চিমে যাওয়া বা অলিকে ছেড়ে যাওয়ার পাপবোধ বা শর্মিলার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া! একদিকে নেহেরু, শেখ মুজিব, নিয়াজী, ইন্দিরা গান্ধী, ইয়াইয়া খান, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা, দেশভাগ, নকশাল আন্দোলন এসবই যেমন পুঁথিগত ইতিহাসের অংশ, তেমনই সুহাসিনী, প্রতাপ, বুলা বাবুল, মামুন, রুমি, জাহানারা, অতীন, অলি এরা সবাই এক চলমান ইতিহাসের অংশ। আমার মতে পূর্ব পশ্চিম শুধুমাত্র তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাসের ওপর একটি আন্তরিক গবেষণাই নয়, একটি তথ্যভান্ডারও বটে, যা বাঙালি জীবন ও মননের একটি অমূল্য সম্পদ।

সুমন সিনহা
৩১/০৮/২০২০

Monday, April 19, 2021

কালবেলা

প্রিয় বইয়ের তালিকা মনে করতে বসলে কয়েকটা বই বেছে নেওয়া বেশ কঠিন কাজ। তবে বেশ কয়েকটি বইয়ের নাম সাথে সাথেই মনে চলে আসে। তার মধ্যে একটি হল সমরেশ মজুমদারের কালবেলা। আজকে আমি কালবেলার কথাই লিখব। বিভিন্ন বয়সে একাধিকবার বইটা পড়েছি এবং প্রতিবারই নতুন নতুন উপলব্ধিতে সমৃদ্ধ হয়েছি। কালবেলার মূল চরিত্র অনিমেষ আর মাধবীলতা। উত্তরবঙ্গের মফস্বলের ছেলে অনিমেষ কলকাতায় পড়াশোনা করতে এসে জড়িয়ে পড়লো বিভক্ত কম্যুনিস্ট পার্টির ছাত্র রাজনীতিতে। মানবিক মূল্যবোধ তাঁকে সরিয়ে নিয়ে এলো উগ্র রাজনীতিতে। সত্তরের সেই আগুনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে দগ্ধ করে সে দেখলো, দাহ্যবস্তুর কোনও সৃষ্টিশীল ক্ষমতা নেই। অন্যদিকে মাধবীলতা যে মাধবীলতা গাছের মতই নিজে বেড়ে ওঠে না, কাউকে অবলম্বন করেই বেড়ে ওঠে। মাধবীলতার জীবনটাও শুধু অনিমেষকে অবলম্বন করেই, তবুও কি ভীষণ স্বতন্ত্র ও নিজস্ব। কখনও কোনও রাজনীতি না করেও মাধবীলতা কি ভীষন রাজনীতি সচেতন! শুধু অনিমেষকে ভালোবেসে আলোকস্তম্ভের মত একা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে। বিপ্লবের ব্যর্থতার হতাশায় ডুবে যেতে যেতে অনিমেষের ঐতিহাসিক উপলব্ধি বিপ্লবের আর এক নাম মাধবীলতা!

কেউ যদি বিশ্বাস করে ভুল করেন তবে তিনি ঠিক বলেই আমি মনে করি। আমার বিশ্বাস অনিমেষরা নিজেদের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। এর থেকে মূল্যবান আর কি হতে পারে। যেমন আমার বিশ্বাস মাধবীলতারা ছিল, আছে এবং থাকবে। কালবেলা এই বিশ্বাসের জায়গাগুলো আরো শক্ত করেছিলো বলেই বোধহয় আমার এত ভালোলাগা কালবেলা কে নিয়ে।
শেষে বলি কালবেলা কি রাজনৈতিক উপন্যাস? এ ব্যাপারে আমি স্রষ্টার সঙ্গে সহমত যে কালবেলা কখনোই রাজনৈতিক উপন্যাস নয়। কালবেলা ভালবাসার উপন্যাস। দেশ, মানুষ এবং নিজেকে ভালোবাসার উপন্যাস। সেই ভালোবাসার প্রেক্ষাপটে কালবেলা একটা সময়ের ছবি। আর তাই বোধহয় বইয়ের প্রচ্ছদেও ঘড়ির ছবি।

সুমন সিনহা
৩১/০৮/২০২০

ঋতুপর্ণ ঘোষ

সেদিনের পর থেকে কতো সিনেমার "শুভ মহরৎ" হলো, কতো "বাড়িওয়ালি" সিনেমার শুটিং-এর জন্য তাদের বাড়ি ভাড়া দিলেন, কিন্তু সিনে...