Showing posts with label মৃত্যুদিনে স্মরণ / Obituary. Show all posts
Showing posts with label মৃত্যুদিনে স্মরণ / Obituary. Show all posts

Thursday, July 10, 2025

ঋতুপর্ণ ঘোষ

সেদিনের পর থেকে কতো সিনেমার "শুভ মহরৎ" হলো, কতো "বাড়িওয়ালি" সিনেমার শুটিং-এর জন্য তাদের বাড়ি ভাড়া দিলেন, কিন্তু সিনেমার "উৎসব" আর হলো কি? "ঊনিশে এপ্রিল" দিয়ে বাঙালির "অন্তরমহলে" যাঁর প্রবেশ, ৩০শে মে হঠাৎই তাঁর পথ চলা থেমে গেলো। শান্ত, স্থির নদীতে "নৌকাডুবি" যতোটা আশ্চর্যের, ঠিক ততটাই আশ্চর্যের ছিলো ঋতুপর্ণ ঘোষের চলে যাওয়া। সেদিনের বৃষ্টিমুখর কলকাতার অলি-গলি-রাজপথে কতজন যে "রেনকোট" পড়ে বেরিয়ে শূন্যতার হাহাকার অনুভব করেছিলেন, সে ইতিহাস কোথাও লেখা থাকবে না। নিজের বিশ্বাস ও দর্শনের প্রতি কতটা সৎ হলে একজন মানুষ নিজের জীবন দিয়ে তার দাম চোকায়, অবনমনের ইতিহাসে উজ্জ্বল বাঙালিকে ঋতুপর্ণ চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে গেছেন। চলে যাওয়ার পরও হয়তো কতো জনের "চোখের বালি" হয়ে থেকে গেলেন! কিন্তু রাজার আসন ফাঁকাই থেকে গেলো। আঞ্চলিক সিনেমার "The Last Lear" আপনিই যিনি 'সিঁড়ির নীচে বিড়ির দোকান' বা 'তোমার পেটে আমার বাচ্চা' জাতীয় বাংলা সিনেমা থেকে বাঙালিকে শুধু মুক্তিই দেন নি, শিল্পবোধ, রসবোধ, উৎকর্ষতা ও নান্দনিকতায় বাংলা সিনেমাকে অন্য মাত্রায় উত্তীর্ণ করেছিলেন। এতো বাস্তব ও জীবন্ত চরিত্ররা একে অপরের "দোসর" হয়ে থেকে যাবে "আবহমান" কাল ধরে। নবাগত বা ভাবী প্রজন্মের কাছে তারাই না আবার "সব চরিত্র কাল্পনিক" হয়ে যায় এই আশঙ্কা হয় বটে। "চিত্রাঙ্গদা" তো সততার ভাষা, বিশ্বাসের দাম বা একটা ইচ্ছের নাম ছিলো, শুধু কোনো সিনেমা ছিলো না। সেই সাহস বা সততা না থাকলে আরেকটি প্রেমের গল্প বা Memories in March-এ ওই অভিনয় ক্ষমতা দেখা থেকে আমরা বঞ্চিত থেকে যেতাম। ঋতুপর্ণর প্রতিটি সিনেমা জুড়ে আছে সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ব, একাকীত্ব, সম্পর্কের নানারকম শেডস্, ভালোবাসার সাহস, বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তিগত ইস্যুর সৎ ও নির্ভীক উপস্থাপনা - কোনো ভন্ডামি ছাড়া...এবং রবীন্দ্রনাথ। বাংলা সিনেমা ও বাঙালির "দহন"-এর ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় লজ্জিত হয়েও ঋতুপর্ণ ঘোষ নামের এক "হীরের আংটি" আমাদের ছিলেন - এটাই যা ভরসার। গর্বের তো বটেই। "ফার্স্ট পার্সন" চিনিয়েছিল রাজনীতি সচেতন ঋতুপর্ণ  ঘোষকে আর শিখিয়েছিলো "প্রেম, বিপ্লব এবং বোধ - এই তিন শব্দেই আমাদের জীবন"। Let all of your movies be "The story of imperfect people" who are "Unloved in love".

আজ গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো করার দিন। নীচে ঋতুপর্ণরই একটি সিনেমার ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ রইলো। অকপট ও ভনিতাহীন ঋতুপর্ণ ঘোষ।


সুমন সিনহা

৩০/০৫/২০২৫

click on the video link to see: Video link 




Wednesday, October 23, 2024

মৃত্যুদিনে স্মরণ: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 "একটা দুটো উড়ছে কাগজ, থমকে আছে পেন

সময় এসে জানতে চাইছে, নতুন কী লিখছেন?" 

"পূর্ব পশ্চিমের" অতীন, অলি বা শর্মিলা অথবা "প্রথম আলোর" ভূমিসূতা অথবা "সেই সময়ের" নবীন কুমার কালজয়ী ঐতিহাসিক জীবন্ত হয়ে উঠেছিলো আপনার কলমের ছোঁয়াতে। "ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ" শিখিয়েছিল রাজনৈতিক সচেতনাবোধ, সমাজতন্ত্রের ত্রুটি বিচ্যুতি। আর আপনার কবিতা উপলব্ধি করিয়েছিল প্রেম। "ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে" বুঝিয়েছিল আকুলতা কি জিনিস, অপেক্ষাও কতো মধুর। "কেউ কথা রাখেনি" শিখিয়েছিল উপেক্ষার তীব্র জ্বালা, প্রেমিকা যখন "আজ সে যেকোনো নারী" হয়ে যায় আর তারপর যখন "আজ তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ" পাওয়া যায়, তখন যন্ত্রণা শুধু কবিতার ভাষা হয়ে যায়। আপনার থেকেই শেখা। "আত্মপ্রকাশ" বা "যুবক যুবতীরা" অথবা বিভিন্ন সময়ে আপনার সাক্ষাৎকার শিখিয়েছিল স্পষ্টবাদিতা ও সততার সংজ্ঞা। মধ্যরাতে কলকাতার ফুটপাথ শাসন করা রাগী এক যুবকের কলমেই সৃষ্টি হয়েছিলো কবিতার এযাবৎকালের শ্রেষ্ঠ চরিত্র "নীরা"-- যাকে শুধু অনুভূতির গহীনে ধরা যায়, যার জন্য কোনো "কবিতার ভূমিকা" দরকার পড়ে না!
২০১২ সালের আজকের দিনটি ছিলো নবমী। উৎসবের আনন্দ অনেকটা ম্লান করে দিয়েছিলো আপনার চলে যাওয়া। আপনার "মহাভারত" লেখা অপূর্ন রয়ে গেলো। বোধহয় শুরুও করেছিলেন। আমরা বঞ্চিত রয়ে গেলাম আর একটা কালজয়ী সৃষ্টি থেকে। স্তব্ধ হয়ে গেলো সবকিছু। 
"সত্যবদ্ধ অভিমান" আজ প্রতিজ্ঞা পালন করুক "এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ / আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?" হে খালাসিটোলার কবি, আজকের এই সময়ের "স্তব্ধতার মিছিলে" "আমার সম্পূর্ণ আবেগ মোমবাতির আলোর মতো ভদ্র ও হিম" হয়েই থাক।

সুমন সিনহা 
২৩/১০/২০২৪


Thursday, October 10, 2024

Ratan Tata

It's really a sad day for our country. A great loss for our country. The late night statement on October 09, 2024 by the present Chairman of Tata Sons that "It is with a profound sense of loss that we bid farewell to Mr. Ratan Naval Tata, a truly uncommon leader whose immeasurable contributions have shaped not only the Tata Group but also the very fabric of our nation" left the nation in grief. The titan of Indian Industry left behind a legacy of leadership, ethical business practice and philanthropy. A man who resided in a modest home in Mumbai and loved to drive a Tata Sedan, increased the Group's revenue to 100 billion dollar in 2012 from 5.7 billion dollar in 1991 when he took over as the chairman of Tata Sons. Over 65 percent of his shares in Tata Sons go to charitable causes which include funding education, healthcare, and social development projects across the country, the largest philanthropy of the world. Tata’s focus has always been on improving the quality of life for Indians. Having more than 30 international honours and awards to his credit apart from holding many honorary doctorates from Institutes of repute across the world, a Padma Bhushan in 2000 and a Padma Vibhushan in 2008, it's a shame that he didn't get a Bharat Ratna award till 2024 when he dies at the age of 86!!

Will ever remember his quotation in the context of his dream Nano car project at Singur in West Bengal "Once a promise is always a promise" when he had over thrown a popular saying in response to a question by a journalist.
Let he find eternal peace.
Suman Sinha
10/10/2024



Monday, August 19, 2024

উৎপল দত্ত

আজকে এমন একজন বাঙালির মৃত্যুদিন যিনি নিজেকে কোনোদিন "বুদ্ধিজীবি" বা "শিল্পী" বলে দাবি করেন নি বা সেসব বিশেষনে পরিচিত হতে চান নি। নিজেকে কখনো "অরাজনৈতিক" বলেন নি। রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানের চোখরাঙানির বিরুদ্ধে একা লড়াই করে গেছেন। ক্ষমতার বৃত্তের কাছাকাছি ঘেঁষেন নি কোনোদিন। পুরস্কারের লোভ বা দাক্ষিন্যের নেশা কখনো তাঁকে আকৃষ্ট করে নি বরং প্রত্যাখানের সাহস তাঁকে এবং বাঙালিকে গৌরাবান্বিত করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রত্যাখ্যান করে তাঁর কৌতুকমিশ্রিত জবাব ছিলো "শাহেনশাহ্, তোমার পুরস্কার তোমার নিজের কাছেই রাখো"। তিনি উৎপল রঞ্জন দত্ত ওরফে উৎপল দত্ত।


কোনোরকম হিপোক্রিসী না করে ওঁর অকপট স্বীকারোক্তি ছিলো "সিনেমা করি পেটের দায়ে, নাটক করি নিজের দায়ে"। বিত্ত, বৈভব, ক্ষমতা ও সুবিধাবাদের গন্ধ শুঁকে বেড়িয়ে নিজেদের "এলিটিস্ট", "কালচার্ড" ভাবা লোকজনের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে ওঁর বিখ্যাত উক্তি "আমি শিল্পী নই, আমি প্রোপাগান্ডিষ্ট" আজ প্রায় প্রবাদে পরিনত হয়েছে। দু'বার "রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে" গ্রেপ্তার!! - - ১৯৬৩ তে কোলকাতায় এবং ১৯৬৭ তে মুম্বাইতে। ১৯৬৩ তে গভীর রাতে শ্রী সত্যজিৎ রায় ওঁর হয়ে থানা থেকে জামিন নিতে যান।

অগাধ পান্ডিত্য, জ্ঞান, পড়াশোনা ও বাগ্মিতা নিয়েও সারাজীবন নিজেকে গণনাট্য আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিয়ে গেছেন। প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যম ছিলো পথনাটিকা থেকে জনসভা - ক্ষমতাসীনের ছত্রছায়ায় নিজেকে নিরাপদ রেখে, গা বাঁচিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে কখনো সামিল হন নি। রাস্তায় নেমে দাপটের সাথে প্রতিবাদ করেছেন, পক্ষ নিয়েছেন। লাইমলাইটে আসার জন্য বা নিজেকে "ইমপর্টান্ট" দেখানোর জন্য কখনো হ্যাংলামি করতে হয় নি। ইতিহাস ওকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে।

সত্তরের নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা "তীর" নাটকের উপাদান সংগ্রহের জন্য উনি উত্তরবঙ্গে যান। সেখানেই এক জনসভা থেকে ওঁর নির্ভীক ঐতিহাসিক স্লোগান "একদিকে নকশালবাড়ি, আর অন্য দিকে বেশ্যাবাড়ি। বুদ্ধিজীবিরা পথ বেছে নিক, কোন্ দিকে যাবেন।"

আজকে সারা দেশ জুড়ে এই ক্রান্তিকালে যখন একদিকে রাজনীতি আর অন্যদিকে অরাজনীতি - তখন পথ বেছে নেওয়ার, পক্ষ বেছে নেওয়ার সময় এসেছে যাতে আমরা অন্তত নিজেরা ভবিষ্যতে আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারি। "অরাজনৈতিক" সবচেয়ে বড় সুবিধেবাদী রাজনৈতিক অবস্থান এবং তার থেকেও ভয়ঙ্কর হলো "অরাজনৈতিকতার" মুখোশের আড়ালে কোনো নির্দিষ্ট রাজনীতিকে বিভিন্ন সুকৌশলে প্রমোট করা।

সুমন সিনহা
১৯/০৮/২০২৪


Monday, April 8, 2024

বাবা'র মৃত্যুবার্ষিকী

আজ থেকে আঠারো বছর আগে এই দিনে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। চলে যাওয়াটা আকস্মিক ছিলো, তাই মানসিক প্রস্তুতি কারোরই ছিলো না। তখন আমার গবেষণা জীবনের প্রথম দিক। রাতে হস্টেলে খাওয়ার সময় কাকা'র ফোন "মেজদার শরীরটা হঠাৎ খারাপ হয়েছে। তুই কি আসতে পারবি বাড়িতে একবার? সেরকম যদিও কিছু নয়, তবুও... "। তার পাঁচ দিন আগেই বাড়ি থেকে ফিরেছিলাম। তাই কিছুক্ষণ দোনামোনা করে রাত ১১ টায় ধর্মতলা থেকে বাস ধরে পরদিন ভোরে বাড়ি পৌঁছালাম। যাওয়ার পরই অবস্থা খুব একটা ভালো মনে হয়নি। যাইহোক, সকাল দশটা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হল। ডাক্তার দেখে বললো "দেরি করে ফেলেছেন"। সন্ধ্যা'র পরে একটু ভালোর দিকেই যাচ্ছিলো। রাত ন' টা নাগাদ ডাক্তারবাবু বললেন "মনে হচ্ছে ঠিক হয়ে যাবেন"। রাত বারোটা কুড়ি মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন বাবা।
বিগত কয়েক বছর ধরেই আত্মীয় স্বজন, কিছু বন্ধুবান্ধব আমাকে বলে "তুই ঠিক তোর বাবা'র মতো হয়েছিস"। কাল থেকেই মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে সত্যিই কি আমি কিছুটা হলেও বাবার মতো হতে পেরেছি?
অনেক ভেবে দেখলাম না হতে পারার পাল্লাই বেশি ভারী। যেমন বাবার মতো প্রত্যাশাহীন আমি হতে পারিনি বা শিখিনি। বাবার মতো নম্র (humble) আমি হতে পারিনি। বাবার মতো সব কিছু মেনে নিয়ে, সব কিছু ভুলে গিয়ে হাসিমুখে থাকতে পারা আমি রপ্ত করে উঠতে পারিনি। বাবার মতো পরোপকারীও আমি হতে পারিনি। আর সবচেয়ে বড় যেটা তা হলো আমি বাবার মতো বই, পত্র - পত্রিকা পড়ে উঠতে পারি না। পছন্দ না হওয়ায় বাবা পদস্থ সরকারি চাকরি ছেড়ে দিতে পারার মতো সাহস দেখাতে পেরেছিলেন। আমার সে সাহস নেই।
আজ আমিও একজন বাবা। গতকাল সন্ধ্যায় আমার পুত্র একটা পুরোনো পারিবারিক ছবি দেখে হঠাৎই জিজ্ঞেস করলো "তোমাকে দাদুর মতো লাগে কেনো?" হয়তো চেহারা বা গড়নের দিক থেকে বাবার সাথে আমার কিছুটা সাদৃশ্য আছে কিন্তু সত্যিই কি আমি কোনোদিন বাবার মতো বাবা হয়ে উঠতে পারবো? জানিনা। সম্ভবতঃ বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যেটা পেয়েছি তা হলো বাবার মতোই আমিও নিজের আবেগ বা উচ্ছ্বাসকে প্রকাশ করতে পারি না। আর কিছুটা বোধহয় কথার দাম, সততা, লোক না-ঠকানো ও সম্পর্কের গভীরতায় বিশ্বাস করা (এখনও অবধি!!) ।
নীচের পারিবারিক ছবিতে আমি তখন ক্লাস ফোর আর দিদি ক্লাস সেভেন।
সুমন সিনহা
০৬/০২/২০২৪




Friday, April 5, 2024

বিকাশ চন্দ্র সিনহা

মুর্শিদাবাদ জেলার ভূমিপুত্র বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডঃ বিকাশ চন্দ্র সিনহা'র প্রয়াণে আমরা শোকস্তব্ধ। প্রসঙ্গত, উনি ২০০১ সালে পদ্মশ্রী ও ২০১০ সালে পদ্মভূষণ সম্মান লাভ করেন। ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল অবধি উনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন।

১১ /০৮ /২০২৩



Monday, July 4, 2022

বিদায় বেলায়

"... যতো বড় হও,
তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড় নও।
'আমি মৃত্যু - চেয়ে বড়' এই শেষ কথা ব'লে
যাব আমি চলে।।"

আপনার চলে যাওয়ার ভার বহন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আজ। কিন্তু যে সৃষ্টি, যে আদর্শ, যে ভাবনা, যে দৃষ্টান্ত আপনি রেখে গেলেন, তা যেনো বাঙালি জাতির কাছে, ভাবী প্রজন্মের কাছে আগামীর বার্তা হয়ে থাকতে পারে।
অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় ১৯৩১ সালের ৮ই জানুয়ারি তরুণ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা ওখান থেকেই। পরবর্তীকালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (স্কটিশচার্চ কলেজ) থেকে রসায়নবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা। কিন্তু ছাত্রাবস্থা থেকেই তাঁর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সিনেমার জগৎ। ২৮ বছর বয়সেই চিত্র পরিচালনায় প্রবেশ। প্রথম ছবি উত্তম - সুচিত্রা অভিনীত 'চাওয়া পাওয়া' (১৯৫৯)। সাড়া ফেলে দেওয়া চলচ্চিত্র দিয়ে সেই শুরু। বানিজ্যিক ছবির মধ্যেও যে রুচি, মনন ও বোধের স্বাক্ষর রাখা যায়, তা তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন। হাস্যরস ও নির্মল আনন্দ দর্শকদের উপরিপাওনা ছিল। আর ছিল সিনেমায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের অসাধারণ প্রয়োগ। প্রতিটি সিনেমার মধ্যে দিয়ে উনি মানুষের কথা, জীবনের কথা, যাপনের কথা সাবলীল ভাবে স্বচ্ছন্দে বলে গেছেন অথচ বিষয় বৈচিত্র্যে প্রতিটি ছবিই স্বতন্ত্র। এখানেই ওঁর নিজস্বতা, স্বকীয়তা - নিজেই তৈরী করেছেন সিনেমার নিজস্ব ব্যাকরণ, নান্দনিকতায় যার ঘাটতি পড়েনি কখনো। শুধু শিল্পই সৃষ্টি করেননি তিনি - গড়েছেন একাধিক শিল্পী। রুমকি রায় কে কেউ মনে রাখেনি আজ, মনে রেখেছে দেবশ্রী রায় কে। 'দাদার কীর্তি' চিনিয়েছে তাপস পাল কে। 'বালিকা বধূ' উপহার দিয়েছে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় কে। 'শ্রীমান পৃথ্বীরাজ' দেখে যে উচ্চাঙ্গের হাস্যরস ও অনাবিল আনন্দ বাঙালি দর্শকরা পেয়েছে, তার জুড়ি মেলা ভার। এরকম একের পর এক অবিস্মরনীয় সিনেমার নাম লিখে কলেবর বড় করাই যায় কিন্তু সেটা লিখে শ্রদ্ধা জানাবার উদ্দেশ্য আমার নয়। সারাজীবন নিজের কাজের প্রতি থেকেছেন অসম্ভব সৎ। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন পদ্মশ্রী (১৯৯০), চারটি জাতীয় পুরস্কার, সাতটি BFJA পুরস্কার, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও একবার আনন্দলোক পুরস্কার। কখনো আপোষ করার প্রয়োজন পড়েনি - না কর্মজীবনে না ব্যক্তিজীবনে। শুনেছি 'পলাতক' সিনেমার জন্য উনি যখন অনুপ কুমার কে নায়কের চরিত্রে নির্বাচন করেন, তখন কলকাতার সমস্ত নামী প্রযোজকরাই 'পলাতক' প্রযোজনা করতে অস্বীকার করেন। কিন্তু অনুপ কুমারের বদলে অন্য কাউকে নায়ক করার আপোষে হাঁটেননি। শেষ অবধি বোম্বের এক বিখ্যাত প্রযোজক অনুপ কুমার কে নায়ক করেই 'পলাতক' প্রযোজনা করতে রাজি হন। 'পলাতক' মুক্তির পরের অধ্যায় আজ ইতিহাস। মায়ের কাছে শুনেছি পলাতকে'র সব শো-টাইমই হাউসফুল যেতো এবং সিনেমা শেষে প্রত্যেক বয়সের দর্শকই ভাষাহীন হয়ে যেতো। এখানেই একজন শিল্পীর সার্থকতা।
একইভাবে আপোষ করেননি মূল্যবোধ ও নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে। ২০০৬-০৭ পরবর্তী পালাবদল, দলবদলের যাত্রাপালায় আনুগত্য বিক্রির প্রতিযোগিতায় বিন্দুমাত্র সামিল হওয়ার চেষ্টা করেননি। নন্দন, রবীন্দ্রসদন, শিশিরমঞ্চ ইত্যাদি জায়গায় প্রবাদপ্রতিম সিনেমাব্যক্তিত্বদের নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা সেরে যাঁরা পরেরদিন সকালে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যশিবিরে নাম লেখানোর লাইনের ভিড়ে অপেক্ষমাণ, তরুণবাবু সেই ভিড় থেকে সযত্নে দূরত্ব বজায় রেখে নিজের রাজনৈতিক দর্শনে অবিচল থেকেছেন। শুনেছি "পরিবর্তন-উত্তর" যুগে কোনো একদিন কোনো একটি সেমিনারে এক সাংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে হাসির ছলে সেই মঞ্চেই বসা এক কবি'র উদ্দেশ্যে তরুণবাবু বলেছিলেন তিনি খুব একটা আধুনিক নন ব'লে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না, আর তাই উনি "ওঁদের" মতো বদলাতে পারেন না! আক্ষরিক অর্থেই তরুণবাবু ছিলেন সমসাময়িক রাজনীতির বিবেক। তাই মৃত্যুর আগে তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল নন্দন বা রবীন্দ্রসদন জাতীয় জায়গায় যেনো তাঁর মরদেহ না রাখা হয়, মরদেহে কোনোরকম ফুল, মালা যেনো না দেওয়া হয়, মরদেহ নিয়ে কোনোরকম মিছিলের ভিড় থেকে তিনি দূরেই থাকতে চান এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় সম্মানের বন্দুকের আওয়াজে যেনো তাঁকে বিরক্ত না করা হয়। মৃতের প্রত্যাখ্যানের এই অহংকার ওঁকেই মানায়। "আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়" বোধহয় একেই বলে। খুবই সামান্য দুটি শেষ ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন - ওঁর মরদেহের ওপর যেনো একটি গীতাঞ্জলি ও একটি কাস্তে-হাতুড়ি দেওয়া লাল পতাকা রাখা হয়। পরিবারের লোকেরা দুটো ইচ্ছেই পূরণ করেছেন। উনি চোখ এবং দেহ - দুটোই দান করে গেছেন। ভীষন আশা রাখি যে, যে ব্যক্তি ওঁর চোখদুটি দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখবেন, তিনি যেনো গাইতে পারেন -
"চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে
অন্তরে আজ দেখবো যখন আলোক নাহিরে"।

Rest in ideology তরুণবাবু ।

পুনশ্চঃ এইমাত্র দেখলাম কল্যাণ সেন বরাট বলেছেন "ওঁর মেরুদণ্ডটার সংরক্ষণ করার দরকার ছিল"।

সুমন সিনহা
০৪/০৭/২০২২



Sunday, January 23, 2022

Subhas Chandra Bose – His Ideas, Ideals and Dreams

            The recent past has witnessed the rise of right-wing forces. The attempt to appropriate the icons of freedom struggle by the right-wing forces is quite obvious now-a-days and it has been observed in the recent past, too. This is obviously due to the lack of any heroic figures of their own. However, it is not easier to change the narrative of the thoughts and philosophy of Subhas Chandra Bose and his political legacy. It has to be kept in mind that the life and works of Subhas Chandra Bose are well documented and there is a Netaji Research Bureau, founded by his nephew Dr. Sisir Kumar Bose and presently run by his grandnephew Dr. Sugata Bose. The Netaji Research Bureau is housed at Netaji Bhawan, Kolkata, which is the ancestral house of Subhas Chandra Bose.

               It is of quite relevance today to remind ourselves of his thoughts, ideas, ideals, sacrifices and convictions in India’s struggle for freedom, collected from the most reliable and authentic sources. Let us glance over the pages of history.

“Communalism has raised its ugly head in an all out nakedness…Even the oppressed, the poor and the ignorant long for independence. We hear voices of Hindu Raj in India owing to a majority of Hindu population. These are all useless thoughts. Do the communal organizations solve any of the problems confronted by the working class? Do any such organizations have any answer to unemployment and poverty?... The ideas of Savarkar and Hindu Mahasabha of anti-Muslim propaganda in practice means full collaboration with British” (Source: Netaji Collected Works, Volume – III, Edited by Sisir K Bose, Published by Netaji Research Bureau, 1981)

“Fanatism is the greatest thorn in the path of cultural intimacy and there is no better remedy for fanatism than secular and scientific education.” (Source: The Essential Writings of Netaji Subhas Chandra Bose, Edited by Sisir K Bose and Sugata Bose, Oxford University Press, 2014)

            It is also important to note down here a short excerpt from Sugata Bose’s book ‘His Majesty’s Opponent: Subhas Chandra Bose and India’s struggle Against Empire’ ---- “Netaji successfully united Hindus, Muslims, Sikhs and Christians in the struggle for freedom based on his commitment to equal rights and respect for all as well as his enlightened philosophy of cultural intimacy among India’s diverse communities. He won the implicit trust of the minorities as no one else had…Just as Gandhian values cannot be reduced to a cleanliness campaign, extolling Netaji’s military heroism sounds hollow if divorced from his unequivocal commitment to religious harmony.”

History had been witness to the fact that exactly a week before his assassination on January 30, 1948, Mahatma Gandhi observed Subhas’s birthday and in his final eulogy to the great patriot, Gandhi reminded the nation that Subhas “knew no provincialism nor communal differences” and “had, in his brave army, men and women drawn from all over India without distinction and evoked affection and loyalty, which very few have been able to evoke”.

Commemorating Subhas Chandra Bose on his birth anniversary by garlanding his bust or by erecting his statue will relegate him only. Instead, a proper tribute to Subhas Chandra Bose would be to spread and follow the ‘rich inheritance of ideas, ideals and dreams’, left by Bose. It is an eternal truth that the legacy of Subhas Chandra Bose lies in his ‘generous and imaginative approach towards achieving unity by respecting difference.’

Suman Sinha
23/01/2022


Sunday, September 5, 2021

মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী: স্মৃতিকথন

আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই দিনেই মা আমাদের ছেড়ে চলে যান। মা'কে নিয়ে কোনো লেখাই আমার পক্ষে যথেষ্ঠ নয়। তবুও এই এক বছর ধরে নানা এলোমেলো স্মৃতি, কথা ও ঘটনা প্রতিনিয়ত মনের মনের মধ্যে উঁকি ঝুঁকি মেরে গেছে। সেই সব অবিন্যস্ত স্মৃতি বা ঘটনাগুলোকেই আজ ধরবার চেষ্টা করেছি।

নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলাদের জীবনের ছবি বোধহয় একটিমাত্র শব্দেই আবদ্ধ থাকে - সেটা লড়াই। মায়ের জীবন কে ব্যাখ্যা করতে গেলেও ওই একটা শব্দই বারে বারে ঘুরে ফিরে আসে মনে - লড়াই বা সংগ্রাম।
হুগলি জেলার শেওড়াফুলি শহরে ১৯৪৬ সালের ৩১শে জুলাই মায়ের জন্ম হয়। সাড়ে তিন বছর বয়সে দাদু (মায়ের বাবা) সপরিবার চলে আসেন কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলের পদ্মপুকুর লেনে। সেখানে ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু। এর প্রায় মাস ছয়েক পরে অর্থাৎ মায়ের বয়স যখন চার বছরের কাছাকাছি, দাদু হঠাৎই মারা যান। পাঁচ বোন ও তিন ভাই কে নিয়ে দিদিমা'র (মায়ের মা কে আমি দিদিমা বলেই ডাকতাম) তখন মাথায় হাত। একমাত্র আমার বড়মাসিমনীরই তখন বিয়ে হয়েছিলো। দাদু মারা যাওয়ার পর আরো প্রায় এক বছর ভবানীপুরেই মায়েরা থেকেছে। তারপর যাদবপুরে মায়ের এক কাকার বাড়িতে ছেলে মেয়ে নিয়ে এসে ওঠেন আমার দিদিমা। সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর যাদবপুরেই কিছুদিন ভাড়া বাড়িতে থেকেছেন এবং আমার বড়মামা চাকরি পাওয়ার পর যাদবপুরে নিজেদের বাড়ি করে উঠে আসেন।
খুব অল্প বয়সেই মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে গেলে নিজেকেই নিজের সাথে যুঝতে হয়। মায়ের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। আড়ম্বরহীন, অস্বচ্ছল অবস্থায় পিঠোপিঠি ভাই বোনেদের একসাথে বড় হয়ে ওঠার লড়াই। সাথে ছেলে মেয়েদের ন্যূনতম শিক্ষিত করে তোলার জন্যে দিদিমা'র অদম্য প্রয়াস ও খাটুনি। আর ছিল আমার বড়মাসিমনীর নীরব অবদান ও বড়মামার আত্মত্যাগ (sacrifice)। ভাই বোনদের মধ্যে মায়ের পর আর একটাই ভাই। ছোট হওয়ার সুবাদে মায়ের কপালে স্নেহ ও আদরের পরিমাণ অন্য ভাই বোনদের চেয়ে একটু বেশীই জুটেছিল। মায়ের পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। স্কুলে ভালো রেজাল্ট করত বলেও শুনেছি। বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও মা পড়াশোনাটা চালিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিল। প্রি-ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় থেকেই মায়ের টিউশন করা শুরু। সাংসারিক কাজকর্ম ও টিউশন পড়িয়েও প্রধানত আমার বড়মাসিমনী ও বড়মেশোমশায়ের উৎসাহে ও বড়মামার সহযোগিতায় ১৯৬৭ সালে মা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হ'ন। তারপর ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে (২৪শে মাঘ) মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের এক একান্নবর্তী পরিবারের গৃহবধূ হিসেবে মায়ের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু।
বিয়ের পর অন্য এক লড়াই শুরু। এক কালের নায়েব পরিবারের অবস্থাপন্ন, স্বচ্ছল অবস্থা তখন পড়তির দিকে কিন্তু বিলাসিতার ঠাঁটবাট তখনও পুরোটা যায় নি। ভাসুর, দেওর, জা ও তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে তখন পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ১১ জন। পরে আরো বাড়ে। এছাড়া আগেকার দিনের নিয়মমতো আত্মীয় স্বজনদের নিয়মিত আসা, যাওয়া ও থাকা। ১৯৬৬ সালে আমার ঠাকুর্দা (বাবার বাবা) মারা যান। সম্ভবত ১৯৬৮ সালের প্রথম দিকেই আমার বাবা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পদস্থ চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে চাকরি টি ছেড়ে দেয়। কলকাতা থেকে বর্ধমানের একটি গ্রামে বাবা কে বদলি করে দেওয়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বাবা'র মতবিরোধ ও কাউকে না জানিয়ে চাকরি ছাড়ার নিজস্ব সিদ্ধান্ত! অতঃপর কলকাতার পাট চুকিয়ে বাবা'র দেশের বাড়িতে অর্থাৎ বহরমপুরে প্রত্যাবর্তন। বিয়ের পরে একান্নবর্তী পরিবারে বাবা'র তখন রোজগারপাতি কম ও মফস্বল শহরের এক অখ্যাত পাড়ার একটি অতি সাধারণ পরিবারে "কলকাতার মেয়ের" গৃহবধূ হয়ে এসে পাঁচটার সংসারে মানিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ের সেই শুরু। নতুন মুখ, নতুন পরিবেশ, নতুন আদবকায়দা, নতুন রকম কথাবার্তায় মানিয়ে নেওয়ার অচেনা আপোষ সময়ের সাথে ধীরে ধীরে একদিন চেনা হয়ে যেতে শুরু করে। মনের কথা বলার লোক বলতে তখন দুজন - বাবা আর আমার কাকা অর্থাৎ মায়ের দেওর। পাড়ার ছেলে মেয়েদের টিউশন পড়ানো শুরু করেছে মা তখন।
একান্নবর্তী পরিবারগুলোর বাঁধন তখন আলগা হতে শুরু করেছে। ১৯৭২ সালের কোনো একদিন বাবা - মা'র অনুপস্থিতিতেই ১২৬ নম্বর ডেভিস রোডের বাড়ির একান্নবর্তী পরিবারের হাঁড়ি আলাদা হয়ে গেল! কলকাতা থেকে ফিরে বাবা - মা জানতে পারল একটি সংসার ভেঙে তখন তিনটে আলাদা আলাদা সংসার (একই বাড়িতে) হয়ে গেছে। দিদি বা আমি তখনও পৃথিবীর আলো দেখিনি। হাঁড়ি আলাদা হলেও মনের বাঁধন আলাদা হয় নি।
দিদি বা আমি হওয়ার সময়ও মায়ের অন্যরকম লড়াই। ডাক্তারের পরামর্শে অনেক ধরনের ওষুধ ও সাবধানতা অবলম্বনের পর দিদি ও আমি দুজনেই বিলম্বিত সন্তান। আমি ছিলাম শুধু সেই বাড়িরই না, বংশেরও কনিষ্ঠতম সন্তান (এখন অবশ্য আমার পুত্র)। জেঠঠুতো, খুড়তুতো মিলিয়ে তখন বাড়িতে মোট নয় ভাইবোন। সবথেকে ছোট ও সবচেয়ে বড়'র ব্যবধান প্রায় পঁচিশ বছর। বাবা কোনদিনই বৈষয়িক বা খুব সাংসারিক ছিলেন না। আমাদের স্কুলে ভর্তি করানো থেকে পড়ানো, পার্কে নিয়ে যাওয়া, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি সবই মায়ের হাত ধরে। একই বাড়িতে একসাথে বড় হওয়ার যেমন সুবিধে আছে, তেমন অসুবিধেও থাকে অনেক রকম। তার মধ্যেও দিদিকে আর আমাকে কড়া শাসনে, অন্যদের অগ্রাহ্য করে ঘরের মধ্যে বসিয়ে নিয়মিত পড়ানো, স্কুলের খাতা পরীক্ষা (check) করা, পড়া ধরা ও লেখানো, শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে গিয়ে আমাদের পড়াশোনার খবর নেওয়া, পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও রেফারেন্স বই জোগাড় করা বা প্রয়োজনে কেনা, আঁকা বা আবৃত্তি শেখাতে নিয়ে যাওয়া - এসব করার জন্য সাহস ও মনের জোর লাগে। এছাড়াও দুবেলা রান্না করা (ফ্রিজ থাকার কোনো প্রশ্নই ছিল না), অন্যান্য সাংসারিক কাজ, বংশানুক্রমে চলে আসা নানারকম উপাচার এসবতো ছিলই। মা - বাবা নিজেদের শখ আহ্লাদের সাথে সারাজীবন আপোষ করলেও আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারে কখনোই এবং কারোর সাথে আপোষ করেনি। যে পরিবেশ ও যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা বড় হয়েছি সেই প্রেক্ষিতে বিচার করলে মায়ের এই লড়াই ভীষণই কঠিন ছিল। বাবা - মা'র ৩৭ বছরের বিবাহিত জীবনে বাবা মা বা আমরা কোথাও কোনোদিন বেড়াতে যাইনি, যাকে ছুটি বা অবকাশ যাপন বলে। যাওয়ার মধ্যে মূলতঃ ছিল কালনা (বড় পিসীর বাড়ি), যাদবপুর (মামার বাড়ি), কৃষ্ণনগর (দুই মাসিমনীর বাড়ি), সোদপুর (ছোট পিসীর বাড়ি) ও কলকাতা সংলগ্ন আরো কিছু আত্মীয় স্বজনের বাড়ি। তবে বেড়ানোর থেকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের তাগিদেই সেসব জায়গায় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ও কারোর বিয়ে থাকলে যাওয়া হতো। অনেক সময় বাবা যেতেও পারতো না - মা, দিদিকে আর আমাকে নিয়ে যেতো। বাবা হয়তো গিয়ে নিয়ে আসতো। এ ভাবেই "মা - ন্যাওটা" এক মফস্বলের ছেলের শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবনে পা দেওয়া।
আমার উচ্চমাধ্যমিকের সময় দিদি এম. এস. সি পড়তে কলকাতায় চলে গেলো। আমি উচ্চমাধ্যমিকের পাশ করার পর বাবা প্রথম একটা সতেরো ইঞ্চির সাদাকালো টিভি কিনেছিলো। সময় বহমান। ২০০০ সালে আমি এম. এস. সি পড়তে কলকাতা চলে যাই আর দিদি তখন স্কুল সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করে অন্য একটি শহরে শিক্ষিকা। তখনই মায়ের প্রথম ডায়াবেটিস ধরা পড়ে আর বাবার তো উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিলই। ২০০৩ সালে বিয়ের পর দিদি বিদেশ চলে যায়। আমিও বাড়ির বাইরে কলকাতায়। জেঠঠুতো, খুড়তুতো দিদিদের সবারই বিয়ে হয়ে তখন এক একজন এক এক জায়গায়। আর কাকার ছেলেও তখন চাকরি সূত্রে কলকাতায়। জেঠু মারা যান আমি যখন ক্লাস সেভেন। একদা একান্নবর্তী পরিবারের "সাড়ে আট কাঠা জমির ওপর দালান দেওয়া বাড়ি" তে তখন মাত্র পাঁচজন বয়স্ক মানুষ - বমা (জেঠিমা কে আমি বমা বলে ডাকতাম), বাবা, মা, কাকা, কাকী। সবারই নিজস্ব শারীরিক সমস্যা। কে আর কাকে দেখবে! ২০০৪ সালে কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে এসে দু দিনের মধ্যে মা কে পেসমেকার বসানোর নির্দেশ ডাক্তারের। মায়ের শরীর তারপর থেকেই ভাঙতে থাকে। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবা হঠাৎ মারা গেলেন। আমার তখন পি এইচ ডি 'র প্রথম দিক। বাবা মারা যাওয়ার দিনটাও ছিল ২৪শে মাঘ অর্থাৎ যেদিন বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিলো।

বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই সাহসী, ডাকাবুকো মা একদম পাল্টে যেতে থাকলো। জীবনে কারোর কারোর উপস্থিতিটাই অনেকসময় শুধু অর্থবহ হয়। ২০০৮ সালে সেপটিসিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এক নার্সিংহোমে ২২ দিন ভর্তি থাকার পর মা যখন ছাড়া পেলো, তখন খুবই দুর্বল ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বহরমপুর বাড়িতে থাকা মায়ের পক্ষে বাস্তবিকই আর সম্ভব ছিল না। কলকাতায় এক বন্ধুর মেসে প্রায় এক মাস মাকে নিয়ে থাকলাম। আমার তখন পি এইচ ডি চলছে। সেমিনার, কনফারেন্স, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি তে অন্য শহরে বা দেশে যেতে হতো। আর মায়ের পক্ষে কোথাওই একা থাকা সম্ভব ছিল না। দিদির কাছে পাকাপাকি ভাবে থাকতে মা রাজি ছিল না। শুধুমাত্র আমার কথা ভেবে সমস্ত সামাজিক বাঁধা ও সংস্কার (taboo) কে নস্যাৎ করে মা কলকাতায় বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে সম্মত হলো। ২০০৮ সালে কলকাতায় প্রথম হেল্পএজ ইন্ডিয়ার (HelpAge India) একটি আশ্রমে মা থাকা শুরু করলেন। মা ছিলেন সেখানকার প্রথম আবাসিক। রীতিমত সাক্ষাৎকার (interview) দিয়ে থাকার সুযোগ পেয়েছিলো। স্নাতক ডিগ্রি টা প্রথম কাজে লেগেছিল!
মায়ের জীবনের সবচেয়ে আরামের দিনগুলো ছিল সেই বৃদ্ধাশ্রমের দিনগুলো। জীবনের অপূর্ন ইচ্ছেগুলো পূরণ করার সব রকমের সুযোগ পেয়েছিলো মা ওই বৃদ্ধাশ্রম থেকেই। যেমন গান করা, ছবি আঁকা, হাতের কাজ, অল্পসল্প লেখালেখি, বেড়ানো ও আরো অনেককিছু। সম্ভবত সে কারণেই মা ওই জায়গাটি ছেড়ে দিতে কোনোভাবেই আর রাজী ছিল না। ইতিমধ্যে দিদি হায়দরাবাদে সেটেলড্ আর ২০১০ সালের শেষের দিকে আমার বিয়ে হল। বিয়ে অবশ্য বহরমপুর বাড়ি থেকেই হয়েছিলো। মা মাঝে মাঝে আমাদের সাথে কলকাতায় থাকতো, কখনো দিদির কাছে আবার কখনো বা বহরমপুরে কিছুদিনের জন্য যেতো। ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, প্রেশার ছাড়াও মায়ের হজমের সমস্যা, ভার্টিগো ও ইউটিআই - এর সমস্যা শুরু হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি পেয়ে আমি পুণায় চলে আসি। তখন আমার পুত্রের বয়স তিন মাস। স্ত্রী পুত্র তখন কলকাতাতেই থাকতো। আমি বা দিদি কেউই কলকাতায় না থাকলে মায়ের বৃদ্ধাশ্রমে থাকাটা ঠিক হবে না বলেই আমাদের মনে হয়েছিলো। কারণ সব থেকে বড় সমস্যা চিকিৎসাজনিত। তাই সেই বৃদ্ধাশ্রমটা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। আমার পুণের চাকরিতে যোগদানের প্রথম আটমাস মা দিদির কাছে হায়দরাবাদে ছিল। আর তারপর থেকে পুণেতে আমাদের সাথেই। ততদিনে আমার স্ত্রীপুত্রও পুণে চলে আসে।
পুণে তে ছেলে - বৌমা - নাতির সাথে থাকার একটা সুখানুভূতি হয়তো ছিলো। কিন্তু যেটা ছিল না সেটা হল কথা বলার লোক। আর সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশ যেখানে বাংলায় কথা বলার কেউ নেই। নেই সমবয়স্ক ও সমমনস্ক কেউ। আমি অফিসে চলে যেতাম, আমার স্ত্রীও কলেজে চলে যেতো। নাতি কে নিয়ে আর টিভি দেখে সারাদিন কাটে। শারীরিক অসুস্থতার সাথে লড়াই করতে করতে মা তখন ক্লান্ত। দু দুবার দুটো পা ভেঙে দুবার ভারী সার্জারি। প্রায়ই ইউটিআই। দিনের পর দিন ওষুধের সংখ্যা বেড়ে চলেছে - সাথে রোজ ইনসুলিন তো আছেই। একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি। মনমেজাজটাই ভেঙে গিয়েছিলো। নাতির সাথে দৌড়ঝাঁপ করার শারীরিক সক্ষমতাও আর নেই। সেই ছোটো বয়স থেকেই তো সংসারের চাপ! তারপর বৃদ্ধাশ্রম ছেড়ে দেওয়ার একটা আফসোস তো ছিলই।
শেষবার পা ভাঙল গতবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। পেসমেকার পাল্টানোর কথা ছিল, তার আগেই স্নান করার সময় পড়ে গিয়ে পা ভাঙল। হাসপাতালে পায়ের সার্জারি হওয়ার পর যখন ছাড়া পেলো, তখন করোনা অতিমারী শুরু হয়ে গেছে। যখন শরীরটা একটু ভালোর দিকে, তখন ইউটিআই শুরু হলো আবার। ধীরে ধীরে ভুলে যেতে শুরু করলো। শেষ সার্জারির ধকল আর নিতে পারলো না। গত বছর পাঁচই সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সেরিব্রাল অ্যাটাক হল। করোনা অতিমারীর ভয়ঙ্কর অবস্থায় পুণের কোনো হাসপাতাল, নার্সিংহোমেই তখন কোনো শয্যা খালি নেই। পরিচিত ডাক্তারবাবুরাও অসহায় অবস্থায় তাঁদের অক্ষমতা জানিয়ে দিলেন। আমার সরকারি চাকরির কোনো সুবিধেই কোনো কাজে এলো না। এমন কি একটা অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া গেলো না। মা তখন প্রায় - অচেতন। শেষ অবধি আমার নিজের গাড়িতেই কয়েকজন সহকর্মীর সাহায্যে ও একজন সহকর্মীর ব্যক্তিগত প্রভাবে একটা মাঝারি মানের হাসপাতালে মা'কে নিয়ে যেতে পারলাম। সেখানে ডাক্তার দেখার পর বাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। সে সময় মায়ের যে সাপোর্ট সিস্টেম দরকার ছিল, সেটি ওই হাসপাতালে নেই এবং আরো জানালেন, যে সব হাসপাতালে সেই সাপোর্ট সিস্টেম আছে সেগুলোর কোথাওই একটুও জায়গা নেই। শেষ চেষ্টা হিসেবে আরো ছোটো একটি নার্সিংহোমে গেলাম। সেখানেও ডাক্তার একই কথা বললেন। সাথে জুড়লেন, বড় নার্সিংহোমে জায়গা পেলেও মা করোনা আক্রান্ত হবে এবং তাতে আমাদের সমস্যা আরো বাড়বে!
মা কে নিয়ে যখন ফিরে এলাম তখন ঘড়ি তে প্রায় দুপুর দেড়টা। বাহুল্য বর্জিত তিন কামড়ার এক সরকারি আবাসনের একটি ঘরে বসে আমি তখন কিংকর্তব্যবিমুঢ়, আমার পুত্র অন্য একটি ঘরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চুপ করে বসে আছে, মায়ের পরিচারিকা তখন ডাইনিং রুমে দুপুরের খাবার খাচ্ছে আর আমার সহধর্মিণী, আমার এক সহকর্মী এবং আমার বিভাগীয় প্রধান ও ওঁনার স্ত্রী মায়ের ঘরে বসে মায়ের শেষ লড়াইয়ের সাক্ষী। দিদি তখন হায়দরাবাদে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে। হুঁশ ফিরল আড়াই টা নাগাদ যখন আমার সহকর্মী আমায় বললো "সুমন, তুমহারা মাতাজী শায়দ ঔর নেহি হ্যায়"। সাড়ে তিনটে নাগাদ আমার আর এক সহকর্মীর ডাক্তার-পত্নী এসে আনুষ্ঠানিক মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করলেন ও বিকেল পাঁচটা নাগাদ আমার অফিসের সরকারি ডাক্তারবাবু এসে ঔপচারিক মৃত্যু-শংসাপত্র আমাকে দিয়ে গেলেন।

শিক্ষক দিবসের দিনেই হারালাম আমার জীবনের প্রথম ও প্রধান শিক্ষক আমার মা কে। মায়ের আঁচলের হলুদের গন্ধে বড় হওয়া এক অতি সাধারণ মফস্বলের ছেলে কে আজকের মেট্রোপলিটান তৈরী করতে মায়ের সময় লেগেছিল ৪৩ বছর। আর এই ৪৩ বছরের নাড়ির যোগ ছিন্ন হয়েছিল মাত্র একটা মুহুর্তে - যে মুহুর্তের একটা দিকে 'মা আছে', অন্য দিকে 'মা ছিল'।

নীচে পাঁচটি ছবি দিলাম। ১: মায়ের কলেজ জীবনের তৃতীয় বর্ষের ছবি। ২: মায়ের গানের ডায়েরির একটি পাতা। নিজের হাতের লেখায় গীতবিতানের একটি গান। ৩: কলকাতায় বৃদ্ধাশ্রমে থাকাকালীন বিভিন্ন মুহূর্তের কোলাজ। ৪: আমার পুত্রের জন্য একটি খাতায় মা নিজের হাতে অনেকগুলি ছড়া লিখেছিল, যেগুলি আমরাও ছোটবেলায় পড়েছি। সব ছড়াগুলোই মা স্মৃতি থেকে লিখেছিল। সেই খাতারই একটা পাতার ছবি। ৫: শেষবার ২০১৯ সালের অক্টোবরে দমদমে বড় মাসিমনীর বাড়ি তে ভাইফোঁটার দিন। ছবি তে মা, আমার দুই মামা (বড় ও ছোট) ও দুই মাসিমনী (বড় ও সেজো)।

সুমন সিনহা
০৫/০৯/২০২১







Friday, June 11, 2021

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

রায় - সেন - ঘটক পরবর্তী সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলা চলচ্চিত্রের কৌলিন্য যাঁর হাত ধরে বেঁচেছিল, তিনি চলে গেলেন আজ। শুধু পরিচালক হিসেবে নন, কবি হিসেবেও সমাদৃত ছিলেন। 'তাহাদের কথা' বলবার লোক কমে গেলো আরো, 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান'ই বা কে লিখবেন এখন! কবিতার 'চরাচর' রিক্ত হল।

"মানুষ বেঁচে থাকে, মানুষ মরে যায়
কাহার তাহাতে ক্ষতি? কিই বা ক্ষতি হয়? 
আমার শুধু বুকে গোপনে জ্বর বাড়ে
মানুষ বেঁচে থাকে, মানুষ মরে যায়।"

যে 'দূরত্ব' আজ সৃষ্টি হল তা ঘোঁচবার নয় জানি। তবু বিশ্বাস রাখি 'স্বপ্নের দিন' আসবেই একদিন। শ্রদ্ধা জানাই আপনাকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। 🙏

সুমন সিনহা
১০/০৬/২০২১



Wednesday, May 19, 2021

অধ্যাপক পূর্ণেন্দু সেন

 এ শোক বড়ই ব্যক্তিগত...

আজ দুপুর একটা একত্রিশ মিনিটে দেবোজ্যোতি দার সংক্ষিপ্ত একটা মেসেজ "P.S স্যার নেই"। অফিসে থাকাতে মেসেজ টা সাথে সাথে দেখতে পারিনি। দেখার পর কিছুক্ষণ বাকস্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। এত স্মৃতি, এত কথা, এত ভালোবাসার ভার যে কি দুঃসহ হতে পারে তা আজ বুঝছি। এ আমার পিতৃবিয়োগের সমান। হ্যাঁ, P.S নামেই গোটা বহরমপুর আর মুর্শিদাবাদের মানুষ তাঁকে এক ডাকে চিনতেন। বহরমপুর কৃষনাথ কলেজের পদার্থবিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক পূর্ণেন্দু সেন আজ সকালে প্রয়াত হয়েছেন। মূলতঃ যাঁর জন্য পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসা নিয়ে ফিজিক্স অনার্স পড়া ও পরবর্তী কালে যাঁর অসম্ভব প্রভাব আমার জীবনে, তিনি চলে গেলেন আর দু হাজার কিমি দূরে বসে তাঁর শেষকৃত্যে না থাকতে পারার যন্ত্রণা ও অসহায়তা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
স্যারের কাছে প্রথম ফিজিক্স পড়তে শুরু করি উচ্চমাধ্যমিকের সময় থেকে। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই পড়া শুরু হয়ে গেছিল। স্যারের কাছে পড়ার চান্স পাওয়া যাবে কিনা সেটা নিয়ে সবার মধ্যেই একটা দুশ্চিন্তা থাকতো কারণ বহরমপুর শহরে ওঁনার কাছে পড়ার একটা বিশাল ডিমান্ড বা ক্রেজ ছিল সে সময়। আমাকে সেসব ভাবতে হয়নি কারণ আমার দিদিও ওঁনার কাছে পড়তেন। তাই মাধ্যমিকের পর প্রথম যে দিন ওঁনার বাড়ি যাই দিদির সাথে, ওনার সেই অননুকরনীয় হাসির সাথে উনি দিদি কে বলেছিলেন "তোর ভাই, পাঠিয়ে দিস"। সেই শুরু... পরের টা আজ ইতিহাস।
ওঁনার পড়ানোর একটা অদ্ভূত অনন্য স্টাইল ছিল। থিওরির থেকে প্রবলেম সলভ করার ওপর গুরুত্ব বেশি দিতেন। উচ্চমাধ্যমিকে পড়বার সময়ই সব ছাত্র ছাত্রীদের পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন যে অঙ্ক কষতে যদি উৎসাহ না থাকে, তাহলে ফিজিক্স না পড়াই না ভালো! উনি পদার্থবিদ্যার থিওরি গুলোও বোঝাতেন অঙ্ক নির্ভর করে। উচ্চমাধ্যমিকের দু বছরে এমন একটা দিনও মনে পড়ছে না যেদিন উনি কোনো অঙ্ক করান নি! ক্লাস XI- এ নিউটনিয়ান মেকানিক্স পড়ানো শুরু করবার আগে উনি ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস শিখিয়েছিলেন কারণ আমাদের সময়ে ক্যালকুলাস ছিল ক্লাস XII এর অঙ্ক সিলেবাসে। আর যেহেতু ক্যালকুলাস ছাড়া নিউটনিয়ান মেকানিক্স অসম্পূর্ণ, তাই আগে ক্যালকুলাস শেখো, তারপর নিউটনিয়ান মেকানিক্স পড়ো। আমাদের পড়াতেন আর একটার পর একটা সিগারেট পোড়াতেন। দুটোই বোধহয় সমান নেশা ছিল! উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ফিজিক্স অনার্স নিয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হলাম। তারপর থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে স্যারের সাথে। কি অকৃত্রিম যে ভালোবাসতেন আর স্নেহ করতেন আমাকে। কলেজে এমন কোনো ছাত্র ছাত্রী ছিল না যে স্যারের একটা ক্লাসও মিস করত। সিম্পলিসিটি একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছিল স্যার কে, সে পড়ানোর ক্ষেত্রেই হোক বা ব্যক্তি জীবনেই হোক। কিন্তু খুব কড়া ছিলেন। সবাই সমীহ করতেন। কলেজের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে এই প্রসঙ্গে। অনেক বন্ধু বান্ধবই কিছু শিক্ষকের থিওরি ক্লাস করত না কিন্তু প্র্যাকটিকাল করতে আসত। স্যার এটা লক্ষ করেন এবং একদিন হঠাৎ থিওরির অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টার হাতে নিয়ে প্র্যাকটিকাল শুরু হওয়ার আগে ল্যাবের সামনে বসে আছেন। যারা সব থিওরি ক্লাস করে নি, তারা ল্যাব করতে পারবে না। সেদিন মাত্র দুজন ল্যাব করতে পেরেছিল, আমি আর অভিজিৎ। অনেক অনুরোধ, কাকুতি মিনতি করেও স্যার আর কাউকে ল্যাবে ঢুকতে দেন নি। এবং উনি বলেছিলেন এরকম হঠাৎ হঠাৎ উনি এবার থেকে চেক করবেন এবং থিওরি না করলে ল্যাব করা বন্ধ করে দেবেন। না, কেউ কোনো আন্দোলন বা অভিযোগ করে নি সেদিন। উল্টে পরের দিন থেকে কেউই অকারণে আর থিওরি ক্লাস মিস করার সাহস দেখায় নি। পরের দিন থিওরি ক্লাসে উনি সব ছাত্র ছাত্রী দের অনেকক্ষণ ধরে বুঝিয়েছিলেন যে "সব শিক্ষক শিক্ষিকা কখনোই একই রকম পড়ান না, প্রত্যেকের পড়ানোর নিজস্ব ধরণ থাকে। পছন্দ হচ্ছে না বলে কিছু শিক্ষক শিক্ষিকার ক্লাস বাঙ্ক করব, এটা অসভ্যতামী ও শিক্ষক শিক্ষিকার প্রতি অপমান করা। তোমরা মনে রাখবে প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষিকাই ক্লাসের আগে একটা প্রিপারেশন নিয়ে আসেন। বুঝতে না পারলে একাধিকবার জিজ্ঞেস করবে কিন্তু হতাশ করবে না। ভালো না লাগলেও তাঁদের ক্লাস নোটস্ গুলো নিয়ে রাখবে, পরীক্ষার আগে সুবিধে হবে। কিন্তু ক্লাস বাঙ্ক কখনো করবে না।" এই ছিলেন স্যার। কখন যে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক টা ব্যক্তিগত হয়ে গেছিল, বুঝতেই পারিনি। কত সময় যে স্যারের বাড়িতে কেটেছে। তখন বোধহয় B.Sc সেকেন্ড ইয়ার। কিছু একটা বুঝতে না পেরে স্যারের বাড়ি গিয়েছি আলোচনা করতে। স্যার বলেছিলেন "দেখ সুমন, প্রত্যেক টা সাবজেক্টের একটা নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ আছে। ইকনমিক্স বা ইতিহাসের যেমন একটা ভাষা আছে, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বা অঙ্কেরও একটা নিজস্ব ভাষা আছে। সেটা যদি বোঝার চেষ্টা না করিস, তাহলে সেই সাবজেক্টের ভেতরে ঢুকতে পারবি না কোনোদিন।" সেদিন কত টা অনুধাবন করতে পেরেছিলাম জানি না, তবে বয়স বা অভিজ্ঞতা যতো বেড়েছে তত উপলব্ধি করেছি কথাটার অর্থ। বহরমপুর ছেড়ে সায়েন্স কলেজে M.Sc পড়তে যাওয়ার আগে যে দিন প্রণাম করতে গেলাম স্যারের বাড়ি, চলে আসার আগে বলেছিলেন "পিএইচডি টা করিস যেনো"। M.Sc পাস করার পর সাথে সাথে কোনো রিসার্চ ফেলোশিপ পেলাম না। সাতদিনের মধ্যেই কলকাতার বাসন্তীদেবী কলেজে আংশিক সময়ের শিক্ষকের পদে একটা ইন্টারভিউ দিয়ে চান্স পেয়ে গেলাম। ওখানেই পড়াতে শুরু করলাম। বহরমপুরে স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম ও কলেজে পড়ানোর ব্যাপারে পরামর্শ চাইলাম। শুনে বললেন "যা পড়াবি বোর্ডে পুরো টা লিখবি। আর ডেরিভেশন করার সময় কোনো স্টেপ বাদ দিবি না। তুই যেটা পড়াচ্ছিস সেটা যে সবাই বুঝছে, তা কখনোই ধরে নিবি না। কিন্তু বোর্ডে যা লিখবি সেটা সবাই লিখে নেবে। পরে ছাত্র ছাত্রী রা তোর ক্লাস নোটস্ টাই দেখবে যে সুমন স্যার কি কি পড়িয়েছিল ক্লাসে। আর কখনোই এক টানা বোর্ডে লিখে যাবি না। ছাত্র ছাত্রী দের 'ফেস রিড' করার চেষ্টা করবি আর প্রশ্ন করবি। তাতে নিজেকে অ্যাসেস করতে পারবি কত টা ভালো বা খারাপ পড়াচ্ছিস।" পরবর্তী কালে যেখানে যা পড়িয়েছি, স্যারের কথা গুলো মনে রাখার চেষ্টা করেছি। সেদিনও আসার আগে বলেছিলেন "একটা ফেলোশিপ জোগাড় করে PhD টা করিস, বেশী দেরী করিস না"। তার পরে যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে ঢুকি, খুব খুশি হয়েছিলেন। যখনই বহরমপুরে গিয়ে ওঁনার সাথে দেখা করতে গেছি তারপর, উনি বলতেন "কি গবেষণা করছিস একটু বোঝা তো দেখি", সাথে সেই অননুকরনীয় হাসি। আর কাকিমা কে বলতেন " সুমন এসেছে, লিকার চা করো"। লাস্ট যখন ২০১৯ এর নভেম্বরে বহরমপুরে গিয়ে দেখা করতে গেলাম ওঁনার সাথে, তখন কাকিমা আর নেই। স্যারের চেহারা টাও বেশ ভেঙে গেছে দেখলাম, শরীরও ভালো ছিল না খুব একটা। তবু কাজের দিদি কে বললেন "লিকার চা করো"। আশি বছর বয়সেও অশক্ত শরীরে উনি মনে রেখেছেন আমি লিকার চা খেতে ভালোবাসি। কতটা আন্তরিকতা থাকলে এই আপাত তুচ্ছ ব্যাপার গুলো লোকে মনে রাখে তাই ভাবছিলাম। কত বিষয়ে যে কত কথা হয়েছিলো সেদিন!
অধ্যাপক ছাড়াও ব্যক্তি পূর্ণেন্দু সেন কে নিয়ে দু চার কথা না বললেই নয় আজ। যে পরিশ্রম আর যত্ন নিয়ে 'কৃষ্ণনাথ কলেজ প্রাক্তনী সংসদ' (Krishnath College Alumni Association) উনি গড়ে তুলেছিলেন তা আমার মতো অনেকেই নিজের চোখে দেখেছেন। একটা সংগঠনের সাথে অনেক লোক জড়িয়ে থাকেন। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম মতামত। তবুও সবাই কে নিয়ে কিভাবে একটা সংগঠনকে চারাগাছ থেকে মহীরুহে রুপান্তরিত করতে হয়, স্যার সেটা দেখিয়ে গেছেন। আক্ষরিক অর্থেই আজ আমরা অভিভাবকহীন। প্রাক্তনী সংসদ কে পূর্ণ অবয়ব দিতে গিয়ে কখন আবেগ কে গুরুত্ব দিতে হয় আর কখন শক্ত হাতে হাল ধরতে হয়, প্রয়োজনে অপ্রিয় সত্য বলেও, তা শিখেছি আমি স্যারের কাছে। প্রাক্তনী সংসদের শুরুর দিনগুলো খুব মনে পড়ছে আজ। তখন আমি কলকাতায় পড়াশোনা করছি। কি প্রচণ্ড অধিকারবোধ থেকে আমাকে কত কিছু করতে বলতেন। কত বড় বড় ব্যক্তির সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছেন আমার। প্রাক্তনীর প্রত্যেক টা সভা তে বক্তৃতা দিতেন মূল বিষয় থেকে একটুও সরে না গিয়ে অথচ কোনো আড়ম্বর নেই, কোনো শক্ত শব্দ প্রয়োগ নেই! সম্ভবত সেটা ২০০৩ বা ২০০৪ সাল। কলকাতার নন্দন-২ প্রেক্ষাগৃহে প্রাক্তনী সংসদের সভা। সেই প্রথম রাজা সৌমেন্দ্র নন্দী প্রাক্তনী সংসদের কোনো সভা তে আসছেন। আমাকে আর কৌনিক কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো যাঁরা প্রাক্তনী সংসদে যা দান করবেন, তার রসিদ কেটে দেওয়া। সেদিন স্যার 'প্রাক্তনী সংসদের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তব অবস্থা' নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সভা শেষে চা জলখাবারের সময় প্রায় প্রত্যেকেরই আলোচনার বিষয় ছিল স্যারের বক্তৃতা। কিন্তু কোনোদিন নিজেকে এতটুকুও জাহির করেন নি। প্রাক্তনী সংসদের কাজ, দায় ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সবসময়ই বহুত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। কলেজের নাম পরিবর্তন নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। শেষবার যখন দেখা করতে গেলাম তখনও জিজ্ঞেস করছিলেন কি করে কি করা যায়। আক্ষেপ থেকে গেলো শেষ দেখে যেতে পারলেন না।
যে কোনও বিষয়ে নিজের মতামত দেওয়া থেকে নিজেকে কখনো দূরে সরিয়ে রাখেন নি স্যার। গা বাঁচিয়ে চলাটাই যখন জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন স্যার ছিলেন উজ্জ্বল ব্যাতিক্রম। অফিস থেকে ফিরে প্রাক্তনী সংসদের বর্তমান সেক্রেটারির সাথে কথা হচ্ছিলো। শেষের দিকে স্যার খুব একা হয়ে গিয়েছিলেন। কোভিড - 19 রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর হয়তো একটু আশার আলো জেগেছিল সবার মনে। কিন্তু না, স্যার কি কিছুটা সেচ্ছামৃত্যুও চেয়েছিলেন? যে সব কান চারপাশের লোকজনের গুণগান শুনতে অভ্যস্ত, স্যার কোনোদিনও তা রপ্ত করতে পারেন নি। চানও নি। মৃত্যুর মধ্যে দিয়েও হয়তো সেটাই বুঝিয়ে গেলেন। ওঁনার ঋজু মেরুদন্ডই আমাদের আগামীর পাথেয় হোক।
Rest in Physics স্যার।
নিচের ছবিটি ২০১৯ এর নভেম্বর মাসে ওঁনার বাড়িতে তোলা। দেবোজ্যোতি দা তুলে দিয়েছিলো।

সুমন সিনহা
১৮/০৫/২০২১


Thursday, April 29, 2021

Irrfan Khan

    Last year on this day, Sahabzade Irfan Ali Khan, popularly known as Irrfan Khan or simply Irrfan left us. It was his personal choice to add an extra 'r' in his name. Irrfan Khan, a name synonymous with struggle, persistence and consistency is a phenomenal talent in the filed of arts. With no godfather in Bollywood or Hollywood, he had conquered the hearts of movie-lovers and left a lasting impression in the cinema world. Irrfan was described by Peter Bradshaw of The Guardian as a "distinguished and charismatic star in Hindi and English-language movies whose hardworking career was an enormously valuable bridge between South Asian and Hollywood cinema". 
    He did never typecast him and the adjective which describes him best is perhaps versatility. Born in Rajasthan into a Muslim family of Pathans with Rajasthani ancestry, Irrfan used to paly cricket well and was selected in the prestigious CK Nayudu Trophy for emerging players under 23 category. However, he failed to attend as he could not afford travel expenses. He was influenced by his maternal uncle who was a theatre artist in Jodhpur. He did a number of stage performances at his early age in Jaipur where he was introduced with noted theatre artists. On completion of his MA in Jaipur, he joined National School of Drama (NSD) in New Delhi in 1984 to study acting.
    Just after his graduation from NSD in 1987, Irrfan made his debu with Mira Nair's 'Salaam Bombay' with a minor role. Since then, he acted in numerous television serials, teleplay, drama films as well as various other films. Few of them, which deserves special mention, are 'Laal Ghaas Par Neele Ghode' (he played Lenin in the teleplay), 'Bharat Ek Khoj', 'The Great Maratha', 'Chandrakanta' (90s supernatural fantasy period drama). Irrfan also played the famous revolutionary, Urdu poet and Marxist political activist of India, Makhdoom Mohiuddin in 'Kahkashan'. Few of his critically acclaimed films in his early career are 'Kamla Ki Maut' (opposite Roopa Ganguly, 1989), 'Ek Doctor Ki Maut' (1990) and 'Such A Long Journey' (1998). Unfortunately, all these went unnoticed! The historical film 'The warrior' (2001), where he was cast as the lead, opened at international film festivals. In 2004, his outstanding performance in 'Maqbool', an adaptation of Shakespeare's Macbeth, was very much critically acclaimed. 
    It is until 2007 when he came up with box office commercial hits 'The Namesake' and 'Life in a Metro', which won him Filmfare Best Supporting Actor Award. The very next year came his international success with 'Slumdog Millionaire', for which he won the Screen Actors Guild Award for Outstanding Performance. He will always be remembered for his remarkable performance in the title character in 'Paan Singh Tomar' (2011), which won him the National Film Award for Best Actor. He went on to gain critical acclaim for his starring roles in 'Life of Pi' (2012), 'The Lunchbox' (2013), 'Piku' (2015), 'Talvar' (2015), 'Jurassic World' (2015) and 'Inferno' (2016).  His rejection to a big offer in the 'Interstellar' for 'Lunchbox' in 2013 shows his commitment towards work. 
    Irrfan's most commercial hits (highest grossing) came with 'Hindi Medium' (2017) and his final screen appearance was in its sequel 'Angrezi Medium' (2020). These two performances won him the Filmfare Award for Best Actor in 2018 and 2021 (posthumously). He has a National Film Award, an Asian Film Award and six Filmfare Awards among numerous accolades to his credit. He was awarded the Padma Shri in 2011 and Filmfare Lifetime Achievement Award posthumously in 2021.
    Let me conclude with an incidence which shows his recognition in global level. Julia Roberts once stopped outside the Kodak theatre where Oscars were being staged, just to compliment Irrfan Khan on his brilliant performance in the movie 'Slumdog Millionaire' (2008).

Rest in arts Irrfan !!

Suman Sinha
29/04/2021



ঋতুপর্ণ ঘোষ

সেদিনের পর থেকে কতো সিনেমার "শুভ মহরৎ" হলো, কতো "বাড়িওয়ালি" সিনেমার শুটিং-এর জন্য তাদের বাড়ি ভাড়া দিলেন, কিন্তু সিনে...