Showing posts with label সমসাময়িক / Contemporary. Show all posts
Showing posts with label সমসাময়িক / Contemporary. Show all posts

Wednesday, January 22, 2025

Career Sketch

School educators, parents, academic professionals and my friends in social network, my elder sister Sutapa Sinha (whom I dearly call as didi) is presently associated with a reputed higher secondary school in Hyderabad and takes science classes of students of class IX, X, XI and XII. Recently, she has opened up her own company “Career Sketch” for career counselling and education mentorship to guide and expose students to proper career avenues. What a proud moment for all of us on her professional achievement!! The concept and design of “Career Sketch” are all her own with very little help from all of us. Click on “Career Sketch” to have a view. I recommend without any reservation that “Career Sketch” will surely be beneficial for the students in choosing their right career opportunities. Request you all that if anyone in your circle is interested to book a session with her, please bring this to their notice.

Hope she will offer me a position in her own company someday as I am the only odd man out (my elder sister, brother-in-law and wife are all in academics)! Jokes apart, I cannot resist my temptation of describing her journey behind and how “Career Sketch” sees the light the day. Here it goes with a request to read…

My elder sister is a teacher by choice and passion. Having completed her Master’s degree in Chemistry with a first class from University of Calcutta (Rajabazar Science College Campus) and subsequently qualified for NET, she could not afford to continue for a PhD degree for certain reasons. Instead, she joined in a Government aided school as an assistant teacher in Chemistry at Farakka in Murshidabad district through West Bengal School Service Commission (SSC). It was the first SSC in West Bengal, which dates back to 1999. In 2003 when my brother-in-law was doing his postdoctoral in United States (US), she went to US. Within a few months, she got a job of school teacher there and at the same time was preparing for GRE and TOEFL examinations. After qualifying for the GRE (both general and subject) and TOEFL, she got herself admitted to SUNY, Albany at New York, a research university of repute founded in 1844, for a PhD programme in Chemistry. At SUNY Albany, she also took classes of the graduate students as a part of the PhD programme. As ill luck would have it, she could not complete the PhD programme due to various reasons and had to return to India (Hyderabad). Coming back to India in 2005, she joined in an undergraduate college in Hyderabad. With different health issues cropping up, she had to leave that job too due to family planning. She preferred to manage her home till 2013 when her twins (one boy and one girl) was at standard I.

In 2013, she joined in a reputed international higher secondary school in Hyderabad to cherish her passion of teaching the young and impressionable minds. Soon she realized that it is the motivation and the interest in the subjects that majority of the students need for a good academic career. Merit comes thereafter. Since the students come from a variety of socio-economic strata having different family structures, understanding the psychology of the young minds in their own way is the key for an interactive teaching-learning process. With this dedication and zeal, she got herself admitted to two years Master’s degree in psychology (with special paper in child psychology) in IGNOU. With this formal training as a counsellor, she did counselling to countless students (and parents) of her school to attract them to the importance of a good education and a decent academic career. With an aim to expose the students to the experimental verification and the practical applications of the theories of science, she left no stone unturned to convince the school management of the importance of a modern and state-of-the-art science laboratory. And finally, with great zing, she succeeded in establishing a modern science laboratory in her school for the students of class XI and XII.

The rapid application of digital technology in education, huge amount of corporate capital investment in education sector and new policies by our Government bring about an accelerated change in the education system. Coping with this fast-changing scenario requires a good degree of management and leadership capacity to address any challenges that such a transformation may entail. With an attempt to build and enhance the leadership capacity and management know-how, she got herself admitted to Education Leaders’ Programme (EdLEAP) in Indian Institute of Management (IIM), Calcutta and completed the programme with flying colours last year. The pedagogy of EdLEAP is a combination of lectures, case studies and workshops. It is mention-worthy that her case study in EdLEAP on the topic of  “empowering all learners without a barrier with a focus on the curriculum for students with Specific Learning Disability (SLD) in secondary schools” got widely appreciated by all and was awarded as an excellent case study. It may be noted that “SLD are a group of neuro-developmental disorders characterized by severe and persistent difficulties in learning to efficiently read (dyslexia), write (dysgraphia) and/or to perform mathematical calculations (dyscalculia); despite normal intelligence, conventional schooling, intact hearing and vision, adequate motivation and socio-cultural opportunity”. These difficulties lead to their poor school performance, cause anxiety and social mal-adaptation. Here comes into the picture the counselling of the students and their parents. So apart from holding traditional academic degrees for teaching and degree of management and leadership quality for execution of the transformation in the education system, she went for few certification courses from recognized and reputed institutions. A B.Ed degree and a Master’s in psychology were an added advantage for her to do those certifications which include a Green Belt Certificate from Univariety, a Global Career Counsellor Certificate from UCLA extension and a certified career planner from Infigon Futures, certified by Government of India. By this time, she moved to another reputed higher secondary school in Hyderabad, which stresses the need of students with SLD.

With all these accomplishments and having an aim to guide and expose the students to the right career path, she opens up her own company “Career Sketch” for career counselling and education mentorship. Hope “Career Sketch” grows with time and I wish her all success in all her future endeavours.

P.S. My elder sister neither takes any private tuition nor is associated with any coaching centers by any means. She never.

After reading this, if you think that the post is worth sharing, please feel free to share it.

Suman Sinha
21/01/2025







Saturday, September 7, 2024

আহা, বেশ বেশ বেশ...!!!

আজ শিয়ালদহ আদালতে আর. জি. করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ধৃত সঞ্জয় রায়ের মামলার শুনানিতে সি. বি. আইয়ের তদন্তকারী অফিসার (I. O) উপস্থিত ছিলেন না!! এমনকি সি. বি. আইয়ের তরফে কোনো আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন না! আদালত বন্ধ হওয়ার মুখে একজন নতুন আইনজীবী আসেন যিনি সি. বি. আইয়ের নিজস্ব আইনজীবি নন! I. O একজন সহকারী পাঠান যিনি কেসটি সম্পর্কে নাকি সম্যক অবহিত নন! শোনা যাচ্ছে বিচারপতি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন তাহলে ধৃতকে জামিন দিয়ে দেবেন কিনা! শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ বিচারপতি ধৃতকে চৌদ্দ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান।

কোন্ রাজনৈতিক দলের ছাত্রসমাজ, নেতা নেত্রীরা চিৎকার করে যেনো বলছে ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি করবেন না...
ভাবুন, ভাবা প্র্যাক্টিস করুন।

সুমন সিনহা
০৬ / ০৯ / ২০২৪

Tuesday, June 7, 2022

দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট

Is starvation a performing art? এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক বহুযুগ ধরে চলে আসছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক অবধি 'হাঙ্গার আর্টিস্ট'রা পারফর্মার-ই ছিলেন কারণ তারা টাকার বিনিময়ে মানুষের মনোরঞ্জন করতেন। কিন্তু তাদের মনোরঞ্জনের পদ্ধতিটি ছিল অভিনব। তারা খাঁচার মধ্যে একটি চেয়ারে বসে দীর্ঘদিন উপবাস করতেন এবং সেটি দেখতে দর্শকরা টাকা খরচ করে ভিড় জমাতেন। এমনকি রাতেও দর্শক সমাগম হতো। ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে এই অ্যাক্ট খুবই জনপ্রিয় ছিল। যত বেশিদিন একটানা উপোষ (৪০ দিনের বেশি নয় যদিও) করে থাকতে পারবে, তত বেশি ভিড় ও টাকা। এই হাঙ্গার আর্টিস্টদের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছিলাম ফ্রানৎজ কাফকা'র বিখ্যাত ছোটগল্প "আ হাঙ্গার আর্টিস্ট" - এর (১৯২২) মাধ্যমে। ১০০ বছর পর কাফকা'র এই বিখ্যাত ছোটগল্পটি অবলম্বনে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleswar Mukherjee) বানালেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের বাংলা চলচ্চিত্র "দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট"।

বর্তমান পুঁজিবাদ (capitalism) সর্বস্ব সমাজে বাজার অর্থনীতি (market economy) কিভাবে একজন শিল্পীর অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ (control) করে, সেটাই সিনেমাটির মূল বক্তব্য। ছবির মূল চরিত্র দুই তরুণ বন্ধু - ভূতো আর ঘনা। ভূতো রাজনৈতিক ভাবে সচেতন একজন তরুণ যে সমসাময়িক বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর খবরাখবর রাখে। বিশ্বের যে প্রান্তেই কোনো সন্ত্রাস বা অত্যাচারের ঘটনা ঘটুক না কেনো, ভূতো তার প্রতিবাদে অনশন করে এবং ভূতো বেশ কয়েকদিন না খেয়ে থাকতে পারে। ঘনা ভূতোর এই অনশন করার ক্ষমতাকে মূলধন (capital) করে মুনাফা (profit) করবে ঠিক করে এবং সেইমতো ভূতোকে ক্রমাগত বোঝাতে থাকে যে ঠিকমতো প্রচার ও প্রোপাগান্ডা পেলে অনশনও বাজারে বিক্রি হয়। আর সেটা করতে পারলে ভূতো সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে একজন শিল্পী হিসেবে - 'অনশন শিল্পী'! এই সমাজে সবাই চায় মনোযোগ পেতে - ভূতো ঘনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। ঘনা ভূতোকে নিয়ে শো আয়োজন করে এবং সেই শো চারদিকে শোরগোল ফেলে দেয়। প্রচারের সমস্ত আলো তখন ভূতোর ওপর। মূলস্রোত সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যমে তখন শুধুই চর্চার বিষয় ভূতোর অনশন শো। চারদিকে ভূতোকে নিয়ে বিজ্ঞাপন। একটি শো থেকে পরের শো তে ভূতোর অনশন করার দিন সংখ্যা বাড়তে থাকে - মিডিয়া আরো বেশি মাতামাতি করে। কর্পোরেট দুনিয়ার কর্তার চিন্তা "ভূতো ২% ভোট সুইং করাতে পারে!" ভূতো ততদিনে নিজেকে পুরোদস্তুর একজন শিল্পী অর্থাৎ 'অনশন শিল্পী' ভাবতে শুরু করে দিয়েছে এবং প্রচার মাধ্যমের আলোয় থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অনশনের ১৮ দিনের মাথায় যখন ভূতোর মা ভূতোর প্রিয় খাবার নাড়ু নিয়ে আসেন, ভূতো বলে সে "ভাবের ঘরে চুরি করতে পারবেনা " কারণ সে "একজন প্রকৃত শিল্পী"। ভূতোকে ভালোবেসে যখন এক মহিলা সাংবাদিক ভূতোকে নিজের কথা ভাবতে বলে, যখন ভূতোকে বলে যে "stop this madness", ভূতো তাকেও তাড়িয়ে দেয়। ভূতোর মাথায় তখন ২০ দিন না খেয়ে থাকার ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে প্রকৃত অনশন শিল্পী হওয়ার প্রবল বাসনা! দ্য আর্ট অব হাঙ্গারে ভূতো তখন মোহগ্রস্ত! কিন্তু বাজারের নিয়মেই ভূতোর শো তে দর্শক সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, মিডিয়া কভারেজ কমে আসে, বিজ্ঞাপনও কমতে থাকে - ফলে ঘনার মুনাফাও কমতে থাকে। ঘনা ভূতোকে বলে অনশন পাবলিক আর খাচ্ছে না! ঘনার মাথায় তখন নতুন কোন চমকের ভাবনা যা বাজারে খাবে! ঘনা একজন ঘুম শিল্পীর (slumber artist) খোঁজ পেয়ে যায় যে কোনোরকম মদ্যপান ছাড়াই ৭২ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকতে পারে। অতএব ভূতোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ভূতোর ওপর প্রচারের আলো আচমকাই নিভে যায়। শেষ দৃশ্যে ভূতোর হৃদয়বিদারক চিৎকার "লাইট, লাইট - আমি একজন প্রকৃত শিল্পী - আমি একজন প্রকৃত শিল্পী" বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে দেয়।

ভূতোর চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী অনবদ্য। ঘনার চরিত্রে বিশ্বনাথ বসু বেশ ভালো। সাংবাদিক চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা মন্ডল মনে দাগ কাটে। ১৮ মিনিটের একটু বেশি সময়ের "দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট" মাস দেড়েক আগে ইউটিউবে রিলিজ করেছে। ইতি মধ্যেই বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবে (international short film festival) ছবিটি দেখানোও হয়েছে। ধন্যবাদ কমলেশ্বর বাবু ও ফ্যাটফিশ এন্টারটেনমেন্ট কে এরকম একটি ছবি বানানোর জন্য। সিনেমাটি দেখবার ইউটিউব সংযোগসূত্রটি নিচে দেওয়া থাকলো।

https://youtu.be/05fbZhfIYtM

সুমন সিনহা 
০৭/০৬/২০২২



Thursday, July 1, 2021

জাতীয় চিকিৎসক দিবস, ২০২১

কোভিড অতিমারীর প্রথম তরঙ্গে ৭৪৮ জন ও দ্বিতীয় তরঙ্গে ৭৭৬ জন ডাক্তার কে আমরা হারিয়েছি।
আসুন, এবারে উদযাপনে নয়, স্মরণে ও শ্রদ্ধায় পালন করি জাতীয় চিকিৎসক দিবস। কোভিড-শহীদ ডাক্তারদের পরিবারের পাশে থাকবার অঙ্গীকার করি।#CovidMartyrDoctorsDay

সুমন সিনহা
০১/০৭/২০২১



Wednesday, April 28, 2021

তিনদিন আগে খবরটা শোনার পর থেকেই মন টা ভারাক্রান্ত। বিশ্ববরেণ্য পরিচালক মৃণাল সেন মহাশয়ের ব্যবহৃত আর্কাইভযোগ্য নথি, পুরস্কার কিছুই আর পশ্চিমবঙ্গ বা আমাদের দেশে থাকলো না। ওঁনার পুত্র কুনাল সেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে এসব দান করে দিয়েছেন সংরক্ষণের জন্য। কুনাল বাবুর ফেসবুক পোস্ট থেকে জানতে পারি মৃণাল সেন মহাশয় ওঁনার আলস্য থেকে কোনোদিনই নিজের সৃষ্টিকে যত্ন করে ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন না। উনি জীবিতকালেই ওঁনার 'deep distrust for nostalgia' থেকে নিজের চিঠিপত্র, চিত্রনাট্য, পান্ডুলিপি সবই ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। বাকি যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, সেটুকু মাত্র তিনটে কার্ডবোর্ডের বাক্সেই ধরে যায়! শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই কুনাল বাবু কে প্রথম অনুরোধ করেন যে তাঁরা মৃণাল সেন মহাশয়ের নথিপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ আর্কাইভে সংরক্ষণে আগ্রহী। আমরা আত্মবিস্মৃত জাতি। এই আক্ষেপ থেকেই যাবে যে 'ক্যালকাটা 71' এর নির্মাতার কোনো স্মৃতিচিহ্ন কলকাতা শহরে রইলো না আর। কুনাল বাবুর কথায় "I don't know if anybody will be interested in him or his life in another hundred years." অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকার চেয়ে ওঁনার নথি যদি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগারের বিশেষ আর্কাইভে স্থান পায়, সেটাই কাম্য। কুনাল বাবু সঠিক কাজই করেছেন। সরকারও কি উদাসীন!

এ প্রসঙ্গে বলে রাখি ওঁনার সংগ্রহের কিছু বই মুম্বইয়ের Film Heritage Foundation - এ এবং আরো কিছু বই, ছোটোখাটো আসবাবপত্র ও ব্যক্তিগত কিছু সরঞ্জাম উত্তরপাড়ার 'জীবনস্মৃতি' তে রাখা আছে। ওঁনার ব্যবহার্য কিছু জিনিস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও রাখা থাকবে।

কারোর উৎসাহ থাকলে এই ওয়েবসাইট টি দেখতে পারেন।

সুমন সিনহা
১২/০৪/২০২১

ছবি : আন্তর্জাল


Saturday, April 24, 2021

শংকর

অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা মণিশংকর মুখোপাধ্যায় ওরফে শংকর বাবু। অনেক আগেই আপনার প্রাপ্য ছিল সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার। সময়ে না পেয়ে আপনার কোনো ক্ষতি হয়নি, পুরস্কারের গুরুত্বই হয়তো কমেছে। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য গুণমুগ্ধ পাঠক পাঠিকার ভালোলাগা ও ভালোবাসা, সমাদর, তাঁদের চিঠিপত্তর ও একাধিক কাহিনীর চলচিত্রায়ণের পর নতুন করে কোনও স্বীকৃতির প্রয়োজন আপনার আর পড়ে না।
ষাট সত্তরের দশকে আপনার সৃষ্ট চরিত্ররা এখনও একই ভাবে এই সমাজে রয়ে গেছে। 'সীমাবদ্ধ'র শ্যামলেন্দু এখনও সব অফিসে সংখ্যায় কম হলেও আছে। নিজের পরিশ্রম, বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে চাকরিতে উন্নতি করলেও আসপাশ থেকে শুনতে হয় 'কি কি করতে হল এই উন্নতির জন্য?' 'চৌরঙ্গি' তে উচ্চবিত্ত সমাজের যে ভন্ডামি, নোংরামি দেখিয়েছেন, তা আজ বেড়েছে বই তো কমে নি। সামাজিক অবস্থারও কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে? বেকারত্ব আজ দেশে সর্বোচ্চ। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই চারিদিকে 'জন অরণ্য'র কনাদের কে দেখতে পাওয়া যায়। শুধু একটু বাঁচতে চাওয়ার শখ! আর একই ভাবে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে নৈতিক ও শিক্ষিত সোমনাথদের এই সমাজ যে কখন দালাল বানিয়ে দেয়, কেউ বুঝতেই পারে না। শুধু মনে হল এই সময়ে আপনার এই পুরস্কারপ্রাপ্তি ও স্বীকৃতি কি কোনো কিছুর রূপক!!
ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।

সুমন সিনহা
১২/০৩/২০২১



বন্ধু তোমার পথের সাথী কে চিনে নিও

কাল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর যে অসহায় আর্তনাদ ও অকপট স্বীকারোক্তি শুনলাম ও দেখলাম, সেটা যে এতো তাড়াতাড়ি ঘটবে ভাবতে পারিনি। বিশ্বাস ছিল সত্য একদিন সামনে আসবেই। মাত্র ১৪ বছরের মাথায়ও ইতিহাস রচিত হয়! সিবিআই, বিভিন্ন রকম কমিশন, আদালত যদিও অনেক আগেই ক্লিনচিট দিয়েছিলো। কাল চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক বিরোধী অবস্থানে থাকা একটি দলের ততোধিক বিরোধী নেত্রী ক্লিনচিট দিলেন। রাজনৈতিক ক্লিনচিট। আর যে বাপ-ব্যাটা কে দোষী, ষড়যন্ত্রীকারী ও গণহত্যার মূল হোতা বলে স্বীকার করে নিলেন, তারা মাননীয়ার একদা ছায়াসঙ্গী ও সদ্য অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন, যে দল সাদরে তাদের বরণ করে নিয়েছে!! হায়রে, ইতিহাস এত নির্মম হয়!
মাননীয়া তো স্বীকার করে নিলেন, কিন্তু সেদিন ওঁনার সাথে থাকা যে সকল বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী রেলজীবি বা পরজীবি, মিডিয়া যাদের ঘটা করে গালভরা নাম দিয়েছিলো বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজ, একই সুরে গলা মিলিয়েছিলেন তারা আজ অদ্ভূত ভাবে নীরব কেনো। ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাঁরা যে গণহত্যাকে সমর্থন করলেন, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল করার অপরাধে সেই দলের হাজার হাজার কর্মীর খুন করাকে, ঘরছাড়া করাকে, তাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যে অভিযোগে মিথ্যে মামলা দেওয়াকে সমর্থন করলেন, তাদের সংসার কে ছাড়খার করে দিলেন, সেই দায় তাঁরা নেবেন না আজ? সেদিন যে মিথ্যে, ভুল ও অসত্য কে ক্রমাগত প্রচার করেছেন, আজকে ভুল স্বীকার করে সত্য প্রচারে এগিয়ে আসবেন না তাঁরা? মিডিয়াগুলো আজকে দায় নেবে না?
পাম অ্যাভিনিউয়ের আতিশয্যহীন দুকামড়ার ফ্ল্যাটের নিঃসঙ্গ সম্রাটের কিছুই ক্ষতি হয়নি সেদিন, আজও হয় না, একাধিক সিবিআই, কমিশন, আদালত ইত্যাদি বসিয়েও একটি আঁচড়ও কাটতে পারেন নি আজ পর্যন্ত। রাজ্য বা কেন্দ্রে কোথাও ওঁনার দলের সরকার ছিল না কিন্তু। উল্টে ওঁনার বাড়িতে বা হাসপাতালে ওঁনাকে দেখতে গিয়ে জাতে ওঠার প্রতিযোগিতায় সামিল হতে হয় অন্য দলের নেতা নেত্রী দের!! সেদিন উনি বা ওঁনার দল হেরে যান নি, হেরে গিয়েছিলো বাঙালি জাতি, হেরে গিয়েছিলো অসংখ্য বেকার বাঙালি যুবক যুবতীর স্বপ্ন, পিছিয়ে গিয়েছিলো ভারতের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ। সেদিন যাদের বয়স ছিল ১৮, আজ ১৪ বছর পর তাদের বয়স ৩২। সরকারী চাকরির বয়স আর তাদের নেই প্রায়। একটা গোটা বাঙালি প্রজন্ম হারিয়ে গেলো, নষ্ট হয়ে গেলো। এর দায় কে নেবে মাননীয়া?
শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের নেশায় নীতি নৈতিকতা, বাস্তববোধ, সততা সব কিছুকে ভুলে মিথ্যার বেসাতি ও হিসেববিহীন টাকার সাহায্যে কিছু মিডিয়া কে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন একটি রাজনৈতিক দলের দয়া দাক্ষিণ্যে আপনি ক্ষমতায় এলেন। দ্বিধাহীন ভাবে স্বীকার করছি সেই রাজনৈতিক দলের দায়ও কোনো অংশে কম ছিল না। কিন্তু ক্ষমতায় এসে আপনি কি করলেন? সরকার চালানোর নামে নজিরবিহীন দুর্নীতি, তোলাবাজী, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের মিথ্যে মামলা দেওয়া, প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে আনা ও রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা, সরকারি চাকরির নিয়মিত পরীক্ষাগুলো বন্ধ করে দেওয়া, দান খয়রাতি, ধর্মীয় তোষামোদ... কিছুই বাকি রাখলেন না। আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে আপনি খাল কেটে কুমির ডেকে আনলেন। আপনার দলের অধিকাংশ নেতা কর্মী আজ সেই কুমিরের দলে। আপনার দলে থেকে লুটেপুটে, চেটেপুটে সব কিছু খেয়ে আজ তারা অন্য দলে গেছে মানুষের জন্য কাজ করতে! সব বুঝে, সব জেনেও আপনি অন্ধ সেজে থেকেছিলেন এতদিন, আজ সেই কুমিরই আপনাকে গিলতে আসছে। বামপন্থীরা ক্ষমতা থেকে বিচ্যুত হয়েছে, এটা ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু বাকি প্রসঙ্গ গুলোও তো আজ ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে প্রমাণিত। পারবেন অস্বীকার করতে? রাজনীতির কালবেলায় আজ আপনার অকপট স্বীকারোক্তিতে আক্ষেপ আছে, কোথাও হয়তো সত্য স্বীকার করে নেওয়ার সাহসও দেখিয়েছেন মেনে নিলাম। কিন্তু বিগত ১৪-১৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার যে পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেলো, তার দায় কারা নেবে? যে রাজনৈতিক সচেতনতাবোধের জন্য বাঙালি সবার কাছে সমাদৃত ছিল, তা আজ কলতলার ঝগড়া ও ধর্মীয় বাইনারি তে নেমে এসেছে। এ লজ্জা বাঙালির নয়?? এর দায় কাদের? পারবেন ১৪ বছর আগের পশ্চিমবঙ্গকে ফিরিয়ে দিতে যখন টাকা দিয়ে দলবদল হতো না, যখন টাকা বিলি করে ভোট ভিক্ষা চাইতে হতো না, যখন নিয়মিত সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হতো, যখন রাস্তাঘাটে নির্ভয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধাচারণ করা যেতো, যখন বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দল করার জন্য কাউকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢোকানো হতো না (আপনি নিজেই তার উদাহরণ), যখন ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে ভোট প্রচার হতো না, যখন রাজনৈতিক চেতনার বদলে গ্ল্যামার দিয়ে ভোট কেনার দেউলিয়াপনা দেখাতে হতো না।
শ্বেতশুভ্র ধূতি পাঞ্জাবির আপাদমস্তক ভদ্রলোকের দলের অনেক গাফিলতি ছিল, ভুল ছিল, কিছু বেনোজলও ঢুকেছিল। তারা সেটা স্বীকার করেছে, সংশোধন করেছে ও ৭% হয়েও মানুষের পাশে, মানুষের সাথে থেকেছে। পাম অ্যাভিনিউয়ের ঘরবন্দি ভদ্রলোকের দল ভুল ত্রুটি নিয়েও কিন্তু কখনো পশ্চিমবঙ্গ তথা বাঙালির সার্বিক মান কে নিচে নামতে দেয়নি। আপনার স্বীকারোক্তির সময় আপনার একদা সতীর্থরা অধিকাংশই আরো ক্ষমতার লোভে, আরো টাকার লোভে অন্য দলে! একবার যে স্বাদ পেয়েছে, তার থেকে দূরে থাকা যায়?!! যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমদানি আপনি পশ্চিমবঙ্গে করলেন তার মূল্য চোকাতে হচ্ছে একটা সমগ্র জাতি কে, যারা একটু সুস্থ, সুন্দর শিক্ষিত, সাংস্কৃতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে নিজেদের পরিবার নিয়ে শান্তিতে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো। আপনার স্বীকারোক্তি শোনার পর থেকেই আপনারই গুণগ্রাহী (!) এক কবির একটা লাইন বারবার মনে আসছে - "মৃত নগরীর রাজা হয়ে কি হবে অয়দিপাউস?"

সুমন সিনহা 
২৯/০৩/২০২১

সোজাসাপ্টা

কালকের ব্রিগেডের সভার পর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আব্বাস সিদ্দিকী ও বামজোট। বেশ কিছু বামপন্থী লোকজন কে দেখছি কালকে সন্ধ্যার পর থেকে আব্বাস কে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করছেন ও শেয়ার করছেন। কাউকে কাউকে দেখলাম ভিয়েতনামের যুদ্ধের সময় খ্রীষ্টান পাদ্রীদের কম্যুনিস্টদের সমর্থন করার কথা!! , কেউ কেউ আবার সাম্প্রদায়িক - অসাম্প্রদায়িক, বস্তুবাদী-অবস্তুবাদী, কম্যুনিস্ট - অকম্যুনিস্ট এসব অবান্তর ব্যাখ্যার মধ্যে গেছেন। নিজেদের কে বেশি বামপন্থী ভেবে সোজা কথাকে সোজা ভাবে না বললে ভোট তো বাড়বেই না, উপরন্তু বিরক্তি বা আঁতলামির জন্য বেশ কিছু লোক ইতিবাচক বিকল্পের কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত আর জোট প্রার্থীদের ভোট দেবেন না। সংসদীয় রাজনীতিতে নির্বাচনী জোট একটা বাধ্যবাধকতা। যেহেতু সিপিআইএম সহ বাম শরিক দলগুলি সংসদীয় রাজনীতি করে, তাই ভোটের স্বার্থে তারা জোট করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বামপন্থী রাজনীতির ঘরানা পাল্টে যাবে। মনে রাখতে হবে আব্বাস সিদ্দিকীর এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক পরিচয় বা অতীত নেই। উনি একজন ধর্মপ্রচারক ও শরিয়তপন্হী মুসলিম ধর্মগুরু। তাই ধর্ম নিরপেক্ষ লোকজন ও বাম-মনোভাবাপন্ন বা বাম-সমর্থক /কর্মীদের নিশ্চয়ই অধিকার আছে এই জোট নিয়ে বামেদের সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করার। সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হলো ভোটের স্বার্থে ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোকে রুখতে এই জোট। তাই সংযুক্ত মোর্চার গুরুত্ব আলোচনা না করে অযথা আব্বাস কে 'ধর্মনিরপেক্ষ' বা 'সেকুলার' প্রমাণ করতে এত সেফগার্ড করার ও আদিখ্যেতা দেখানোর কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। ফেসবুকে ইন্টেলেকচুয়ালিজম দেখালে ভোট বাড়ে না। তার থেকে শ্রমজীবি ক্যান্টিন, লকডাউনের মধ্যেও মানুষের পাশে থাকা, চাকরির দাবিতে আন্দোলন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই, পরিযায়ী শ্রমিকদের সাধ্যমতো সাহায্য করা - এইসব বিষয় গুলোর ওপর ফোকাস অনেক বেশি করলে আখেরে লাভ হবে। বর্তমান সময়ে এই জোটের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরতে হবে। দেবলীনা হেমব্রম, দীপ্সিতা ধর, ঐশী ঘোষ সহ যে হাজার হাজার তরুণ - তরুণীরা বামপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ, সেটা বোঝাতে হবে। নিদেনপক্ষে টুম্পা সোনা'র প্যারোডির লিরিক্স বা ফ্ল্যাশ মবের মত অভিনবত্ব নিয়ে আলোচনা হোক, তাও ভালো। সাদা কে সাদা, কালো কে কালো বললে কেউ কম বামপন্থী হয়ে যান না, তাই তাদের কে "আংটিপড়া বামপন্থী" বা "সরল বামপন্থী" ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে স্থূল রসিকতা করা বন্ধ হোক। বরং তাদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে না পারলে চুপ করে থাকা ভালো। তাঁদের উদ্বেগ কখনোই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কালকের ব্রিগেডে আব্বাস সিদ্দিকী যথেষ্ট অসৌজন্যতা দেখিয়েছেন এবং পোড়খাওয়া সিপিআইএম নেতার ওনাকে নিয়ে আদিখ্যেতা অনেক অনেক বাম সমর্থক / কর্মীর চোখে দৃষ্টিকটূ লেগেছে। এই সত্য অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই।

সুমন সিনহা
০১/০৩/২০২১

সংস্কৃতির ঢাক, তেরে কেটে তাক তাক...

সংস্কৃতির ঢাক, তেরে কেটে তাক তাক...

আজকাল দেখছি পশ্চিমবঙ্গে হেভিওয়েট নেতাদের আনাগোনা বেশ বেড়ে গেছে। মাঝেমধ্যে তাঁরা বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করছেন। বেশ ভালোই লাগছে দেখে। বাংলার কয়েকজন প্রবাদপ্রতিম মনীষিদের নিয়েও বেশ মাতামাতি (নাকি রেষারেষি?) শুরু হয়েছে। ভোট বড় বালাই। তা হোক, এই সুযোগে সেইসব মনীষিদের নাম তো উঠে আসছে। কিন্তু গোল বাঁধলো অন্য জায়গায়। সেইসব মনীষিদের জীবনবোধ, চর্চা বা আদর্শ সম্পর্কে অবহিত না হয়েই শুধু নাম নিয়ে টানাটানি করলে যা হয় আর কি। সেই যে ঘোষবাবু 'বিদ্যাসাগর মহাশয় সহজপাঠ লিখেছিলেন' বলে শুরু করেছিলেন, সেই রেশ কাটতেই চাইছে না। 'ওরে গ্রহবাসী' শুনলাম,'রবিঠাকুর শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেছেন' শুনলাম। হিন্দি চ্যানেলের পরিবেশককে বাঙালি প্যানেলিস্টকে 'উনি ঠাকুর নন, টেগোর' বলতে দেখলাম। এমনকি 'বিবেকানন্দ ঠাকুর' বলতেও শুনলাম! জানিনা সেটা ওই হিন্দি চ্যানেলের পরিবেশকের অনুপ্রাণিত কিনা! ভাগ্য ভালো যে এখনো 'স্বামী রবীন্দ্রনাথ' শুনতে হয়নি! এসব রঙ্গ দেখে আমার আইনস্টাইন সাহেবের সেই বিখ্যাত উক্তি টা মনে পড়ে শুধু... "The difference between genius and stupidity is that genius has its limits".

সুমন সিনহা
১০/০২/২০২১

সুন্দরবনের লোকজন রাস্তা অবরোধ করে না, কারণ ওখানে রাস্তাই নেই।!!!ওরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে বাঁধ বানায়।কোনোরকম সরকারি সাহায্য ওরা প্রত্যাশা করে না।ওদের কাছে বিক্ষোভ দেখানো টা বিলাসিতা। শুধুমাত্র ভোটের আগেই ওদের দাম একটু বেড়ে যায়। তখন আবার টাকার কাছে ওরা পরাজিত হয়। আর পরাজিত হয় ভয়ের কাছে, চোখ রাঙানির কাছে। আর ওদের গণতান্ত্রিক অধিকার পরাজিত হয় শহুরে মেকি চাকচিক্যের কাছে।গণতান্ত্রিকতার প্রকাশ তো কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের হেরে যাওয়ার মধ্যে , দেবশ্রী রায়ের জয়ের মধ্যে। ওদের সবার জীবনের সম্মিলিত দাম ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ স্ট্যাচু তৈরীর খরচের অর্ধেকেরও কম।!!

সুমন সিনহা
৩১/০৫/২০২০

Irrfan Khan

Shocked to know that Sahabzade Irfan Ali Khan, now known as Irrfan Khan, is no more with us. It was his personal choice to add an extra 'r' in his name. Irrfan Khan, a name synonymous with struggle, persistence and consistency is a phenomenal talent in the field of arts. With no Godfather in Bollywood, he has managed to create a separate place for himself in Bollywood and in addition he made his name in British and American films too. Still he did not typecast him and here lies his versatility. His rejection to a big offer in the 'Interstellar' for 'Lunch Box' in 2013 shows his commitment towards work. Number of awards can never describe a versatile person like Irrfan Khan. Let me share an incidence which shows his recognition in global level. Julia Roberts once stopped outside the Kodak theatre where Oscars were being staged, just to compliment Irrfan Khan on his brilliant performance in the movie 'Slumdog Millionaire (2008)'. Salute Irrfan Khan. Rest in peace.

Suman Sinha
29/04/2020

নাটকীয় সমাপতন (?) এবং নিষ্ঠুর পরিহাস

নাটকীয় সমাপতন (?) এবং নিষ্ঠুর পরিহাস
ম্যালেরিয়া প্রতিষেধকের জন্য ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এর চাহিদা খুব তুঙ্গে এখন। কারণ করোনা মোকাবিলায় এই ওষুধটি আক্রান্ত রোগী ও তাদের চিকিৎসা প্রদানকারী ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ICMRও এই নির্দেশিকা জারি করেছে বেশ কিছুদিন আগেই। এবং তারপরেই ভারত সরকার এই ওষুধটির রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
হঠাৎ করে গোলমাল বাঁধালেন রাজাধিরাজ ট্রাম্প বাবু যিনি এই কিছুদিন আগেই মহাসমারোহে ভারত ভ্রমণ করে গেলেন। সরকার বাহাদুরের বেশ কত টাকা যেনো খরচ হয়েছিলো ওঁনার ভারত ভ্রমণ উপলক্ষে সেটা ভুলে গেছি এখন। সে যাই হোক, হঠাৎ করে উনি হুমকি দিয়ে বসলেন যে ভারত যদি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠানো ওদেশে বন্ধ করে, তাহলে উনি 'retaliate' করবেন মানে পরে দেখে নেবেন। এর পরে আজ সকালে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করে যে করোনা অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা থেকে ভারত 'কেস-টু-কেস' ভিত্তিতে বেশ কিছু দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করবে । আচ্ছা এটা কে কি ড্রামাটিক কোইনসিন্ডেস মানে ঐ নাটকীয় সমাপতন বলা যেতে পারে?
এবারে অন্য আর একটা দিক দেখা যাক। ভারতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদন করে বেঙ্গল কেমিক্যালস যার পোশাকী নাম বেঙ্গল কেমিক্যালস এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ভারতে বিজ্ঞান সাধনার পথিকৃৎ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় 1901 সালের 12ই এপ্রিল কলকাতায় বেঙ্গল কেমিক্যালস প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ভারতবর্ষের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। বেঙ্গল কেমিক্যালস শুধুমাত্র আচার্যের স্বপ্ন ছিলনা, সমাজের প্রতি বিজ্ঞান গবেষণার দায়বদ্ধতাও ছিল। আর ছিল বাণিজ্যভীতু একটি জাতির বদনাম ঘোঁচানোর প্রয়াস। ভারতের রসায়ন বিদ্যার জনক ও তার দেখানো পথের বিজ্ঞান চর্চার সাথে আজকের ভারতে বিজ্ঞান চর্চার হাল ও তার পরিবেশ সম্পর্কে এই অধমের কিছু না বলাই ভালো। আর সেটা লিখতেও বসিনি আজ। আমরা তো বিজ্ঞানমনষ্কই হতে পারিনি, চর্চা তো দূরের কথা। যাক গে, যা বলছিলাম। এই করোনার বাজারে এখন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের দৌলতে বেঙ্গল কেমিক্যালসের আবার ডিমান্ড। এই কিছুদিন আগেও যে কোম্পানি কে বিলগ্নিকরনের জন্য কি সরকারী তৎপরতা!!অসর্মথিত সূত্রে শুনেছিলাম বেঙ্গল কেমিক্যালসের জায়গায় রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রি হবে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলার দরুন এখনও বিলগ্নিকরন আটকে আছে। দশকের পর দশক ধরে বাংলা তথা ভারতের এই ঐতিহ্য সরকারী উদাসীনতার শিকার। মেক ইন ইন্ডিয়া তেও বেঙ্গল কেমিক্যালস অস্পৃশ্য। একটু সরকারি যত্নের ছোঁয়া পেলে আজ হয়তো বেঙ্গল কেমিক্যালসের এই দশা হতো না। Tropical অঞ্চলে সাধারণত যে সব রোগের প্রকোপ বেশি, বেঙ্গল কেমিক্যালস সেসবেরই ওষুধ বানায় মূলত। আচার্যের দূরদৃষ্টি! আজ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে বেঙ্গল কেমিক্যালস ত্রাতার ভূমিকা য়। কিছুদিন আগেই যে সংস্থার কর্মীদের বিলগ্নিকরনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। কি করুন, নির্মম পরিহাস!! এ প্রসঙ্গে বলে রাখি এর আগেও বেঙ্গল কেমিক্যালস প্রথম anti snake venom serum (ASVS) তৈরী করেছিলো ভারতে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা জিতবোই। সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যাঁরা দেশের নীতি নির্ধারক, যাঁরা ক্ষমতাসীন তাঁদের অনুরোধ, এর পরে বেঙ্গল কেমিক্যালস কে ভুলে যাবেন না। বেঙ্গল কেমিক্যালস একটা জাতির, একটা দেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক, অহংকারের প্রতীক।

সুমন সিনহা 
০৭/০৪/২০২০

যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া...

যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া...
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে গোটা বিশ্ব এখন দিশেহারা। করোনার ছোবল থেকে আমাদের দেশও বাদ যায়নি। এক কোটি তিরিশ লাখ জনসংখ্যার একটি দেশে এই মহামারী বা অতিমারী কি রূপ নিতে পারে, সেটা এখন মোটামুটি সবার জানা হয়ে গেছে। সরকার lockdown ঘোষণা করেছে। সরকার কি করতে পারত বা কি কি করেনি এসব আলোচনার বাইরে গিয়ে আসুন এই অসময়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কিছু টুকরো টুকরো চিত্র তুলে ধরি। সাম্প্রতিক অতীতে মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যে ভারতবর্ষের ছবি দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে গেছি, করোনার দৌলতে এক অন্য ভারতের ছবি দেখবার চেষ্টা করি। করোনার বিরুদ্ধে ভারতবাসীর আপ্রাণ ও আপোষহীন লড়াইয়ের কিছু কোলাজ, দেশপ্রেমের কিছু নিদর্শন।
বহু ব্যক্তি এবং সংস্থা এই দুর্দশায় সরকারের বা বলা ভালো দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রচারের আলোর বৃত্তের বাইরে যে অসংখ্য, অগুণিত ভারতবাসী নানারকম ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কথা আজ না হয় একটু ভাবি।
যে সমস্ত ডাক্তার, নার্স, আয়া, সাফাইকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও সহকারী সহ স্বাস্থ্যকর্মীগণ দিনরাত সামনের সারিতে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, কোনো শব্দই বোধহয় তাদের স্বীকৃতি দিতে যথেষ্ঠ নয়। আর যে সব ডাক্তার বা নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীগণ উপযুক্ত PPE বা মাস্ক না পেয়েও অক্লান্ত কাজ করে চলেছেন তাঁরা তো শুধু করোনার সাথেই লড়ছেন না, মৃত্যুর সাথেও লড়ছেন। বিশেষতঃ মহানগরীর হাসপাতাল গুলো বাদ দিয়ে গ্রামীণ বা ব্লক এমনকি জেলা হাসপাতাল গুলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থা একবার ভেবে দেখুন। ভাবার সময় ডাক্তার - রোগী অনুপাত টা একটু স্মরণে রাখবেন। এর সাথে যোগ হয়েছে ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরতে পারা পরিযায়ী শ্রমিক ও তার পরিবারের বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা। তাঁদের এই নিরলস সংগ্রামের চিত্র আমাদের স্মৃতিতে যেনো ধূসর না হয়ে যায়। এরকম নয় যে করোনার জন্য অন্য সব রোগ বা অসুখ থেমে আছে। যেসব ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীগণ জরুরী অপারেশন বা চিকিৎসা করে যাচ্ছেন তাঁদের ভূমিকা কোনো অংশেই খাটো যেনো না করি। টিউবারকুলেসিস আমাদের দেশের একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। করোনার প্রকোপে সেটা একটুও কমে যায়নি কিন্তু। lockdown এর এই আকালেও যারা রক্তের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বা রোগীদের কাছে রক্ত পৌঁছে দিচ্ছেন, তাঁরাও যোদ্ধা। lockdown এ প্রসব আটকে নেই বা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্তের প্রয়োজনও থেমে নেই। ভারতবর্ষে প্রসবোত্তর অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া প্রসূতি মায়েদের সংখ্যা নেহাতই কম নয় কিন্তু। না, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষদের নিয়ে আমাদের এই দেশ নয়। আসুন এবার অন্য কিছু ছবি দেখার চেষ্টা করি।

অসংখ্য বয়স্ক সহনাগরিক আজ ঘরবন্দী। তাঁরা একা এবং বাইরে বেরোনো তাঁদের পক্ষে কার্যত সম্ভব নয়। এই সময়ে যে বা যাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধপত্তর পৌঁছে দিচ্ছেন, তাঁরাও কোভিডযোদ্ধা। গবাদি পশুদের নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন যাঁরা, অভুক্ত ফুটবাসীদের মুখে যাঁরা অন্ন তুলে দিচ্ছেন, পাড়ার ছোটো অথবা মাঝারি মুদিখানা দোকানগুলো খোলা রেখে যাঁরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর যোগান চালু রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন, ওষুধের দোকানগুলো খোলা রেখে যাঁরা আমাদের দরকারী ওষুধপত্তর সরবরাহ করে যাচ্ছেন, এঁরা সকলেই এই লড়াইয়ে সামিল। lockdown এ মহিলাদের ঋতুচক্র থেমে নেই। যে সব মহিলারা ঘরে ঘরে স্যানিটারী ন্যাপকিন পৌঁছে দিয়ে অসংখ্য মহিলাদের সাহায্য করে চলেছেন, তাঁরাও তো কোভিডযোদ্ধা। যে সাফাইকর্মীরা রাস্তাঘাট, রেল স্টেশন, এয়ারপোর্ট আমাদের জন্য প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করে চলেছেন, যাঁরা খাদ্য গণপরিবন্টন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত থেকে লড়াই করছেন তাঁরাও এই যুদ্ধে সামিল। জল জঙ্গল পেরিয়ে যাঁরা আদিবাসীদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, যে সব পুলিশকর্মী দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে মানবিকতার নজির রেখে চলেছে এই পরিস্থিতিতে, তাঁরা সবাই এই যুদ্ধের সাথী।
এরকম আরো অনেক অনেক ছবি আছে আমাদের চারপাশে। আর এই সব ছবির চরিত্রগুলো আমার, আপনার সবার কমবেশি পরিচিত বা অপরিচিত। বিশ্বাস করুন এদের নিয়েই আমাদের এই দেশ ভারতবর্ষ, এরা সবাই ভারতীয়। এই বিপর্যয়ে এদের লড়াই আমাদেরই লড়াই, লড়াইয়ের ঘামে ভেজা এদের জামা আমাদেরই জামা। সিয়াচেনের - 35° C তাপমাত্রার গল্প বা দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো'র চিৎকার চেঁচামেচি এঁদের লড়াই কে থামাতে পারে না।
হঠাৎ এই অপরিকল্পিত lockdown এর প্রভাব এসে পড়েছে অসংঘটিত ক্ষেত্রের অগুন্তি পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ওপর। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বোধহয় এরাই। বিভিন্ন জাতীয় বা রাজ্য সড়ক বা অন্যান্য রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে যাঁরা এদের হাতে বিস্কুট, জল, মুড়ি, ফলমূল ও অন্যান্য খাবারদাবার তুলে দিচ্ছে, তাঁদের এই আন্তরিক প্রয়াস আমাদের দেশেরই একটা চিত্র। ভারতেরই কোনো জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডে যখন কোনো জনৈক রামবাবু কে তারই কোনো সহনাগরিক ফিরোজ বসিয়ে খাওয়ায় বা কোনো হিন্দু প্রৌঢ়ের সৎকারে যখন একদল মুসলিম কাঁধে করে তাঁকে 'রাম নাম সত্য হ্যায়' বলে শ্মশানে নিয়ে যায়, তখন চিরাচরিত ভারতের একটা অখণ্ড ছবিই ধরা পড়ে। বা ধরুন ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা যে শ্রমিক রা নিজেদের পরিবার ও গ্রাম কে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে গাছের ওপর নিজেদের কে কোয়ারান্টাইন করে রাখে, তাদের কে কি বলবেন? পরিবার ও দেশ কে ভালো না বাসলে, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলে এরকম করা যায় কি? অন্ততঃ যে সব আহাম্মক বা তাদের বাড়ির লোক বিদেশ থেকে ফিরে শপিং মল, অনুষ্ঠান বাড়ি, মন্দির, মসজিদ, বাজার ঘুরে বেরিয়ে যে সীমাহীন কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের থেকে এই প্রান্তিক, চাহিদাহীন মানুষগুলো অনেক বেশী সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছে। রাষ্ট্র দায়হীন হলেও এরা কিন্তু দায় এড়িয়ে যায় নি। বা ধরুন যে দিনমজুর টি তার স্ত্রীর পা ভেঙে যাওয়াতে কাঁধে করে স্ত্রী কে নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তাঁর এই হিসেবহীন প্রেম ইতিহাসের পাতায় কোনোদিন স্থান পাবে না। কিন্তু তিনিও কি কোভিডযোদ্ধা নন? অথবা হাজারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও যে উজবুকের দল কে মসজিদে নামাজ পড়া থেকে বিরত রাখতে যে সব মৌলবী লাঠি হাতে মসজিদ পাহাড়া দেয়, সেও তো ভারতবর্ষেরই একটা ছবি।
আপনার মতোই আমিও আশাবাদী। খুব তাড়াতাড়ি এই লড়াইয়ে আমরা জয়ী হব, হবই। শুধু অনুরোধ, তারপর যেনো নাম-না-জানা আমাদের এই সহনাগরিক সহযোদ্ধারা আমার, আপনার বিস্মৃতির আড়ালে না চলে যায়।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। জয় হিন্দ।

সুমন সিনহা 
৩০/০৩/২০২০

শঙ্কর মুদি

কয়েক মাস আগে একটা বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম 'শঙ্কর মুদি'। ছিমছাম বাহুল্য বর্জিত চমকহীন একটা সিনেমা যার কেন্দ্রে একজন মুদিখানা দোকানের মালিক। আমাদের সবার পরিচিত পাড়ার মুদিখানা দোকান যেমন হয় তেমনই একটি দোকান ও সেই দোকান নিয়ে তার মালিকের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও হতাশা সিনেমাটির মূল বিষয়। ভূবনীকরনের হাওয়া যেদিন থেকে আমাদের জানালা দিয়ে ঢুকতে শুরু করেছে, আমাদের চাহিদা ও মূল্যবোধ সেদিন থেকেই পাল্টাতে শুরু করেছে। সেই হাওয়ার বেগ যতো বেশী হয়েছে, আর্থ সামাজিক পরিবর্তন তত বেশি হয়েছে এবং এই সব পাড়ার মুদিখানা দোকানগুলোর প্রাসঙ্গিকতা তত কমতে শুরু করেছিলো। প্রলোভনের হাতছানি থেকে আমরা নিজেদেরকে সরিয়ে রাখতে পারিনি। আলোর বন্যা, ঠান্ডা অনুভূতি, বিভিন্ন রকম অফার, স্পেস, ইচ্ছে খুশি ভেতরে ঘুরে বেড়াবার স্বাধীনতা, নানা রকম নাম-না-জানা ব্র্যান্ড এতসব আমাদের পাড়ার মুদিখানা দোকানে তো আর সম্ভব নয়। তাই হঠাত্ করে কিছু দরকার পড়লে মানে বিপদে পড়লে পাড়ার দোকান ঠিক আছে, না হলে কি আর দরকার। খরিদ্দারের চাহিদা মতো দোকানগুলো কিছু কিছু জিনিসপত্তর রাখতে শুরু করলেও আমাদের পছন্দ হলো না, কারণ মন তো পড়ে আছে অন্য কোনো আকর্ষণের দিকে, যেখানে কেনাকাটা আমাদের মূল প্রয়োজনীয়তা (basic need) নয় । ফুড কোর্ট এ খাওয়া, নিজেকে নির্লজ্জ শো-অফ করার নেশায় নিজস্বী(selfie) ও ফটো তুলে সোশাল মিডিয়াতে দেওয়ার তাড়াহুড়ো, উইন্ডো শপিং ইত্যাদির মাঝে আমরা ভুলতে বসেছিলাম পাড়ার মুদির দোকানগুলো টিকিয়ে রাখতে শঙ্কর মুদিদের সংগ্রাম ও ব্যাথাবেদনা। আজ এই অসময়ে যখন আমরা সবাই ঘরবন্দী, করোনার মৃত্যুভয়ে যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ (!!), তখন রোজকার মুদিখানা বা সব্জি বাজার আমাদের কাছে মূল প্রয়োজনীয়তা বা মৌলিক চাহিদা। আর এখানেই শঙ্কর মুদিদের প্রাসঙ্গিকতা। আমাদের অবহেলা বা উন্নাসিকতা দেখে দেখে যাদের গা-সওয়া হয়ে গেছিল, আজ সেইসব শঙ্কর মুদিরাই আমাদের অনুরোধে হয় বাড়ি এসে মালপত্র দিয়ে যাচ্ছে নয় দোকান খোলা রেখে আমাদের যোগান দিচ্ছে। এবং দোকান চালু রাখতে তাদেরকে বাজার থেকে মালপত্র আনতে যেতে হচ্ছে, করোনার মৃত্যুভয় কে তোয়াক্কা না করেই।
হয়তো শঙ্কর মুদিদের প্রয়োজনীয়তা বা প্রাসঙ্গিকতা কখনো ফুরায় না, আমাদের সুবিধেবাদী বিবেকগুলো শুধু সময়ের সাথে সাথে অভিযোজিত হয়ে যায়।

সুমন সিনহা 
২৮/০৩/২০২০
Various contemporary incidents, taking place around us, may not affect us directly, although these affect indirectly few or many of us. Despite limitations and unfavourable situations, still there are few who continues to pen down the correct information and truth ignoring the mockery, ridicule and bad comments made by some people. I am thankful to Prof. Ananda Dasgupta, IISER Kolkata for drawing my attention to a brilliant piece on 'gravity' written by Prof. Amol Dighe, TIFR Mumbai. Prof. Dighe explains gravity very nicely and beautifully in the language of common people, a topic which we started studying from our high school days and clarifies the statement 'we knew about gravity before Newton.' The original article is appended below. Please enjoy the 'easy parts, the not so easy parts and the extremely difficult parts about understanding 'gravity'.'
----------------------------------------------------------------
This post has its origin in the recent statement by the Indian MHRD minister (this ministry controls and provides funds to most higher education institutions in India) that gravity was mentioned much before Newton in ancient Indian astronomical texts.
The first three are observations, the next three theoretical conjectures, while the last one involves some deeper insight. Of course all the above was known before Newton. It is quite likely that most of 1-6 was known to (and done by) ancient Indian astronomers (though I am not an expert in history). I am not sure about 7.
Now while politicians have their ways of making statements that walk the thin line between truth and misinformation (and irking us short-trigger scientists), this is perhaps an opportunity to bring out some important points about how science has progressed, that may be appreciated by everyone.
There are many distinct steps in the understanding of gravity. (I may be missing many) :

1. Noticing that all bodies fall to earth
3. Making measurements and calculations of motions of astronomical bodies
2. Making measurements and calculations of motions of falling bodies
5. Getting the idea that there is some force that makes the astronomical bodies move.
4. Getting the idea that earth pulls the falling bodies to itself
6. Getting the idea that earth may be going around the Sun.
But Newton's work involves insights far beyond these.
7. Realizing that heliocentric system gives simple rules for planetary motion (Kepler's laws).
8. The idea that the same law that governs bodies falling to ground on earth governs planets going around the sun.
(I have restricted myself to pre-Einstein understanding, so no General Theory of Relativity here, which of course improved our understanding of gravity by one more leap.)
9. Showing by astronomical calculations that this law is inverse square law (1/r^2).
10. Realization that the gravitational force of sun and planets acts as if the mass of each body is at its centre.

When one says "Newton discovered gravity", one is normally referring to 8 and 9 above. (Point 10 is rather underappreciated even in the scientific community, however it induced Newton to write his famous treatise "Principia Mathematica ...". See the commentary by S. Chandrasekhar. )

Saying someone "mentioned gravity" earlier is trivializing the meaning of the phrase "Newton discovered gravity", and indeed, of what the discovery means.
19.08.2019

২৯ শে সেপ্টেম্বর

আজ, ২৯ শে সেপ্টেম্বর, বিশ্ব হৃদয় দিবস। যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ ও আচ্ছন্ন জীবনের জানালা দিয়ে সংবেদনশীল অনুভূতির খোলা হাওয়া আজ অন্তত আমাদের ভেতরে প্রবেশ করুক। 'শহিদ মিনারের ওপর থেকে' যদি কোনো মেয়ে চিৎকার করে বলে 'ইন্দ্র কাকু আমার প্রেমিক' আমরা সেটা যেনো গ্রহণ করতে শিখি। গেলো গেলো রব তোলার কিছু নেই। বাঙালির সহজাত পরনিন্দা পরচর্চার মতোই ছড়িয়ে ছিটিয়ে দু চারটে পরকীয়া ছিল, আছে ও থাকবে। তাতে সমাজ সংসার উচ্ছন্নে যাবেনা। পারস্পরিক বিনিময় উষ্ণ হোক এই আশা রাখি। আসুন, আমরা হৃদয়কে প্রসারিত করি। আজকাল ওখানেই তো অসুখ সবচেয়ে বেশী! আর হ্যাঁ, ইংরেজি শব্দ হার্ট কে হৃদয় বলা বন্ধ হোক। হার্টের বাংলা হৃৎপিন্ড থাকুক। হার্টের অবস্থান আছে, হৃদয়ের তো কোনো অবস্থান নেই! হৃদয়ের কি কোনো ইংরেজি প্রতিশব্দ সত্যিই আছে? আসুন আমরা ভালবাসার বড়াই করা ছেড়ে ভালোবাসতে শুরু করি। 'শৌখিনতার গোলাপকুন্জে' আমরা 'মহুল' ফোটাবার চেষ্টা করি অন্তত।

©সুমন সিনহা।
২৯/০৯/২০১৯


এই ভিডিও টি দেখলে হয়তো ভবিষ্যতের ভূত সিনেমা টি অনেক টাই দেখা হয়ে যাবে। এবং সিনেমা টি যে ভৌতিক কারণে মুক্তি পাওয়ার পরের দিন থেকে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় সেটাও স্পষ্ট বোঝা যাবে। এর বিরুদ্ধে যে সার্বিক প্রতিবাদ হচ্ছে সেটা দেখানো নিয়ে সংবাদ মাধ্যমও কোনো ভৌতিক কারণে অদ্ভুত রকম মৌনতা অবলম্বন করেছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া যে কতটা মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়তে পারে এই ভিডিও টি সেটাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। ফলতঃ স্বাধীন, সার্বভৌম, গনতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের একটি বড় অংশের নাগরিক জানতেই পারছেন না এসব ঘটনাপ্রবাহ কি শুধুই ভৌতিক নাকি রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালিত এক নিপুণ সন্ত্রাস। এই ভয়ঙ্কর অবস্থাকে চিত্রিত করা হয়েছে হাস্যরস, বিদ্রুপ ও শ্লেষের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ ভিডিও টিতে। ভিডিও টির কোনো কপিরাইট না থাকায় আপনারাও এটি পরিচিত জনদের ফরওয়ার্ড করুন ও দেখতে অনুরোধ করুন।

সুমন সিনহা 
২৪/০২/২০১৯ 

P.S. ভিডিও টি অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাইনি। 

Friday, April 23, 2021

সমকালীন যে সকল বাঙালীর জন্য আমার নিজেকে বাঙালী ভাবতে গর্ব হয়, ডাঃ কুণাল সরকার তাঁদের অন্যতম। ওঁনার বক্তৃতা বা বিতর্ক আমার বরাবরই প্রিয় এবং নিয়মিত শোনার চেষ্টা করি। সম্প্রতি ওঁনার এই স্মারক বক্তৃতাটি শোনার পর আমি যারপরনাই অভিভূত। বিষয় : Understanding health care. গোটা বক্তব্যটি বাংলায় দেওয়া। এরকম বিষয়ের ওপর একটি বক্তৃতা যে এত আকর্ষনীয় ও বহুমাত্রিক হতে পারে, এটা না শুনলে হয়তো বিশ্বাসই হতো না। চিকিৎসা ও চিকিৎসাবিদ্যা, ইতিহাস, শিল্পায়ণ, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংখ্যাতত্ব, সরকারী নীতি, তার রূপায়ণ ও বাস্তবতা, জনসচেতনা, কর্তব্য ও ঔচিত্য - - কি নেই ওঁনার বক্তৃতায়। বক্তৃতাটি একটু বড়ো হলেও আপনাদের অনুরোধ করবো সময় নিয়ে একটু শুনতে।

সুমন সিনহা
২৯/০৯/২০১৮

মাননীয়া,
আমি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের একজন প্রাক্তন ছাত্র। সম্প্রতি কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ এই যে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে যেন রাজা কৃষ্ণনাথের নামটি অবশ্যই যুক্ত রাখা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে কৃষ্ণনাথ কলেজ অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের সাথে রাজা কৃষ্ণনাথের নাম যুক্ত না থাকলে সেই ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি এবং কলেজের অসংখ্য প্রাক্তনীর আবেগের প্রতি অবিচার করা হবে। সাথে কলেজে বর্তমানে চালু আন্ডারগ্রাজুয়েট কোর্সটিও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে চালু থাকে সেই অনুরোধও রাখছি।

সুমন সিনহা
০২/০৮/২০১৯

P.S. "দিদি কে বলো" তে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এটি লিখেছিলাম।

Sunday, April 18, 2021

কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথা !

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন "হীরের দামে আমি কাঁচ কিনব না"। আজ সেটাই হচ্ছে এবং বড় নগ্ন ও হিংস্র ভাবে। বহুত্ববাদের দামে জাতীয়তাবাদ কেনা হচ্ছে , মানবতার দামে দেশপ্রেম কেনা হচ্ছে। ইতিহাস বিকৃতির উন্মাদনা গণ-হিস্টিরিয়ার রুপ নিয়েছে। তথ্য বিকৃতি করার মধ্য দিয়ে একটা বড় অংশের মানুষ গর্ব বোধ করছেন। (তথ্য জানার অধিকারও দেশে লঘু করা হচ্ছে)। আরও এক শ্রেণির মানুষ যাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, ইতিহাস বা তথ্য জানার বা যাচাই করার কোনো প্রয়োজনই বোধ করেন না। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলি এই দুই প্রকার মানুষজনকে নিজেদের সুবিধেমতো ব্যবহার করছে। গোদের ওপর বিষফোঁড়া একটা বড় অংশের কর্পোরেট মিডিয়া। ইতিহাস ও তথ্য বিকৃতির সাথে নিয়ম করে হিংসা ও ঘৃণা ছড়ানো যাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে whataboutery (এই আপাত-অশ্রুত ইংরাজী শব্দ টি সম্প্রতি ভারতবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও পরিচালক শ্রীমতী অপর্ণা সেন কে ধন্যবাদ জানাই)। whataboutery এর আরো ভয়ানক চেহারা লক্ষ করা যায় সামাজিক মাধ্যম গুলোতে। স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান হারিয়ে এক কুৎসিত প্রতিযোগিতায় যেন মেতে উঠেছে একদল সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী। কোনোরকম ভিন্নমতে এরা সহিষ্ণু নয়, যুক্তিবাদী নয়। তাই শুরু হয়েছে অশালীন ও রুচিহীন ব্যক্তি আক্রমন। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফেক নিউজ, ফেক ফটো ও ফেক ভিডিওর প্রচার।

এ এক বড় দুঃসময়ের মধ্যে বাস করছি আমরা।
এই দুঃসময়ের আর এক বৈশিষ্ট্য হল narrative পরিবর্তন করা। বিভিন্ন শব্দের আভিধানিক অর্থ ও তাদের প্রয়োগ বদলে যাচ্ছে বা সচেতন ভাবে বদলে দেওয়া হচ্ছে। এর পরিণাম ভয়ঙ্কর।আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা থাকছে তো?
আভিধানিক অর্থ ও তার প্রয়োগ বদলানোর সাম্প্রতিকতম নমুনা দেখলাম জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা যখন তুলে নেওয়া হল। সেই বিশেষ মর্যাদা উঠে যাওয়ার জন্য গোটা দেশ নাকি 'সেলিব্রেট' করছে। আমাদের দেশেরই একটা অংশে যখন কোনো টেলিফোন পরিষেবা নেই, ইন্টারনেট পরিষেবা নেই, টেলিভিশন নেই, সংবাদপত্র নেই, বস্তুতঃ দেশের বাকি অংশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বিচ্ছিন্ন, যেখানে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কলেজ যেতে পারছে না, যেখানে বিভিন্ন বৈধ রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তারা গৃহবন্দী, যেখানের বাতাসে যখন শুধুই সেনাবাহিনীর বুটের আওয়াজ তখন গোটা দেশ 'সেলিব্রেট' করছে। এও কি সম্ভব! মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মমতায় এত উল্লাস! কিছুদিন আগে একটি সর্বভারতীয় মিডিয়াতে কলকাতা ও বোম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জাস্টিস চিত্ততোষ মুখার্জীর একটা ইন্টারভিউ শুনছিলাম। উনি আবার সম্পর্কে শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভাইপো। যাইহোক, সংবাদ পরিচারক যতবারই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তোলা নিয়ে সেলিব্রেশন প্রসঙ্গ আনছেন, উনি কোনোভাবেই সেলিব্রেশন বলতে রাজি নন।! শেষে পরিচারক মহাশয় কিছুটা নাছোড়বান্দা হয়েই জিজ্ঞেস করলেন সেলিব্রেশন না হলে উনি কি বলবেন? মাননীয় বিচারপতি বেশ সুন্দর একটি ইংরাজী শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন। "Satisfactional Consolation". Democracy এরও অর্থ বদলে দেওয়া হচ্ছে। এখন democracy মানে majoritarianism হয়ে গেছে। অথচ majoritarianism কেবল authoritarian state এর জন্ম দেয় মাত্র, যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করে। এই 'মেজরিটি' সতীদাহ প্রথা রদ সমর্থন করেন নি, বিধবা বিবাহ সমর্থন করেন নি। সর্বোপরি এই মেজরিটি নিয়েই হিটলার ক্ষমতায় এসেছিলেন।!! তারপর একটি নির্দিষ্ট জাতের যেন কত মিলিয়ন লোককে হত্যা করেছিলেন?? ওনার পরিণতি অবশ্য ঐতিহাসিক সত্য।
সে যাই হোক আজকাল 'এক দেশ এক নিয়ম' বলে একটি শব্দবন্ধ বাজারে খুব চলছে দেখছি। মানুষের আবেগ নিয়ে ব্যবসা করলে সবচেয়ে বেশী লাভ হয় - এটা কর্পোরেট মিডিয়া এবং রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের একাংশ খুব ভালো ভাবে বোঝেন। কারণ আবেগ কে উস্কানি দিলে মানুষের যুক্তিবাদী চেতনার প্রাধান্য দমিত হয়, অন্তত সাময়িক হলেও। ভারতবর্ষের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যই হল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য (unity in diversity) যা ছোটবেলা থেকেই আমরা ইতিহাস বইতে পড়ে এসেছি। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের ভাষাগত বৈচিত্র, খাদ্যাভাষের বৈচিত্র, সংস্কৃতির বৈচিত্র, লোকাচারের বৈচিত্র, জীবনযাপনের বৈচিত্র - এসবই আমাদের দেশের স্বকীয়তা ও নিজস্বতা। এই নানাবিধ বৈচিত্রই ভারতবর্ষের অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস। চিরাচরিত এই 'বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান' ধারণাকে অস্বীকার করে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আবেগকে প্রতারণা করে 'এক দেশ এক নিয়ম' কে সচেতন ভাবে প্রচার করা শুধু ভারতবাসী কে অপমান করাই নয়, একটি ফ্যাসিস্ট শক্তির প্রবণতাকেই সূচিত করে মাত্র। সম্ভবত এতসব বৈচিত্রকে মাথায় রেখেই হয়তো দেশের সংবিধানে 370, 371 এবং 371 A থেকে 371 H ও 370 J ধারাগুলো আনা হয়েছিল। উপরোক্ত ধারাগুলো অনুযায়ী ভারতবর্ষের তেরোটি রাজ্য বিশেষ মর্যাদা বা বিশেষ সুবিধে প্রাপ্ত রাজ্য। এরা হল অরুণাচল প্রদেশ, মনিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, আসাম, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, সিকিম, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য (জম্মু কাশ্মীর এখন আর রাজ্য নেই)। আশ্চর্যের বিষয় এই যে এতগুলো বিশেষ সুবিধেপ্রাপ্ত রাজ্য নিয়ে সরকারের বা আমাদের কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা শুধুই জন্মু কাশ্মীর নিয়ে।! সংবিধানের উপরোক্ত ধারা গুলো নিয়ে সরকারের বা আমাদের কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা শুধুই 370 নিয়ে।!! কি কিউট না? ওপরের তেরোটি রাজ্যের মধ্যে সম্ভবত এগারোটি রাজ্যে বাইরের বাসিন্দারা জমি কিনতে পারেন না। তবুও শুধু জম্মু কাশ্মীর! উত্তর পূর্বের দুটি রাজ্যে যেতে আলাদা পারমিট লাগে। জম্মু কাশ্মীরে যেতে অন্তত আলাদা পারমিট লাগত না।
জম্মু-কাশ্মীর ও 370 ধারা সম্পর্কিত এত চর্চা এখন হচ্ছে যে কয়েকটি তথ্য তুলে ধরতে চাই।
একটি কৌশলী প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে যে আর্টিকেল 370 যা জম্মু-কাশ্মীরের ভারত ভুক্তি উপলক্ষে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলো তা নাকি নেহরুর একার মস্তিষ্কপ্রসূত। ভারতীয় সংবিধান (আর্টিকেল ৩৭০ সমেত সম্পূর্ণ সংবিধান) ২৬শে নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে তৎকালীন জাতীয় আইন পরিষদে (গণপরিষদ) গৃহীত হয়েছিল এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে। এই জাতীয় আইন পরিষদে মোট ২৯৯ জন সদস্য ছিলেন যারা বিভিন্ন প্রাদেশিক আইন পরিষদগুলির দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই ২৯৯ জন সদস্যেরই সম্মতি লিপিবদ্ধ হয়েছিল যখন প্রতিটি সদস্য দু দুবার করে এই ড্রাফ্ট সংবিধানের কাগজগুলিতে নিজ হস্তে স্বাক্ষর করেন ২৪শে জানুয়ারী, ১৯৫০ সালে। এই স্বাক্ষরকারী সদস্যদের অন্যতম ছিলেন শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জাতীয় আইন পরিষদের সেই সভায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর্টিকেল 370 নিয়ে কোনো প্রতিবাদ জানান নি বা ওঁনার কোনো বিরুদ্ধ বক্তব্য বা নোট অফ ডিসেন্ট নেই। আরো মজার ব্যাপার হলো যে আর্টিকেল ৩৭০ (যা সেই সময়ে ছিল ৩০৬এ) সমেত ঐ খসড়া সংবিধান জাতীয় আইন পরিষদে পেশ করেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। অনেকেই ওঁনাকে 370 ধারার আর্কিটেক্টও বলে থাকেন। তবুও শুধু নেহেরুর কারসাজি!
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে সে সময় শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ছিলেন এবং নেহেরু মন্ত্রিসভায় শিল্পমন্ত্রী (Minister for industry and supply) ছিলেন। 1950 সালের 'দিল্লী চুক্তি' নিয়ে নেহেরুর সাথে ওঁনার মতপার্থক্য হয় ও জাতীয় কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়ে 1951 সালের 21শে অক্টোবর RSS এর সাহায্য নিয়ে উনি ভারতীয় জনসঙ্ঘ (BJS) প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতীয় জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে উনি অবশ্য আর্টিকেল 370 এর প্রবল বিরোধিতা করেছেন।
আসলে দাড়ি আর টিকির বিবাদ জিইয়ে রাখতে পারলে জ্বলন্ত সমস্যা গুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে রাখা যায়। ধর্মের মোহ এমন ভাবে অন্ধ করে দেয় যে দেখার ও প্রশ্ন করার ক্ষমতাটাই প্রায় হারিয়ে যায়। আর সেই ফাঁকে আপনি জানতেই পারবেন না কখন কত লক্ষ কোটি টাকা কর্পোরেট লোন মুকুব হয়ে গেছে, বৈদেশিক ঋণ কত কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, কতজন দেশপ্রেমিক শিল্পপতি ব্যাঙ্ক লোন শোধ না করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, আপনি জানতে পারবেন না কিভাবে ছোট গাড়ি শিল্প আশঙ্কাজনক অবস্থায় চলে গেলো, কেন কত হাজার কোটি টাকার ছোট গাড়ি বিক্রি না হয়ে পড়ে আছে এবং গাড়ি কোম্পানিগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে, কিভাবে লাভজনক PSU ONGC লোকসানে চলে গেল।ঠিক যেমন আপনি এখনো জানতে পারেননি যে নোটবন্দির ফলে কত কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে ও অর্থনীতির ঠিক কী উন্নতি হয়েছে বা ক্রসবর্ডার টেররিসম্ কতটা কমেছে। আপনি জানতে পারেননি যে নোটবন্দির ফলে ঠিক কত মিলিয়ন লোক কর্ম সংস্থান হারিয়েছেন। আপনি জানতে পারেননি যে কেনো কিভাবে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ সীমায় চলে গেল, জিডিপি গ্রোথ কেনো কমে গেলো, এয়ারলাইন্স কেনো বন্ধ হয়ে গেলো বা কত কোটি টাকা লোকসানে যাচ্ছে, কেনো রেলদপ্তর কর্মী ছাঁটাই এর নোটিশ দিচ্ছে। আপনি আরো অনেক কিছুই জানতে পারবেন না বা জানতে পারেন নি। কৃষকরা কেনো ফসলের ন্যায্য দাম পায় না, কেনো একই শ্রমের জন্য একই বেতন চালু হয় না আমরা জানিনা। ধর্ম নিয়ে জনগণ কে মাতিয়ে রাখলে দিবাস্বপ্ন দেখানো অনেক সহজ হয়ে যায়। এত কিছুর পরেও পাঁচ হাজার ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দিবাস্বপ্ন দেখানোর সাহস পাওয়া যায়।
আরো একটি কথা এই ফাঁকে বলে রাখি। বাইরের লোক কাশ্মীরে জমি কিনতে পারবেন না - এই আইন তৈরী হয়েছিল কাশ্মীরী পণ্ডিতদের দাবি তে। 1935 সালে রাজা হরি সিং এই আইন চালু করেন। পরবর্তী কালে ভারত সরকার এই আইন কে মান্যতা দেয়। কত শতাংশ সাধারন মানুষ অন্য রাজ্যে জমি কেনেন তার একটা পরিসংখ্যান যদি কোথাও পাওয়া যেতো!
যাই হোক দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বা অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে ভারত সরকার 370 বা অন্য কোনো ধারা প্রয়োজনে সংশোধন বা বিলোপ করতেই পারে। কিন্তু এত অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে!! সংসদে কোনো আলোচনা নেই, বিতর্ক নেই, প্রশ্নোত্তর পর্ব নেই... একজন পড়ে শুনিয়ে দিলেন! ভারতীয় সংসদ একটা নোটিশ বোর্ড যেন! স্বাধীনতার পর থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রাজ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে কিন্তু এই প্রথম কোনো রাজ্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবতরণ করলো! তাও আবার সম্পূর্ন সামরিক উদ্যোগে। আর সেটাও নাকি গনতন্ত্রের জয়! মেজরিটির উল্লাস কখনো গনতন্ত্রের উৎসব হতে পারে না। 370 ধারা লোপ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে যুক্তিগুলো পেশ করেছেন, ভারতীয় সংসদ এত ঠুনকো ও হাস্যকর যুক্তির সাক্ষী এর আগে থেকেছে কিনা আমার জানা নেই। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটি একটি সম্পূর্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং এতে ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা জোর ধাক্কা খেয়েছে।একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য তার পর থেকে বেড়েই চলেছে।
ঋণ স্বীকার : পার্থ মুখোপাধ্যায়, দেবায়ন সেনগুপ্ত, কৃষ্ণেন্দু পোদ্দার, অনিন্দ্য সরকার
সুমন সিনহা
১৬/০৮/২০১৯

ঋতুপর্ণ ঘোষ

সেদিনের পর থেকে কতো সিনেমার "শুভ মহরৎ" হলো, কতো "বাড়িওয়ালি" সিনেমার শুটিং-এর জন্য তাদের বাড়ি ভাড়া দিলেন, কিন্তু সিনে...