Saturday, April 24, 2021

সোজাসাপ্টা

কালকের ব্রিগেডের সভার পর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আব্বাস সিদ্দিকী ও বামজোট। বেশ কিছু বামপন্থী লোকজন কে দেখছি কালকে সন্ধ্যার পর থেকে আব্বাস কে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করছেন ও শেয়ার করছেন। কাউকে কাউকে দেখলাম ভিয়েতনামের যুদ্ধের সময় খ্রীষ্টান পাদ্রীদের কম্যুনিস্টদের সমর্থন করার কথা!! , কেউ কেউ আবার সাম্প্রদায়িক - অসাম্প্রদায়িক, বস্তুবাদী-অবস্তুবাদী, কম্যুনিস্ট - অকম্যুনিস্ট এসব অবান্তর ব্যাখ্যার মধ্যে গেছেন। নিজেদের কে বেশি বামপন্থী ভেবে সোজা কথাকে সোজা ভাবে না বললে ভোট তো বাড়বেই না, উপরন্তু বিরক্তি বা আঁতলামির জন্য বেশ কিছু লোক ইতিবাচক বিকল্পের কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত আর জোট প্রার্থীদের ভোট দেবেন না। সংসদীয় রাজনীতিতে নির্বাচনী জোট একটা বাধ্যবাধকতা। যেহেতু সিপিআইএম সহ বাম শরিক দলগুলি সংসদীয় রাজনীতি করে, তাই ভোটের স্বার্থে তারা জোট করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বামপন্থী রাজনীতির ঘরানা পাল্টে যাবে। মনে রাখতে হবে আব্বাস সিদ্দিকীর এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক পরিচয় বা অতীত নেই। উনি একজন ধর্মপ্রচারক ও শরিয়তপন্হী মুসলিম ধর্মগুরু। তাই ধর্ম নিরপেক্ষ লোকজন ও বাম-মনোভাবাপন্ন বা বাম-সমর্থক /কর্মীদের নিশ্চয়ই অধিকার আছে এই জোট নিয়ে বামেদের সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করার। সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হলো ভোটের স্বার্থে ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোকে রুখতে এই জোট। তাই সংযুক্ত মোর্চার গুরুত্ব আলোচনা না করে অযথা আব্বাস কে 'ধর্মনিরপেক্ষ' বা 'সেকুলার' প্রমাণ করতে এত সেফগার্ড করার ও আদিখ্যেতা দেখানোর কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। ফেসবুকে ইন্টেলেকচুয়ালিজম দেখালে ভোট বাড়ে না। তার থেকে শ্রমজীবি ক্যান্টিন, লকডাউনের মধ্যেও মানুষের পাশে থাকা, চাকরির দাবিতে আন্দোলন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই, পরিযায়ী শ্রমিকদের সাধ্যমতো সাহায্য করা - এইসব বিষয় গুলোর ওপর ফোকাস অনেক বেশি করলে আখেরে লাভ হবে। বর্তমান সময়ে এই জোটের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরতে হবে। দেবলীনা হেমব্রম, দীপ্সিতা ধর, ঐশী ঘোষ সহ যে হাজার হাজার তরুণ - তরুণীরা বামপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ, সেটা বোঝাতে হবে। নিদেনপক্ষে টুম্পা সোনা'র প্যারোডির লিরিক্স বা ফ্ল্যাশ মবের মত অভিনবত্ব নিয়ে আলোচনা হোক, তাও ভালো। সাদা কে সাদা, কালো কে কালো বললে কেউ কম বামপন্থী হয়ে যান না, তাই তাদের কে "আংটিপড়া বামপন্থী" বা "সরল বামপন্থী" ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে স্থূল রসিকতা করা বন্ধ হোক। বরং তাদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে না পারলে চুপ করে থাকা ভালো। তাঁদের উদ্বেগ কখনোই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কালকের ব্রিগেডে আব্বাস সিদ্দিকী যথেষ্ট অসৌজন্যতা দেখিয়েছেন এবং পোড়খাওয়া সিপিআইএম নেতার ওনাকে নিয়ে আদিখ্যেতা অনেক অনেক বাম সমর্থক / কর্মীর চোখে দৃষ্টিকটূ লেগেছে। এই সত্য অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই।

সুমন সিনহা
০১/০৩/২০২১

No comments:

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...