Monday, April 26, 2021

পর্ব - ৩

যা দেখি, যা শুনি, একা একা কথা বলি...

Prologue 

আমরা সমাজবদ্ধ জীব। সামাজিক নিয়মেই আমরা একে অপরের সাথে কথা বলি, মেলামেশা করি। সময়ের সাথে সাথে কারোর কারোর সাথে বেশি বন্ধুত্ব হয়, বেশী যোগাযোগ থাকে, আবার কারোর কারোর সাথে দূরত্ব তৈরী হয়। কারোর কারোর সাথে শুধু সৌজন্যের সম্পর্ক থাকে, কারোর কারোর সাথে শুধুই পেশাগত সম্পর্ক থাকে। সম্পর্ক যে ধরণেরই হোক না কেনো, প্রত্যেক টা সম্পর্কেরই একটা অর্থ আছে বলে আমি মনে করি, অন্ততঃ থাকা উচিৎ। সে কারণেই আমরা একে অপরের খবর নিই, একে অপরের সাথে কথা বলি ইত্যাদি। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা, গল্প, তর্ক, যুক্তি, প্রতিযুক্তি, মতবিনিময়, আলাপচারিতা সবকিছুই হয়। সেখান থেকে কত কিছু জানা যায়, শেখা যায়, বোঝা যায়। কতজন কে নতুন ভাবে চেনা যায়। পরে যখন সেগুলো নিয়ে ভাবি, তখন একটা মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কখনো ভালো লাগার, কখনো খারাপ লাগার। সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কিছু বছর ধরে দেখছি ভালো লাগা বা খারাপ লাগা কোনো অনুভূতিই আর বিশেষ হচ্ছে না। তার জায়গায় হতাশ লাগছে, নিরাশ লাগছে আর ক্রমশঃ যেনো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি অন্যদের থেকে। আরো একা হয়ে পড়ছি। শুধু যে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা বা কথোপকথন থেকেই নিরাশ বোধ করছি তা না, চারপাশে ঘটে চলা সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, সংবাদ মাধ্যমে সেগুলোকে দেখানোর ধরণধারণ, ব্যক্তিগত জীবনে ও সামাজিক মাধ্যমে সেসব ঘটনার প্রতি পরিচিত, আধা - পরিচিত ও অপরিচিত লোকজনের প্রতিক্রিয়া - এসব কিছুই বড় প্রভাবিত করেছে ও করে।
সেই সব অনুভূতি গুলোকেই লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি এখানে। কোনোরকম তিক্ততায় আমি বিশ্বাসী নই। "মানুষ বদলায়, তাই সে সুন্দর" - এই বিশ্বাসকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই।
-------------------------------------------------------------------------
পর্ব ৩

এবারে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি নিয়ে নানা জনের নানা আলোচনা, নানা মতামত শুনলাম। মিডিয়া প্রধানত দুটো রাজনৈতিক দলের প্রচার করছে দেখলাম। আর বাম দল গুলো কে নিয়ে এবারে অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথাবার্তা শুনলাম!!

কিছুদিন আগে এক পরিচিত জনের সাথে কথা হচ্ছিলো। নানা বিষয়েই কথা হয় মাঝেসাঝে।হঠাৎ সেদিন তাঁর কাছ থেকে জানতে পারলাম বামমনষ্ক লোকজন কে 'সঠিক বামপন্থী' হতে গেলে তাদের পার্টিমেম্বারশীপ থাকতে হয়!! উনি বামপন্থী মানেই সিপিআইএম বোঝেন আর কি! অনেক টা এই রকম বোঝাল যে ধরুন আপনি তখনই নন্দীগ্রাম বা সিঙ্গুরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প স্থাপনের চেষ্টা করার কথা আলোচনা করতে পারেন যদি আপনার পার্টিমেম্বারশীপ থাকে! বোঝ ঠেলা। উনি বোঝালেন যে ঐ শিল্প স্থাপন করতে গিয়েই পার্টি টা নির্বাচনে হেরে গেছিল আর তারপরই পার্টি টা শেষ হয়ে গেলো। মানে যে বা যারা ওই শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এসব বলেছিলো তারাই পার্টিটাকে শেষ করে দিলো আর কি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই ইঙ্গিত ছিল মূলতঃ। স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে আমাকেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করলো খানিক। আমি আর পাল্টা জিজ্ঞেস করিনি তাহলে এবারের নির্বাচনেও সেই পার্টি কেনো শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের লাইনেই চলছে যদি সেটা ভুল হয়ে থাকে? সব রাজনৈতিক দল গুলোই বলে সাধারণ মানুষ তাদের সাথে আছে। তাহলে কি প্রত্যেক সাধারণ মানুষকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের মেম্বার হতেই হবে? কি জানি! তবে ওই পার্টিমেম্বারশীপ ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো বলে একটু বোঝার চেষ্টা করলাম। তার ব্যাখ্যা টা এই রকম যে মেম্বারশীপ থাকলে লেভি দিতে হয়, অর্থাৎ টাকা না দিলে আপনার কিছুই বলার অধিকার নেই। ধরুন কেউ যদি চাঁদা দেয়, তাহলে হবে না কিন্তু। লেভিই দিতে হবে! একজন পেশাদার রাজনৈতিক কর্মীর মুখে একথা শুনলে হয়তো এতটা ধাক্কা খেতাম না কারণ Leninist Vanguard পার্টি গুলোর একটা সমস্যা হল যে তারা পার্টি মেম্বারশীপ কে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়। যাই হোক, কারা কিভাবে সিপিআইএম পার্টি মেম্বারশীপ পেয়েছিলো আর তার ফল কি হয়েছিলো, সেসব নিয়ে তাঁর কোনরকম মাথাব্যাথা দেখলাম না। সব ঘেঁটে ঘ হয়ে গেলো। কিছুদিন আগেই 'ধূসর মস্কো' পড়েছি, শুধু বার বার মনে পড়ছিল যে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ও অনায্য সুযোগ সুবিধে পাওয়ার লোভে কোনো ভাবে একটা পার্টি মেম্বারশীপ জোগাড় করার কি উন্মত্ত প্রতিযোগিতা, যার ফল - স্বয়ং লেনিনের দেশেও একদিন কম্যুনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছিলো! এ হেন পার্টি মেম্বার কে কখনো কখনো নিজেকে অরাজনৈতিকও দেখাতে হয়!!
গত পর্বে স্ট্রাকচারড ন্যারেটিভ কি ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেটা বলছিলাম। সে প্রসঙ্গে বলি, আর একদিন অন্য একজন কথা প্রসঙ্গে বললেন পশ্চিমবঙ্গে বামেদের এমনই দুরাবস্থা যে বুদ্ধ বাবু কে এখনও এই বয়সে বামেদের হয়ে বিবৃতি দিতে হয় বা অডিও বার্তা দিতে হয়। আমি তো শুনে তাজ্জব! একজন পার্টিকর্মী, আদ্যপান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি মাস দেড়েক আগেই বলেছিলেন অসুস্থ অবস্থায় ঘরে বন্দি হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করতে পেরে অস্থির বোধ করছেন, তিনি তাঁর পার্টি কে ভোট দিতে আবেদন করবেন বা পার্টি তাঁকে অনুরোধ করবে এটাই তো স্বাভাবিক। যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রবীণ সদস্যই তা করতে পারেন। করেনও। কিন্তু বাম দলের কেউ করলেই সমস্যা! ওই যে বললাম 'স্ট্রাকচারড ন্যারেটিভ'! আবার ঘেঁটে ঘ হয়ে গেলাম। প্রচারে বা প্রোপাগান্ডায় মগজধোলাই কি একেই বলে?

সুমন সিনহা 
0৯/০৪/২০২১

No comments:

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...