Sunday, April 18, 2021

নাহুম এন্ড সন্স - কলকাতার পরম্পরা

 

পরশু হঠাৎ মনে হল অনেকদিন ধর্মতলা চত্বরে যাওয়া হয়নি। বিকেল চারটে নাগাদ বউ আর ছেলে কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মেট্রো থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে ওবেরয় গ্র্যান্ডের পাশের রাস্তাটা দিয়ে সোজা গিয়ে ঢুকে পড়লাম নিউ মার্কেটে। ভিড়ের মধ্যে ছেলের হাত ধরে বকবক করতে করতে অনেক পুরোনো স্মৃতিই মনে পড়ছিল। লাইটহাউস তো আর নেই। সেখানে বারিস্তা আর ডোমিনিজ পিৎজার গ্লো-লাইটের ঔজ্জ্বল্য সত্যিই আমার চোখে লাগছিল। সে যাই হোক ছেলে কেক খেতে খুব পছন্দ করে। নিউ মার্কেটে ঢোকার সময়ই ঠিক করেছিলাম ওকে নাহুমসের কেক খাওয়াবো। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নাহুমস কলকাতার ইতিহাস ও ট্রাডিশনকে আজও ধরে রেখেছে। তাই সেখানে যাওয়ার লোভ আমারও ছিল। এ সব ব্যাপারে বউ এর সাথে সামান্য একটু মিলও আছে!!এখন নাহুমসের বয়স 117 বছর। 1902 সালে বাগদাদী ইহুদী নাহুম ইজরায়েল মোর্দেকাই (Nahoum Israel Mordecai) এই বেকারী প্রতিষ্ঠা করেন। উনি প্রথমে door-to-door মডেলে ব্যবসা শুরু করেন। স্বাদ ও গুনগত মানের জন্যে অচিরেই নাহুমস ঔপনিবেশিক শাসকদের মন জয় করে ফেলেন। তারপর 1916 সালে নিউ মার্কেট এলাকায় উনি এই eponymous দোকানটি খোলেন। এখনও অবধি সেই একই জায়গায় দোকানটি আছে। সেই পুরোনো সেগুন কাঠের আসবাবপত্র, কাঁচের শোকেস্, এমনকি ফ্লোরিং কিছুই পরিবর্তন হয়নি। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কার্ড পেমেন্টও ছিলনা!! কেকের পুরোনো ও আসল স্বাদ ধরে রাখতেও নাহুমস অদ্বিতীয়। সাম্প্রতিক কালে ফ্লুরিজ নতুন মেক-ওভার নিয়ে বেশ কিছু ব্রাঞ্চ যেমন খুলেছে অথবা তুলনামূলক ভাবে নতুন কুকিজার বা মিসেস ম্যাগপি যে আধুনিকতা নিয়ে এসেছে, নাহুমস সচেতন ভাবে পুরোনোকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছে। এখানেই নাহুমসের নিজস্বতা। কাঠের ক্যাশবাক্স আজও আছে। 2013 সালে তৃতীয় প্রজন্মের মালিক নিঃসন্তান ডেভিড নাহুম মারা যাওয়ার পর যে আশঙ্কার মেঘ তৈরী হয়েছিলো, নাহুম পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও নিষ্ঠাবান কর্মচারীদের দৌলতে 'নাহুম এন্ড সন্স' এখনও একই রকম জনপ্রিয়। একশো বছর ধরে কলকাতাবাসী কে প্রিয় কেক উপহার উপহার দেওয়ার জন্য নাহুমস কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ফটো courtesy : বর্তমান নাহুমস কর্তৃপক্ষ

সুমন সিনহা 
০৮/১১/২০১৯





No comments:

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...