Sunday, April 18, 2021

৭ই মে

আজ ৭ই মে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৪৫ সালের আজকের দিনে আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হয়। জার্মান সৈন্যবাহিনির প্রধান ইয়োডল মিত্রশক্তির কাছে আজকের দিনেই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর ঠিক সাতদিন আগে অর্থাৎ 30 শে এপ্রিল দুপুর দুটোয় যথানিয়মে মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্ন করার পরে হিটলার তাঁর প্রিয় কুকুর ও সদ্য বিবাহিত বান্ধবী ইভা ব্রাউনকে নিয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করেন। হিটলার প্রথমে প্রিয় কুকুরটিকে বিষ খাওয়ান, তারপর ইভা ব্রাউন কে। এরপর বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি নিজের মাথায় গুলি করেন, যাতে কোনোভাবেই জীবিত অবস্থায় শত্রুর হাতে ধরা না পড়েন। কি বীরের মৃত্যু!! গোয়েবেলসও সপরিবারে আত্মহত্যা করেন।

পরেরদিন অর্থাৎ ৮ই মে সারা ইউরোপে বিজয় উৎসব পালন হল। ৯ই মে জার্মান সেনাধ্যক্ষ কাইটেল আত্মসমর্পণ করলেন রাশিয়ার মার্শাল জুকভের কাছে। সেদিন বার্লিনে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছিল এবং বৃষ্টিভেজা মানুষ রাস্তায় রাস্তায় ভিড় করেছিল।
এটা ঠিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির জয় বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে সবচেয়ে ইতিবাচক ও যুগান্তকারী ঘটনা কারণ নাৎসিবাদের হাত থেকে ইউরোপ তথা বিশ্বসভ্যতা রক্ষা পেয়েছিল এই জয়কে ছিনিয়ে নিয়ে। চার্চিল তাঁর বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের শেষ তথা ষষ্ঠ খন্ডের নাম দিয়েছিলেন 'Triumph and Tragedy' । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপুল জয়ের সাফল্যের শেষে উনি কেন Tragedy প্রসঙ্গ আনতে গেলেন? এই বিজয় যুদ্ধরত কয়েকটি দেশ ও দেশনায়কের জয় নয় মাত্র, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সৈনিক, সহযোদ্ধা ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আপামর জনসাধারণের ঘরে ঘরে পৌঁছেছিল এই জয়ের গৌরবময় বার্তা। কিন্তু এই জয়ের উচ্ছ্বাস, আনন্দ ঢাকা দিতে পারেনি নাৎসি শাসনের নৃশংস ভয়াবহতা। নির্বিচার ও নিষ্ঠুর হত্যালীলায় শিশু - নারী - পুরুষ নির্বিশেষে অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। মানবতা ও মানবাধিকারের এই নির্লজ্জ অপমান ইতিহাস কোনোদিন ক্ষমা করবে না। জীবনহানি ছাড়াও পথঘাট, ডাক-তার, জলযান, কলকারখানা, খামার, বাগিচা, বন্দর, শহর, গ্রাম ইত্যাদি সামাজিক সম্পদগুলি যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল তার মুল্য বিচার করা সত্যিই অসম্ভব। এসবেরও ওপরে ছিল মানবিক প্রশ্নটি - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মানুষকেও অমানবিক প্রজাতিতে নামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো নাৎসিরা। এই মহাযুদ্ধ শৈশব - কৈশোর - যৌবনকে, নারী - পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের অস্তিত্বের, মানুষের জীবনের মৌলিক সত্যতাকে পরাস্ত করতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়। এখানেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেদনাক্রান্ত জয়ের তাৎপর্য।
পুনশ্চ : ১৯৪৫ সালের ৭ই মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পরেও ৬ই আগস্ট পৃথিবীর প্রথম আনবিক বোমা পড়ল জাপানের হিরোসিমায়। তার তিনদিন পর ৯ই আগস্ট আমেরিকা নাগাসাকিতে দ্বিতীয় আনবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালো। এর কি কোনো প্রয়োজন ছিল, বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও জাপানের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্তের কি সত্যি কোনও দরকার ছিল? এই নিয়ে প্রশ্ন আজও বিতর্কিত। অনেক ইতিহাসবিদই এটাকে পার্ল হারবারের প্রতিশোধ হিসেবে মনে করেন না। যাইহোক, যুদ্ধের ইতিহাসে এই বোমায় হতাহতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। কয়েক লক্ষ মানুষ হয়েছিলেন বীভৎস রকমের বিকলাঙ্গ ও কালান্তক তেজষ্ক্রিয় রশ্মির শিকার।

তথ্যসূত্র : নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

সুমন সিনহা
০৭/০৫/২০১৯

No comments:

জীবনানন্দ দাশ

আজ "নির্জনতম কবি"র মৃত্যুদিন। বিবরবাসী এই মানুষটির সোচ্চার স্বপ্ন ছিলো "কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে"। ভীষন ক্লা...