Saturday, April 24, 2021

নাটকীয় সমাপতন (?) এবং নিষ্ঠুর পরিহাস

নাটকীয় সমাপতন (?) এবং নিষ্ঠুর পরিহাস
ম্যালেরিয়া প্রতিষেধকের জন্য ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এর চাহিদা খুব তুঙ্গে এখন। কারণ করোনা মোকাবিলায় এই ওষুধটি আক্রান্ত রোগী ও তাদের চিকিৎসা প্রদানকারী ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ICMRও এই নির্দেশিকা জারি করেছে বেশ কিছুদিন আগেই। এবং তারপরেই ভারত সরকার এই ওষুধটির রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
হঠাৎ করে গোলমাল বাঁধালেন রাজাধিরাজ ট্রাম্প বাবু যিনি এই কিছুদিন আগেই মহাসমারোহে ভারত ভ্রমণ করে গেলেন। সরকার বাহাদুরের বেশ কত টাকা যেনো খরচ হয়েছিলো ওঁনার ভারত ভ্রমণ উপলক্ষে সেটা ভুলে গেছি এখন। সে যাই হোক, হঠাৎ করে উনি হুমকি দিয়ে বসলেন যে ভারত যদি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠানো ওদেশে বন্ধ করে, তাহলে উনি 'retaliate' করবেন মানে পরে দেখে নেবেন। এর পরে আজ সকালে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করে যে করোনা অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা থেকে ভারত 'কেস-টু-কেস' ভিত্তিতে বেশ কিছু দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করবে । আচ্ছা এটা কে কি ড্রামাটিক কোইনসিন্ডেস মানে ঐ নাটকীয় সমাপতন বলা যেতে পারে?
এবারে অন্য আর একটা দিক দেখা যাক। ভারতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদন করে বেঙ্গল কেমিক্যালস যার পোশাকী নাম বেঙ্গল কেমিক্যালস এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ভারতে বিজ্ঞান সাধনার পথিকৃৎ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় 1901 সালের 12ই এপ্রিল কলকাতায় বেঙ্গল কেমিক্যালস প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ভারতবর্ষের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। বেঙ্গল কেমিক্যালস শুধুমাত্র আচার্যের স্বপ্ন ছিলনা, সমাজের প্রতি বিজ্ঞান গবেষণার দায়বদ্ধতাও ছিল। আর ছিল বাণিজ্যভীতু একটি জাতির বদনাম ঘোঁচানোর প্রয়াস। ভারতের রসায়ন বিদ্যার জনক ও তার দেখানো পথের বিজ্ঞান চর্চার সাথে আজকের ভারতে বিজ্ঞান চর্চার হাল ও তার পরিবেশ সম্পর্কে এই অধমের কিছু না বলাই ভালো। আর সেটা লিখতেও বসিনি আজ। আমরা তো বিজ্ঞানমনষ্কই হতে পারিনি, চর্চা তো দূরের কথা। যাক গে, যা বলছিলাম। এই করোনার বাজারে এখন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের দৌলতে বেঙ্গল কেমিক্যালসের আবার ডিমান্ড। এই কিছুদিন আগেও যে কোম্পানি কে বিলগ্নিকরনের জন্য কি সরকারী তৎপরতা!!অসর্মথিত সূত্রে শুনেছিলাম বেঙ্গল কেমিক্যালসের জায়গায় রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রি হবে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলার দরুন এখনও বিলগ্নিকরন আটকে আছে। দশকের পর দশক ধরে বাংলা তথা ভারতের এই ঐতিহ্য সরকারী উদাসীনতার শিকার। মেক ইন ইন্ডিয়া তেও বেঙ্গল কেমিক্যালস অস্পৃশ্য। একটু সরকারি যত্নের ছোঁয়া পেলে আজ হয়তো বেঙ্গল কেমিক্যালসের এই দশা হতো না। Tropical অঞ্চলে সাধারণত যে সব রোগের প্রকোপ বেশি, বেঙ্গল কেমিক্যালস সেসবেরই ওষুধ বানায় মূলত। আচার্যের দূরদৃষ্টি! আজ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে বেঙ্গল কেমিক্যালস ত্রাতার ভূমিকা য়। কিছুদিন আগেই যে সংস্থার কর্মীদের বিলগ্নিকরনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। কি করুন, নির্মম পরিহাস!! এ প্রসঙ্গে বলে রাখি এর আগেও বেঙ্গল কেমিক্যালস প্রথম anti snake venom serum (ASVS) তৈরী করেছিলো ভারতে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা জিতবোই। সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যাঁরা দেশের নীতি নির্ধারক, যাঁরা ক্ষমতাসীন তাঁদের অনুরোধ, এর পরে বেঙ্গল কেমিক্যালস কে ভুলে যাবেন না। বেঙ্গল কেমিক্যালস একটা জাতির, একটা দেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক, অহংকারের প্রতীক।

সুমন সিনহা 
০৭/০৪/২০২০

No comments:

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...