Wednesday, October 23, 2024

মৃত্যুদিনে স্মরণ: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 "একটা দুটো উড়ছে কাগজ, থমকে আছে পেন

সময় এসে জানতে চাইছে, নতুন কী লিখছেন?" 

"পূর্ব পশ্চিমের" অতীন, অলি বা শর্মিলা অথবা "প্রথম আলোর" ভূমিসূতা অথবা "সেই সময়ের" নবীন কুমার কালজয়ী ঐতিহাসিক জীবন্ত হয়ে উঠেছিলো আপনার কলমের ছোঁয়াতে। "ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ" শিখিয়েছিল রাজনৈতিক সচেতনাবোধ, সমাজতন্ত্রের ত্রুটি বিচ্যুতি। আর আপনার কবিতা উপলব্ধি করিয়েছিল প্রেম। "ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে" বুঝিয়েছিল আকুলতা কি জিনিস, অপেক্ষাও কতো মধুর। "কেউ কথা রাখেনি" শিখিয়েছিল উপেক্ষার তীব্র জ্বালা, প্রেমিকা যখন "আজ সে যেকোনো নারী" হয়ে যায় আর তারপর যখন "আজ তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ" পাওয়া যায়, তখন যন্ত্রণা শুধু কবিতার ভাষা হয়ে যায়। আপনার থেকেই শেখা। "আত্মপ্রকাশ" বা "যুবক যুবতীরা" অথবা বিভিন্ন সময়ে আপনার সাক্ষাৎকার শিখিয়েছিল স্পষ্টবাদিতা ও সততার সংজ্ঞা। মধ্যরাতে কলকাতার ফুটপাথ শাসন করা রাগী এক যুবকের কলমেই সৃষ্টি হয়েছিলো কবিতার এযাবৎকালের শ্রেষ্ঠ চরিত্র "নীরা"-- যাকে শুধু অনুভূতির গহীনে ধরা যায়, যার জন্য কোনো "কবিতার ভূমিকা" দরকার পড়ে না!
২০১২ সালের আজকের দিনটি ছিলো নবমী। উৎসবের আনন্দ অনেকটা ম্লান করে দিয়েছিলো আপনার চলে যাওয়া। আপনার "মহাভারত" লেখা অপূর্ন রয়ে গেলো। বোধহয় শুরুও করেছিলেন। আমরা বঞ্চিত রয়ে গেলাম আর একটা কালজয়ী সৃষ্টি থেকে। স্তব্ধ হয়ে গেলো সবকিছু। 
"সত্যবদ্ধ অভিমান" আজ প্রতিজ্ঞা পালন করুক "এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ / আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?" হে খালাসিটোলার কবি, আজকের এই সময়ের "স্তব্ধতার মিছিলে" "আমার সম্পূর্ণ আবেগ মোমবাতির আলোর মতো ভদ্র ও হিম" হয়েই থাক।

সুমন সিনহা 
২৩/১০/২০২৪


Thursday, October 10, 2024

Ratan Tata

It's really a sad day for our country. A great loss for our country. The late night statement on October 09, 2024 by the present Chairman of Tata Sons that "It is with a profound sense of loss that we bid farewell to Mr. Ratan Naval Tata, a truly uncommon leader whose immeasurable contributions have shaped not only the Tata Group but also the very fabric of our nation" left the nation in grief. The titan of Indian Industry left behind a legacy of leadership, ethical business practice and philanthropy. A man who resided in a modest home in Mumbai and loved to drive a Tata Sedan, increased the Group's revenue to 100 billion dollar in 2012 from 5.7 billion dollar in 1991 when he took over as the chairman of Tata Sons. Over 65 percent of his shares in Tata Sons go to charitable causes which include funding education, healthcare, and social development projects across the country, the largest philanthropy of the world. Tata’s focus has always been on improving the quality of life for Indians. Having more than 30 international honours and awards to his credit apart from holding many honorary doctorates from Institutes of repute across the world, a Padma Bhushan in 2000 and a Padma Vibhushan in 2008, it's a shame that he didn't get a Bharat Ratna award till 2024 when he dies at the age of 86!!

Will ever remember his quotation in the context of his dream Nano car project at Singur in West Bengal "Once a promise is always a promise" when he had over thrown a popular saying in response to a question by a journalist.
Let he find eternal peace.
Suman Sinha
10/10/2024



Saturday, September 7, 2024

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন্য সুনীল" বা ওই জাতীয় কিছু লিখবো। কিন্তু ভাবনাগুলো এলেও কিছুতেই গুছিয়ে লিখে উঠতে পারলাম না। মূলত কনসেনট্রেট করতে পারলাম না। মন চঞ্চল হয়ে পড়ছে নানা বিক্ষিপ্ত চিন্তায় সবসময়। সুনীল বাবুর দু একটি কবিতা পড়লাম, দু একটি কবিতা বা কবিতার লাইন মনে করলাম। "পূর্ব পশ্চিম"-এর কিছু পাতা এদিক ওদিক করলাম। অতীন, অলি, শর্মিলাদের কথা আরো বেশি মনে পড়লো।

আজ আবার গণেশ চতুর্থী। বাতাসে একটা উৎসবের আমেজ আছে। ক্রোধ ও দ্রোহের আবহে এই প্রবাসে বাঙালিরাও "গণপতি বাপ্পা মোরিয়া" বলছে। অন্যের সংস্কৃতি, রীতিনীতিকে আপন করে নেওয়া আর কি! অবশ্য শুধু প্রবাসে কেনো, পশ্চিম বাংলাতেও এখন গণেশ চতুর্থী ধুমধাম করে হয় যা দশ বছর আগেও হতো না। আগেকার দেখা পয়লা বৈশাখের দিন বাঙালির হালখাতার সিদ্ধিদাতা গণেশ এখন বাপ্পা হয়ে গেছে। এটার মধ্যে অবশ্য কেউ রাজনৈতিক বা জাতিগত কালচারের কোনো প্রভাব আছে বলে ভাববেন না দয়া করে। এমনিতেই শিক্ষিত, সমাজ সচেতন,  আদর্শবাদী, সংস্কৃতিমনষ্ক বাঙালীরা প্রতিনিয়ত বলে থাকেন "এই রাজনীতি রাজনীতি করেই বাঙালিদের সব কিছু শেষ হয়ে গেলো"। আশা করবো তারা নিশ্চয়ই সুনীল বাবুর "ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ" পড়েছেন।

কোলকাতা সবদিক দিক থেকেই এগিয়ে থাকে, কি প্রতিবাদে কি হুজুগে। জীবনানন্দের সাধের "কল্লোলিনী তিলোত্তমা" এখন অন্য এক তিলোত্তমার বিচার চেয়ে প্রায় প্রতিদিন রাত জাগছে। তার মধ্যেই গণেশ চতুর্থী পালন হচ্ছে। এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতেই সুনীল বাবুর "প্রথম আলো'র" কয়েকটা লাইন মনে পড়লো। লাইনগুলো এরকম ছিলো "তীর যেমন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কিছুটা পিছিয়ে আসে, ঠিক তেমনই বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে পিছু ফিরে তাকাবার দরকার আছে।"

সুমন সিনহা
০৭/০৯/২০২৪

আহা, বেশ বেশ বেশ...!!!

আজ শিয়ালদহ আদালতে আর. জি. করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ধৃত সঞ্জয় রায়ের মামলার শুনানিতে সি. বি. আইয়ের তদন্তকারী অফিসার (I. O) উপস্থিত ছিলেন না!! এমনকি সি. বি. আইয়ের তরফে কোনো আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন না! আদালত বন্ধ হওয়ার মুখে একজন নতুন আইনজীবী আসেন যিনি সি. বি. আইয়ের নিজস্ব আইনজীবি নন! I. O একজন সহকারী পাঠান যিনি কেসটি সম্পর্কে নাকি সম্যক অবহিত নন! শোনা যাচ্ছে বিচারপতি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন তাহলে ধৃতকে জামিন দিয়ে দেবেন কিনা! শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ বিচারপতি ধৃতকে চৌদ্দ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান।

কোন্ রাজনৈতিক দলের ছাত্রসমাজ, নেতা নেত্রীরা চিৎকার করে যেনো বলছে ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি করবেন না...
ভাবুন, ভাবা প্র্যাক্টিস করুন।

সুমন সিনহা
০৬ / ০৯ / ২০২৪

Monday, August 19, 2024

উৎপল দত্ত

আজকে এমন একজন বাঙালির মৃত্যুদিন যিনি নিজেকে কোনোদিন "বুদ্ধিজীবি" বা "শিল্পী" বলে দাবি করেন নি বা সেসব বিশেষনে পরিচিত হতে চান নি। নিজেকে কখনো "অরাজনৈতিক" বলেন নি। রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানের চোখরাঙানির বিরুদ্ধে একা লড়াই করে গেছেন। ক্ষমতার বৃত্তের কাছাকাছি ঘেঁষেন নি কোনোদিন। পুরস্কারের লোভ বা দাক্ষিন্যের নেশা কখনো তাঁকে আকৃষ্ট করে নি বরং প্রত্যাখানের সাহস তাঁকে এবং বাঙালিকে গৌরাবান্বিত করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রত্যাখ্যান করে তাঁর কৌতুকমিশ্রিত জবাব ছিলো "শাহেনশাহ্, তোমার পুরস্কার তোমার নিজের কাছেই রাখো"। তিনি উৎপল রঞ্জন দত্ত ওরফে উৎপল দত্ত।


কোনোরকম হিপোক্রিসী না করে ওঁর অকপট স্বীকারোক্তি ছিলো "সিনেমা করি পেটের দায়ে, নাটক করি নিজের দায়ে"। বিত্ত, বৈভব, ক্ষমতা ও সুবিধাবাদের গন্ধ শুঁকে বেড়িয়ে নিজেদের "এলিটিস্ট", "কালচার্ড" ভাবা লোকজনের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে ওঁর বিখ্যাত উক্তি "আমি শিল্পী নই, আমি প্রোপাগান্ডিষ্ট" আজ প্রায় প্রবাদে পরিনত হয়েছে। দু'বার "রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে" গ্রেপ্তার!! - - ১৯৬৩ তে কোলকাতায় এবং ১৯৬৭ তে মুম্বাইতে। ১৯৬৩ তে গভীর রাতে শ্রী সত্যজিৎ রায় ওঁর হয়ে থানা থেকে জামিন নিতে যান।

অগাধ পান্ডিত্য, জ্ঞান, পড়াশোনা ও বাগ্মিতা নিয়েও সারাজীবন নিজেকে গণনাট্য আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিয়ে গেছেন। প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যম ছিলো পথনাটিকা থেকে জনসভা - ক্ষমতাসীনের ছত্রছায়ায় নিজেকে নিরাপদ রেখে, গা বাঁচিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে কখনো সামিল হন নি। রাস্তায় নেমে দাপটের সাথে প্রতিবাদ করেছেন, পক্ষ নিয়েছেন। লাইমলাইটে আসার জন্য বা নিজেকে "ইমপর্টান্ট" দেখানোর জন্য কখনো হ্যাংলামি করতে হয় নি। ইতিহাস ওকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে।

সত্তরের নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা "তীর" নাটকের উপাদান সংগ্রহের জন্য উনি উত্তরবঙ্গে যান। সেখানেই এক জনসভা থেকে ওঁর নির্ভীক ঐতিহাসিক স্লোগান "একদিকে নকশালবাড়ি, আর অন্য দিকে বেশ্যাবাড়ি। বুদ্ধিজীবিরা পথ বেছে নিক, কোন্ দিকে যাবেন।"

আজকে সারা দেশ জুড়ে এই ক্রান্তিকালে যখন একদিকে রাজনীতি আর অন্যদিকে অরাজনীতি - তখন পথ বেছে নেওয়ার, পক্ষ বেছে নেওয়ার সময় এসেছে যাতে আমরা অন্তত নিজেরা ভবিষ্যতে আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারি। "অরাজনৈতিক" সবচেয়ে বড় সুবিধেবাদী রাজনৈতিক অবস্থান এবং তার থেকেও ভয়ঙ্কর হলো "অরাজনৈতিকতার" মুখোশের আড়ালে কোনো নির্দিষ্ট রাজনীতিকে বিভিন্ন সুকৌশলে প্রমোট করা।

সুমন সিনহা
১৯/০৮/২০২৪


Tuesday, July 23, 2024

এলোমেলো ভাবনা - ১১

প্রথমে শুরু হয় ক্ষয়। অনেকটা ক্ষয়ে যাওয়ার পর যখন আমরা টের পাই, তখন পড়ে থাকে ক্ষীণ আশা। ওই ক্ষয়ে যাওয়া আশা যেমন কখনো পুরোটা ফুরোয় না... ক্ষয় তৈরী করে ক্ষত। সময় বয়ে যায়, ক্ষত আরো গভীর হতে থাকে। কেউ কেউ সেই ক্ষততে মেকি প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করে, তাতে জ্বালা আরো বাড়ে। জ্বালা যখন অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায়, তখন ক্ষতির মাত্রাটা বোঝা যায়। একদিকে ক্ষতি, অন্যদিকে ক্ষরণ। দুটোই অন্তরে, তাই বাইরের পার্থিব ছন্দ কোনোভাবেই বিঘ্নিত হয় না - সবকিছুই কতো স্বাভাবিক, কতো সাজানো, কতো গোছানো। ভাঙাচোরা ভেতরটায় পড়ে থাকে শুধু আক্ষেপ। অপচয়ের আক্ষেপ, ক্ষতচিহ্নর আক্ষেপ, বে-হিসেবীর আক্ষেপ। প্রতিটি ক্ষতচিহ্ন বহন করে চলে তার নিজস্ব ইতিহাস, অপচয়ের আখ্যান। মনে মনে ভাবি 'কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়'...

বাইরে একনাগাড়ে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি নাকি স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়! বৃষ্টির ছন্দের মধ্যে স্মৃতি ফিসফিস করে বলছে "ক্ষমা করে দিও"।

কিছু কিছু ক্ষত থাকে যা ক্ষমা সারিয়ে তোলে না। ক্ষয়, ক্ষত, ক্ষতি, ক্ষরণ, ক্ষমা... জিন্দেগী হ্যায়, বহেনে দো...

সুমন সিনহা
২৩ /০৭ /২০২৪


Sunday, June 30, 2024

এলোমেলো ভাবনা - ১০

হঠাৎ হঠাৎ মনের মধ্যে উৎপটাং কিছু চিন্তাভাবনা এসে ভীড় করে। কিছুদিন ধরে হাফ মানে ওই অর্ধেক শব্দটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক শব্দের অর্থ কেমন করে যে বদলে যায়! ছোটো বেলায় হাফ শব্দটির মধ্যে একটা আনন্দের অনুভূতি লুকিয়ে থাকতো কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে হঠাৎ করেই একদিন আবিষ্কার করলাম হাফ শব্দটার মধ্যে একটা কঠিন নির্মমতা, একটা অবহেলা, একটা উপেক্ষা, একটা বিষন্নতা লুকিয়ে আছে।

প্রথম সাইকেল চালানো শেখা মানে আমাদের ছোটোবেলায় হাফ প্যাডেল শেখা ছিলো। সেই হাফ প্যাডেল সাইকেল চালানো শিখে যে উন্মাদনা, যে আনন্দ ছিলো, ফুল প্যাডেল শিখে বোধহয় কারোরই সেই মাত্রায় উন্মাদনা হয় নি কারণ সাইকেল শেখা মানে আমাদের ছোট বেলায় হাফ প্যাডেল শেখাই ছিলো। হাফ প্যাডেল শিখে গেছি মানে সাইকেল চালানো শিখে গেছি আর কি।
ছোটো বেলায় বাড়িতে যেদিন ডিমের ঝোল রান্না হতো, হাফ ডিম দিতো আমাদের। একটা ডিমকে হাফ করে একটা ভাগ আমার, আর একটা ভাগ দিদির। সেই ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে কখনো মন খারাপের ব্যাপার থাকতো না, বরং শেয়ার করার মধ্যেও যে একটা তৃপ্তি থাকে, সেটা বোধহয় অজান্তেই মনের ভেতর ঢুকে গেছিলো।
ছোটো বেলায় মা বাবার সাথে ট্রেন বা বাসে যখন কোথাও যেতাম, হাফ টিকিট কাটা হতো আমার জন্য। নিজেকে এক ধরণের প্রিভিলেজড্ই মনে হতো তখন।
হাফ জামা, হাফ প্যান্ট, হাফ টিকিট, হাফ প্যাডেল, হাফ ডিমের মতো আরো কতোরকম হাফ নিয়েই জীবনটা কতো সুন্দর, সরল ছিলো।
আর একটু বড়ো হয়ে যখন উচ্চমাধ্যমিক পড়ছি, তখন তেজস্ক্রিয় পদার্থের হাফ লাইফ শিখলাম। বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিলো। খুব সহজ কথায় বললে the half life of a radioactive element is the time it takes for half of the element to decay. কিন্তু যতোই ইন্টারেস্টিং হোক না কেনো, হাফ লাইফ শব্দটি একটা ক্ষয়ে যাওয়া বোঝায়! 
তারপর বাজারে একদিন চেতন ভগতের একটা বই বেরোল। নাম হাফ গার্লফ্রেন্ড। নামটা শুধু অদ্ভুত লেগেছিলো তাই না, বড় অবাকও হয়েছিলাম। বইটা যখন সিনেমা হয়েছিল তখন চেতন ভগতকে একবার এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন - এরকম নাম কেনো দিলেন বইটির। চেতন ভগতের তাৎক্ষণিক উত্তর ছিলো "Because that's what most of the Indian men get". গার্লফ্রেন্ডও (বা বয়ফ্রেন্ডও) হাফ হয়! কিজানি  হাফ বউও হয় কিনা!! 
আরো যখন বাইরের জগতের সাথে পরিচিত হলাম, হাফ জীবন কাটিয়ে দেওয়ার পর দেখলাম সম্পর্কগুলোও হাফ-হার্টেড। কিছুটা সময় কাটানো, কিছুটা শৌখিনতা ও নানা রকম প্রয়োজনের তাগিদে কতজন কতোজনের সাথে যোগাযোগ রাখে, সম্পর্ক তৈরী করে। সবকিছুই কেমন যেনো হাফ হাফ। কোনো দায় নেই, কেমন যেনো আজ আছে, কাল নেই টাইপের। একটা তাৎক্ষণিক ব্যাপার, মুহূর্তেই যার অস্তিত্ব। 
রবি ঠাকুরের "শুধু যাওয়া আসা" গানটার চারটে লাইন আজকাল মনের মধ্যে সবসময়ই অনুরণন তোলে।
"হৃদয়ে হৃদয়ে, আধো পরিচয়
আধোখানি কথা সাঙ্গ নাহি হয়
লাজে ভয়ে ত্রাসে, আধো বিশ্বাসে
শুধু আধোখানি ভালোবাসা"।
এরকম ভাবেই কতজন অর্ধেক পরিচিত হয়েই একটা জীবন কাটিয়ে দিলো !! অর্ধেক কথা বাকিই থেকে গেলো!! হাফ বিশ্বাস, হাফ ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকা...
যাকগে, এই সবকিছু নিয়েই হাফেরও বেশি জীবন কাটিয়ে দিয়েছি।

সুমন সিনহা
৩০/০৬/২০২৪


ঋতুপর্ণ ঘোষ

সেদিনের পর থেকে কতো সিনেমার "শুভ মহরৎ" হলো, কতো "বাড়িওয়ালি" সিনেমার শুটিং-এর জন্য তাদের বাড়ি ভাড়া দিলেন, কিন্তু সিনে...