Saturday, September 7, 2024

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন্য সুনীল" বা ওই জাতীয় কিছু লিখবো। কিন্তু ভাবনাগুলো এলেও কিছুতেই গুছিয়ে লিখে উঠতে পারলাম না। মূলত কনসেনট্রেট করতে পারলাম না। মন চঞ্চল হয়ে পড়ছে নানা বিক্ষিপ্ত চিন্তায় সবসময়। সুনীল বাবুর দু একটি কবিতা পড়লাম, দু একটি কবিতা বা কবিতার লাইন মনে করলাম। "পূর্ব পশ্চিম"-এর কিছু পাতা এদিক ওদিক করলাম। অতীন, অলি, শর্মিলাদের কথা আরো বেশি মনে পড়লো।

আজ আবার গণেশ চতুর্থী। বাতাসে একটা উৎসবের আমেজ আছে। ক্রোধ ও দ্রোহের আবহে এই প্রবাসে বাঙালিরাও "গণপতি বাপ্পা মোরিয়া" বলছে। অন্যের সংস্কৃতি, রীতিনীতিকে আপন করে নেওয়া আর কি! অবশ্য শুধু প্রবাসে কেনো, পশ্চিম বাংলাতেও এখন গণেশ চতুর্থী ধুমধাম করে হয় যা দশ বছর আগেও হতো না। আগেকার দেখা পয়লা বৈশাখের দিন বাঙালির হালখাতার সিদ্ধিদাতা গণেশ এখন বাপ্পা হয়ে গেছে। এটার মধ্যে অবশ্য কেউ রাজনৈতিক বা জাতিগত কালচারের কোনো প্রভাব আছে বলে ভাববেন না দয়া করে। এমনিতেই শিক্ষিত, সমাজ সচেতন,  আদর্শবাদী, সংস্কৃতিমনষ্ক বাঙালীরা প্রতিনিয়ত বলে থাকেন "এই রাজনীতি রাজনীতি করেই বাঙালিদের সব কিছু শেষ হয়ে গেলো"। আশা করবো তারা নিশ্চয়ই সুনীল বাবুর "ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ" পড়েছেন।

কোলকাতা সবদিক দিক থেকেই এগিয়ে থাকে, কি প্রতিবাদে কি হুজুগে। জীবনানন্দের সাধের "কল্লোলিনী তিলোত্তমা" এখন অন্য এক তিলোত্তমার বিচার চেয়ে প্রায় প্রতিদিন রাত জাগছে। তার মধ্যেই গণেশ চতুর্থী পালন হচ্ছে। এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতেই সুনীল বাবুর "প্রথম আলো'র" কয়েকটা লাইন মনে পড়লো। লাইনগুলো এরকম ছিলো "তীর যেমন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কিছুটা পিছিয়ে আসে, ঠিক তেমনই বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে পিছু ফিরে তাকাবার দরকার আছে।"

সুমন সিনহা
০৭/০৯/২০২৪

আহা, বেশ বেশ বেশ...!!!

আজ শিয়ালদহ আদালতে আর. জি. করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ধৃত সঞ্জয় রায়ের মামলার শুনানিতে সি. বি. আইয়ের তদন্তকারী অফিসার (I. O) উপস্থিত ছিলেন না!! এমনকি সি. বি. আইয়ের তরফে কোনো আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন না! আদালত বন্ধ হওয়ার মুখে একজন নতুন আইনজীবী আসেন যিনি সি. বি. আইয়ের নিজস্ব আইনজীবি নন! I. O একজন সহকারী পাঠান যিনি কেসটি সম্পর্কে নাকি সম্যক অবহিত নন! শোনা যাচ্ছে বিচারপতি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন তাহলে ধৃতকে জামিন দিয়ে দেবেন কিনা! শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ বিচারপতি ধৃতকে চৌদ্দ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান।

কোন্ রাজনৈতিক দলের ছাত্রসমাজ, নেতা নেত্রীরা চিৎকার করে যেনো বলছে ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি করবেন না...
ভাবুন, ভাবা প্র্যাক্টিস করুন।

সুমন সিনহা
০৬ / ০৯ / ২০২৪

Monday, August 19, 2024

উৎপল দত্ত

আজকে এমন একজন বাঙালির মৃত্যুদিন যিনি নিজেকে কোনোদিন "বুদ্ধিজীবি" বা "শিল্পী" বলে দাবি করেন নি বা সেসব বিশেষনে পরিচিত হতে চান নি। নিজেকে কখনো "অরাজনৈতিক" বলেন নি। রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানের চোখরাঙানির বিরুদ্ধে একা লড়াই করে গেছেন। ক্ষমতার বৃত্তের কাছাকাছি ঘেঁষেন নি কোনোদিন। পুরস্কারের লোভ বা দাক্ষিন্যের নেশা কখনো তাঁকে আকৃষ্ট করে নি বরং প্রত্যাখানের সাহস তাঁকে এবং বাঙালিকে গৌরাবান্বিত করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রত্যাখ্যান করে তাঁর কৌতুকমিশ্রিত জবাব ছিলো "শাহেনশাহ্, তোমার পুরস্কার তোমার নিজের কাছেই রাখো"। তিনি উৎপল রঞ্জন দত্ত ওরফে উৎপল দত্ত।


কোনোরকম হিপোক্রিসী না করে ওঁর অকপট স্বীকারোক্তি ছিলো "সিনেমা করি পেটের দায়ে, নাটক করি নিজের দায়ে"। বিত্ত, বৈভব, ক্ষমতা ও সুবিধাবাদের গন্ধ শুঁকে বেড়িয়ে নিজেদের "এলিটিস্ট", "কালচার্ড" ভাবা লোকজনের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে ওঁর বিখ্যাত উক্তি "আমি শিল্পী নই, আমি প্রোপাগান্ডিষ্ট" আজ প্রায় প্রবাদে পরিনত হয়েছে। দু'বার "রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে" গ্রেপ্তার!! - - ১৯৬৩ তে কোলকাতায় এবং ১৯৬৭ তে মুম্বাইতে। ১৯৬৩ তে গভীর রাতে শ্রী সত্যজিৎ রায় ওঁর হয়ে থানা থেকে জামিন নিতে যান।

অগাধ পান্ডিত্য, জ্ঞান, পড়াশোনা ও বাগ্মিতা নিয়েও সারাজীবন নিজেকে গণনাট্য আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিয়ে গেছেন। প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যম ছিলো পথনাটিকা থেকে জনসভা - ক্ষমতাসীনের ছত্রছায়ায় নিজেকে নিরাপদ রেখে, গা বাঁচিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে কখনো সামিল হন নি। রাস্তায় নেমে দাপটের সাথে প্রতিবাদ করেছেন, পক্ষ নিয়েছেন। লাইমলাইটে আসার জন্য বা নিজেকে "ইমপর্টান্ট" দেখানোর জন্য কখনো হ্যাংলামি করতে হয় নি। ইতিহাস ওকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে।

সত্তরের নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা "তীর" নাটকের উপাদান সংগ্রহের জন্য উনি উত্তরবঙ্গে যান। সেখানেই এক জনসভা থেকে ওঁর নির্ভীক ঐতিহাসিক স্লোগান "একদিকে নকশালবাড়ি, আর অন্য দিকে বেশ্যাবাড়ি। বুদ্ধিজীবিরা পথ বেছে নিক, কোন্ দিকে যাবেন।"

আজকে সারা দেশ জুড়ে এই ক্রান্তিকালে যখন একদিকে রাজনীতি আর অন্যদিকে অরাজনীতি - তখন পথ বেছে নেওয়ার, পক্ষ বেছে নেওয়ার সময় এসেছে যাতে আমরা অন্তত নিজেরা ভবিষ্যতে আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারি। "অরাজনৈতিক" সবচেয়ে বড় সুবিধেবাদী রাজনৈতিক অবস্থান এবং তার থেকেও ভয়ঙ্কর হলো "অরাজনৈতিকতার" মুখোশের আড়ালে কোনো নির্দিষ্ট রাজনীতিকে বিভিন্ন সুকৌশলে প্রমোট করা।

সুমন সিনহা
১৯/০৮/২০২৪


Tuesday, July 23, 2024

এলোমেলো ভাবনা - ১১

প্রথমে শুরু হয় ক্ষয়। অনেকটা ক্ষয়ে যাওয়ার পর যখন আমরা টের পাই, তখন পড়ে থাকে ক্ষীণ আশা। ওই ক্ষয়ে যাওয়া আশা যেমন কখনো পুরোটা ফুরোয় না... ক্ষয় তৈরী করে ক্ষত। সময় বয়ে যায়, ক্ষত আরো গভীর হতে থাকে। কেউ কেউ সেই ক্ষততে মেকি প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করে, তাতে জ্বালা আরো বাড়ে। জ্বালা যখন অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায়, তখন ক্ষতির মাত্রাটা বোঝা যায়। একদিকে ক্ষতি, অন্যদিকে ক্ষরণ। দুটোই অন্তরে, তাই বাইরের পার্থিব ছন্দ কোনোভাবেই বিঘ্নিত হয় না - সবকিছুই কতো স্বাভাবিক, কতো সাজানো, কতো গোছানো। ভাঙাচোরা ভেতরটায় পড়ে থাকে শুধু আক্ষেপ। অপচয়ের আক্ষেপ, ক্ষতচিহ্নর আক্ষেপ, বে-হিসেবীর আক্ষেপ। প্রতিটি ক্ষতচিহ্ন বহন করে চলে তার নিজস্ব ইতিহাস, অপচয়ের আখ্যান। মনে মনে ভাবি 'কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়'...

বাইরে একনাগাড়ে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি নাকি স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়! বৃষ্টির ছন্দের মধ্যে স্মৃতি ফিসফিস করে বলছে "ক্ষমা করে দিও"।

কিছু কিছু ক্ষত থাকে যা ক্ষমা সারিয়ে তোলে না। ক্ষয়, ক্ষত, ক্ষতি, ক্ষরণ, ক্ষমা... জিন্দেগী হ্যায়, বহেনে দো...

সুমন সিনহা
২৩ /০৭ /২০২৪


Sunday, June 30, 2024

এলোমেলো ভাবনা - ১০

হঠাৎ হঠাৎ মনের মধ্যে উৎপটাং কিছু চিন্তাভাবনা এসে ভীড় করে। কিছুদিন ধরে হাফ মানে ওই অর্ধেক শব্দটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক শব্দের অর্থ কেমন করে যে বদলে যায়! ছোটো বেলায় হাফ শব্দটির মধ্যে একটা আনন্দের অনুভূতি লুকিয়ে থাকতো কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে হঠাৎ করেই একদিন আবিষ্কার করলাম হাফ শব্দটার মধ্যে একটা কঠিন নির্মমতা, একটা অবহেলা, একটা উপেক্ষা, একটা বিষন্নতা লুকিয়ে আছে।

প্রথম সাইকেল চালানো শেখা মানে আমাদের ছোটোবেলায় হাফ প্যাডেল শেখা ছিলো। সেই হাফ প্যাডেল সাইকেল চালানো শিখে যে উন্মাদনা, যে আনন্দ ছিলো, ফুল প্যাডেল শিখে বোধহয় কারোরই সেই মাত্রায় উন্মাদনা হয় নি কারণ সাইকেল শেখা মানে আমাদের ছোট বেলায় হাফ প্যাডেল শেখাই ছিলো। হাফ প্যাডেল শিখে গেছি মানে সাইকেল চালানো শিখে গেছি আর কি।
ছোটো বেলায় বাড়িতে যেদিন ডিমের ঝোল রান্না হতো, হাফ ডিম দিতো আমাদের। একটা ডিমকে হাফ করে একটা ভাগ আমার, আর একটা ভাগ দিদির। সেই ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে কখনো মন খারাপের ব্যাপার থাকতো না, বরং শেয়ার করার মধ্যেও যে একটা তৃপ্তি থাকে, সেটা বোধহয় অজান্তেই মনের ভেতর ঢুকে গেছিলো।
ছোটো বেলায় মা বাবার সাথে ট্রেন বা বাসে যখন কোথাও যেতাম, হাফ টিকিট কাটা হতো আমার জন্য। নিজেকে এক ধরণের প্রিভিলেজড্ই মনে হতো তখন।
হাফ জামা, হাফ প্যান্ট, হাফ টিকিট, হাফ প্যাডেল, হাফ ডিমের মতো আরো কতোরকম হাফ নিয়েই জীবনটা কতো সুন্দর, সরল ছিলো।
আর একটু বড়ো হয়ে যখন উচ্চমাধ্যমিক পড়ছি, তখন তেজস্ক্রিয় পদার্থের হাফ লাইফ শিখলাম। বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিলো। খুব সহজ কথায় বললে the half life of a radioactive element is the time it takes for half of the element to decay. কিন্তু যতোই ইন্টারেস্টিং হোক না কেনো, হাফ লাইফ শব্দটি একটা ক্ষয়ে যাওয়া বোঝায়! 
তারপর বাজারে একদিন চেতন ভগতের একটা বই বেরোল। নাম হাফ গার্লফ্রেন্ড। নামটা শুধু অদ্ভুত লেগেছিলো তাই না, বড় অবাকও হয়েছিলাম। বইটা যখন সিনেমা হয়েছিল তখন চেতন ভগতকে একবার এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন - এরকম নাম কেনো দিলেন বইটির। চেতন ভগতের তাৎক্ষণিক উত্তর ছিলো "Because that's what most of the Indian men get". গার্লফ্রেন্ডও (বা বয়ফ্রেন্ডও) হাফ হয়! কিজানি  হাফ বউও হয় কিনা!! 
আরো যখন বাইরের জগতের সাথে পরিচিত হলাম, হাফ জীবন কাটিয়ে দেওয়ার পর দেখলাম সম্পর্কগুলোও হাফ-হার্টেড। কিছুটা সময় কাটানো, কিছুটা শৌখিনতা ও নানা রকম প্রয়োজনের তাগিদে কতজন কতোজনের সাথে যোগাযোগ রাখে, সম্পর্ক তৈরী করে। সবকিছুই কেমন যেনো হাফ হাফ। কোনো দায় নেই, কেমন যেনো আজ আছে, কাল নেই টাইপের। একটা তাৎক্ষণিক ব্যাপার, মুহূর্তেই যার অস্তিত্ব। 
রবি ঠাকুরের "শুধু যাওয়া আসা" গানটার চারটে লাইন আজকাল মনের মধ্যে সবসময়ই অনুরণন তোলে।
"হৃদয়ে হৃদয়ে, আধো পরিচয়
আধোখানি কথা সাঙ্গ নাহি হয়
লাজে ভয়ে ত্রাসে, আধো বিশ্বাসে
শুধু আধোখানি ভালোবাসা"।
এরকম ভাবেই কতজন অর্ধেক পরিচিত হয়েই একটা জীবন কাটিয়ে দিলো !! অর্ধেক কথা বাকিই থেকে গেলো!! হাফ বিশ্বাস, হাফ ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকা...
যাকগে, এই সবকিছু নিয়েই হাফেরও বেশি জীবন কাটিয়ে দিয়েছি।

সুমন সিনহা
৩০/০৬/২০২৪


Monday, April 22, 2024

শঙ্খ ঘোষ

চিওপ্রিয় ঘোষ তখনও শঙ্খ ঘোষ হয়ে ওঠেন নি। সেটা ১৯৫২ সাল। খাদ্যের দাবি তে আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় সাধারণ মানুষের মিছিলে পুলিশের গুলি ও এক বিয়ে - ঠিক - হয়ে - যাওয়া তরুণীর মৃত্যু (সম্ভবত চার জন মারা গিয়েছিলেন) ও তার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা তরুণ চিত্তপ্রিয়কে রোমান্টিক অবসেসন্ থেকে বাস্তবের রুক্ষতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। তাঁর উদ্ধত কলম থেকে বেরিয়ে এসেছিল বাংলা কবিতার এক অনবদ্য কালজয়ী সৃষ্টি - 

"নিভন্ত এই চুল্লীতে মা / একটু আগুন দে / আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি / বাঁচার আনন্দে।
যমুনাবতী সরস্বতী কাল যমুনার বিয়ে / যমুনা তার বাসর রচে বারুদ বুকে দিয়ে / বিষের টোপর নিয়ে।
যমুনাবতী সরস্বতী গেছে এ পথ দিয়ে / দিয়েছে পথ, গিয়ে।" 
সমাজবিমুখ আত্মমগ্নতা নাকি "বিশুদ্ধ শিল্প "- এই দ্বৈরথের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে তিনি তৈরী করেছিলেন কবিতার নিজস্ব ঘরানা যেখানে মানবিক স্পর্শটুকুই বারে বারে হৃদয় ছুঁয়ে গেছে পাঠক - পাঠিকাদের। দাক্ষিণ্যের নেশা বা প্রসাদ পাওয়ার লোভ - কোনকিছুই শঙ্খ বাবু কে তাঁর অবস্থান থেকে একচুলও নড়াতে পারেনি। 'বাবরের প্রার্থনা'র পর গঙ্গায় অনেক জল বয়ে গেছে। তবুও কোনো কালেই কোনো শাসকের কাছে তাঁর কলম বন্ধক রাখেন নি। ২০০৮ এর নন্দীগ্রাম ঘটনার পর একই রকম দৃঢ়তায় তিনি অবিচল ছিলেন। আমরা আবার সাক্ষী থেকেছি তাঁর চেতনার, মননের ও কবিতার মানবিক টানের - 
" আমি তো আমার শপথ রেখেছি অক্ষরে অক্ষরে/ যারা প্রতিবাদি তাদের জীবন দিয়েছি নরক করে/  গুলির জন্য সমস্ত রাত সমস্ত দিন খোলা/ বজ্রকঠিন রাজ‍্যে এটাই শান্তিশৃঙ্খলা/ যে মরে মরুক অথবা জীবন, কেটে যাক শোক করে/ আমি আজ জয়ী সবার জীবন দিয়েছি নরক করে"। 
পরিবর্তনের ধাক্কায় ভেসে যাওয়া একটা জাতির "সুশীল সমাজ" যখন মঞ্চ ভাগাভাগির কুৎসিত প্রতিযোগিতায় ও পুরস্কারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যস্ত, তখনও তিনি সযত্নে সেই ভিড় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। বরং সাম্প্রতিক পৌরভোট নিয়ে সুবিধেবাদী বাঙালি বিবেক কে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন - 
"যথার্থ এই বীরভূমি / উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে এসে/ পেয়েছি শেষ তীরভূমি / দেখ্ খুলে তোর তিন নয়ন/ রাস্তা জুড়ে খড়গ হাতে/ দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।"
কোভিড আতিমারীতে গতবছরই থেমে গেছে বাঙালি সমাজের বিবেকের শঙ্খধ্বনি। দুদিন আগে চলে গেলো শঙ্খ বাবুর জন্মদিন। চিরকাল কাব্যাদর্শে স্তিতধী মিতভাষী শঙ্খ বাবু পরিমিত ও পরিশীলিত শব্দচয়ন ও আবেগঘন উচ্ছাস বর্জন করে কবিতার যে স্বতন্ত্র ধারা তৈরী করেছিলেন, কবিতার শিল্পে উত্তরণে তা কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি, বরং তাঁর কবিতার মানবিক অভিঘাত মানুষ কে আরো বেশি নাড়া দিয়েছে। তাঁর জীবন, দর্শন ও সৃষ্টি বারে বারে চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়েছে "তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়"।

সুমন সিনহা
০৭/০২/২০২২



Saturday, April 13, 2024

Random thoughts - 9

Prologue...

Nowadays quite often I find time hanging heavy on my hand. Random thoughts cripple my mind. Looking back, I find that if my past few years' life be plotted in a two-dimensional canvas, there is a series of sky scrapers on either side of the horizontal. Let me pen down the monologues scattered over the mind of a suburban boy of mid-forties.

Monologue...

Over the years, you learn that the person who is dearest to your heart can knock you down any time, can replace you in no time. You learn to enjoy being alone.

After a while, you learn that the person for whom you take so much risk by going against the current will simply dump you one fine morning. You learn resilience.

Someday you will discover with utter surprises that all the promises are empty and listening to different excuses at different times, be it full of contradictions, is the only reality. You learn to accept the reality.

With time you learn that the person whom you expressed your feelings and emotions without any hypocrisy will use it as a tool for torturing you and will feel intense pleasure by playing with your emotions which was so pure, genuine and honest to you. You learn to accept it as a gift in return.

Over the years, you learn that holding someone's hand in privacy with expressive eyes is just casual signifying nothing. At the same time, hugging, embracing, sharing private moments with someone else in and away from public, intimate texting and always satisfying and entertaining that someone else willingly in every possible way is just a part of social interaction, no matter how ugly it is. With the flow of time, you simply go on witnessing helplessly that someone else has become someone special with exchange of intimate and personal chats, dearly interaction and regular meet on this or that occasion. You begin to realize the meaning of replacement and that's what you deserved.

With the flow of time, you learn that relationship of any kind is nothing but a need and that very need changes with time in various forms. You realize that the depth of a relationship is an utopian concept. You begin to learn that care, concern and possessiveness for a person are something to be laughed at in this consumerist world. You learn that giving importance to someone translates to being ignored.

After a while you learn that what you thought to be your most precious possession never belonged to you and you begin to accept that being deceived, being abandoned is the way of life.

You learn that it is the money, the market value, the glamour and the show off that decide your worth and value to someone. You begin to accept with the grace of an adult that you are the most misfit person in this post truth age to survive. You do not deserve to love someone, to be loved by someone in this lustful society where thoughtless aspirations, unlawful ambitions, illicit relations and unethical activities are the new normal. You begin to understand your worth and realize how much you are prioritized, desired and understood by others.

You learn that the person whom you trust most will just give you a sheer fuck and you learn to endure being fucked.  And you learn that you really can endure because there is no other alternative left for you.

Let people be wrong about you. Let people take you amiss. Let people blame you. Let people think you are judgmental. Let people believe you live with inhibitions. Let people think you indulge in negative thoughts. Let people think that you enjoy sort of masochistic delight. Let them think what they want to think, how they want to think. After all, the feelings are yours only. It is you who endured everything. You begin to understand that the lessons you learnt add to your experience, add to your maturity. And you learn to move on with your head up and your eyes ahead, without changing yourself.

Epilogue...

There was a time when I used to be afraid of reaching the dry age of cynicism. And now I discover myself being completely confounded that I have reached the age of cynicism, the age of nihilism. Let me be alone, far away from the madding crowd, far away from the majority. Let it be the bliss of solitude. "The struggle of memory against forgetting" is the only inevitable. I am now tired of seeing my own defeat. I barely recognize myself now.

 Suman Sinha

13/04/2024

 

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...