Monday, July 4, 2022

বিদায় বেলায়

"... যতো বড় হও,
তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড় নও।
'আমি মৃত্যু - চেয়ে বড়' এই শেষ কথা ব'লে
যাব আমি চলে।।"

আপনার চলে যাওয়ার ভার বহন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আজ। কিন্তু যে সৃষ্টি, যে আদর্শ, যে ভাবনা, যে দৃষ্টান্ত আপনি রেখে গেলেন, তা যেনো বাঙালি জাতির কাছে, ভাবী প্রজন্মের কাছে আগামীর বার্তা হয়ে থাকতে পারে।
অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় ১৯৩১ সালের ৮ই জানুয়ারি তরুণ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা ওখান থেকেই। পরবর্তীকালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (স্কটিশচার্চ কলেজ) থেকে রসায়নবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা। কিন্তু ছাত্রাবস্থা থেকেই তাঁর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সিনেমার জগৎ। ২৮ বছর বয়সেই চিত্র পরিচালনায় প্রবেশ। প্রথম ছবি উত্তম - সুচিত্রা অভিনীত 'চাওয়া পাওয়া' (১৯৫৯)। সাড়া ফেলে দেওয়া চলচ্চিত্র দিয়ে সেই শুরু। বানিজ্যিক ছবির মধ্যেও যে রুচি, মনন ও বোধের স্বাক্ষর রাখা যায়, তা তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন। হাস্যরস ও নির্মল আনন্দ দর্শকদের উপরিপাওনা ছিল। আর ছিল সিনেমায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের অসাধারণ প্রয়োগ। প্রতিটি সিনেমার মধ্যে দিয়ে উনি মানুষের কথা, জীবনের কথা, যাপনের কথা সাবলীল ভাবে স্বচ্ছন্দে বলে গেছেন অথচ বিষয় বৈচিত্র্যে প্রতিটি ছবিই স্বতন্ত্র। এখানেই ওঁর নিজস্বতা, স্বকীয়তা - নিজেই তৈরী করেছেন সিনেমার নিজস্ব ব্যাকরণ, নান্দনিকতায় যার ঘাটতি পড়েনি কখনো। শুধু শিল্পই সৃষ্টি করেননি তিনি - গড়েছেন একাধিক শিল্পী। রুমকি রায় কে কেউ মনে রাখেনি আজ, মনে রেখেছে দেবশ্রী রায় কে। 'দাদার কীর্তি' চিনিয়েছে তাপস পাল কে। 'বালিকা বধূ' উপহার দিয়েছে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় কে। 'শ্রীমান পৃথ্বীরাজ' দেখে যে উচ্চাঙ্গের হাস্যরস ও অনাবিল আনন্দ বাঙালি দর্শকরা পেয়েছে, তার জুড়ি মেলা ভার। এরকম একের পর এক অবিস্মরনীয় সিনেমার নাম লিখে কলেবর বড় করাই যায় কিন্তু সেটা লিখে শ্রদ্ধা জানাবার উদ্দেশ্য আমার নয়। সারাজীবন নিজের কাজের প্রতি থেকেছেন অসম্ভব সৎ। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন পদ্মশ্রী (১৯৯০), চারটি জাতীয় পুরস্কার, সাতটি BFJA পুরস্কার, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও একবার আনন্দলোক পুরস্কার। কখনো আপোষ করার প্রয়োজন পড়েনি - না কর্মজীবনে না ব্যক্তিজীবনে। শুনেছি 'পলাতক' সিনেমার জন্য উনি যখন অনুপ কুমার কে নায়কের চরিত্রে নির্বাচন করেন, তখন কলকাতার সমস্ত নামী প্রযোজকরাই 'পলাতক' প্রযোজনা করতে অস্বীকার করেন। কিন্তু অনুপ কুমারের বদলে অন্য কাউকে নায়ক করার আপোষে হাঁটেননি। শেষ অবধি বোম্বের এক বিখ্যাত প্রযোজক অনুপ কুমার কে নায়ক করেই 'পলাতক' প্রযোজনা করতে রাজি হন। 'পলাতক' মুক্তির পরের অধ্যায় আজ ইতিহাস। মায়ের কাছে শুনেছি পলাতকে'র সব শো-টাইমই হাউসফুল যেতো এবং সিনেমা শেষে প্রত্যেক বয়সের দর্শকই ভাষাহীন হয়ে যেতো। এখানেই একজন শিল্পীর সার্থকতা।
একইভাবে আপোষ করেননি মূল্যবোধ ও নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে। ২০০৬-০৭ পরবর্তী পালাবদল, দলবদলের যাত্রাপালায় আনুগত্য বিক্রির প্রতিযোগিতায় বিন্দুমাত্র সামিল হওয়ার চেষ্টা করেননি। নন্দন, রবীন্দ্রসদন, শিশিরমঞ্চ ইত্যাদি জায়গায় প্রবাদপ্রতিম সিনেমাব্যক্তিত্বদের নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা সেরে যাঁরা পরেরদিন সকালে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যশিবিরে নাম লেখানোর লাইনের ভিড়ে অপেক্ষমাণ, তরুণবাবু সেই ভিড় থেকে সযত্নে দূরত্ব বজায় রেখে নিজের রাজনৈতিক দর্শনে অবিচল থেকেছেন। শুনেছি "পরিবর্তন-উত্তর" যুগে কোনো একদিন কোনো একটি সেমিনারে এক সাংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে হাসির ছলে সেই মঞ্চেই বসা এক কবি'র উদ্দেশ্যে তরুণবাবু বলেছিলেন তিনি খুব একটা আধুনিক নন ব'লে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না, আর তাই উনি "ওঁদের" মতো বদলাতে পারেন না! আক্ষরিক অর্থেই তরুণবাবু ছিলেন সমসাময়িক রাজনীতির বিবেক। তাই মৃত্যুর আগে তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল নন্দন বা রবীন্দ্রসদন জাতীয় জায়গায় যেনো তাঁর মরদেহ না রাখা হয়, মরদেহে কোনোরকম ফুল, মালা যেনো না দেওয়া হয়, মরদেহ নিয়ে কোনোরকম মিছিলের ভিড় থেকে তিনি দূরেই থাকতে চান এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় সম্মানের বন্দুকের আওয়াজে যেনো তাঁকে বিরক্ত না করা হয়। মৃতের প্রত্যাখ্যানের এই অহংকার ওঁকেই মানায়। "আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়" বোধহয় একেই বলে। খুবই সামান্য দুটি শেষ ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন - ওঁর মরদেহের ওপর যেনো একটি গীতাঞ্জলি ও একটি কাস্তে-হাতুড়ি দেওয়া লাল পতাকা রাখা হয়। পরিবারের লোকেরা দুটো ইচ্ছেই পূরণ করেছেন। উনি চোখ এবং দেহ - দুটোই দান করে গেছেন। ভীষন আশা রাখি যে, যে ব্যক্তি ওঁর চোখদুটি দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখবেন, তিনি যেনো গাইতে পারেন -
"চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে
অন্তরে আজ দেখবো যখন আলোক নাহিরে"।

Rest in ideology তরুণবাবু ।

পুনশ্চঃ এইমাত্র দেখলাম কল্যাণ সেন বরাট বলেছেন "ওঁর মেরুদণ্ডটার সংরক্ষণ করার দরকার ছিল"।

সুমন সিনহা
০৪/০৭/২০২২



Tuesday, June 7, 2022

দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট

Is starvation a performing art? এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক বহুযুগ ধরে চলে আসছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক অবধি 'হাঙ্গার আর্টিস্ট'রা পারফর্মার-ই ছিলেন কারণ তারা টাকার বিনিময়ে মানুষের মনোরঞ্জন করতেন। কিন্তু তাদের মনোরঞ্জনের পদ্ধতিটি ছিল অভিনব। তারা খাঁচার মধ্যে একটি চেয়ারে বসে দীর্ঘদিন উপবাস করতেন এবং সেটি দেখতে দর্শকরা টাকা খরচ করে ভিড় জমাতেন। এমনকি রাতেও দর্শক সমাগম হতো। ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে এই অ্যাক্ট খুবই জনপ্রিয় ছিল। যত বেশিদিন একটানা উপোষ (৪০ দিনের বেশি নয় যদিও) করে থাকতে পারবে, তত বেশি ভিড় ও টাকা। এই হাঙ্গার আর্টিস্টদের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছিলাম ফ্রানৎজ কাফকা'র বিখ্যাত ছোটগল্প "আ হাঙ্গার আর্টিস্ট" - এর (১৯২২) মাধ্যমে। ১০০ বছর পর কাফকা'র এই বিখ্যাত ছোটগল্পটি অবলম্বনে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleswar Mukherjee) বানালেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের বাংলা চলচ্চিত্র "দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট"।

বর্তমান পুঁজিবাদ (capitalism) সর্বস্ব সমাজে বাজার অর্থনীতি (market economy) কিভাবে একজন শিল্পীর অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ (control) করে, সেটাই সিনেমাটির মূল বক্তব্য। ছবির মূল চরিত্র দুই তরুণ বন্ধু - ভূতো আর ঘনা। ভূতো রাজনৈতিক ভাবে সচেতন একজন তরুণ যে সমসাময়িক বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর খবরাখবর রাখে। বিশ্বের যে প্রান্তেই কোনো সন্ত্রাস বা অত্যাচারের ঘটনা ঘটুক না কেনো, ভূতো তার প্রতিবাদে অনশন করে এবং ভূতো বেশ কয়েকদিন না খেয়ে থাকতে পারে। ঘনা ভূতোর এই অনশন করার ক্ষমতাকে মূলধন (capital) করে মুনাফা (profit) করবে ঠিক করে এবং সেইমতো ভূতোকে ক্রমাগত বোঝাতে থাকে যে ঠিকমতো প্রচার ও প্রোপাগান্ডা পেলে অনশনও বাজারে বিক্রি হয়। আর সেটা করতে পারলে ভূতো সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে একজন শিল্পী হিসেবে - 'অনশন শিল্পী'! এই সমাজে সবাই চায় মনোযোগ পেতে - ভূতো ঘনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। ঘনা ভূতোকে নিয়ে শো আয়োজন করে এবং সেই শো চারদিকে শোরগোল ফেলে দেয়। প্রচারের সমস্ত আলো তখন ভূতোর ওপর। মূলস্রোত সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যমে তখন শুধুই চর্চার বিষয় ভূতোর অনশন শো। চারদিকে ভূতোকে নিয়ে বিজ্ঞাপন। একটি শো থেকে পরের শো তে ভূতোর অনশন করার দিন সংখ্যা বাড়তে থাকে - মিডিয়া আরো বেশি মাতামাতি করে। কর্পোরেট দুনিয়ার কর্তার চিন্তা "ভূতো ২% ভোট সুইং করাতে পারে!" ভূতো ততদিনে নিজেকে পুরোদস্তুর একজন শিল্পী অর্থাৎ 'অনশন শিল্পী' ভাবতে শুরু করে দিয়েছে এবং প্রচার মাধ্যমের আলোয় থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অনশনের ১৮ দিনের মাথায় যখন ভূতোর মা ভূতোর প্রিয় খাবার নাড়ু নিয়ে আসেন, ভূতো বলে সে "ভাবের ঘরে চুরি করতে পারবেনা " কারণ সে "একজন প্রকৃত শিল্পী"। ভূতোকে ভালোবেসে যখন এক মহিলা সাংবাদিক ভূতোকে নিজের কথা ভাবতে বলে, যখন ভূতোকে বলে যে "stop this madness", ভূতো তাকেও তাড়িয়ে দেয়। ভূতোর মাথায় তখন ২০ দিন না খেয়ে থাকার ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে প্রকৃত অনশন শিল্পী হওয়ার প্রবল বাসনা! দ্য আর্ট অব হাঙ্গারে ভূতো তখন মোহগ্রস্ত! কিন্তু বাজারের নিয়মেই ভূতোর শো তে দর্শক সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, মিডিয়া কভারেজ কমে আসে, বিজ্ঞাপনও কমতে থাকে - ফলে ঘনার মুনাফাও কমতে থাকে। ঘনা ভূতোকে বলে অনশন পাবলিক আর খাচ্ছে না! ঘনার মাথায় তখন নতুন কোন চমকের ভাবনা যা বাজারে খাবে! ঘনা একজন ঘুম শিল্পীর (slumber artist) খোঁজ পেয়ে যায় যে কোনোরকম মদ্যপান ছাড়াই ৭২ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকতে পারে। অতএব ভূতোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ভূতোর ওপর প্রচারের আলো আচমকাই নিভে যায়। শেষ দৃশ্যে ভূতোর হৃদয়বিদারক চিৎকার "লাইট, লাইট - আমি একজন প্রকৃত শিল্পী - আমি একজন প্রকৃত শিল্পী" বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে দেয়।

ভূতোর চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী অনবদ্য। ঘনার চরিত্রে বিশ্বনাথ বসু বেশ ভালো। সাংবাদিক চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা মন্ডল মনে দাগ কাটে। ১৮ মিনিটের একটু বেশি সময়ের "দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট" মাস দেড়েক আগে ইউটিউবে রিলিজ করেছে। ইতি মধ্যেই বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবে (international short film festival) ছবিটি দেখানোও হয়েছে। ধন্যবাদ কমলেশ্বর বাবু ও ফ্যাটফিশ এন্টারটেনমেন্ট কে এরকম একটি ছবি বানানোর জন্য। সিনেমাটি দেখবার ইউটিউব সংযোগসূত্রটি নিচে দেওয়া থাকলো।

https://youtu.be/05fbZhfIYtM

সুমন সিনহা 
০৭/০৬/২০২২



Monday, February 21, 2022

আ-মরি বাংলা ভাষা…

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা ভাষা শহীদ দিবস বাঙালি স্বভাবত স্মৃতিমেদুর, হুজুগে ও উৎসবমুখরতাই আজ হাহুতাশ ও আদিখ্যেতার উদযাপন একটু বেশিই হবে  একই সাথে  আমরা যে বাংলায় ভাবতে ভুলে যাচ্ছি ক্রমশ, সেটা আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে আজকেও একই ভাবে প্রকাশ পাবে বুলেট বিদ্ধ ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায় আমাদের স্মৃতিতে ধূসর হয়ে যাওয়ার জন্য যতটা না লজ্জিত আমরা, তার চেয়ে বেশি গর্বিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হওয়ার চক্ষুলজ্জাহীন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের উত্তরাধিকার, নিজেদের সংস্কৃতি কে অনাদরে, অবহেলায় দূরে সরিয়ে রেখে কি অন্যদের সংস্কৃতি কে কখনো আপন করে নেওয়া যায় ? ভাষা একটা জাতির পরিচয় (identity), ভাষা সেই জাতির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক সেই ভাষা বাবহারের প্রতি আমরা যদি শ্রদ্ধাশীল না হই, যত্নবান না হই, ভাষার প্রতি আমরা যদি উদাসীন হই, তাহলে অন্যরা তো সম্মান দেবেই না, বরং আমরা আরো শিকড়হীন হয়ে পড়বো সেই শিকড়হীন হয়ে যাওয়ার হতাশা অন্যের সংস্কৃতিকে আপন করে নেওয়ার খোঁড়া অজুহাত না হয়ে দাঁড়ায় ! ভাষা বাবহারে আঞ্চলিক হওয়া কখনো সংকীর্ণতা বা অনগ্রসরতা  বা অনাধুনিকতা বা প্রাদেশিকতা বোঝায় না এই বোধ টা হওয়া বা শেখানো জরুরী বাংলা শব্দের সাথে হিন্দি বা ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে কিম্ভুতকিমাকার উচ্চারণ করে যদি আমরা “গ্লোবাল” হওয়ার আত্মসন্তুষ্টিতে ডুবে থাকি, তাহলে সেখানে কোন “গ্লো” থাকেনা সরস্বতী পুজোর দিন যখন শুনি “ আন্টি প্রসাদ বাটছে” বা “আখ চিবোতে গিয়ে দাঁত হিলছে”, তখন বড় অসহায় লাগে বিজ্ঞাপনে হাসিমুখে জনপ্রিয় নায়ক যখন বলে “অকলমন্দ হোন, সঠিক বাছাই করুন” বা ফরচুন বাসমতী চালের বিজ্ঞাপনে যখন লেখা থাকে “জড়িয়েনা ধরা দানা” বা “উত্তম মেলে ধরে” তখন দুঃখ আর ক্ষোভ হয় এটা ভেবে যে বাংলা ভাষা কে কতটা সস্তা করে দিলে কোম্পানীগুলো এমন বাংলা লিখেও পার পেয়ে যায় ! আর যে ভাষার দৌলতে গোটা পৃথিবী একটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপহার পেল, সেই বাংলা ভাষার প্রতি কতটা উদাসীন, কতটা নির্লিপ্ত হলে একটা জাতি বিজ্ঞাপনের এজাতীয় বাংলা ভাষার প্রয়োগ দেখেও প্রতিবাদহীন হয়ে “বিন্দাস” দিন কাটিয়ে যায় ! এরকম অজস্র, অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়, কিন্তু শুধু উদাহরণ দেওয়াটা এই লেখার উদ্দেশ্য নয় বাংলা ভাষা ও তার বাবহারের প্রতি সচেতন হওয়া আজকের দিনে ভীষণই জরুরী, ভীষণই প্রয়োজনীয়  বাংলা বানান ও উচ্চারণ নিয়ে কিছু সংখ্যক লোকজনের মধ্যে যে উন্নাসিকতা এবং “এলিটিস্ট অবসেসন” আছে, তা কাম্য নয় বাংলা বানান ও উচ্চারণের শুদ্ধতা নিশ্চয়ই দরকার, কিন্তু এই মুহুর্তে তার চেয়েও বেশি দরকার বাংলা ভাষাটা কে তার অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো আজ আত্মসমালোচনার দিন, আজ আত্মবিস্মৃতির অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসার দিন দেরী হয়ে গেলেও আজ আমাদের ভাবতে হবে উত্তর প্রজন্মকে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে আমরা কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছি  যদি সেই দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন না করার চেষ্টা করি, পরবর্তী প্রজন্মকে শিকড়হীন করে দেওয়ার দায়ও আমাদেরই নিতে হবে  একুশের আবেগে ভাসবার সাথে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে একুশ একটা অধিকার, একুশ একটা অঙ্গীকারের নাম

গতবছরের লেখাটির সংযোগসূত্রটিও নীচে দিলাম পড়ে দেখবার অনুরোধ রইলো  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা তাদেরও যাদের “বাংলাটা ঠিক আসেনা”ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি

নীচের ছবিটি আমার পুত্র আজ এঁকেছে। 

সুমন সিনহা
২১ / ০২ / ২০২২

গতবছরের লেখার সংযোগসূত্র





Saturday, February 5, 2022

সরস্বতী পুজো - হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো

কোনো কোনো দিন বড় স্মৃতিমেদুর করে তোলে। আজ সরস্বতী পুজো। ভালোবাসার বসন্ত পঞ্চমী। আজকের দিনটি  আমায় অতীতচারী করে তোলে। মফস্বল শহরের সরস্বতী পুজোর দিন মানেই কত রোমাঞ্চকর অনুভূতি... বাড়ির বাইরে থাকার অগাধ স্বাধীনতা। পাড়ার পুজো, স্কুলের পুজো, অন্য স্কুলে ঠাকুর দেখতে যাওয়া, কুল খাওয়ার মজা -- একটার পর একটা। আড়ম্বরহীন পুজোয় অনাবিল আনন্দের অনুভূতি, অকারণ হাসির দিনগুলি আজ চেষ্টা করেও ফিরে পাই না। একটু বড় বয়সে মেয়েদের হলুদ শাড়ি, সাজগোজ, ক্ষেত্রবিশেষে বাঁকা চাহনি, মুখ টিপে হাসি, বন্ধুদের প্রপোস, কারোর কারোর নিরালায় উষ্ণতা বিনিময় ও আমাদের পাহাড়া দেওয়া (কখনো কখনো আড়ি পাতাও বটে! ) -- এসবই এক মনখারাপ করা অদ্ভূত ভালোলাগার সৃষ্টি করে। অকৃত্রিম সারল্যের সেই গলাগলির দিন গুলোই বোধহয় জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা। সঞ্চয়ও বটে। বছর দুয়েক আগে নিছকই খেয়াল থেকে নিচের কবিতা টি লিখেছিলাম। আজ আরো একবার ভাগ করে নিই।

খেয়াল

দুপুর বেলায় হঠাৎ খেয়াল হলো 
ঘুরে আসি সব পুরোনো অলি গলি 
অবক্ষয়ের পঁচিশ বছর পর 
কেমন আছে ফেলে আসা দিন গুলি। 

রোজ বিকেলে আড্ডা দেওয়ার নেশা 
ছুটে যেতাম তোদের বাড়ির ছাদে 
কখনো সেই কোণের ঘর টা তে 
সময় যেতো নিজের মনে বয়ে। 

ঘড়ি দেখার ছিল না কোনো বালাই 
রেশারেশির ছিল না কোনো লড়াই 
লাভ ক্ষতি তে ছিল না যে বিশ্বাস 
শুধু তুই আর আমি, আর ওই ছাদ। 

না ছিল ফোন, না কিছু ভেবে 
দিতিস উঁকি আমার ঘরে 
বলতিস তুই এক গাল হেসে 
চল ঘুরে আসি গঙ্গার ধারে।

দুটো সাইকেল পাশাপাশি চলে 
উৎসাহী লোক চোখাচোখি করে 
আমরা দুজন নির্বিকার 
চষে ফেলি সব রাস্তা ঘাট। 

ছিল না কোনো হিসেবনিকেশ 
ছিল না কোনো বিধিনিষেধ 
চেনা গন্ডির মধ্যে থাকা, ছিল স্বতঃসিদ্ধ
কাঁচা বয়সের দুটি কচি মন, শুধু অপাপবিদ্ধ।

সুমন সিনহা 
০৫/০২/২০২২

Sunday, January 23, 2022

Subhas Chandra Bose – His Ideas, Ideals and Dreams

            The recent past has witnessed the rise of right-wing forces. The attempt to appropriate the icons of freedom struggle by the right-wing forces is quite obvious now-a-days and it has been observed in the recent past, too. This is obviously due to the lack of any heroic figures of their own. However, it is not easier to change the narrative of the thoughts and philosophy of Subhas Chandra Bose and his political legacy. It has to be kept in mind that the life and works of Subhas Chandra Bose are well documented and there is a Netaji Research Bureau, founded by his nephew Dr. Sisir Kumar Bose and presently run by his grandnephew Dr. Sugata Bose. The Netaji Research Bureau is housed at Netaji Bhawan, Kolkata, which is the ancestral house of Subhas Chandra Bose.

               It is of quite relevance today to remind ourselves of his thoughts, ideas, ideals, sacrifices and convictions in India’s struggle for freedom, collected from the most reliable and authentic sources. Let us glance over the pages of history.

“Communalism has raised its ugly head in an all out nakedness…Even the oppressed, the poor and the ignorant long for independence. We hear voices of Hindu Raj in India owing to a majority of Hindu population. These are all useless thoughts. Do the communal organizations solve any of the problems confronted by the working class? Do any such organizations have any answer to unemployment and poverty?... The ideas of Savarkar and Hindu Mahasabha of anti-Muslim propaganda in practice means full collaboration with British” (Source: Netaji Collected Works, Volume – III, Edited by Sisir K Bose, Published by Netaji Research Bureau, 1981)

“Fanatism is the greatest thorn in the path of cultural intimacy and there is no better remedy for fanatism than secular and scientific education.” (Source: The Essential Writings of Netaji Subhas Chandra Bose, Edited by Sisir K Bose and Sugata Bose, Oxford University Press, 2014)

            It is also important to note down here a short excerpt from Sugata Bose’s book ‘His Majesty’s Opponent: Subhas Chandra Bose and India’s struggle Against Empire’ ---- “Netaji successfully united Hindus, Muslims, Sikhs and Christians in the struggle for freedom based on his commitment to equal rights and respect for all as well as his enlightened philosophy of cultural intimacy among India’s diverse communities. He won the implicit trust of the minorities as no one else had…Just as Gandhian values cannot be reduced to a cleanliness campaign, extolling Netaji’s military heroism sounds hollow if divorced from his unequivocal commitment to religious harmony.”

History had been witness to the fact that exactly a week before his assassination on January 30, 1948, Mahatma Gandhi observed Subhas’s birthday and in his final eulogy to the great patriot, Gandhi reminded the nation that Subhas “knew no provincialism nor communal differences” and “had, in his brave army, men and women drawn from all over India without distinction and evoked affection and loyalty, which very few have been able to evoke”.

Commemorating Subhas Chandra Bose on his birth anniversary by garlanding his bust or by erecting his statue will relegate him only. Instead, a proper tribute to Subhas Chandra Bose would be to spread and follow the ‘rich inheritance of ideas, ideals and dreams’, left by Bose. It is an eternal truth that the legacy of Subhas Chandra Bose lies in his ‘generous and imaginative approach towards achieving unity by respecting difference.’

Suman Sinha
23/01/2022


এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...