Monday, February 21, 2022

আ-মরি বাংলা ভাষা…

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা ভাষা শহীদ দিবস বাঙালি স্বভাবত স্মৃতিমেদুর, হুজুগে ও উৎসবমুখরতাই আজ হাহুতাশ ও আদিখ্যেতার উদযাপন একটু বেশিই হবে  একই সাথে  আমরা যে বাংলায় ভাবতে ভুলে যাচ্ছি ক্রমশ, সেটা আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে আজকেও একই ভাবে প্রকাশ পাবে বুলেট বিদ্ধ ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায় আমাদের স্মৃতিতে ধূসর হয়ে যাওয়ার জন্য যতটা না লজ্জিত আমরা, তার চেয়ে বেশি গর্বিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হওয়ার চক্ষুলজ্জাহীন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের উত্তরাধিকার, নিজেদের সংস্কৃতি কে অনাদরে, অবহেলায় দূরে সরিয়ে রেখে কি অন্যদের সংস্কৃতি কে কখনো আপন করে নেওয়া যায় ? ভাষা একটা জাতির পরিচয় (identity), ভাষা সেই জাতির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক সেই ভাষা বাবহারের প্রতি আমরা যদি শ্রদ্ধাশীল না হই, যত্নবান না হই, ভাষার প্রতি আমরা যদি উদাসীন হই, তাহলে অন্যরা তো সম্মান দেবেই না, বরং আমরা আরো শিকড়হীন হয়ে পড়বো সেই শিকড়হীন হয়ে যাওয়ার হতাশা অন্যের সংস্কৃতিকে আপন করে নেওয়ার খোঁড়া অজুহাত না হয়ে দাঁড়ায় ! ভাষা বাবহারে আঞ্চলিক হওয়া কখনো সংকীর্ণতা বা অনগ্রসরতা  বা অনাধুনিকতা বা প্রাদেশিকতা বোঝায় না এই বোধ টা হওয়া বা শেখানো জরুরী বাংলা শব্দের সাথে হিন্দি বা ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে কিম্ভুতকিমাকার উচ্চারণ করে যদি আমরা “গ্লোবাল” হওয়ার আত্মসন্তুষ্টিতে ডুবে থাকি, তাহলে সেখানে কোন “গ্লো” থাকেনা সরস্বতী পুজোর দিন যখন শুনি “ আন্টি প্রসাদ বাটছে” বা “আখ চিবোতে গিয়ে দাঁত হিলছে”, তখন বড় অসহায় লাগে বিজ্ঞাপনে হাসিমুখে জনপ্রিয় নায়ক যখন বলে “অকলমন্দ হোন, সঠিক বাছাই করুন” বা ফরচুন বাসমতী চালের বিজ্ঞাপনে যখন লেখা থাকে “জড়িয়েনা ধরা দানা” বা “উত্তম মেলে ধরে” তখন দুঃখ আর ক্ষোভ হয় এটা ভেবে যে বাংলা ভাষা কে কতটা সস্তা করে দিলে কোম্পানীগুলো এমন বাংলা লিখেও পার পেয়ে যায় ! আর যে ভাষার দৌলতে গোটা পৃথিবী একটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপহার পেল, সেই বাংলা ভাষার প্রতি কতটা উদাসীন, কতটা নির্লিপ্ত হলে একটা জাতি বিজ্ঞাপনের এজাতীয় বাংলা ভাষার প্রয়োগ দেখেও প্রতিবাদহীন হয়ে “বিন্দাস” দিন কাটিয়ে যায় ! এরকম অজস্র, অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়, কিন্তু শুধু উদাহরণ দেওয়াটা এই লেখার উদ্দেশ্য নয় বাংলা ভাষা ও তার বাবহারের প্রতি সচেতন হওয়া আজকের দিনে ভীষণই জরুরী, ভীষণই প্রয়োজনীয়  বাংলা বানান ও উচ্চারণ নিয়ে কিছু সংখ্যক লোকজনের মধ্যে যে উন্নাসিকতা এবং “এলিটিস্ট অবসেসন” আছে, তা কাম্য নয় বাংলা বানান ও উচ্চারণের শুদ্ধতা নিশ্চয়ই দরকার, কিন্তু এই মুহুর্তে তার চেয়েও বেশি দরকার বাংলা ভাষাটা কে তার অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো আজ আত্মসমালোচনার দিন, আজ আত্মবিস্মৃতির অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসার দিন দেরী হয়ে গেলেও আজ আমাদের ভাবতে হবে উত্তর প্রজন্মকে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে আমরা কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছি  যদি সেই দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন না করার চেষ্টা করি, পরবর্তী প্রজন্মকে শিকড়হীন করে দেওয়ার দায়ও আমাদেরই নিতে হবে  একুশের আবেগে ভাসবার সাথে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে একুশ একটা অধিকার, একুশ একটা অঙ্গীকারের নাম

গতবছরের লেখাটির সংযোগসূত্রটিও নীচে দিলাম পড়ে দেখবার অনুরোধ রইলো  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা তাদেরও যাদের “বাংলাটা ঠিক আসেনা”ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি

নীচের ছবিটি আমার পুত্র আজ এঁকেছে। 

সুমন সিনহা
২১ / ০২ / ২০২২

গতবছরের লেখার সংযোগসূত্র





Saturday, February 5, 2022

সরস্বতী পুজো - হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো

কোনো কোনো দিন বড় স্মৃতিমেদুর করে তোলে। আজ সরস্বতী পুজো। ভালোবাসার বসন্ত পঞ্চমী। আজকের দিনটি  আমায় অতীতচারী করে তোলে। মফস্বল শহরের সরস্বতী পুজোর দিন মানেই কত রোমাঞ্চকর অনুভূতি... বাড়ির বাইরে থাকার অগাধ স্বাধীনতা। পাড়ার পুজো, স্কুলের পুজো, অন্য স্কুলে ঠাকুর দেখতে যাওয়া, কুল খাওয়ার মজা -- একটার পর একটা। আড়ম্বরহীন পুজোয় অনাবিল আনন্দের অনুভূতি, অকারণ হাসির দিনগুলি আজ চেষ্টা করেও ফিরে পাই না। একটু বড় বয়সে মেয়েদের হলুদ শাড়ি, সাজগোজ, ক্ষেত্রবিশেষে বাঁকা চাহনি, মুখ টিপে হাসি, বন্ধুদের প্রপোস, কারোর কারোর নিরালায় উষ্ণতা বিনিময় ও আমাদের পাহাড়া দেওয়া (কখনো কখনো আড়ি পাতাও বটে! ) -- এসবই এক মনখারাপ করা অদ্ভূত ভালোলাগার সৃষ্টি করে। অকৃত্রিম সারল্যের সেই গলাগলির দিন গুলোই বোধহয় জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা। সঞ্চয়ও বটে। বছর দুয়েক আগে নিছকই খেয়াল থেকে নিচের কবিতা টি লিখেছিলাম। আজ আরো একবার ভাগ করে নিই।

খেয়াল

দুপুর বেলায় হঠাৎ খেয়াল হলো 
ঘুরে আসি সব পুরোনো অলি গলি 
অবক্ষয়ের পঁচিশ বছর পর 
কেমন আছে ফেলে আসা দিন গুলি। 

রোজ বিকেলে আড্ডা দেওয়ার নেশা 
ছুটে যেতাম তোদের বাড়ির ছাদে 
কখনো সেই কোণের ঘর টা তে 
সময় যেতো নিজের মনে বয়ে। 

ঘড়ি দেখার ছিল না কোনো বালাই 
রেশারেশির ছিল না কোনো লড়াই 
লাভ ক্ষতি তে ছিল না যে বিশ্বাস 
শুধু তুই আর আমি, আর ওই ছাদ। 

না ছিল ফোন, না কিছু ভেবে 
দিতিস উঁকি আমার ঘরে 
বলতিস তুই এক গাল হেসে 
চল ঘুরে আসি গঙ্গার ধারে।

দুটো সাইকেল পাশাপাশি চলে 
উৎসাহী লোক চোখাচোখি করে 
আমরা দুজন নির্বিকার 
চষে ফেলি সব রাস্তা ঘাট। 

ছিল না কোনো হিসেবনিকেশ 
ছিল না কোনো বিধিনিষেধ 
চেনা গন্ডির মধ্যে থাকা, ছিল স্বতঃসিদ্ধ
কাঁচা বয়সের দুটি কচি মন, শুধু অপাপবিদ্ধ।

সুমন সিনহা 
০৫/০২/২০২২

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...