Sunday, April 18, 2021

৭ই মে

আজ ৭ই মে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৪৫ সালের আজকের দিনে আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হয়। জার্মান সৈন্যবাহিনির প্রধান ইয়োডল মিত্রশক্তির কাছে আজকের দিনেই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর ঠিক সাতদিন আগে অর্থাৎ 30 শে এপ্রিল দুপুর দুটোয় যথানিয়মে মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্ন করার পরে হিটলার তাঁর প্রিয় কুকুর ও সদ্য বিবাহিত বান্ধবী ইভা ব্রাউনকে নিয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করেন। হিটলার প্রথমে প্রিয় কুকুরটিকে বিষ খাওয়ান, তারপর ইভা ব্রাউন কে। এরপর বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি নিজের মাথায় গুলি করেন, যাতে কোনোভাবেই জীবিত অবস্থায় শত্রুর হাতে ধরা না পড়েন। কি বীরের মৃত্যু!! গোয়েবেলসও সপরিবারে আত্মহত্যা করেন।

পরেরদিন অর্থাৎ ৮ই মে সারা ইউরোপে বিজয় উৎসব পালন হল। ৯ই মে জার্মান সেনাধ্যক্ষ কাইটেল আত্মসমর্পণ করলেন রাশিয়ার মার্শাল জুকভের কাছে। সেদিন বার্লিনে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছিল এবং বৃষ্টিভেজা মানুষ রাস্তায় রাস্তায় ভিড় করেছিল।
এটা ঠিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির জয় বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে সবচেয়ে ইতিবাচক ও যুগান্তকারী ঘটনা কারণ নাৎসিবাদের হাত থেকে ইউরোপ তথা বিশ্বসভ্যতা রক্ষা পেয়েছিল এই জয়কে ছিনিয়ে নিয়ে। চার্চিল তাঁর বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের শেষ তথা ষষ্ঠ খন্ডের নাম দিয়েছিলেন 'Triumph and Tragedy' । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপুল জয়ের সাফল্যের শেষে উনি কেন Tragedy প্রসঙ্গ আনতে গেলেন? এই বিজয় যুদ্ধরত কয়েকটি দেশ ও দেশনায়কের জয় নয় মাত্র, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সৈনিক, সহযোদ্ধা ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আপামর জনসাধারণের ঘরে ঘরে পৌঁছেছিল এই জয়ের গৌরবময় বার্তা। কিন্তু এই জয়ের উচ্ছ্বাস, আনন্দ ঢাকা দিতে পারেনি নাৎসি শাসনের নৃশংস ভয়াবহতা। নির্বিচার ও নিষ্ঠুর হত্যালীলায় শিশু - নারী - পুরুষ নির্বিশেষে অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। মানবতা ও মানবাধিকারের এই নির্লজ্জ অপমান ইতিহাস কোনোদিন ক্ষমা করবে না। জীবনহানি ছাড়াও পথঘাট, ডাক-তার, জলযান, কলকারখানা, খামার, বাগিচা, বন্দর, শহর, গ্রাম ইত্যাদি সামাজিক সম্পদগুলি যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল তার মুল্য বিচার করা সত্যিই অসম্ভব। এসবেরও ওপরে ছিল মানবিক প্রশ্নটি - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মানুষকেও অমানবিক প্রজাতিতে নামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো নাৎসিরা। এই মহাযুদ্ধ শৈশব - কৈশোর - যৌবনকে, নারী - পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের অস্তিত্বের, মানুষের জীবনের মৌলিক সত্যতাকে পরাস্ত করতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়। এখানেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেদনাক্রান্ত জয়ের তাৎপর্য।
পুনশ্চ : ১৯৪৫ সালের ৭ই মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পরেও ৬ই আগস্ট পৃথিবীর প্রথম আনবিক বোমা পড়ল জাপানের হিরোসিমায়। তার তিনদিন পর ৯ই আগস্ট আমেরিকা নাগাসাকিতে দ্বিতীয় আনবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালো। এর কি কোনো প্রয়োজন ছিল, বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও জাপানের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্তের কি সত্যি কোনও দরকার ছিল? এই নিয়ে প্রশ্ন আজও বিতর্কিত। অনেক ইতিহাসবিদই এটাকে পার্ল হারবারের প্রতিশোধ হিসেবে মনে করেন না। যাইহোক, যুদ্ধের ইতিহাসে এই বোমায় হতাহতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। কয়েক লক্ষ মানুষ হয়েছিলেন বীভৎস রকমের বিকলাঙ্গ ও কালান্তক তেজষ্ক্রিয় রশ্মির শিকার।

তথ্যসূত্র : নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

সুমন সিনহা
০৭/০৫/২০১৯

ইতিহাসের আলোয় মুর্শিদাবাদ: প্রথম পর্ব


ইতিহাসের আলোয় মুর্শিদাবাদ

পর্ব ১: মুর্শিদাবাদের পত্তন ও নামকরণ

DISCLAIMER: মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুরে আমার জন্ম ও বড় হওয়া। মুর্শিদাবাদ নগরীর পরতে পরতে জড়িয়ে আছে এক রঙিন অথচ করুন ইতিহাস। পলাশীর যুদ্ধের পর থেকেই রাজধানী মুর্শিদাবাদের গুরুত্ব কমতে শুরু করে। মুর্শিদাবাদের শিল্প, বাণিজ্য, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের ইতিহাস তুলনামূলক ভাবে উপেক্ষিত ও অবহেলিত রয়ে গেছে বলেই মনে হয়। এই ভাবনা থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে লিখেছি যদিও ইতিহাস লেখার অ্যাকাডেমিক ছাড়পত্র আমার নেই।

সাধারণ ভাবে একটি শহর বা নগরের কোনো প্রতিষ্ঠাতা থাকে না, স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই শহর বা নগরের উৎপত্তি হয়। এর ব্যতিক্রম হাতে গোনা যায়। মুর্শিদাবাদ এই ব্যাতিক্রমের মধ্যে পড়ে।
শুরু করি সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে। দিল্লীর মসনদে তখন মুঘল সম্রাট ঔরংজেব। গোঁড়া সুন্নী মুসলমান হয়ে দাক্ষিনাত্যের দুই স্বাধীন শিয়া রাজ্য বিজাপুর ও গোলকুন্ডা কে শায়েস্তা করতে ১৬৮০ সাল থেকেই তিনি দাক্ষিনাত্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন এবং প্রায় কুড়ি বছর ধরে সেখানে পড়ে রইলেন। রাজধানী দিল্লী থেকে তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগে বিস্তৃত সাম্রাজ্যের বহু অংশেই তখন অরাজকতা, শান্তিশৃঙ্খলা ও শাসনব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চল থেকেই সম্রাটের কাছে রাজস্ব পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দাক্ষিনাত্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে উঠেছে।

এই দুরবস্থার সময় মুঘল সাম্রাজ্য ও সম্রাটের একমাত্র ভরসা ছিল সুবে বাংলা। সপ্তদশ শতক ও অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে সুবে বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম সমৃদ্ধ সুবা (প্রদেশ) হিসেবে গণ্য হত। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই বাংলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। সব মুঘল ফরমান, পরওয়ানা বা সরকারি নথিপত্রে বাংলা কে 'ভারতবর্ষের স্বর্গ' বলে উল্লেখ করা হতো। বাংলার সমৃদ্ধিতে আকৃষ্ট হয়ে এবং এখান থেকে ধনরত্ন আহরণ করার জন্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিভিন্ন দেশ থেকে বহু লোকের সমাগম হতো এই বাংলায়। ধনরত্নের লোভ ছেড়ে তারা সহজে বাংলা থেকে বিদায় নিতে পারতো না। ১৬৬০ এর দশকে ফরাসী পর্যটক বার্নিয়ে (Bernier) মন্তব্য করেছেন "... the rich exuberance of country... has given rise to a proverb... that the kingdom of Bengal has a hundred gates open for entrance, but not a single one for departure." এই সুবে বাংলারই একটি অঞ্চলের নাম ছিল মখসুদাবাদ। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরিতে একজন মখসুস খানের নাম পাওয়া যায়, যিনি একজন মুঘল অমাত্য হিসেবে ষোড়শ শতকের শেষদিকে বাংলা ও বিহারে রাজকর্মে নিযুক্ত ছিলেন। মখসুস খান ওখানে একটি সরাই নির্মাণ করেন এবং স্থানটি তাঁর নামানুসারে মখসুদাবাদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ডাচ পর্যটক ভ্যালেন্টাইনের (Valentijn, ১৬৫৮-৬৪) ম্যাপে মখসুদাবাদ কে গঙ্গার দুই শাখার মধ্যবর্তী একটি দ্বীপ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায়ের মতে সুলতান হোসেন শাহের সময় মুখসূদন দাস নামে এক নানকপন্হী সন্ন্যাসী তাঁকে অসুখ থেকে সুস্থ করে তোলায় তিনি তাঁকে ঐ অঞ্চল টি দান করেন এবং ঐ সন্ন্যাসীর নামানুসারে স্থানটির নাম হয় মখসুদাবাদ। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে মখসুদাবাদ কাঁচা রেশম ও রেশমবস্ত্রের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলো এবং ক্রমশঃ এই অঞ্চলটির গুরুত্ব বাড়তে থাকে। ফলে এখানে শাসন বিভাগের একটি কেন্দ্র স্থাপিত হয়। স্ট্রেনশ্যাম মাস্টার (Streynsham Master) ও উইলিয়াম হেজেসের (William Hedges) লেখায় এর উল্লেখ আছে। যাইহোক, মখসুদাবাদ প্রসঙ্গে আবার পরে আসা যাবে। আমরা এখন ফিরে যাই সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে।

সেটা ১৬৯০ সাল। ঔরংজেবের জীবিত জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রথম বাহাদুর শাহের পুত্র, অর্থাৎ ঔরংজেবের পৌত্র, শাহজাদা মহম্মদ আজিমুদ্দিন সুবাদার হিসেবে বাংলায় আসেন। ইতিহাসে তিনি আজিম-উস-শান নামেই সমধিক পরিচিত। বাংলা থেকে রাজস্ব আদায় ও সম্রাটকে দাক্ষিনাত্যে অর্থযোগান দেওয়ার ব্যাপারে আজিম-উস-শানের কোনো উৎসাহই ছিল না কারণ তাঁর লক্ষ্য ছিল বাংলা থেকে যথেষ্ট ধনসম্পত্তি আহরন করে ঔরংজেবের আসন্ন মৃত্যুর পর দিল্লির মসনদ দখল করার লড়াইয়ে যোগ দেওয়া। আশাহত সম্রাট খোঁজ শুরু করলেন এমন একজন দক্ষ ও বিশ্বাসী ব্যাক্তির যিনি বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং তাঁকে দাক্ষিনাত্যে নিয়মিত অর্থ পাঠাবেন। ভাগ্যক্রমে তিনি এমন একজনকে পেয়েও গেলেন, যাঁর তখন নাম ছিল মহম্মদ হাদি।

এবার দেখে নেওয়া যাক কে এই মহম্মদ হাদি। ঔরংজেব যখন মহম্মদ হাদিকে বাংলার দেওয়ান পদে নিযুক্ত করেন তখন তিনি হায়দরাবাদের দেওয়ান ও ইয়েলকোন্ডার ফৌজদার। তাই রাজস্ব আদায় বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল ও একাজে যথেষ্ঠ সুনাম অর্জন করেছিলেন বলেই ঔরংজেবের নজরে পড়েন। বাংলার দেওয়ান পদে নিযুক্ত করার পর সম্রাট তাঁকে করতলব খাঁ উপাধি দিয়ে ১৭০০ সালের নভেম্বর মাসে বাংলায় পাঠান। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি মখসুদাবাদের ফৌজদার পদেও নিযুক্ত হন। এই করতলব খাঁ ওরফে মহম্মদ হাদি জন্মসূত্রে ছিলেন ব্রাহ্মণ। স্যার যদুনাথ সরকার মনে করেন তিনি জন্মসূত্রে দক্ষিণ ভারতীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন। ফারসী ইতিহাসেও তিনি ব্রাহ্মণ ছিলেন বলে উল্লেখ আছে। খুব অল্প বয়সেই তাঁকে কিনে নেন হাজি শফি ইস্পাহানি নামে এক অভিজাত পারসিক ব্যাক্তি। হাজি সাহেব তাঁকে নিজের পুত্রের মতন বড় করে তোলেন এবং মহম্মদ হাদি নাম দেন। হাজি শফি বিভিন্ন সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন পদে, মূলতঃ দেওয়ান, নিযুক্ত ছিলেন। সম্ভবত ১৬৯০ সালে মুঘল রাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে হাজি শফি মহম্মদ হাদি কে নিয়ে পারস্য দেশে ফিরে যান। কিন্তু হাজি সাহেবের মৃত্যুর পর মহম্মদ হাদি আবার ভারতবর্ষে ফিরে আসেন এবং দেওয়ান আবদুল্লা খুরাসানির অধীনে কার্যভার গ্রহন করেন। যেহেতু হাজি শফি ও খুরাসানি দুজনেই দেওয়ান ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করে মহম্মদ হাদি কিছুদিনের মধ্যেই রাজস্ব ব্যাপারে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন এবং হায়দরাবাদের দেওয়ান হিসেবে যথেষ্ঠ কৃতকার্য হন। তাই অতি সহজেই তিনি মুঘল সম্রাট ঔরংজেবের নজরে পড়েন এবং সম্রাট তাঁকে বাংলার দেওয়ান পদে নিযুক্ত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি।

বাংলার দেওয়ান পদে করতলব খাঁ'র নিযুক্তি সুবাদার শাহজাদা আজিম-উস-শান মোটেই মেনে নিতে পারেন নি। এখানে মনে রাখা দরকার মুঘল শাসন ব্যবস্থায় সুবাদার ও দেওয়ান দুজনেই সম্রাটের দ্বারা নিযুক্ত হতেন। দেওয়ান সুবাদারের অধীনে ছিলেন না, সোজা মুঘল সম্রাটের কাছেই ছিল তাঁর দায়বদ্ধতা। ফলতঃ রাজস্ব বিভাগের ওপর আজিম-উস-শানের আর কোনও কর্তৃত্বই থাকলো না এবং দিল্লির বাদশাহী মসনদের জন্য আসন্ন গৃহযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলা থেকে প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা ছিনতাই করার পথে করতলব খাঁ প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠলেন।

করতলব বাংলায় এসেই সোজা রাজধানী জাহাঙ্গীরনগরে (যা এখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা) চলে যান এবং দেওয়ানী কাজে মনোনিবেশ করলেন। প্রথমেই তিনি রাজস্ব বিভাগের সব কর্মচারীকে সুবাদারের আওতার বাইরে নিয়ে এলেন অর্থাৎ নিজের অধীনে নিয়ে এলেন। তারপর তিনি রাজস্ব বৃদ্ধি ও তার অপচয় বন্ধের জন্য বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন যার ফলে প্রথম বছরেই তিনি মুঘল সম্রাট ঔরংজেবকে দাক্ষিনাত্যে এক কোটি টাকা পাঠাতে সমর্থ হন।

এতে আজিম-উস-শান আরো ক্ষেপে গেলেন এবং করতলব খাঁ কে খুনের ষড়যন্ত্র করেন। সেই ষড়যন্ত্রের ইতিহাস আর একদিন লেখা যাবে। কিন্তু করতলব খাঁ'র বিচক্ষনতার কাছে আজিম-উস-শান ধরা পড়ে যান। করতলব খাঁ তাঁর খুনের চক্রান্তের বিবরণ স্বয়ং ঔরংজেবকে কে জানান এবং বাংলা ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিন্তু করতলব খাঁ'র ওপর ঔরংজেবের ছিল অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস এবং যেহেতু একমাত্র করতলবই তাঁকে নিয়মিত অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাই তিনি তাঁর ওপর যথেষ্ঠ নির্ভরশীল ছিলেন। এছাড়াও করতলব খাঁ'র যোগ্যতা ও সততা ছিল প্রশ্নের অতীত। তাই ঔরংজেব করতলব কেই বাংলার দেওয়ান হিসেবে বহাল রাখেন। এখানে মনে রাখা দরকার করতলব একই সাথে বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যার দেওয়ান ছিলেন, ওড়িষ্যার নাজিম ও মখসুদাবাদের ফৌজদার ছিলেন।
সে যাই হোক, শাহজাদা আজিম-উস-শান সুযোগ পেলেই আবার তাঁর প্রানহানির চেষ্টা করতে পারেন, এই আশঙ্কায় তিনি জাহাঙ্গীরনগর অর্থাৎ ঢাকা থেকে দূরে কোথাও তাঁর দেওয়ানী কার্যালয় সরিয়ে নিতে মনস্থ করলেন। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি মখসুদাবাদ কে নির্বাচন করেন। এর একটা কারণ হল করতলব যেহেতু মখসুদাবাদের ফৌজদারও ছিলেন, সেজন্য তিনি ঢাকার চেয়ে ওখানে বেশি নিরাপদ ছিলেন। দ্বিতীয়ত এসময় গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে ইউরোপীয় কোম্পানি গুলো শক্ত ঘাঁটি তৈরী করতে শুরু করে দিয়েছিলো। বাংলার প্রায় কেন্দ্রস্থানে অবস্থিত বলে ঢাকার চেয়ে মখসুদাবাদের অবস্থান অনেক বেশী উপযোগী ছিল। তাই হয়তো তিনি এটাও ভেবেছিলেন যে ওখান থেকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির ওপর নজরদারি করাও অনেক টা সুবিধেজনক হবে।
মখসুদাবাদে দেওয়ানী স্থানান্তরিত করে করতলব খাঁ রাজস্ব বিভাগের আরো সংস্থার করেন এবং এর ফলে রাজস্বের পরিমাণ প্রচুর বৃদ্ধি পায়। বাংলার রাজস্ব নিয়ে তিনি দাক্ষিনাত্যে সম্রাট ঔরংজেবের কাছে রওনা হন। বাদশাহী দরবারে পৌঁছে তিনি সম্রাট ও তাঁর মন্ত্রী দের প্রচুর পরিমাণ নগদ টাকা ও বাংলা থেকে আনা নানা দুর্লভ সামগ্রী উপহার দিলেন এবং রাজস্বের সব হিসাবপত্র বাদশাহের প্রধান দেওয়ানের কাছে পেশ করেন। বাদশাহের দেওয়ান হিসাবপত্র পরীক্ষা করে অত্যন্ত প্রীত হলেন এবং করতলব খাঁ'র ভূয়সী প্রশংসা করেন। সম্রাট ঔরংজেব করতলব খাঁ'র ওপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে বহুমূল্য পোষাক, পতাকা, নাগরা ও তরবারি উপহার দিলেন। সর্বোপরি তিনি তাঁকে মুর্শিদকুলি খান উপাধিতে ভূষিত করলেন এবং তাঁর উপাধি অনুসারে মখসুদাবাদের নাম মুর্শিদাবাদ করার অনুমতি দিলেন। মুর্শিদকুলি মখসুদাবাদে ফিরে এসে নতুন নাম মুর্শিদাবাদ চালু করলেন এবং সেখানে একটি বাদশাহি টাঁকশালও স্থাপন করেন।
স্থানটি নির্বাচন করেই শাহজাদার অনুমতি না নিয়েই, দেওয়ানী কার্যালয়ের সব আমলা কর্মচারীদের নিয়ে করতলব খাঁ মখসুদাবাদে চলে এলেন। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে তিনি ঢাকা থেকে বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ব্যাঙ্কারদের তাঁর সঙ্গে করে নিয়ে আসেন, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাংলার জগৎ শেঠ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মানিকচাঁদও। করতলবকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কিছুদিন পরেই ঔরংজেব আজিম-উস-শান কে বাংলা ছেড়ে বিহার চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর ফলে ঢাকায় সুবাদারের উপস্থিতি আর থাকলো না, মখসুদাবাদই সবার সব কাজকর্মের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠলো।
এখন প্রশ্ন হল ঠিক কবে থেকে মখসুদাবাদ থেকে মুর্শিদাবাদ নাম চালু হলো? স্যার যদুনাথ সরকার বলেছেন ১৭০২ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর সম্রাটের কাছ থেকে করতলব খাঁ মুর্শিদকুলি উপাধি পান। সেক্ষেত্রে ১৭০৩ সালে তিনি মুর্শিদাবাদ নামটি চালু করেছিলেন কারণ দাক্ষিনাত্য থেকে মখসুদাবাদ ফিরতে দু'তিন মাস লেগেছিল বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষক আবদুল করিম মনে করেন যে মুর্শিদাবাদ নগরী পত্তন হয় ১৭০৪ সালে। মুর্শিদাবাদের টাঁকশালে প্রথম যে মুদ্রা তৈরী হয় তাতেও ১৭০৪ সাল লেখা ছিল। তাই সবদিক বিবেচনা করে এটা ধরে নেওয়া হয় যে মুর্শিদাবাদের পত্তন হয়েছিল ১৭০৪ সালেই। সেই হিসেবেই ২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদের তিনশ বছর উদযাপন অনুষ্ঠান হয়েছিল।


ঋণস্বীকার: অধ্যাপক সুশীল চৌধুরী মহাশয়ের 'নবাবি আমলে মুর্শিদাবাদ' বইটি এই লেখার অনুপ্রেরণা। সমস্ত তথ্য এই বইটি থেকেই নেওয়া, তাই আলাদা করে কোনো সূত্র (reference) দিইনি। বইটিতে ব্যবহৃত বানানই এখানে লেখা হয়েছে এবং ফটোগুলিও বইটি থেকেই নেওয়া। 

সুমন সিনহা 
১৭/০৭/২০২০




একটি কাল্পনিক চিঠি


প্রিয় অস্পর্শিনী,

কিছুদিন আগে অঞ্চিত ফোন করেছিলো। মাঝেমধ্যেই ওর সাথে কথা হয় অবশ্য। শুনলাম তোদের হঠাৎ দেখা হয়েছিল এর মধ্যে। তুই নাকি আমার সম্পর্কে অনেককিছু জানতে চেয়েছিলিস ওর কাছে! তোদের দুজনার স্মৃতিচারণার আড্ডার সবিস্তার বিবরণ শুনে বেশ ভালো লাগলো। একেই প্রবাসে থাকি, তার ওপর চল্লিশও পেরিয়ে গেছি। তাই স্মৃতির সাথে আড্ডা দেওয়ার লোভ সামলাতে না পেরেই এই পত্রমিতালী। হয়তো বা তোর অনেক কৌতুহলের উত্তরও দেওয়া হয়ে যাবে এই ফাঁকে, আর তোকেও তৃতীয় কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না।
যাক গে, চল্লিশ পেরোলেও এখনও চালসে পড়ে নি। হ্যাঁ, চশমার মাইনাস পাওয়ার সামান্য বেড়েছে আর সাথে প্লাস পাওয়ারও যোগ হয়েছে। কাছের জিনিস পড়তে বা দেখতে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছিল, তাই ডাক্তার প্লাস পাওয়ারও দিয়েছে। আর 'বয়স হওয়ার মানেই তো বোধহয় স্বচ্ছতা কে বিদায় দেওয়া'! সে সাংসারিক জীবনেই হোক বা কর্মজীবনেই হোক। সে যাই হোক, প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে আমি যদিও প্রতিষ্ঠিত তবে আহামরি কিছু নয়। অনেকটা দশটা পাঁচটার সরকারি চাকরী আর কি। যদিও নামের পাশে একটা গালভরা ডেসিগনেসন্ আছে, তবে রুটিনমাফিক কাজই করতে হয়, যার মধ্যে ক্লারিকাল কাজও থাকে। তাই অঞ্চিত কে বলা 'শুনেছি ভালো প্রতিষ্ঠিত'র অনেকটাই অতিরঞ্জিত। না রে, honestly গবেষণার থেকে আমি এখন অনেক দূরে। গবেষণা আর করি না বললেই বোধহয় সত্য বলা হবে। তবে আমার গবেষণার খোঁজ নেওয়াতে একই সাথে আনন্দিত ও বিস্মিত হলাম। তোর মনে আছে প্রথম বিদেশে কনফারেন্সে গবেষণাপত্র পড়ে আসার পর তুই জিজ্ঞেস করেছিলি কোনো টাকা দিয়েছে কিনা! স্বপ্নাভ আই.টি পাশ করে বিদেশে গিয়ে ততদিনে গাড়ি কিনে ফেলেছে - সেটাও বলেছিলি। স্মৃতিরাও সময়ে সময়ে এত অবাধ্য হয়ে যায় যে... হ্যাঁ, স্বপ্নাভ'র সাথে যোগাযোগ আছে। ও এখন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। পরে ও MBA করেছিলো। যথা অর্থে প্রতিষ্ঠিত।
ভ্রু-পল্লবে কেউ ডাক দেয় নি, তাই চন্দনের বনে আর যাওয়া হয়নি। তোর কৌতূহল নিরসনের জন্য বলি আমাদের দেখেশুনে বিয়ে, সোজা কথায় যাকে বলে অ্যারেন্জড্ ম্যারেজ। বিড়ালের ভাগ্যে শেষপর্যন্ত শিকে ছিঁড়েছিল! সেবার যখন বন্যার পর বাড়ি গেলাম, তোর সাথে দেখা করতে গেছিলাম। মনে আছে অনেকক্ষণ আড্ডা ও তর্ক হয়েছিলো? তুই আমাকে বুঝিয়েছিলিস যে মেয়েরা কখনো ভালোবেসে কাউকে বিয়ে করে না, নিরাপত্তাহীনতা থেকে বিয়ে করে। সেদিন ভালো বুঝতে পারিনি তোর কথার অর্থ, আজও যে ভালো বুঝি তাও নয়। তবে কোথাও একটা খটকা লাগে। এক মহিলা সহকর্মীকে দেখেছি যাঁর মাইনেপত্তর বেশ ভালো মানে নিরাপত্তাহীন নয়। তবুও বিয়ের জন্য শুনেছি তিনি দু'তিনজন পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তাই ভাবি মেয়েদের বিয়ের কারণ কি নিরাপত্তাহীনতা হতে পারে? আমার মনে হয় তুই সেদিন যেটা বলতে পারিসনি সেটা হল মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হতে বিয়ে করে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ তো এক একটি মেয়ের কাছে একেক রকম! সে যাই হোক, অঞ্চিত ঠিকই বলেছে তোকে যে আমি বিয়ে করার বছর চারেক পরই চাকরি টা পেয়েছি। আর চাকরি সূত্রেই প্রবাসে পাড়ি। ফিরে যেতে পারবো কিনা নিজেই জানি না তাই ফেরার প্ল্যানের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আনপ্ল্যানড্ লোকের জীবনে আবার প্ল্যান!
'How many roads must a man walk down / Before you call him a man?'
বব ডিলান এখনো আমার প্রেরণা। গান লিখেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি একমাত্র ওঁনার ঝুলিতেই, যাঁর গান আবার নাগরিক অধিকার ও যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের ভাষা (anthem)।নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে ডিলান সাহেব সম্ভবতঃ 'most radical choice'। শুধু ভাবি কি পরিমান কলমের ধার থাকলে সুইডিশ অ্যাকাডেমিও সাহিত্যের সীমানা কে রিডিফাইন করতে বাধ্য হয়।
না রে, আবৃত্তির সাথে বহুদিন হলো আড়ি। কালে ভদ্রে হয়তো শখে করি। হ্যাঁ, কবিতা পড়তে এখনো ভালোবাসি, তবে পড়া আর বিশেষ হয়না আজকাল। কারণ বই পাওয়ার একটা অসুবিধে আছে এখানে। অঞ্চিতের কাছে তোর নতুন ফ্ল্যাট কেনার কথা জানলাম। তোর মনে আছে শেষবার যেদিন আমাদের বাড়ি এলি, অতীনের ফ্ল্যাট কেনার খবর শুনে তুই বলেছিলিস যে ফ্ল্যাট তোর একদমই পছন্দ নয় কারণ ফ্ল্যাটে তোর মাথার ওপরের ছাদ টা আরেকজনের মেঝে আর তোর মেঝে টা আরেকজনের মাথার ওপর ছাদ। নিজের ঘরকেও অন্য কারোর সাথে ভাগ করে নেওয়া কখনোই তুই মানতে পারিস না! তোর চিন্তার মৌলিকতা ভাবিয়েছিল সেদিন। সেটাই বোধহয় আমাদের শেষ দেখা হয়েছিল, তাই না? মনে আছে সেদিন আরো অনেক প্রসঙ্গ তুলেছিলিস যার উত্তর সেদিন আমার কাছে ছিল না। আজ হয়তো উত্তর আছে কিন্তু বলার মন নেই বা মাঝ বয়সের সংস্কৃতিতে আটকায়। ডিলান সাহেবের কথায় বলি "The answer, my friend, is blowin' in the wind... "। সেদিন 'নীরা হারিয়ে যেওনা' শোনানোর পর তুই বলেছিলিস 'আমার সম্পূর্ন আবেগ শুধু মোমবাতির আলোর মত ভদ্র ও হিম'। কোনো কিছুতেই কোনোদিন সোচ্চার দাবিদার ছিলাম না, আজও একই রকম।

পরিবর্তন কি কি হয়েছে সেটা অন্যরা বোধহয় ভালো বলতে পারবে। তবে মাথার চুল অনেক পেকে গেছে। Greying gracefully! চেনা ব্যস্ততা আর অচেনা আপোষের সাথে জীবন তার পার্থিব ছন্দে বয়ে চলেছে। হ্যাঁ, আপোষ বা সমঝোতার সাথে এখন বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মধ্যবিত্ত বিবাহিত ছেলেদের সাংসারিক জীবন এবং কর্মজীবনের বাইরে আর কিছু থাকে না রে। তাই আপোষ করাটাও জীবনের একটা অংশ এখন। নাহলে চাকরি টা ছাড়তে হয়। সেই সাহস তো আমার নেই... 'এই বেশ ভালো আছি' করেই দিব্যি চলে যাচ্ছে। দেশের বাড়ি প্রতি বছরই যাই, অন্তত একবার হলেও। মা না থাকলেও মাটির টান এখনো আছে। মানুষের কথা না বলাই ভালো। এই আর কি। সুনীলের দুটো লাইন দিয়েই শেষ করি।

'ভ্রু-পল্লবে ডাক দিলে... হৃদয় উন্মুক্ত ছিল, তবুও হৃদয় ভরা এমন প্রবাস!... ' ভালো থাকিস। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছিলাম যে আফটার শেভ লোশনের নেশা এখনো আমার আছে। ইতি, উজান
পুনশ্চঃ সব চরিত্র ও ঘটনাবলী কাল্পনিক।
সুমন সিনহা 
১১/১২/২০২০

সময়

 সময়

উন্মুক্ত বুকে আবাহন করা হল না
গ্রীষ্মের সন্ধ্যে বেলায় একসাথে গঙ্গার হাওয়া খাওয়া হল না 
শীতের শিশির ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে একসাথে হাঁটা হল না 
জানালা দিয়ে একসাথে বর্ষার রোমান্টিসিজম্ দেখা হল না 
বসন্তে একসাথে রঙীন হওয়া হল না 
আঙুল দিয়ে চুলে বিলি কাটানো হল না
শাড়ির আঁচল দিয়ে কপাল এর ঘাম মোছানো হল না 
একসাথে বসে খরচের হিসেব লেখা হল না 
ঘামের গন্ধ নিয়ে একসাথে কিছু গড়া হল না
বুকের ওপর মাথা রেখে আরাম করা হল না
নগ্ন আলিঙ্গনে আদিম হওয়া হল না... 

সময়ের অগোচরে একদিন পুরোনো হয়ে গেলাম
নিষ্ঠুরতার নিস্তব্ধ সাক্ষী রইলো একমাত্র সময়। 

 
সুমন সিনহা 
১৮/০৩/২০১৯

ভ্যালেন্টাইনস দিবস

"ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড করো

প্রেমের পদ্যটাই

বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি

শুধু তোমাকেই চাই।"

ভ্যালেন্টাইনস দিবসের উৎস নিয়ে নানারকম মতবাদ প্রচলিত আছে। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হল যে প্রাচীন রোমের লুপারকালিয়া উৎসব কালের নিয়মে বিবর্তিত হয়ে আজকের ভ্যালেন্টাইনস দিবস। এই উৎসব ফেব্রুয়ারির ১৩-১৫ তারিখ পর্যন্ত পালিত হতো এবং রোমের প্রাচীন দেবী লুপারকাসের নাম থেকেই এই উৎসবের নামকরণ হয় বলে ধরে নেওয়া হয়। রোমের মানুষ যখন প্রবলহারে খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছিল, লুপারকালিয়া উৎসব কে তারা মেনে নিতে পারছিল না, কিন্তু উৎসবটির জনপ্রিয়তাও অস্বীকার করতে পারছিল না। শেষপর্যন্ত এই উৎসবটিকে তারা সন্ত ভ্যালেন্টাইনের নামে উৎসর্গ করে। ইনি হলেন সেই সন্ত ভ্যালেন্টাইন, খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করার কারণে রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তৃতীয় শতকে যার গর্দান কেটেছিলেন।

লুপারকালিয়া উৎসব ছিল সম্পূর্ণ পুরুষতান্ত্রিক একটি উৎসব। নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একসাথে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় নারীদের প্রহার করে সঙ্গমের জন্য নিজের পছন্দমত সঙ্গিনী বেছে নেওয়ার উৎসব ছিল লুপারকালিয়া। আর যাই হোক, এরকম একটি নির্মম উৎসবের সাথে কোনোভাবেই প্রেম বা ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।

মধ্যযুগের ইংরেজি কবি চশার ও পরবর্তীতে শেক্সপীয়ার এই ভ্যালেন্টাইনস দিবস কে নিয়ে কবিতা বা কাব্য লেখেন ও এটিকে রোমান্টিক দিন বলেন। চশার যদি ভ্যালেন্টাইনস দিবস কে রোমান্টিক আখ্যা না দিতেন এবং কাব্য না করতেন তাহলে হয়তো এই দিনটির সাথে ভালোবাসা এসে মিশতো না এবং নারীদের ওপর নির্যাতন করার প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক উৎসবের দিনটি প্রেমের দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতো না। এমন কি যে দুজন ভ্যালেন্টাইন সন্ত কে মেরে ফেলা হয়েছিল মধ্য ফেব্রুয়ারিতে, তারা যে খুব রোমান্টিক ছিলেন এমন তথ্যও পাওয়া যায় না।

যাইহোক এই শতাব্দীতেও সেই ভ্যালেন্টাইনের নামে এই দিনটি পালন করা হচ্ছে এবং বিবর্তিত বা পরিবর্তিত হতে হতে এই দিনটি এখন মূলতঃ 'commercial celebration of romance'এই দিনটি এখন ব্যবসায়ীদের জন্য বড়দিন। শোনা যায় শুধুমাত্র আমেরিকায় ভ্যালেন্টাইন দিবস উপলক্ষে ২০১৮ সালে ১৭.৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯ সালে ১৮.২ বিলিয়ন ডলার ব্যবসা (উপহার ও ডিনার নিয়ে) হয়েছিলো।

ভ্যালেন্টাইনস দিবসের উৎস যতো কুৎসিতই হোক বা ব্যবসায়ীরা যতোই ব্যবসা করুক না কেন এই দিনটিকে নিয়ে, বর্তমান সময়ে কোনো ভাবে এই দিনটির সাথে ভালোবাসা বা প্রেম শব্দটি জড়িয়ে গেছে। সম্ভবত চশারের জন্যই ধরা হয়ে থাকে। চারিদিকে যখন হিংসা, ঘৃণা, অবিশ্বাস আর স্বার্থপরতা, তখন যদি মানুষ কোনো এক নামে কোনো এক দিনে ভালোবাসা বা প্রেমের চর্চা করে, করুক না। ক্ষতি কি? আদিকাল থেকে বিবর্তন হতে হতে মানুষ তো আজ শুধু প্রেমিক - প্রেমিকা কে নয়, বাবা, মা, ভাই, বোন বা প্রিয়জনকেও 'হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন' শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

যে সব মৌলবাদীরা এই দিনটির উদযাপন আমাদের সংস্কৃতিবিরোধী বলে মনে করছে, সেটাও সমর্থনযোগ্য নয়। প্রেম বা ভালোবাসা তো যেকোনো সংস্কৃতির অংশ!

আমি কখনোই বিশ্বাস করি না যে ভালোবাসা কোনো একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ভালোবাসার নামে দামী উপহার দেওয়া বা আদিখ্যেতাও একদমই পছন্দ নয় আমার। কিন্তু প্রেম বা ভালোবাসা নিয়ে আমাদের সমাজে যে একটা জড়তা আছে, সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই মানুষ যদি আনুষ্ঠানিক ভাবে একদিন প্রকাশ্যে ভালোবাসা ব্যক্ত করে, সেই জড়তা কেটে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। প্রেম করা যে মন্দ নয়, চুমু খাওয়া যে নিষিদ্ধ নয়, সেই দ্বিধাও হয়তো দূর হবে ধীরে ধীরে। এটা ঠিক যে এই দিনটির সাথে ব্যবসাও জড়িয়ে গেছে। ভালোবাসার সাথে ব্যবসা না জড়ালেই ভালো হতো বোধহয়। কিন্তু শুধু ব্যবসায়িক দিকটি না দেখে কোনো পুরুষ যদি "সুন্দর মুখে বাঁকা টিপের দিকে চেয়ে থেকে" বা "ভ্রুপল্লবে ডাকে"র আশায় "চন্দনের বনে" যাওয়ার অপেক্ষায় ভালোবাসা প্রকাশ করে বা কোনো নারী যদি "শহীদ মিনারের ওপর থেকে চিৎকার" করে জানান দেয় "ইন্দ্রকাকু আমার প্রেমিক", তার থেকে ভালো আর কি হতে পারে।

ভালোবাসা বা প্রেমের উদযাপন মানেই হিংসা বন্ধ হওয়া। ভ্যালেন্টাইনস দিবসে যদি হিংসা বন্ধ না হয়, তাহলে এই দিনের কোনো তাৎপর্য থাকে না। হিংসা বা ঘৃণা, সে যে ফর্মেই হোক,  দূর হয়ে যাক। পুলওয়ামা বা অনুরূপ কোনো ঘটনা যেনো আর আমাদের দেখতে না হয়। সকল শ্রেণীর মহিলাদের ওপর যে কোনো ধরণের নির্যাতন বন্ধ হোক।

"তুমি ভালোবাসতে না পারো, অন্তত ঘৃণা করো না

তুমি ফুল দিতে না পারো, অন্তত কাঁটা দিও না

তুমি চুমু খেতে না পারো, অন্তত চড় মেরো না।"

অবলোকনের তাৎক্ষণিকতায় নয়, উপহারের ওজনে নয়, দেখনদারির আদিখ্যেতায় নয়, ঘৃনার চাষে নয়, হিংসার উল্লাসে নয়, নির্যাতনের পৌরুষে নয়, অনুভূতির গভীরতায় এ পৃথিবী ভালোবাসাময়, প্রেমময় হয়ে উঠুক। আজকের দিনে এটুকুই চাওয়া।


সুমন সিনহা
১৪/০২/২০২১

ছবি: আন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত 



 

বাংলা টা ঠিক আসে না

বেশ কিছুদিন আগে বাংলা ভাষার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নিয়ে একটি জনপ্রিয় বিতর্ক সভায় চন্দ্রিল বাবু শ্লেষের সাথে বলেছিলেন "... 'কেনকী' আমরা বাংলা ভাষা কে খুব ভালোবাসি..."। এই 'কেনকী' বলে বাংলায় কোনো শব্দ নেই। হিন্দি তে 'কিঁউকী' বলে একটা শব্দ আছে, সেখান থেকে সটান 'কেনকী' এখন আর কেউ কারণ বলেন না বা বলতে চান না! এবং ক্রমাগত এই ধরণের ভাষা বা শব্দের ব্যবহার ও ব্যবহারের প্রবনতা বাড়ছে। বুঝে বা না বুঝে। এই অর্থহীন বাংলা ভাষার প্রয়োগ বাংলা ভাষাকে শুধু রিক্তই করছে না, গুরুত্বহীন ও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলছে। 'দিওয়ালী' বা জন্মদিন 'মানানো' এখন অভ্যেস হয়ে গেছে আমাদের। আমরা আর দীপাবলী বা জন্মদিন পালন করিনা। এই জন্মদিন প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেলো এখন দেখি যে একটা বড় অংশের বাঙালি শুভ জন্মদিন বলে আর শুভেচ্ছা জানায় না। তারা 'হ্যাপিওয়ালা বার্থডে' বা 'হ্যাপিওয়ালা অ্যানিভার্সারী' বলে ভীষণ আরাম পায়। বিন্দুমাত্র কিছু না ভেবে টুপ করে একটা হিন্দী বা ইংরেজী শব্দ তুলে নিয়ে খুব আনন্দের সাথে, গর্বের সাথে তার প্রয়োগ শুধু বিরক্তিকরই নয়, হাস্যকরও বটে। এদের মধ্যে অনেকে আবার ভাবেন একটা নতুন কিছু ভাবে তো শুভেচ্ছা জানানো গেলো!! সবাই যে সচেতনভাবে বা ইচ্ছাকৃত ভাবে এইসব প্রয়োগ করেন তা কখনোই বলছি না আমি। কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন হই বা সাবধান হই বা একটু ভাবি, তাহলে এই অসুন্দর বা শ্রুতিকটূ বাংলা ভাষার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে পারি। অনেক সময় এই ধরণের প্রয়োগ তার অর্থ কেও সম্পূর্ণ ভাবে পরিবর্তন করে দেয়। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। একই জিনিস ক্রমাগত দেখতে দেখতে বা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে হিন্দি তে বলা হয়ে থাকে 'ঠক গয়া হু' কিছুদিন আগে দেখলাম একজন কোনো এক প্রেক্ষিতে লিখছেন "এই একই জিনিস শুনতে শুনতে 'ঠকে' গেছি"। পরে বুঝলাম উনি ক্লান্ত হয়ে গেছেন বলতে চেয়েছেন! এখন বাংলাতে ঠকে যাওয়া বলতে প্রতারিত হওয়া বোঝায়।এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে। তাহলে বুঝুন এই প্রবণতা কি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এই ধরণের প্রয়োগে কি বাংলা ভাষার সৌন্দর্য বা মাধুর্য কোনো ভাবে বাড়ে? আসলে আমরা বাঙালিরা আজকাল হিন্দি তে ভাবতে শিখে গেছি। আর তাই হয়তো বাংলা নিয়ে ভাবার সময় নেই। প্রবাসে থেকে আমি দেখেছি বাঙালিরা নিজেদের মধ্যে আড্ডা বা গল্প করার সময় বাঙালি সংস্কৃতি বা বাঙালির অতীত নিয়ে খুব গর্বিত কিন্তু  এই রকম অসংখ্য হিন্দি মিশ্রিত বাংলা বলে যাচ্ছেন, উচ্চারণ করছেন, ভুল অনুবাদ করছেন, ভুল ব্যবহার করছেন, ভুল বানান লিখছেন। দুঃখের বা আক্ষেপের বিষয় হলো যে এঁদের অনেকেই নিয়ম করে একুশে ফেব্রুয়ারি তে শুভেচ্ছা জানান বা ছোটোখাটো বাঙালি আড্ডায় ভবানী বাবুর "বুঝলেন দাদা, আমার ছেলের বাংলা টা ঠিক আসে না" কবিতা পাঠ করেন!! এসবের সাথে কেমন একটা মানিয়ে নিয়েছেন বা মেনেও নিচ্ছেন হয়তো। এই মানিয়ে নিতে নিতে বাংলা ভাষাটাকে খুব সস্তা করে দিয়েছি আমরা। আর সস্তা হয়েছে বলেই তাকে সহজেই অবহেলা বা অনাদর করতে পারি বা 'টেকেন ফর গ্রান্টেড' ধরে নিতে পারি। কয়েকদিন আগে আমার এক পরিচিত ও পছন্দের মানুষ আমাকে বললেন তাঁর কাজের 'বাই' কিছুদিন ধরে আসছে না। কানে লাগলো বলে তাঁকে বললাম কাজের মাসি বা কাজের লোক বা কাজের দিদি না বলে 'বাই' বলছেন কেনো? উনি বললেন "বুঝেছি কি বলতে চাইছেন কিন্তু আসলে ওই অভ্যেস হয়ে গেছে আর কি"। বেশ কিছুদিন আগে একটি নামকরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিজ্ঞাপনে 'responsive' এর বাংলা অনুবাদ করেছিলো 'প্রতিক্রিয়াশীল'! ভেবে দেখুন একটা ভালো বাংলা অনুবাদ করা লোক কে পয়সা দেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য সেই ব্যাঙ্কের যথেষ্ঠই আছে, কিন্তু ওই যে বললাম 'টেকেন ফর গ্রান্টেড', গুরুত্বহীন করে দিচ্ছি আমরা। দিনে দিনে বাংলা শব্দের উচ্চারণ শৈলীও বদলে যাচ্ছে অনেক বাঙালির কাছে। সৌরভ কে 'সওরভ', পরোটা কে  'পরাঠা', জিলিপী কে 'জলেবী' বলতে না শুনতে ভালো লাগে? এরকম অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার বা শব্দের নতুন নতুন প্রয়োগও খুব বিস্ময়কর। যেমন 'ভোট করুন', 'খাবার লাগিয়ে দিই' অনেকে হয়তো বলবেন পরিবর্তন তো সময়ের নিয়ম। কালের নিয়মে, সময়ের সাথে সাথে নিশ্চয়ই পরিবর্তন কাম্য। আর বিগত কয়েক বছর থেকে বর্তমান কাল অবধি বাঙালি সমাজ জীবনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও আলোচ্য শব্দ বোধহয় পরিবর্তন। কিন্তু দয়া করে পরিবর্তন আর বিকৃতি কে সমার্থক করে দেবেন না। বাংলা ভাষার এই সস্তা হয়ে যাওয়ার পেছনে বাজার অর্থনীতির একটা বড় ভূমিকা আছে যা আমাদের অবচেতনে এই ভাষার প্রতি একটা উদাসীনতা, একটা নির্লিপ্ততা তৈরী করছে। বাংলা ভাষা তো বাঙালি সত্তার অংশ, বাঙালি সংস্কৃতিরই অঙ্গ। আসুন না আমরা সবাই মিলে এই ভাষার প্রতি একটু যত্নবান হই, একটু সচেতন হই। আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের নিজস্বতা, আমাদের স্বকীয়তা কে যদি আমরাই ধরে রাখতে না পারি, তাহলে কারা রাখবেনআসুন না ভাষাটা কে একটু আদর করি, একটু ভালোবাসি। আমরা চেষ্টা করি 'হোলি' না বলে দোল বলতে, 'হ্যাপি দশেরা' না বলে শুভ শারদীয়া বা শুভ বিজয়া বলতে, 'রসগুল্লা' না বলে রসগোল্লা বলতে, 'বঙ্গাল' না বলে বাংলা বলতে, পয়লা বৈশাখে 'হ্যাপি নিউ ইয়ার' না বলতে। আসুন না আমাদের ছেলে মেয়েদের, ভাই বোনদের আমরা বাংলা ভাষা কে শিখতে, জানতে উৎসাহিত করি। যে ভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলনে আমাদের পূর্বসুরীরা নিহত ও আহত হলেন, যে ভাষার স্মৃতিতে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করলো, সেই ভাষার ঐতিহ্য, মর্যাদা ও কৌলিন্য রক্ষার দায় তো আমাদেরই। বাংলা ভাষা যে সস্তা হয়ে গেছে, সেটা বোঝাতে গিয়ে অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন যে সস্তা বা কমদামী মদ কে আমরা 'বাংলা' মদ বলে থাকি। আমরা যদি এই ভাষার সম্মান রক্ষার জন্য সবাই মিলে এগিয়ে না আসি তাহলে অচিরেই বাংলা ভাষার 'বাংলা বাজার' দেখে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারবো তো? ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে তো?

পুনশ্চঃ আজকাল দেখছি ইংরেজী অক্ষরে বা হরফে বাংলা লিখলে অনেকে 'রোমান বাংলা' বলে ব্যঙ্গ করছেন। আমার মনে হয় জগাখিচুরী বাংলা লেখার থেকে ইংরেজী হরফে বাংলা লেখা অনেক ভালো। তবে এটাও মনে করি ইংরেজী হরফে বাংলা বানান লেখার একটা নিয়ম বা বিধান থাকা উচিত। আর একটা কথা বলি। আজকাল বাংলায় টাইপ করার অনেক কীবোর্ড অ্যাপস্ আছে। আমাদের মোবাইলে নানা রকমের অ্যাপস্ থাকে। একটা বাংলা কীবোর্ডের অ্যাপস্ থাকলে ক্ষতি কি? আসুন না নিয়মিত না পারলেও মাঝে মাঝে আমরা বাংলা ভাষা টাইপ করে লিখি। এভাবেই একদিন আমাদের অভ্যাস হয়ে যাবে হয়তো।


সুমন সিনহা
২৫/০১/২০২১



Monday, June 30, 2008

Confession...


When I first started blogging I promised myself a lot that I shall well maintain my blog , i.e, I shall be regular in posting. And now after six months I discover that I am still there where I was at the very beginning of blogging !! My blog is still at its infancy. One of the reasons is definitely "time" but "time" is not the only factor, rather it's an excuse to save myself. As far as my mind goes, I started blogging with lot of enthusiasm because I liked the concept of blogging and it seemed to me that it's a good place to pen my feelings, my thoughts, my memories, my experiences etc here in the blog. Still I like the idea of blogging well enough and a lot more interest or enthusiasm is still within me, a lot of materials is all in my mind to post, but what happens is that they continue to remain in my mind. Perhaps my inability to express myself is another reason but the most appropriate reason, I think, is my discomfort or uneasiness with keyboard typing and my laziness that prevents me from blogging. Lot of ideas loiter in my mind. I plan a lot to jot down those ideas in the blog. I prepare myself from within that I must write those this time and when I make myself ready to put pen to paper, I loose the thread of my thoughts and to my utter surprise, I discover that all my efforts end in smoke. My blog remains silent. Recently I came across some good blogs and wonder how the blog-owners manage to post so regularly and ask myself why I can't. Based on my analysis, I find out what I have just written! Now I vow again that I shall give my blog "time" and shall definitely make sincere attempt to post regularly. Let me wait and see if I can keep my words...

ঋতুপর্ণ ঘোষ

সেদিনের পর থেকে কতো সিনেমার "শুভ মহরৎ" হলো, কতো "বাড়িওয়ালি" সিনেমার শুটিং-এর জন্য তাদের বাড়ি ভাড়া দিলেন, কিন্তু সিনে...