Monday, April 8, 2024

12th Fail

যাই হোক, শেষমেশ গত রবিবার "12th ফেইল" দেখলাম। হলে গিয়েই দেখেছি। এর আগে তিনবার অ্যাটেম্পট্ নিয়েও দেখতে যেতে পারিনি। সিনেমাটির শেষের দিকের একটা ডায়লগেই মোটামুটি মূল বক্তব্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
"If I cannot be the sun
that shines upon the earth,
I can still be a lamp
and light up my street"
যাই হোক, আমি রিভিউ লিখতে বসিনি কারণ সে যোগ্যতা আমার নেই। মোটামুটি সবাই জানেন সিনেমাটির বিষয়বস্তু। একটি অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলের (মনোজ) স্বপ্ন পূরণের অদম্য জেদ ও তার সংগ্রামের কাহিনী এবং একই সাথে মনোজের সততা সিনেমাটির প্লট। এরপর নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে শেষ অবধি মনোজের স্বপ্ন পূরণ মানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা ক্র্যাক করে IPS অফিসার হওয়া। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা ক্র্যাক করা মানেই শুধু জীবনে সফলতা পাওয়া- তা কখনোই নয়, সিনেমাটিতে UPSC ক্র্যাক করাটা সিমবলিকাল্ (অনুরাগ পাঠকের বইটি অবলম্বনে সিনেমাটি তৈরী বলেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে)। তা সে যাই হোক, এইরকম প্লটে আগেও অনেক সিনেমা তৈরী হয়েছে। কিন্তু এই সিনেমাটা এতো হিট কেনো বা এই সিনেমাটা নিয়ে এতো হৈচৈ বা আলোড়ন কেনো। আমার যেটা মনে হয়েছে বা যে কারণে সিনেমাটা খুব ভালো লেগেছে সেটা হলো যে পরিচালক বিধূ বিনোদ চোপড়া শুধু মনোজের সততা দেখান নি, দেখিয়েছেন সম্পর্কের সততা ও জীবনে তার গুরুত্ব, দেখিয়েছেন একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের জন্য আমাদের চারপাশে একটা ভালো সার্কেল থাকা খুব জরুরী। ছোটোবেলা থেকেই আমরা সবাই পড়ে এসেছি "A person is known by the company he/she keeps"। এই প্রবাদপ্রতিম বাক্যটি যে কতটা মূল্যবান ও প্রয়োজনীয়, গোটা সিনেমা জুড়ে তারই প্রতিফলন কিন্তু সেটা দেখাতে গিয়ে কোনো বাহুল্য নেই। সম্পর্কে স্বাভাবিকতা, স্বতঃস্ফূর্ততা, সততা থাকলেই বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসার জায়গা তৈরী হয়ে যায়, তার জন্য বড়াই করার দরকার পড়ে না - এই সরল সত্যটি পরিচালক খুব নিপুণ ও ক্যান্ডিড ভাবে গোটা সিনেমা জুড়ে প্রত্যেকটা সম্পর্কের মধ্যে তুলে ধরেছেন। যেমন মনোজের সাথে ওর বন্ধু প্রীতমের সম্পর্ক। প্রীতম বা মনোজ কেউই কখনো কাউকে বলে না "আমি সবসময়ই তোর কথা ভাবি বা তুইই আমার সব..." । তাদের অ্যাক্টিভিটিসের মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পায় একজনের প্রতি অন্যজনের টান বা ভালোবাসা। একে অপরকে দ্বিধাহীনভাবে তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পিছপা হয় না কিন্তু তাতে কখনো তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে না। প্রীতম একটা ক্ষমাহীন ভুল করার পরে যখন মনোজ সন্দেহের বশে প্রীতমের মোবাইল দেখতে চায়, প্রীতম কোনোরকম আটকায় না বা কোনো অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা করে না। ধরা পড়ে যাবে জেনেও প্রীতম অবলীলায় মনোজকে মোবাইলটা দেখতে দিয়ে দেয়। ছোটো একটা ঘটনা কিন্তু সম্পর্কের বা বন্ধুত্বের গভীরতা ফুটে ওঠে প্রবল ভাবে। বা মনোজের কোচিং সেন্টারের দাদা গৌরী ভাইয়ার কথা ধরা যাক। হেরে যাওয়া মানে যে হারিয়ে যাওয়া নয় তা গৌরি ভাইয়াকে দেখে শিখতে হয়। মনোজ ও গৌরি ভাইয়ার একে অপরের প্রতি যে নিঃশর্ত ও নিস্বার্থ ভালোবাসা, সেটা সম্পর্কে সততা না থাকলে দেখানো যায় না। এর পরে মনোজ আর শ্রদ্ধা'র সম্পর্ক। শ্রদ্ধা মনোজের যতোটাই বান্ধবী, ঠিক ততটাই প্রেমিকা। একদম বাহুল্যবর্জিত, শো-অফহীন একটা খাঁটি প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক, একটা অবলম্বনের জায়গা, একটা ভরসার স্থান, পাশে থাকার অঙ্গীকার। কোনো ফাঁকা আওয়াজ নেই, কোনো ফাঁপা প্রতিশ্রুতি নেই, কথার ফুলজুড়ি নেই, উপহারের আড়ম্বর নেই অথচ অধিকারবোধ আছে, নীরবতার ভাষা আছে। শ্রদ্ধা'র মনোজকে বই উপহার দেওয়া, সময় দেওয়া, মনোজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া - এ সবের মধ্যে একটা আটপৌরে ব্যাপার আছে, কোনো কৃত্রিমতার গন্ধ নেই।
আরো একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি। কেউই কখনো কোনো অবস্থায় আত্মসম্মানের সঙ্গে সমঝোতা করেনি। মনোজ, মনোজের বাবা, মা, দাদা ও ঠাকুমা, প্রীতম, গৌরি ভাইয়া, শ্রদ্ধা, পুলিশ অফিসার দুস্মন্ত সিং প্রত্যেকেই নিজেদের জীবনের কঠিন সময়েও নিজেদের মূল্যবোধ বা নীতিবোধ বা সম্মানবোধ থেকে একচুলও সরে আসেনি। যখন যেখানে যতটা দৃঢ়তা দেখানোর প্রয়োজন, প্রত্যেকেই সেই দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। পরিচালক খুব সচেতনভাবে এই জিনিসগুলোকে প্রেজেন্ট করেছেন বলে মনে হয়েছে আমার।
সম্ভবত এই সমস্তকিছুর জন্যই মানুষ সিনেমাটির সাথে কানেক্ট করতে পেরেছে।

সুমন সিনহা
১০/০১/২০২৪


No comments:

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...