Monday, April 8, 2024

এলোমেলো ভাবনা - ৮

২৭ বছর আগেকার একটা পুরোনো বিল (মহিলা সংরক্ষণ বিল) সংসদের নিম্নকক্ষে পাশ হওয়াতে খুব হইচই দেখছি। নানা মুনির নানা মত আর কি। মূলতঃ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী'র উদ্যোগ ছিলো এই বিলটির প্রনয়ণে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার সিপিআই সাংসদ গীতা মুখার্জি তিনদশক আগে প্রাইভেট মেম্বার বিল হিসেবে এটি সংসদে প্রথম পেশ করেন। কেনো তিন দশক ধরে বিলটি পড়ে ছিল এবং এখনই বিলটি পাশ করাবার প্রয়োজন পড়লো, সেটা নিয়ে উল্লাসকারীদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা বা লজ্জা কোনোটাই নেই। এটা খুব পরিষ্কার যে রাজনৈতিক এজেন্ডাই এই বিল পাশের মূল কারণ এইসময়।

যাইহোক, এই বিল নানা জন নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছেন। কেউ বলছেন এই বিল কি মহিলাদের পক্ষে সম্মানের? মহিলারা যদি পুরুষদের সমানই হন, তাহলে আলাদা করে সংরক্ষণ কেনো? কেউ বলছেন মিমি, নুসরৎদের মত মহিলাদের সংসদে আসা আরো সহজ হয়ে গেলো! কেউ বলছেন মহিলারা কি সত্যি নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন (ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে)? এ প্রসঙ্গে অনেকেই দেখলাম গ্রাম পঞ্চায়েত গুলোর উদাহরণ দিচ্ছেন। অনেক মহিলাই পঞ্চায়েত প্রধান বা পঞ্চায়েতের অন্যান্য পদে আছেন। কিন্তু তারা সই ছাড়া আর কিছুই করেন না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই তাদের বর বা ভাসুর বা জামাইবাবু বা শ্বশুরমশায়কে জিজ্ঞেস করতে বলেন। ইনফ্যাক্ট, অনেকেই অফিসেও যান না। তাদের জায়গায় ওইসব পুরুষরাই বেশিরভাগ সময় বসে থাকেন। অর্থাৎ খাতায় কলমে নারীর ক্ষমতায়ণ দেখালেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সেইসব নারীদের কোনো ক্ষমতাই নেই। কিন্তু শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোতেই এরকম হয়, তা একেবারেই নয়। একটু যদি চোখ কান খোলা রাখা যায়, তাহলে দেখবেন পয়সাওয়ালা লোকজনদের "অভিজাত" ক্লাব/সংস্থা গোছের জায়গাগুলোতেও 'মহিলা পরিচালিত' , 'women powered' ইত্যাদি অনেক রকম বড় বড় কথা লেখা থাকলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় মহিলাদের কোনো ভূমিকাই নেই। সেসব মহিলারা কিন্তু বেশ "শিক্ষিত"। অনেকেই আবার তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন। ইনফ্যাক্ট, বেশিরভাগ মহিলাই কিন্তু গর্ববোধ করেন পদের জন্য বা সেসব ক্লাব/সংস্থার সাথে যুক্ত হতে পেরে। তাদের বরেরা বা অন্য পুরুষরা সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন - এতে তারা বরং খুশিই হয়। কখনো তাদের আত্মসম্মানে লাগে না। অনেকে তো প্রকাশ্যে বলেন যে অনেক টাকা পয়সার ব্যাপার থাকে, আমরা মেয়েরা কি অতসব সামলাতে পারি।!!!! বরং সমাজের "নিচু স্তরে" কাজের দিদি বা সব্জি/ফল বিক্রেতা বা দোকান চালিকারা অনেক বেশী নিজেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, কাউকে তোয়াক্কা বা শো-অফ না ক'রে।

সুমন সিনহা
২১/০৯/২০২৩

No comments:

এলোমেলো ভাবনা - ১২

আজ  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীল বাবুর উপন্যাস, কবিতা বা ইতিহাসধর্মী লেখালেখি অল্পস্বল্প যেটুকু পড়েছি, ভেবেছিলাম সেসব নিয়েই "অন...