Thursday, April 29, 2021

Irrfan Khan

    Last year on this day, Sahabzade Irfan Ali Khan, popularly known as Irrfan Khan or simply Irrfan left us. It was his personal choice to add an extra 'r' in his name. Irrfan Khan, a name synonymous with struggle, persistence and consistency is a phenomenal talent in the filed of arts. With no godfather in Bollywood or Hollywood, he had conquered the hearts of movie-lovers and left a lasting impression in the cinema world. Irrfan was described by Peter Bradshaw of The Guardian as a "distinguished and charismatic star in Hindi and English-language movies whose hardworking career was an enormously valuable bridge between South Asian and Hollywood cinema". 
    He did never typecast him and the adjective which describes him best is perhaps versatility. Born in Rajasthan into a Muslim family of Pathans with Rajasthani ancestry, Irrfan used to paly cricket well and was selected in the prestigious CK Nayudu Trophy for emerging players under 23 category. However, he failed to attend as he could not afford travel expenses. He was influenced by his maternal uncle who was a theatre artist in Jodhpur. He did a number of stage performances at his early age in Jaipur where he was introduced with noted theatre artists. On completion of his MA in Jaipur, he joined National School of Drama (NSD) in New Delhi in 1984 to study acting.
    Just after his graduation from NSD in 1987, Irrfan made his debu with Mira Nair's 'Salaam Bombay' with a minor role. Since then, he acted in numerous television serials, teleplay, drama films as well as various other films. Few of them, which deserves special mention, are 'Laal Ghaas Par Neele Ghode' (he played Lenin in the teleplay), 'Bharat Ek Khoj', 'The Great Maratha', 'Chandrakanta' (90s supernatural fantasy period drama). Irrfan also played the famous revolutionary, Urdu poet and Marxist political activist of India, Makhdoom Mohiuddin in 'Kahkashan'. Few of his critically acclaimed films in his early career are 'Kamla Ki Maut' (opposite Roopa Ganguly, 1989), 'Ek Doctor Ki Maut' (1990) and 'Such A Long Journey' (1998). Unfortunately, all these went unnoticed! The historical film 'The warrior' (2001), where he was cast as the lead, opened at international film festivals. In 2004, his outstanding performance in 'Maqbool', an adaptation of Shakespeare's Macbeth, was very much critically acclaimed. 
    It is until 2007 when he came up with box office commercial hits 'The Namesake' and 'Life in a Metro', which won him Filmfare Best Supporting Actor Award. The very next year came his international success with 'Slumdog Millionaire', for which he won the Screen Actors Guild Award for Outstanding Performance. He will always be remembered for his remarkable performance in the title character in 'Paan Singh Tomar' (2011), which won him the National Film Award for Best Actor. He went on to gain critical acclaim for his starring roles in 'Life of Pi' (2012), 'The Lunchbox' (2013), 'Piku' (2015), 'Talvar' (2015), 'Jurassic World' (2015) and 'Inferno' (2016).  His rejection to a big offer in the 'Interstellar' for 'Lunchbox' in 2013 shows his commitment towards work. 
    Irrfan's most commercial hits (highest grossing) came with 'Hindi Medium' (2017) and his final screen appearance was in its sequel 'Angrezi Medium' (2020). These two performances won him the Filmfare Award for Best Actor in 2018 and 2021 (posthumously). He has a National Film Award, an Asian Film Award and six Filmfare Awards among numerous accolades to his credit. He was awarded the Padma Shri in 2011 and Filmfare Lifetime Achievement Award posthumously in 2021.
    Let me conclude with an incidence which shows his recognition in global level. Julia Roberts once stopped outside the Kodak theatre where Oscars were being staged, just to compliment Irrfan Khan on his brilliant performance in the movie 'Slumdog Millionaire' (2008).

Rest in arts Irrfan !!

Suman Sinha
29/04/2021



Wednesday, April 28, 2021

তিনদিন আগে খবরটা শোনার পর থেকেই মন টা ভারাক্রান্ত। বিশ্ববরেণ্য পরিচালক মৃণাল সেন মহাশয়ের ব্যবহৃত আর্কাইভযোগ্য নথি, পুরস্কার কিছুই আর পশ্চিমবঙ্গ বা আমাদের দেশে থাকলো না। ওঁনার পুত্র কুনাল সেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে এসব দান করে দিয়েছেন সংরক্ষণের জন্য। কুনাল বাবুর ফেসবুক পোস্ট থেকে জানতে পারি মৃণাল সেন মহাশয় ওঁনার আলস্য থেকে কোনোদিনই নিজের সৃষ্টিকে যত্ন করে ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন না। উনি জীবিতকালেই ওঁনার 'deep distrust for nostalgia' থেকে নিজের চিঠিপত্র, চিত্রনাট্য, পান্ডুলিপি সবই ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। বাকি যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, সেটুকু মাত্র তিনটে কার্ডবোর্ডের বাক্সেই ধরে যায়! শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই কুনাল বাবু কে প্রথম অনুরোধ করেন যে তাঁরা মৃণাল সেন মহাশয়ের নথিপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ আর্কাইভে সংরক্ষণে আগ্রহী। আমরা আত্মবিস্মৃত জাতি। এই আক্ষেপ থেকেই যাবে যে 'ক্যালকাটা 71' এর নির্মাতার কোনো স্মৃতিচিহ্ন কলকাতা শহরে রইলো না আর। কুনাল বাবুর কথায় "I don't know if anybody will be interested in him or his life in another hundred years." অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকার চেয়ে ওঁনার নথি যদি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগারের বিশেষ আর্কাইভে স্থান পায়, সেটাই কাম্য। কুনাল বাবু সঠিক কাজই করেছেন। সরকারও কি উদাসীন!

এ প্রসঙ্গে বলে রাখি ওঁনার সংগ্রহের কিছু বই মুম্বইয়ের Film Heritage Foundation - এ এবং আরো কিছু বই, ছোটোখাটো আসবাবপত্র ও ব্যক্তিগত কিছু সরঞ্জাম উত্তরপাড়ার 'জীবনস্মৃতি' তে রাখা আছে। ওঁনার ব্যবহার্য কিছু জিনিস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও রাখা থাকবে।

কারোর উৎসাহ থাকলে এই ওয়েবসাইট টি দেখতে পারেন।

সুমন সিনহা
১২/০৪/২০২১

ছবি : আন্তর্জাল


Monday, April 26, 2021

বছর কুড়ি পর

দিনটা ছিল পনেরোই মার্চ। কে.সি স্যারের বাড়ির গলি যেখানে বড় রাস্তায় এসে মিশেছে, ঠিক সেই মুখটায় দাঁড়িয়েছিল সুপ্রিয়। নতুন সিগারেট ধরা সুপ্রিয় মোড়ের দোকান টা থেকে একটা সিগারেট কিনে অনভ্যস্ত ভঙ্গিতে একটু বেশী সাবধানী হয়েই সিগারেট টা টানছিল। চেনাজানা কেউ যেন দেখে না ফেলে। সুপ্রিয়র তখন বি.এস.সি সেকেন্ড ইয়ার। সময় কাটানোর বেশ ভালো একটা উপায় সিগারেট খাওয়া, তবুও সময় যেন কাটতেই চাইছিল না সুপ্রিয়র। অনেক কিছু ভাবার চেষ্টা করছিলো সুপ্রিয়, বোঝারও। কিন্তু এলোমেলো হাওয়ার মতোই ভাবনাগুলোও বড় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি অবশ্য। তাই চিন্তা ভাবনার অবকাশও স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। সিগারেট টা শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মুখ ঘুরিয়ে দেখে অমলিনা আসছে। সুপ্রিয় কে দেখে যে এতটা অবাক হবে সেটা সুপ্রিয়ও অনুমান করতে পারেনি। তবে মুখে বহু পরিচিত হাসি ফিরিয়ে আনতেও বিলম্ব করেনি অমলিনা। এটা বুঝতেও অমলিনার কোনো ভুল হয়নি যে তার জন্যই সুপ্রিয়র দাঁড়িয়ে থাকা। বুদ্ধিমান, সপ্রতিভ সুপ্রিয় সেটা লুকোবার চেষ্টাও করেনি।
অমলিনা মুখে হাসি নিয়েই জানতে চেয়েছিলো বসন্তের শুরুতেই সকালবেলায় রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ টি। জানতে চাওয়ার মধ্যে হয়তো একটু সূক্ষ্ম ব্যাঙ্গও ছিল। সুপ্রিয় যে একটু অপ্রতিভ হয়ে পড়েনি এই প্রশ্ন শুনে এমনও নয়। তবে উত্তরও দেয় নি। কিছু প্রশ্নের উত্তর হয়না। বা যে উত্তরে গোপনীয়তা রাখার দায় সুপ্রিয়র নেই, সেটা উহ্য থাকাই বরং ভালো। বেশ কিছুটা রাস্তা পাশাপাশি হাঁটার পর যখন অমলিনা বলেছিলো অরগ্যানিক কেমিস্ট্রির কয়েকটা রিয়্যাকশন মেকানিজম বুঝিয়ে দেওয়া যাবে কিনা, তখন সুপ্রিয়র হুঁশ ফিরেছিল। পাল্টা জানতে চেয়েছিলো সুপ্রিয় রিয়্যাকশন মেকানিজম বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কেউ বসন্তের শুরুতে সকাল বেলা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিনা। অমলিনাও উত্তর টি উহ্য রেখেছিলো তবে হাসি চাপা দেওয়ার চেষ্টা টি গোপন করতে পারেনি। আরো কিছুক্ষণ চুপচাপ পাশাপাশি হাঁটার পর বলেছিলো " এবার যেতে হবে রে। আর হ্যাঁ, কেমিস্ট্রি টা কিন্তু একদিন বুঝিয়ে দিস...শোন্ কেরিয়ার টা নিয়ে একটু ভাব, ফিউচার টা সিকিউরড্ হবে। কলেজে দেখা হবে.. বাইইই...।"
শুধু কি কেমিস্ট্রিই প্রিয় ছিল সুপ্রিয়র? বেহিসেবী সুপ্রিয় বুঝতে পারেনা ভবিষ্যৎ জিনিস টাই যখন অনিশ্চিত, তাকে সুরক্ষিত করার নিশ্চয়তা কিভাবে দেওয়া যায়!
বছর কুড়ি পর। সুপ্রিয় তথাকথিত অর্থে প্রতিষ্ঠিত। সুরক্ষিত চাকরি। না, সুপ্রিয় কেমিস্ট্রি পড়েনি বা বলা ভালো প্রিয় কেমিস্ট্রি তার কেরিয়ার হয়নি। সুপ্রিয়'র জগৎটা অনেকটা সীমাবদ্ধ, কিছুটা বিচ্ছিন্নও বোধহয়। কয়েকদিনের জন্য নিজের প্রিয় শহরে সুপ্রিয়। স্মৃতির সাথে এনকাউন্টার! কে.সি স্যারের বাড়ির গলির মোড়ের দোকানটায় সিগারেট কিনতে গিয়ে দেখে সেটি বেশ বড় একটা স্টেশনারী দোকান হয়ে গেছে। এটা কি রাইসিং অফ্ দ্য প্রলেতারিয়েত... সত্যিই কি তাই? একটা সিগারেট কিনে ধরালো সুপ্রিয়। কিছুটা আনমোনা। বড় রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো সুপ্রিয়, কোনো প্রিয় জিনিসই সুপ্রিয়'র জীবনে স্থায়ী হয়নি, প্রিয়রা কখনো ধরা দেয়নি সুপ্রিয়'র কাছে। সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ বোধহয় প্রিয়দের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়... কাঙ্খিত কেরিয়ারও কি দেয়? বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া গুলো মিলিয়ে যেতে লাগলো।

সুমন সিনহা
১১/০৪/২০২১

বড়দিনের ডায়েরি

গতকাল বড়দিন চলে গেলো। আজকাল যে কোনো উৎসব এলেই কেমন একটা বিষণ্নতা বোধ হয়। উৎসব উদযাপনে অংশগ্রহণ করলেও কেমন একটা অপূর্ণতা থেকে যায়, কিছু একটা না পাওয়ার ব্যাপার অনুভূত হয়। অনেকটা ওই 'কি জানি কিসের লাগি, প্রাণ করে হায় হায়'। এবারে এই প্যান্ডেমিক ক্লান্ত বড়দিনে ঘরের মধ্যে সপরিবারে ছুটি ও উৎসব উদযাপন করতে করতে সেই অনুভূতি আরো প্রকট হল। নিজেকে মাঝে মাঝে কিছুটা বিচ্ছিন্নও মনে হলো।

আমার পুত্রের বয়স ছ'বছর। স্বভাবতই ওর উৎসাহ ও উদ্দীপনা অনেক বেশি। তার কারণও ভিন্ন। বাড়িতে একটা ক্রিসমাস ট্রী আছে। সেটাকে বের করে ঝাড়পোষ করা, তাকে ডেকোরেট করা, তারপর তার মধ্যে টুনি (লেড) লাইট লাগানো - এসবে ওর উত্তেজনার শেষ নেই। উপরিপাওনা হিসেবে এবারে ওর বিগদাদা আবার বিভিন্ন রঙের লেড লাইট জ্বলা একটা বেলুনও দিয়েছে। তাই উত্তেজনার পরিমাণও একটু বেশী এবারে। বিভিন্ন ভাষায় জিঙ্গিল বেল চালিয়ে ওর লাফালাফি, দাপাদাপি করা - এসব দেখতে বেশ ভালোই লাগছিলো। প্রাণের স্পন্দন দেখতে কার না ভালো লাগে। সকালবেলা কেক কাটাও হয়েছিলো।

কেক কাটার সময়ই ছোটবেলার কেককাটার স্মৃতি মনে এলো। আসলে এখন যে কোনো উৎসবের সময়ই আমাদের ছোটবেলার উৎসব যাপনের দিনগুলো মনে পড়ে যায় এবং অবধারিত ভাবে একটা তুলনা চলে আসে। আমার ছোটবেলার বড়দিন পালনের প্রধান অংশ ছিল সকালবেলা কখন কেক কাটা হবে আর মা বিকেলে কখন চার্চে নিয়ে যাবে। তখন বছরে ওই একদিনই কেক আনা হতো বাড়িতে। দু একবার ছাড়া কখনো আমার জন্মদিন পালন করা হয়নি আর জন্মদিনে কেক কাটার রেওয়াজ ছিল না। এখন তো সারাবছরই কেক পাওয়া এবং খাওয়া যায়। সহজলভ্যতা যে কোনো জিনিসেরই গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। তাই বড়দিন কে ঘিরে বছরে একবার কেক কাটার যে একটা রোমাঞ্চ ছিল, সেই রোমাঞ্চ কোথায় হারিয়ে গেছে। আমার ছেলের মধ্যেও কেক কাটার আলাদা কোনো উত্তেজনা নেই। ওর কাছে কেক খাওয়াটা শুধু প্রাতঃরাশ ছিল।

আমাদের ছোটবেলায় সান্তাক্লজের নামটাম বিশেষ শোনা যেতো না। জিঙ্গিল বেল আমি শুনিনি। ক্রিসমাস ট্রী'র ফান্ডা জানা ছিল না। আর মোজার ভেতর সান্তাবুড়ো এসে উপহার সাজিয়ে দিয়ে যাবে - এমন রূপকথার জীবনে বড় হই নি। মেরি ক্রিসমাস উইশ করার বাতিক বা ফর্মালিটিও আমাদের বা বড়দের মধ্যে ছিল না। আমাদের মূল আকর্ষণ ছিল বড়দিনের তিন চার দিন আগে থেকে দোকানগুলোয় রঙিন কাগজে মোড়া বিভিন্ন রকমের কেক সাজানো দেখা। সেই দেখাতেই কি ভীষন খুশী আর আনন্দ। আর বাবার কাছে আব্দার ছিল কেক কিনতে যাওয়ার সময় যেনো আমাকে দোকানে নিয়ে যায়। উদ্দেশ্য ছিল আরও কাছের থেকে রঙিন কাগজে মোড়া কেকগুলোকে দেখা। কিনবার পছন্দ আমার বা দিদির ছিল না। বাবা বা মা দাম অনুসারে যা কিনবেন সেটাই আমাদের আনন্দের কারণ। শুধু কেনার পর মনে হতো ইশ্ আরেকটু বেশি দাম দিয়ে যদি ঐ কেক টা কিনতো! কিন্তু শুধু মনেই, বলতে পারিনি কোনোদিন মুখে। এবারে যখন ছেলে কে বললাম যে চল্ কেক কিনে আনি, ওর সরল উত্তর ছিল 'বাড়িতেই তো মাইক্রোওয়েভ ওভেন আছে, ওখানে তো মাম্মা কেক বানায় প্রায়ই - বাইরে থেকে কেক কিনতে যাবে কেনো?' ওর এই সহজ উত্তরের মধ্যে ওর অজান্তেই কোথাও একটা প্রাচুর্যতার ইঙ্গিত আমাকে নাড়া দিয়েছিলো। জানিনা এটাকে 'rising of the proletariat' বলা বা ভাবা যায় কিনা! এখন তো উৎসব মানেই প্রাচুর্যতা ও দেখনদারি।আর ছিল বিকেলে মায়ের হাত ধরে আমার আর দিদির চার্চে যাওয়া। সেটাই ছিল বড়দিনের প্রধান আকর্ষণ। মফস্বল শহরের সাদামাটা চার্চ সেদিন আলোয় সেজে উঠত। ভেতরে মেরি মাতা ও যীশুর মূর্তি ও ছবি, মাটির তৈরী মেষশাবক, আলো দিয়ে তারা সাজানো - এসব অপলক মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতাম। মা যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার গল্প বলতেন, আমরা শুনতাম। বাড়ি ফিরতে মন চাইতো না। মা তাড়া দিলে বলতাম আর একটু, আর একটু। ভিড়ের মধ্যেও ঐ মেষশাবক গুলোকে বারবার দেখে যেতাম। মেরিমাতার কোলে যীশুকে দেখে একটা অদ্ভূত ভালোলাগা কাজ করত। চলে আসার সময় মনে হতো আবার একবছর পর এই চার্চে আসতে পারবো। কখনো আমাদের কে বলা হয়নি যে আমরা কোনও ধর্মীয় স্থানে যাচ্ছি। সেই বোধটাই কখনো আসেনি। ঠিক যেমন বড়দিনের কেক খাওয়ার সময় কখনো মনে হয়নি সেকুলার প্রমাণ করার জন্য কেক খাচ্ছি, সেমাইয়ের পায়েস বা বিরিয়ানি খাওয়ার সময়ও কখনো মনে হয়নি। উৎসবের আমেজ, উৎসবের মেজাজ, উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেওয়াতেই উৎসবের প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব নিহিত থাকে। ধর্মীয় সঙ্কীর্নতা উৎসবের প্রকৃতি বা চরিত্রের ওপর থাবা বসালে বিষণ্ণতা আসে না? আজকাল যে কোনো উৎসব কে ঘিরেই একটা সমান্তরাল ধর্মীয় প্রচার ও উস্কানি লক্ষ্য করা যায়। সময়ের সাথে উৎসব পালনের ধরন বা রকম বদলাতেই পারে, তাই বলে উৎসবের আবেদন কি পাল্টে যেতে পারে?

এসব নানান কথা ভাবতে ভাবতেই দুপুর গড়িয়ে বিকেলও চলে গেলো। শীতের বিকেলের স্থায়িত্বই বা কতটুকু! সন্ধেবেলা পুত্রের দাবি বা আব্দারে ওর পুণের জেঠু, জেম্মা ও বিগদাদা এলো। পিকুর সম্মানে আরো একবার ওদের আনা কেক কাটা এবং খাওয়া হলো। একসাথে বেশ কয়েকটি ফটোও তোলা হল। ফটো তোলাও এখন কত সহজলভ্য! ছোটোবেলার বড়দিনের কোনো ফটো ফ্রেমবন্দী নেই। ওরা চলে যাওয়ার পর সেই আক্ষেপ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবিষ্কার করলাম যে ২৫শে ডিসেম্বর নাকি 'গীতা জয়ন্তী'। এর আগে কখনো জানতাম না। আমার প্রিয় শহরের যে চার্চ নিয়ে এত স্মৃতি, সেই চার্চের সামনেই কিছুজন 'গীতা জয়ন্তী' উপলক্ষে 'গীতা বিতরণ কর্মসূচি' তে অংশগ্রহণ করে 'বড়দিন' পালন করেছেন! চার্চের সামনে ছাড়া অত বড় শহরে আর জায়গা ছিল না গীতা বিতরণ করার! এই আপাত 'ছোট্ট ঘটনা' টি সারাদিনের সুখানুভূতি গুলোকে একটা না-বোঝাতে পারা মনখারাপে ঢেকে দিলো। সেই বিষন্নতা ও গীতাপ্রাপকরা গীতা পড়বেন এই আশা নিয়ে প্রার্থনা করলাম বড়দিন শুভ বোধের হোক, বড় মনের হোক।

শুতে যাওয়ার সময় মহীনের ঘোড়াগুলি'র একটা প্রিয় গান শুনতে বড় ইচ্ছে হলো। তারই তিনটি লাইনের রেশ নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম...

"তবুও কিছুই যেনো ভালো যে লাগে না কেনো 
উদাসী পথের মাঝে মন পড়ে থাকে যেনো 
কোথায় রয়েছে ভাবি লুকিয়ে বিষাদ তবুও।" 

সুমন সিনহা
২৬/১২/২০২০

পর্ব - ৩

যা দেখি, যা শুনি, একা একা কথা বলি...

Prologue 

আমরা সমাজবদ্ধ জীব। সামাজিক নিয়মেই আমরা একে অপরের সাথে কথা বলি, মেলামেশা করি। সময়ের সাথে সাথে কারোর কারোর সাথে বেশি বন্ধুত্ব হয়, বেশী যোগাযোগ থাকে, আবার কারোর কারোর সাথে দূরত্ব তৈরী হয়। কারোর কারোর সাথে শুধু সৌজন্যের সম্পর্ক থাকে, কারোর কারোর সাথে শুধুই পেশাগত সম্পর্ক থাকে। সম্পর্ক যে ধরণেরই হোক না কেনো, প্রত্যেক টা সম্পর্কেরই একটা অর্থ আছে বলে আমি মনে করি, অন্ততঃ থাকা উচিৎ। সে কারণেই আমরা একে অপরের খবর নিই, একে অপরের সাথে কথা বলি ইত্যাদি। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা, গল্প, তর্ক, যুক্তি, প্রতিযুক্তি, মতবিনিময়, আলাপচারিতা সবকিছুই হয়। সেখান থেকে কত কিছু জানা যায়, শেখা যায়, বোঝা যায়। কতজন কে নতুন ভাবে চেনা যায়। পরে যখন সেগুলো নিয়ে ভাবি, তখন একটা মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কখনো ভালো লাগার, কখনো খারাপ লাগার। সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কিছু বছর ধরে দেখছি ভালো লাগা বা খারাপ লাগা কোনো অনুভূতিই আর বিশেষ হচ্ছে না। তার জায়গায় হতাশ লাগছে, নিরাশ লাগছে আর ক্রমশঃ যেনো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি অন্যদের থেকে। আরো একা হয়ে পড়ছি। শুধু যে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা বা কথোপকথন থেকেই নিরাশ বোধ করছি তা না, চারপাশে ঘটে চলা সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, সংবাদ মাধ্যমে সেগুলোকে দেখানোর ধরণধারণ, ব্যক্তিগত জীবনে ও সামাজিক মাধ্যমে সেসব ঘটনার প্রতি পরিচিত, আধা - পরিচিত ও অপরিচিত লোকজনের প্রতিক্রিয়া - এসব কিছুই বড় প্রভাবিত করেছে ও করে।
সেই সব অনুভূতি গুলোকেই লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি এখানে। কোনোরকম তিক্ততায় আমি বিশ্বাসী নই। "মানুষ বদলায়, তাই সে সুন্দর" - এই বিশ্বাসকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই।
-------------------------------------------------------------------------
পর্ব ৩

এবারে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি নিয়ে নানা জনের নানা আলোচনা, নানা মতামত শুনলাম। মিডিয়া প্রধানত দুটো রাজনৈতিক দলের প্রচার করছে দেখলাম। আর বাম দল গুলো কে নিয়ে এবারে অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথাবার্তা শুনলাম!!

কিছুদিন আগে এক পরিচিত জনের সাথে কথা হচ্ছিলো। নানা বিষয়েই কথা হয় মাঝেসাঝে।হঠাৎ সেদিন তাঁর কাছ থেকে জানতে পারলাম বামমনষ্ক লোকজন কে 'সঠিক বামপন্থী' হতে গেলে তাদের পার্টিমেম্বারশীপ থাকতে হয়!! উনি বামপন্থী মানেই সিপিআইএম বোঝেন আর কি! অনেক টা এই রকম বোঝাল যে ধরুন আপনি তখনই নন্দীগ্রাম বা সিঙ্গুরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প স্থাপনের চেষ্টা করার কথা আলোচনা করতে পারেন যদি আপনার পার্টিমেম্বারশীপ থাকে! বোঝ ঠেলা। উনি বোঝালেন যে ঐ শিল্প স্থাপন করতে গিয়েই পার্টি টা নির্বাচনে হেরে গেছিল আর তারপরই পার্টি টা শেষ হয়ে গেলো। মানে যে বা যারা ওই শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এসব বলেছিলো তারাই পার্টিটাকে শেষ করে দিলো আর কি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই ইঙ্গিত ছিল মূলতঃ। স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে আমাকেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করলো খানিক। আমি আর পাল্টা জিজ্ঞেস করিনি তাহলে এবারের নির্বাচনেও সেই পার্টি কেনো শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের লাইনেই চলছে যদি সেটা ভুল হয়ে থাকে? সব রাজনৈতিক দল গুলোই বলে সাধারণ মানুষ তাদের সাথে আছে। তাহলে কি প্রত্যেক সাধারণ মানুষকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের মেম্বার হতেই হবে? কি জানি! তবে ওই পার্টিমেম্বারশীপ ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো বলে একটু বোঝার চেষ্টা করলাম। তার ব্যাখ্যা টা এই রকম যে মেম্বারশীপ থাকলে লেভি দিতে হয়, অর্থাৎ টাকা না দিলে আপনার কিছুই বলার অধিকার নেই। ধরুন কেউ যদি চাঁদা দেয়, তাহলে হবে না কিন্তু। লেভিই দিতে হবে! একজন পেশাদার রাজনৈতিক কর্মীর মুখে একথা শুনলে হয়তো এতটা ধাক্কা খেতাম না কারণ Leninist Vanguard পার্টি গুলোর একটা সমস্যা হল যে তারা পার্টি মেম্বারশীপ কে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়। যাই হোক, কারা কিভাবে সিপিআইএম পার্টি মেম্বারশীপ পেয়েছিলো আর তার ফল কি হয়েছিলো, সেসব নিয়ে তাঁর কোনরকম মাথাব্যাথা দেখলাম না। সব ঘেঁটে ঘ হয়ে গেলো। কিছুদিন আগেই 'ধূসর মস্কো' পড়েছি, শুধু বার বার মনে পড়ছিল যে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ও অনায্য সুযোগ সুবিধে পাওয়ার লোভে কোনো ভাবে একটা পার্টি মেম্বারশীপ জোগাড় করার কি উন্মত্ত প্রতিযোগিতা, যার ফল - স্বয়ং লেনিনের দেশেও একদিন কম্যুনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছিলো! এ হেন পার্টি মেম্বার কে কখনো কখনো নিজেকে অরাজনৈতিকও দেখাতে হয়!!
গত পর্বে স্ট্রাকচারড ন্যারেটিভ কি ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেটা বলছিলাম। সে প্রসঙ্গে বলি, আর একদিন অন্য একজন কথা প্রসঙ্গে বললেন পশ্চিমবঙ্গে বামেদের এমনই দুরাবস্থা যে বুদ্ধ বাবু কে এখনও এই বয়সে বামেদের হয়ে বিবৃতি দিতে হয় বা অডিও বার্তা দিতে হয়। আমি তো শুনে তাজ্জব! একজন পার্টিকর্মী, আদ্যপান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি মাস দেড়েক আগেই বলেছিলেন অসুস্থ অবস্থায় ঘরে বন্দি হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করতে পেরে অস্থির বোধ করছেন, তিনি তাঁর পার্টি কে ভোট দিতে আবেদন করবেন বা পার্টি তাঁকে অনুরোধ করবে এটাই তো স্বাভাবিক। যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রবীণ সদস্যই তা করতে পারেন। করেনও। কিন্তু বাম দলের কেউ করলেই সমস্যা! ওই যে বললাম 'স্ট্রাকচারড ন্যারেটিভ'! আবার ঘেঁটে ঘ হয়ে গেলাম। প্রচারে বা প্রোপাগান্ডায় মগজধোলাই কি একেই বলে?

সুমন সিনহা 
0৯/০৪/২০২১

Sunday, April 25, 2021

পর্ব - ২

যা দেখি, যা শুনি, একা একা কথা বলি...

Prologue 

আমরা সমাজবদ্ধ জীব। সামাজিক নিয়মেই আমরা একে অপরের সাথে কথা বলি, মেলামেশা করি। সময়ের সাথে সাথে কারোর কারোর সাথে বেশি বন্ধুত্ব হয়, বেশী যোগাযোগ থাকে, আবার কারোর কারোর সাথে দূরত্ব তৈরী হয়। কারোর কারোর সাথে শুধু সৌজন্যের সম্পর্ক থাকে, কারোর কারোর সাথে শুধুই পেশাগত সম্পর্ক থাকে। সম্পর্ক যে ধরণেরই হোক না কেনো, প্রত্যেক টা সম্পর্কেরই একটা অর্থ আছে বলে আমি মনে করি, অন্ততঃ থাকা উচিৎ। সে কারণেই আমরা একে অপরের খবর নিই, একে অপরের সাথে কথা বলি ইত্যাদি। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা, গল্প, তর্ক, যুক্তি, প্রতিযুক্তি, মতবিনিময়, আলাপচারিতা সবকিছুই হয়। সেখান থেকে কত কিছু জানা যায়, শেখা যায়, বোঝা যায়। কতজন কে নতুন ভাবে চেনা যায়। পরে যখন সেগুলো নিয়ে ভাবি, তখন একটা মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কখনো ভালো লাগার, কখনো খারাপ লাগার। সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কিছু বছর ধরে দেখছি ভালো লাগা বা খারাপ লাগা কোনো অনুভূতিই আর বিশেষ হচ্ছে না। তার জায়গায় হতাশ লাগছে, নিরাশ লাগছে আর ক্রমশঃ যেনো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি অন্যদের থেকে। আরো একা হয়ে পড়ছি। শুধু যে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা বা কথোপকথন থেকেই নিরাশ বোধ করছি তা না, চারপাশে ঘটে চলা সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, সংবাদ মাধ্যমে সেগুলোকে দেখানোর ধরণধারণ, ব্যক্তিগত জীবনে ও সামাজিক মাধ্যমে সেসব ঘটনার প্রতি পরিচিত, আধা - পরিচিত ও অপরিচিত লোকজনের প্রতিক্রিয়া - এসব কিছুই বড় প্রভাবিত করেছে ও করে।
সেই সব অনুভূতি গুলোকেই লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি এখানে। কোনোরকম তিক্ততায় আমি বিশ্বাসী নই। "মানুষ বদলায়, তাই সে সুন্দর" - এই বিশ্বাসকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই।
-------------------------------------------------------------------------
পর্ব ২

খুব দ্রুত আমাদের চারপাশের জগৎ টা, চারপাশের পরিবেশ টা, চারপাশের মানুষজন পাল্টে যাচ্ছে। পাল্টানোই জগতের নিয়ম। কিন্তু এই পাল্টানোর বা বদলানোরও একটা চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য আছে। পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই মূল চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য পাল্টাতে পারে না। যদি সেটা হয়, তাহলে তা অবশ্যই উদ্বেগের ও দুশ্চিন্তার। যেমন সময়ের সাথে সাথে সাদা রং সাদা'ই বা কালো রং কালো'ই থাকে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন "আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, চুনি উঠল রাঙা হয়ে"। অর্থাৎ এই চেতনাই ঠিক করে দেয় কোনটা সত্য আর কোনটা অসত্য, কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। সত্য সবসময়ই অনন্য (unique) তাই ইংরেজিতেও বলা হয় ' to tell the truth but to tell a lie'. ঠিক - ভুল বা ভালো - খারাপ নিয়ে একটা তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব বা বিতর্কের অবকাশ সবসময়ই ছিল। কিন্তু তাত্ত্বিক দিকটি বাদ দিয়ে প্রতিদিনকার জীবনে কোনো মন্তব্য বা কোনো আচার - আচরণ বা কোনো ঘটনা ঠিক না ভুল, ভালো না খারাপ সেটা সাধারণ জ্ঞান দিয়েই বিচার করা হয়। অর্থাৎ আমাদের চেতনাবোধ বুঝতে শেখায় কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ বা কি ঠিক, কি ভুল। ছোটবেলা থেকেই এই ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা, চেতনাবোধ তৈরী হয় আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বলতে বাড়ির পরিবেশ, স্কুলের পরিবেশ, পাড়ার পরিবেশ, খেলার পরিবেশ ইত্যাদি। অর্থাৎ আমাদের চারপাশের সামাজিক পরিবেশে আমরা কি শুনছি বা কি দেখছি বা কি পড়ছি সেখান থেকেই ভালোমন্দের ধারণা তৈরী হতে শুরু করে। বড় হতে শুরু করলেই কোনো ঘটনাকে ভালোমন্দর নিরিখে বিচার করতে বসলে সংবাদমাধ্যমে আলোচনা - সমালোচনা ও পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল (আজকের সময়ে এই শব্দবন্ধ টাই ব্যবহার করা নিরাপদ মনে হলো) কি প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন বা ব্যাখ্যা করছেন তার ওপরই ভরসা করতে হতো। জনমত গঠনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ছোটবেলায় রচনা লিখে নম্বর পেয়ে সেসব এখন অতীত হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক অতীত থেকে বর্তমান সময়ে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন খেয়াল করা যাচ্ছে তা হলো সংবাদমাধ্যম গুলোর ওপর রাজনৈতিক আগ্রাসন ও সংবাদমাধ্যম গুলির রাজনৈতিক নির্ভরতা। যে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচুর অর্থবল, তাদের হয়ে প্রচার ও প্রোপাগান্ডা স্বভাবতই বেশি। পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালরাও সংবাদমাধ্যম গুলোতে ব্রাত্য। যেটা দেখা যাচ্ছে তা হলো ভুল কে ঠিক বা খারাপ কে ভালো প্রতিপন্ন করার ব্যাপক একটা প্রচার যা সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থে ক্রমাগত, প্রতিনিয়ত আঘাত করে চলেছে। ন্যারেটিভ বদলে দেওয়ার এক প্রাণপণ চেষ্টা। ধর্মীয় উস্কানি, সাম্প্রদায়িকতা, বিভাজনের রাজনীতিকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা। এক শ্রেণীর 'সুশীল সমাজের' প্রতিনিধি এর সাথে যুক্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষ এতে কতটা প্রভাবিত হচ্ছেন বা এর সামাজিক প্রভাব কি হবে তা ভবিষ্যৎ বলবে কারণ সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহকে বর্তমানের নিরিখে বিচার করতে গেলে অনেকসময়ই অন্ধের হস্তীদর্শন হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে একটা। কিন্তু আমাদের চারপাশের অনেক শিক্ষিত লোকজনকেও দেখছি এই নতুন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ বিশ্বাস করতে, বলতে ও প্রচার করতে। সাধারণ জ্ঞানে ও চেতনায় যে সব ঘটনা বা কথাবার্তা বা বক্তব্য কে খারাপ বলেই জেনে এসেছি, আজ অনেকের কাছেই সেগুলো 'তেমন খারাপ কিছু' লাগছে না। তারা যে কোনো উপায়ে সেগুলোকে মান্যতা বা স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে প্রতিযুক্তিতে whataboutery এর আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেক সময় কোনো বক্তব্যের থেকে একটি বা দুটি আপাত - নিরপরাধ শব্দকে বেছে নিয়ে সেই বক্তব্যকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা হচ্ছে। একটা শব্দকে কোন অবস্থায় কি প্রেক্ষিতে কি ভাবে কি অর্থে কোথায় প্রয়োগ বা ব্যবহার করা হচ্ছে, তারপর নির্ভর করে সেটা ভালো না খারাপ বা ঠিক না ভুল। যেমন 'রগড়ে' দেওয়া আপাতদৃষ্টিতে একটি নিরপরাধ শব্দ। জামাকাপড় কাচবার সময় আমরা হামেশাই রগড়াই। কিন্তু কেউ যদি কোনো শিল্পী কে রগড়ে দেওয়ার হুমকি দেন, তখন কি বলা যায় 'তেমন খারাপ কি বললো'! এক রাজনৈতিক প্রার্থী অন্য দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে কন্ডোমের দোকান খুলতে বলছে! দুজনেই আবার মহিলা! (আজকাল আবার মহিলা কে মহিলা বললে প্রিভিলেজ নেওয়া বোঝায়!) কোনো সামগ্রিক প্রতিবাদ নেই ! কন্ডোম তো আর নিষিদ্ধ নয় বাজারে, দোকানে পাওয়া যায়, তাই সেই বক্তব্য খারাপ কি করে হতে পারে! জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের টক শো তে কোনো রাজনৈতিক নেতা প্রকাশ্যে হুমকি, আকথা - কুকথা বলে যাচ্ছেন আর সঞ্চালক দন্ত বিকশিত করে হাসছেন! বক্তাদের মধ্যে কালেভদ্রে দু একজন প্রতিবাদ করছেন, বাকি বক্তারা তখন হয় নিশ্চুপ দর্শক নয় ইনিয়েবিনিয়ে ন্যারেটিভ বদলে দেওয়ার সুচারু শিল্পে ব্যস্ত। হলভর্তি দর্শকদের সেই হুমকি, আকথা - কুকথা হজম করতে হচ্ছে। কেউ প্রশ্ন করলে আরো কুৎসিত হুমকি ও আক্রমণ। আর টিভির সামনে বসা হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ দর্শকদের অসহায় ভাবে সেসব শুনতে হচ্ছে, দেখতে হচ্ছে। আরো বিভিন্ন বিষয়ে নানাভাবে ভালো-খারাপ, ঠিক - ভুল কে গুলিয়ে দেওয়ার ন্যারেটিভকে ফাইন আর্টসের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার অবিরত চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে একজন কে বলতে শুনলাম জাতপাত নিয়ে রাজনীতি যখন হয় বা হয়েছে তখন ধর্ম নিয়ে রাজনীতির জন্য এত কথা কেনো!! দুটোই খারাপ কিন্তু একটা খারাপ কে দিয়ে অন্য একটা খারাপ কে জাস্টিফাই করার কি সুন্দর প্রচেষ্টা! দুটো খারাপের মধ্যে কোনটা বেশী ভয়ঙ্কর সেটাই ঘেঁটে ঘ হয়ে যাচ্ছে আজকাল। সাম্প্রদায়িকতাকেও মান্যতা দেওয়ার কি সূক্ষ্ম কৌশল! বিভাজনের রাজনীতি, বিভেদের রাজনীতি আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভাজন! এর ফলে ক্ষমতালোভী, নীতিআদর্শহীন কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বা কিছু নেতাদের বা মুষ্টিমেয় কিছু লোকজনের লাভ হতে পারে, কিন্তু পারস্পরিক পরিচিতি বা বন্ধুত্বের সম্পর্কে যে বিশ্বাস ও ভালোবাসার জায়গাগুলো ধাক্কা খাচ্ছে, সেটা কি কম ক্ষতিকর কিছু? মানুষ কে নিয়েই তো সমাজ। সামাজিক পরিবেশ, সামাজিক পরিকাঠামো, সামাজিক সুস্থিতি কে নষ্ট করে কি কখনো মানুষের ভালো হতে পারে?

সুমন সিনহা 
০৬/০৪/২০২১


পর্ব ১

যা দেখি যা শুনি একা একা কথা বলি... 

Prologue 

আমরা সমাজবদ্ধ জীব। সামাজিক নিয়মেই আমরা একে অপরের সাথে কথা বলি, মেলামেশা করি। সময়ের সাথে সাথে কারোর কারোর সাথে বেশি বন্ধুত্ব হয়, বেশী যোগাযোগ থাকে, আবার কারোর কারোর সাথে দূরত্ব তৈরী হয়। কারোর কারোর সাথে শুধু সৌজন্যের সম্পর্ক থাকে, কারোর কারোর সাথে শুধুই পেশাগত সম্পর্ক থাকে। সম্পর্ক যে ধরণেরই হোক না কেনো, প্রত্যেক টা সম্পর্কেরই একটা অর্থ আছে বলে আমি মনে করি, অন্ততঃ থাকা উচিৎ। সে কারণেই আমরা একে অপরের খবর নিই, একে অপরের সাথে কথা বলি ইত্যাদি। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা, গল্প, তর্ক, যুক্তি, প্রতিযুক্তি, মতবিনিময়, আলাপচারিতা সবকিছুই হয়। সেখান থেকে কত কিছু জানা যায়, শেখা যায়, বোঝা যায়। কতজন কে নতুন ভাবে চেনা যায়। পরে যখন সেগুলো নিয়ে ভাবি, তখন একটা মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কখনো ভালো লাগার, কখনো খারাপ লাগার। সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কিছু বছর ধরে দেখছি ভালো লাগা বা খারাপ লাগা কোনো অনুভূতিই আর বিশেষ হচ্ছে না। তার জায়গায় হতাশ লাগছে, নিরাশ লাগছে আর ক্রমশঃ যেনো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি অন্যদের থেকে। আরো একা হয়ে পড়ছি। শুধু যে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা বা কথোপকথন থেকেই নিরাশ বোধ করছি তা না, চারপাশে ঘটে চলা সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, সংবাদ মাধ্যমে সেগুলোকে দেখানোর ধরণধারণ, ব্যক্তিগত জীবনে ও সামাজিক মাধ্যমে সেসব ঘটনার প্রতি পরিচিত, আধা - পরিচিত ও অপরিচিত লোকজনের প্রতিক্রিয়া - এসব কিছুই বড় প্রভাবিত করেছে ও করে।
সেই সব অনুভূতি গুলোকেই লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি এখানে। কোনোরকম তিক্ততায় আমি বিশ্বাসী নই। "মানুষ বদলায়, তাই সে সুন্দর" - এই বিশ্বাসকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই।
-------------------------------------------------------------------------
পর্ব ১

প্রায় অনেক বছর ধরেই শুনে আসছি পশ্চিমবঙ্গে আর কিছুই নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ একটি অপয়া সংখ্যা কারণ পশ্চিমবঙ্গের যা কিছু খারাপ তা ঐ ৩৪ এর জন্যই। মিডিয়া, কিছু রাজনৈতিক দল ও নির্লজ্জ সুবিধাবাদী বেশকিছু ভদ্র মহোদয় মহোদয়াগণ প্রচার ও প্রোপাগান্ডায় ৩৪ কে এমন একটা ফাইন আর্টসের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে তার আগের ৩০ বা পরের ১০ বছরেও যে একটা পশ্চিমবঙ্গ ছিল, সেটাই অনেকে ভুলে গেছেন। একটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কুৎসা, মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র করতে করতে সবাই একটা জাতির কথা বেমালুম ভুলে গেলো! এবারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অভূতপূর্ব প্রচার যে বাংলায় ভোটার ছাড়া আর কিছুই নেই! একটা দ্বিধাবিভক্ত জাতিকে নিয়ে আবার টানাপোড়েন আর তাতে সবচেয়ে বেশি সামিল বাঙালি মিডিয়া! এর পেছনে উদ্দেশ্য বা কারণ জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা বিচার বিশ্লেষণ করবেন। কিন্তু এই যে পশ্চিমবঙ্গে আর কিছু নেই, এই "কিছু" টা কি কি? কর্মসূত্রে বাংলার বাইরে থাকি বলে এই "কিছু"র একটু আন্দাজ পেয়েছি যেমন 'বাংলায় কি আছে আর?', 'বাঙালিরা কি কাজ করে?', 'বাঙালি রা কিন্তু খুব ফাঁকিবাজ', 'ওখানে তো সরকারি চাকরি বাকরি আর কিছুই নেই', 'বাঙালিরা তো সবাই এখন বাংলার বাইরে' ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু প্রবাসী বাঙালিকেও আমি এগুলো বলতে শুনেছি। বাংলা ছেড়ে বাঙালিরা বাংলার বাইরে এটা বাজারে খুব চলে। এই ব্যাপার টা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে আমার। প্রথমে এই ব্যাপার টা একটু দেখা যাক।

প্রত্যেক টা রাজ্যেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, মূলতঃ সেটা জাতিগত স্বাতন্ত্র্য যা সেই রাজ্যের অধিবাসীদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি ও যাপন নির্ধারণ করে। পশ্চিমবঙ্গকে অন্য রাজ্যের সাথে তুলনা করতে গেলে এই স্বাতন্ত্র্যের কথাটি সবসময় মাথায় রাখতে হবে। এখন পশ্চিমবঙ্গের ছেলে মেয়েদের একাডেমিকস্-এ থাকার প্রবণতা সবসময়ই বেশি। তার একটা কারণ বাংলায় সরকারি বা সরকার অনুমোদিত স্কুল কলেজের সংখ্যা অন্য রাজ্যের থেকে অনেক বেশি। স্বভাবতই, বাঙালি ছেলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার প্রতি ঝোঁক অনেক বেশি। দেশের নামকরা উচ্চশিক্ষা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান (পশ্চিমবঙ্গ সহ) গুলোর দিকে নজর দিলেই সেটা খুব পরিষ্কার বোঝা যায়। এখন এই সমস্ত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও তো শিক্ষক, শিক্ষিকা, বিজ্ঞানী পদে নিয়োগ হয়। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় যদি বাঙালি ছেলেমেয়েরা সেসব পদে নির্বাচিত হয়, তাহলে তো সেটা গর্বের। নাকি তারা সেসব চাকরি করবে না যেহেতু লোকজন বলবে বাংলা ছেড়ে বাঙালিরা বাইরে? আরো একটা ব্যাপার ভাবতে হবে। উচ্চশিক্ষা মানেই কিন্তু নির্দিষ্ট থেকে নির্দিষ্টতর বিষয়ে পড়াশোনা করা। ধরুন কেউ কোনো বিষয়ে পিএইচডি করে সেই বিষয়ের ওপরে আরো গবেষণা করতে পোষ্টডক্টরেট স্তরে পড়াশোনা করলো। দেশে বা বিদেশে কোথাওই হতে পারে। এখন তিনি এমন কোনো বিষয়ে গবেষণা করেছেন যে বিষয়ের ওপর কাজ দেশের হাতেগোনা দু একটি প্রতিষ্ঠানে হয় এবং ঘটনাচক্রে পশ্চিমবঙ্গে সেই ধরণের প্রতিষ্ঠান নেই। খুব স্বাভাবিক ভাবে তিনি চেষ্টা করবেন সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবার যেখানে তাঁর বিষয়ের ওপর কাজ হয়। এটাকে কি বাঙালি বাংলার বাইরে চলে যাচ্ছে হিসেবে ব্যাখ্যা করা টা যুক্তিসঙ্গত? আবার অনেকের ব্যাক্তিগত ইচ্ছে বা স্বপ্ন থাকে নির্দিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে, সে দেশেই হোক বা বিদেশে। তিনি যদি তাতে সক্ষম হোন, সেটা আনন্দের ও প্রেরণার এবং বাঙালি হিসেবে গর্বের। বিদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে কেউ থাকলে ব্রেনড্রেন হয়ে গেলো বা দেশের কি লাভ হল বলে হাহুতাস, আর দেশে ফিরে এলে বাংলার বাইরে বলে আহা উহু। কি কিউট একটা ব্যাপার!

এবার উচ্চশিক্ষার কথা ছেড়ে অন্য ক্ষেত্র গুলো একটু দেখা যাক। ভারত একটা স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ যার একটি ফেডারেল গঠন আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে বিভিন্ন রকম চাকরির জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করা যায় ও সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার (বা ইন্টারভিউ) মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থীদের নির্বাচন করা হয়। সেটা কোনো অ্যাকাডেমিক ইন্সটিটিউট হতে পারে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে বা কোনো বিভাগ বা কোনো দপ্তর বা সাব অর্ডিনেট অফিস হতে পারে। যে কোনো রাজ্যের প্রার্থীরা সেসব চাকরির জন্য আবেদন করতে পারে ও অনেক ক্ষেত্রে সেইসব চাকরির পূর্বশর্ত হয় যে নির্বাচিত হলে ভারতের যে কোনও রাজ্যে প্রার্থী কে চাকরিসূত্রে থাকতে হতে পারে। এমনও সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে যা ভারতবর্ষের মধ্যে একটি মাত্র রাজ্যেই আছে। আর শুধু কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি নয়, বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর কোম্পানি বা প্রাইভেট কোম্পানি আছে যারা সর্বভারতীয় ভাবে নিয়োগ করে। পশ্চিমবঙ্গ কি ভারতের বাইরে যে বাঙালি ছেলেমেয়েরা সেসব চাকরিতে আবেদন করবে না? তাদের নির্বাচিত হয়ে চাকরি করা টা কি 'বাঙালি বাংলা ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে' বলা যায়? অনেক ছেলেমেয়ে আছে যারা নির্দিষ্ট কোনো পাবলিক সেক্টর বা প্রাইভেট কোম্পানির সাথে যুক্ত হতে চায়। এরকম তো হয় যে কেন্দ্রীয় সরকারি বা পাবলিক সেক্টর বা প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি পেয়ে কারোর কারোর কর্মস্থল পশ্চিমবঙ্গ। এমনিতেই ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বাঙালিদের উল্লেখযোগ্য ভাবে কম নির্বাচিত হওয়া নিয়ে (যদিও তার কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে ধরা হয়) একটা আক্ষেপ আছেই। বাঙালি বাইরে না গেলে 'ঘরকুনো', আর বাইরে গেলে হায় হায় সব শেষ হয়ে গেলো!
আরো একটি ব্যাপার বলি। ধরুন কোনো বাঙালি ছেলে বা মেয়ে নতুন কোনো চাকরি পেয়ে বাংলার বাইরে কোথাও যোগ দিলো। তারপর সে বিয়ে-থাওয়া করলো। এখন তার সঙ্গীনি বা সঙ্গী টি যদি সেই শহরে চাকরির চেষ্টা করে বা পেয়ে যায়, সেটাই তো সাধারণ জ্ঞানে স্বাভাবিক। সেটা কি 'বাংলায় কিছুই নেই' হতে পারে? ব্যতিক্রম থাকতেই পারে কিন্তু ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে না।

এবারে দেখা যাক 'ওখানে তো সরকারি চাকরি বাকরি আর কিছুই নেই' এর দিকে। বিগত দশ বছর বাদ দিলে কি কখনো পশ্চিমবঙ্গে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগের বিভিন্ন পদে, পুলিশে, দমকলে, হাসপাতালের বিভিন্ন পদে নিয়মিত নিয়োগ বন্ধ ছিল? আর সেইসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কখনো লাগামছাড়া দুর্নীতি বা স্বজন পোষন বা ঘুষের অভিযোগ উঠেছিল? আবারো বলছি ব্যতিক্রম হয়তো কিছু ক্ষেত্রে ছিল (সেটা কখনোই কাম্য নয়), কিন্তু তাকে সাধারণীকরন করলে সত্যের অপলাপ হবে। আর অন্য রাজ্যের সাথে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা করলে সেই রাজ্যের সরকারি চাকরির নিয়োগে বা স্কুল, কলেজে নিয়োগে কি হয় বা কি ভাবে হয় সেই ধারণা অবশ্যই রাখতে হবে।
'বাংলায় আর কিছুই নেই' এর মধ্যেও গতকাল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ARWU (Academic Ranking of World Universities) ranking এ প্রথম হয়েছে। গতবছর কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশিত ভারতের প্রথম দশটি শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাদবপুর (তৃতীয় স্থান) ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (পঞ্চম স্থান) ছিল। দুটোই রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে খড়্গপুর আই আই টি (প্রথম স্থান ) ছিল যেটা পশ্চিমবঙ্গে। এখন বাঙালিরা যদি 'কাজই না করে' বা 'ফাঁকিবাজি' করে, তাহলে এই প্রতিষ্ঠান গুলো চলছে কি করে বা চালাচ্ছে কারা? এই প্রতিষ্ঠান গুলো ছাড়াও অন্যান্য একাধিক অফিসে বা স্কুলে বা কলেজে বহু মানুষ সৎ ভাবে পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছে যা আড়ালেই থেকে যায়।
এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভে 'বাংলায় আর কিছুই নেই, সব শেষ হয়ে গেছে' বলে যে তীব্র ও সচেতন প্রচার চালানো হচ্ছে, আমরাও যদি সেটাই বিশ্বাস করতে শুরু করি তাহলে বুঝতে হবে এই পোস্টট্রুথ পলিটিক্সের যুগে আমাদের ভালোই মগজধোলাই হয়েছে।

সুমন সিনহা 
০৩/০৪/২০২১

Saturday, April 24, 2021

শংকর

অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা মণিশংকর মুখোপাধ্যায় ওরফে শংকর বাবু। অনেক আগেই আপনার প্রাপ্য ছিল সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার। সময়ে না পেয়ে আপনার কোনো ক্ষতি হয়নি, পুরস্কারের গুরুত্বই হয়তো কমেছে। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য গুণমুগ্ধ পাঠক পাঠিকার ভালোলাগা ও ভালোবাসা, সমাদর, তাঁদের চিঠিপত্তর ও একাধিক কাহিনীর চলচিত্রায়ণের পর নতুন করে কোনও স্বীকৃতির প্রয়োজন আপনার আর পড়ে না।
ষাট সত্তরের দশকে আপনার সৃষ্ট চরিত্ররা এখনও একই ভাবে এই সমাজে রয়ে গেছে। 'সীমাবদ্ধ'র শ্যামলেন্দু এখনও সব অফিসে সংখ্যায় কম হলেও আছে। নিজের পরিশ্রম, বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে চাকরিতে উন্নতি করলেও আসপাশ থেকে শুনতে হয় 'কি কি করতে হল এই উন্নতির জন্য?' 'চৌরঙ্গি' তে উচ্চবিত্ত সমাজের যে ভন্ডামি, নোংরামি দেখিয়েছেন, তা আজ বেড়েছে বই তো কমে নি। সামাজিক অবস্থারও কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে? বেকারত্ব আজ দেশে সর্বোচ্চ। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই চারিদিকে 'জন অরণ্য'র কনাদের কে দেখতে পাওয়া যায়। শুধু একটু বাঁচতে চাওয়ার শখ! আর একই ভাবে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে নৈতিক ও শিক্ষিত সোমনাথদের এই সমাজ যে কখন দালাল বানিয়ে দেয়, কেউ বুঝতেই পারে না। শুধু মনে হল এই সময়ে আপনার এই পুরস্কারপ্রাপ্তি ও স্বীকৃতি কি কোনো কিছুর রূপক!!
ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।

সুমন সিনহা
১২/০৩/২০২১



বন্ধু তোমার পথের সাথী কে চিনে নিও

কাল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর যে অসহায় আর্তনাদ ও অকপট স্বীকারোক্তি শুনলাম ও দেখলাম, সেটা যে এতো তাড়াতাড়ি ঘটবে ভাবতে পারিনি। বিশ্বাস ছিল সত্য একদিন সামনে আসবেই। মাত্র ১৪ বছরের মাথায়ও ইতিহাস রচিত হয়! সিবিআই, বিভিন্ন রকম কমিশন, আদালত যদিও অনেক আগেই ক্লিনচিট দিয়েছিলো। কাল চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক বিরোধী অবস্থানে থাকা একটি দলের ততোধিক বিরোধী নেত্রী ক্লিনচিট দিলেন। রাজনৈতিক ক্লিনচিট। আর যে বাপ-ব্যাটা কে দোষী, ষড়যন্ত্রীকারী ও গণহত্যার মূল হোতা বলে স্বীকার করে নিলেন, তারা মাননীয়ার একদা ছায়াসঙ্গী ও সদ্য অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন, যে দল সাদরে তাদের বরণ করে নিয়েছে!! হায়রে, ইতিহাস এত নির্মম হয়!
মাননীয়া তো স্বীকার করে নিলেন, কিন্তু সেদিন ওঁনার সাথে থাকা যে সকল বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী রেলজীবি বা পরজীবি, মিডিয়া যাদের ঘটা করে গালভরা নাম দিয়েছিলো বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজ, একই সুরে গলা মিলিয়েছিলেন তারা আজ অদ্ভূত ভাবে নীরব কেনো। ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাঁরা যে গণহত্যাকে সমর্থন করলেন, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল করার অপরাধে সেই দলের হাজার হাজার কর্মীর খুন করাকে, ঘরছাড়া করাকে, তাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যে অভিযোগে মিথ্যে মামলা দেওয়াকে সমর্থন করলেন, তাদের সংসার কে ছাড়খার করে দিলেন, সেই দায় তাঁরা নেবেন না আজ? সেদিন যে মিথ্যে, ভুল ও অসত্য কে ক্রমাগত প্রচার করেছেন, আজকে ভুল স্বীকার করে সত্য প্রচারে এগিয়ে আসবেন না তাঁরা? মিডিয়াগুলো আজকে দায় নেবে না?
পাম অ্যাভিনিউয়ের আতিশয্যহীন দুকামড়ার ফ্ল্যাটের নিঃসঙ্গ সম্রাটের কিছুই ক্ষতি হয়নি সেদিন, আজও হয় না, একাধিক সিবিআই, কমিশন, আদালত ইত্যাদি বসিয়েও একটি আঁচড়ও কাটতে পারেন নি আজ পর্যন্ত। রাজ্য বা কেন্দ্রে কোথাও ওঁনার দলের সরকার ছিল না কিন্তু। উল্টে ওঁনার বাড়িতে বা হাসপাতালে ওঁনাকে দেখতে গিয়ে জাতে ওঠার প্রতিযোগিতায় সামিল হতে হয় অন্য দলের নেতা নেত্রী দের!! সেদিন উনি বা ওঁনার দল হেরে যান নি, হেরে গিয়েছিলো বাঙালি জাতি, হেরে গিয়েছিলো অসংখ্য বেকার বাঙালি যুবক যুবতীর স্বপ্ন, পিছিয়ে গিয়েছিলো ভারতের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ। সেদিন যাদের বয়স ছিল ১৮, আজ ১৪ বছর পর তাদের বয়স ৩২। সরকারী চাকরির বয়স আর তাদের নেই প্রায়। একটা গোটা বাঙালি প্রজন্ম হারিয়ে গেলো, নষ্ট হয়ে গেলো। এর দায় কে নেবে মাননীয়া?
শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের নেশায় নীতি নৈতিকতা, বাস্তববোধ, সততা সব কিছুকে ভুলে মিথ্যার বেসাতি ও হিসেববিহীন টাকার সাহায্যে কিছু মিডিয়া কে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন একটি রাজনৈতিক দলের দয়া দাক্ষিণ্যে আপনি ক্ষমতায় এলেন। দ্বিধাহীন ভাবে স্বীকার করছি সেই রাজনৈতিক দলের দায়ও কোনো অংশে কম ছিল না। কিন্তু ক্ষমতায় এসে আপনি কি করলেন? সরকার চালানোর নামে নজিরবিহীন দুর্নীতি, তোলাবাজী, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের মিথ্যে মামলা দেওয়া, প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে আনা ও রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা, সরকারি চাকরির নিয়মিত পরীক্ষাগুলো বন্ধ করে দেওয়া, দান খয়রাতি, ধর্মীয় তোষামোদ... কিছুই বাকি রাখলেন না। আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে আপনি খাল কেটে কুমির ডেকে আনলেন। আপনার দলের অধিকাংশ নেতা কর্মী আজ সেই কুমিরের দলে। আপনার দলে থেকে লুটেপুটে, চেটেপুটে সব কিছু খেয়ে আজ তারা অন্য দলে গেছে মানুষের জন্য কাজ করতে! সব বুঝে, সব জেনেও আপনি অন্ধ সেজে থেকেছিলেন এতদিন, আজ সেই কুমিরই আপনাকে গিলতে আসছে। বামপন্থীরা ক্ষমতা থেকে বিচ্যুত হয়েছে, এটা ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু বাকি প্রসঙ্গ গুলোও তো আজ ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে প্রমাণিত। পারবেন অস্বীকার করতে? রাজনীতির কালবেলায় আজ আপনার অকপট স্বীকারোক্তিতে আক্ষেপ আছে, কোথাও হয়তো সত্য স্বীকার করে নেওয়ার সাহসও দেখিয়েছেন মেনে নিলাম। কিন্তু বিগত ১৪-১৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার যে পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেলো, তার দায় কারা নেবে? যে রাজনৈতিক সচেতনতাবোধের জন্য বাঙালি সবার কাছে সমাদৃত ছিল, তা আজ কলতলার ঝগড়া ও ধর্মীয় বাইনারি তে নেমে এসেছে। এ লজ্জা বাঙালির নয়?? এর দায় কাদের? পারবেন ১৪ বছর আগের পশ্চিমবঙ্গকে ফিরিয়ে দিতে যখন টাকা দিয়ে দলবদল হতো না, যখন টাকা বিলি করে ভোট ভিক্ষা চাইতে হতো না, যখন নিয়মিত সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হতো, যখন রাস্তাঘাটে নির্ভয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধাচারণ করা যেতো, যখন বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দল করার জন্য কাউকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢোকানো হতো না (আপনি নিজেই তার উদাহরণ), যখন ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে ভোট প্রচার হতো না, যখন রাজনৈতিক চেতনার বদলে গ্ল্যামার দিয়ে ভোট কেনার দেউলিয়াপনা দেখাতে হতো না।
শ্বেতশুভ্র ধূতি পাঞ্জাবির আপাদমস্তক ভদ্রলোকের দলের অনেক গাফিলতি ছিল, ভুল ছিল, কিছু বেনোজলও ঢুকেছিল। তারা সেটা স্বীকার করেছে, সংশোধন করেছে ও ৭% হয়েও মানুষের পাশে, মানুষের সাথে থেকেছে। পাম অ্যাভিনিউয়ের ঘরবন্দি ভদ্রলোকের দল ভুল ত্রুটি নিয়েও কিন্তু কখনো পশ্চিমবঙ্গ তথা বাঙালির সার্বিক মান কে নিচে নামতে দেয়নি। আপনার স্বীকারোক্তির সময় আপনার একদা সতীর্থরা অধিকাংশই আরো ক্ষমতার লোভে, আরো টাকার লোভে অন্য দলে! একবার যে স্বাদ পেয়েছে, তার থেকে দূরে থাকা যায়?!! যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমদানি আপনি পশ্চিমবঙ্গে করলেন তার মূল্য চোকাতে হচ্ছে একটা সমগ্র জাতি কে, যারা একটু সুস্থ, সুন্দর শিক্ষিত, সাংস্কৃতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে নিজেদের পরিবার নিয়ে শান্তিতে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো। আপনার স্বীকারোক্তি শোনার পর থেকেই আপনারই গুণগ্রাহী (!) এক কবির একটা লাইন বারবার মনে আসছে - "মৃত নগরীর রাজা হয়ে কি হবে অয়দিপাউস?"

সুমন সিনহা 
২৯/০৩/২০২১

সোজাসাপ্টা

কালকের ব্রিগেডের সভার পর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আব্বাস সিদ্দিকী ও বামজোট। বেশ কিছু বামপন্থী লোকজন কে দেখছি কালকে সন্ধ্যার পর থেকে আব্বাস কে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করছেন ও শেয়ার করছেন। কাউকে কাউকে দেখলাম ভিয়েতনামের যুদ্ধের সময় খ্রীষ্টান পাদ্রীদের কম্যুনিস্টদের সমর্থন করার কথা!! , কেউ কেউ আবার সাম্প্রদায়িক - অসাম্প্রদায়িক, বস্তুবাদী-অবস্তুবাদী, কম্যুনিস্ট - অকম্যুনিস্ট এসব অবান্তর ব্যাখ্যার মধ্যে গেছেন। নিজেদের কে বেশি বামপন্থী ভেবে সোজা কথাকে সোজা ভাবে না বললে ভোট তো বাড়বেই না, উপরন্তু বিরক্তি বা আঁতলামির জন্য বেশ কিছু লোক ইতিবাচক বিকল্পের কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত আর জোট প্রার্থীদের ভোট দেবেন না। সংসদীয় রাজনীতিতে নির্বাচনী জোট একটা বাধ্যবাধকতা। যেহেতু সিপিআইএম সহ বাম শরিক দলগুলি সংসদীয় রাজনীতি করে, তাই ভোটের স্বার্থে তারা জোট করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বামপন্থী রাজনীতির ঘরানা পাল্টে যাবে। মনে রাখতে হবে আব্বাস সিদ্দিকীর এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক পরিচয় বা অতীত নেই। উনি একজন ধর্মপ্রচারক ও শরিয়তপন্হী মুসলিম ধর্মগুরু। তাই ধর্ম নিরপেক্ষ লোকজন ও বাম-মনোভাবাপন্ন বা বাম-সমর্থক /কর্মীদের নিশ্চয়ই অধিকার আছে এই জোট নিয়ে বামেদের সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করার। সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হলো ভোটের স্বার্থে ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোকে রুখতে এই জোট। তাই সংযুক্ত মোর্চার গুরুত্ব আলোচনা না করে অযথা আব্বাস কে 'ধর্মনিরপেক্ষ' বা 'সেকুলার' প্রমাণ করতে এত সেফগার্ড করার ও আদিখ্যেতা দেখানোর কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। ফেসবুকে ইন্টেলেকচুয়ালিজম দেখালে ভোট বাড়ে না। তার থেকে শ্রমজীবি ক্যান্টিন, লকডাউনের মধ্যেও মানুষের পাশে থাকা, চাকরির দাবিতে আন্দোলন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই, পরিযায়ী শ্রমিকদের সাধ্যমতো সাহায্য করা - এইসব বিষয় গুলোর ওপর ফোকাস অনেক বেশি করলে আখেরে লাভ হবে। বর্তমান সময়ে এই জোটের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরতে হবে। দেবলীনা হেমব্রম, দীপ্সিতা ধর, ঐশী ঘোষ সহ যে হাজার হাজার তরুণ - তরুণীরা বামপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ, সেটা বোঝাতে হবে। নিদেনপক্ষে টুম্পা সোনা'র প্যারোডির লিরিক্স বা ফ্ল্যাশ মবের মত অভিনবত্ব নিয়ে আলোচনা হোক, তাও ভালো। সাদা কে সাদা, কালো কে কালো বললে কেউ কম বামপন্থী হয়ে যান না, তাই তাদের কে "আংটিপড়া বামপন্থী" বা "সরল বামপন্থী" ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে স্থূল রসিকতা করা বন্ধ হোক। বরং তাদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে না পারলে চুপ করে থাকা ভালো। তাঁদের উদ্বেগ কখনোই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কালকের ব্রিগেডে আব্বাস সিদ্দিকী যথেষ্ট অসৌজন্যতা দেখিয়েছেন এবং পোড়খাওয়া সিপিআইএম নেতার ওনাকে নিয়ে আদিখ্যেতা অনেক অনেক বাম সমর্থক / কর্মীর চোখে দৃষ্টিকটূ লেগেছে। এই সত্য অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই।

সুমন সিনহা
০১/০৩/২০২১

সংস্কৃতির ঢাক, তেরে কেটে তাক তাক...

সংস্কৃতির ঢাক, তেরে কেটে তাক তাক...

আজকাল দেখছি পশ্চিমবঙ্গে হেভিওয়েট নেতাদের আনাগোনা বেশ বেড়ে গেছে। মাঝেমধ্যে তাঁরা বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করছেন। বেশ ভালোই লাগছে দেখে। বাংলার কয়েকজন প্রবাদপ্রতিম মনীষিদের নিয়েও বেশ মাতামাতি (নাকি রেষারেষি?) শুরু হয়েছে। ভোট বড় বালাই। তা হোক, এই সুযোগে সেইসব মনীষিদের নাম তো উঠে আসছে। কিন্তু গোল বাঁধলো অন্য জায়গায়। সেইসব মনীষিদের জীবনবোধ, চর্চা বা আদর্শ সম্পর্কে অবহিত না হয়েই শুধু নাম নিয়ে টানাটানি করলে যা হয় আর কি। সেই যে ঘোষবাবু 'বিদ্যাসাগর মহাশয় সহজপাঠ লিখেছিলেন' বলে শুরু করেছিলেন, সেই রেশ কাটতেই চাইছে না। 'ওরে গ্রহবাসী' শুনলাম,'রবিঠাকুর শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেছেন' শুনলাম। হিন্দি চ্যানেলের পরিবেশককে বাঙালি প্যানেলিস্টকে 'উনি ঠাকুর নন, টেগোর' বলতে দেখলাম। এমনকি 'বিবেকানন্দ ঠাকুর' বলতেও শুনলাম! জানিনা সেটা ওই হিন্দি চ্যানেলের পরিবেশকের অনুপ্রাণিত কিনা! ভাগ্য ভালো যে এখনো 'স্বামী রবীন্দ্রনাথ' শুনতে হয়নি! এসব রঙ্গ দেখে আমার আইনস্টাইন সাহেবের সেই বিখ্যাত উক্তি টা মনে পড়ে শুধু... "The difference between genius and stupidity is that genius has its limits".

সুমন সিনহা
১০/০২/২০২১

সুন্দরবনের লোকজন রাস্তা অবরোধ করে না, কারণ ওখানে রাস্তাই নেই।!!!ওরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে বাঁধ বানায়।কোনোরকম সরকারি সাহায্য ওরা প্রত্যাশা করে না।ওদের কাছে বিক্ষোভ দেখানো টা বিলাসিতা। শুধুমাত্র ভোটের আগেই ওদের দাম একটু বেড়ে যায়। তখন আবার টাকার কাছে ওরা পরাজিত হয়। আর পরাজিত হয় ভয়ের কাছে, চোখ রাঙানির কাছে। আর ওদের গণতান্ত্রিক অধিকার পরাজিত হয় শহুরে মেকি চাকচিক্যের কাছে।গণতান্ত্রিকতার প্রকাশ তো কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের হেরে যাওয়ার মধ্যে , দেবশ্রী রায়ের জয়ের মধ্যে। ওদের সবার জীবনের সম্মিলিত দাম ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ স্ট্যাচু তৈরীর খরচের অর্ধেকেরও কম।!!

সুমন সিনহা
৩১/০৫/২০২০
Talent finds it own way to express itself. Below is the scanned photo of our belated mother. The photo was taken before her marriage when she was doing her graduation. She was 21 years old then. After the sudden demise of our mother on September 05, 2020, my elder sister made this photo a DP in her WhatsApp for some days. Smt. Jyothsna Ganji, one of my elder sister's colleagues, who happens to be an art teacher in the same school where my elder sister is teaching, took a screenshot of that photo in her mobile phone that time. It was a complete surprise until yesterday when Smt. Ganji gifted my elder sister a pencil sketch of that photo. Life is full of surprises indeed!! I do not deserve to make any comments on the pencil sketch as I am not an expert in painting. Let the viewers judge it. However, this pencil sketch is a treat to our eyes. Words fail to express our feelings. We are thankful for this priceless piece of art. We convey our sincere regards to Smt. Jyothsna Ganji. 

Suman Sinha
26/02/2021

The original photo

The pencil sketch



Irrfan Khan

Shocked to know that Sahabzade Irfan Ali Khan, now known as Irrfan Khan, is no more with us. It was his personal choice to add an extra 'r' in his name. Irrfan Khan, a name synonymous with struggle, persistence and consistency is a phenomenal talent in the field of arts. With no Godfather in Bollywood, he has managed to create a separate place for himself in Bollywood and in addition he made his name in British and American films too. Still he did not typecast him and here lies his versatility. His rejection to a big offer in the 'Interstellar' for 'Lunch Box' in 2013 shows his commitment towards work. Number of awards can never describe a versatile person like Irrfan Khan. Let me share an incidence which shows his recognition in global level. Julia Roberts once stopped outside the Kodak theatre where Oscars were being staged, just to compliment Irrfan Khan on his brilliant performance in the movie 'Slumdog Millionaire (2008)'. Salute Irrfan Khan. Rest in peace.

Suman Sinha
29/04/2020

নাটকীয় সমাপতন (?) এবং নিষ্ঠুর পরিহাস

নাটকীয় সমাপতন (?) এবং নিষ্ঠুর পরিহাস
ম্যালেরিয়া প্রতিষেধকের জন্য ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এর চাহিদা খুব তুঙ্গে এখন। কারণ করোনা মোকাবিলায় এই ওষুধটি আক্রান্ত রোগী ও তাদের চিকিৎসা প্রদানকারী ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ICMRও এই নির্দেশিকা জারি করেছে বেশ কিছুদিন আগেই। এবং তারপরেই ভারত সরকার এই ওষুধটির রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
হঠাৎ করে গোলমাল বাঁধালেন রাজাধিরাজ ট্রাম্প বাবু যিনি এই কিছুদিন আগেই মহাসমারোহে ভারত ভ্রমণ করে গেলেন। সরকার বাহাদুরের বেশ কত টাকা যেনো খরচ হয়েছিলো ওঁনার ভারত ভ্রমণ উপলক্ষে সেটা ভুলে গেছি এখন। সে যাই হোক, হঠাৎ করে উনি হুমকি দিয়ে বসলেন যে ভারত যদি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠানো ওদেশে বন্ধ করে, তাহলে উনি 'retaliate' করবেন মানে পরে দেখে নেবেন। এর পরে আজ সকালে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করে যে করোনা অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা থেকে ভারত 'কেস-টু-কেস' ভিত্তিতে বেশ কিছু দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করবে । আচ্ছা এটা কে কি ড্রামাটিক কোইনসিন্ডেস মানে ঐ নাটকীয় সমাপতন বলা যেতে পারে?
এবারে অন্য আর একটা দিক দেখা যাক। ভারতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদন করে বেঙ্গল কেমিক্যালস যার পোশাকী নাম বেঙ্গল কেমিক্যালস এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ভারতে বিজ্ঞান সাধনার পথিকৃৎ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় 1901 সালের 12ই এপ্রিল কলকাতায় বেঙ্গল কেমিক্যালস প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ভারতবর্ষের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। বেঙ্গল কেমিক্যালস শুধুমাত্র আচার্যের স্বপ্ন ছিলনা, সমাজের প্রতি বিজ্ঞান গবেষণার দায়বদ্ধতাও ছিল। আর ছিল বাণিজ্যভীতু একটি জাতির বদনাম ঘোঁচানোর প্রয়াস। ভারতের রসায়ন বিদ্যার জনক ও তার দেখানো পথের বিজ্ঞান চর্চার সাথে আজকের ভারতে বিজ্ঞান চর্চার হাল ও তার পরিবেশ সম্পর্কে এই অধমের কিছু না বলাই ভালো। আর সেটা লিখতেও বসিনি আজ। আমরা তো বিজ্ঞানমনষ্কই হতে পারিনি, চর্চা তো দূরের কথা। যাক গে, যা বলছিলাম। এই করোনার বাজারে এখন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের দৌলতে বেঙ্গল কেমিক্যালসের আবার ডিমান্ড। এই কিছুদিন আগেও যে কোম্পানি কে বিলগ্নিকরনের জন্য কি সরকারী তৎপরতা!!অসর্মথিত সূত্রে শুনেছিলাম বেঙ্গল কেমিক্যালসের জায়গায় রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রি হবে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলার দরুন এখনও বিলগ্নিকরন আটকে আছে। দশকের পর দশক ধরে বাংলা তথা ভারতের এই ঐতিহ্য সরকারী উদাসীনতার শিকার। মেক ইন ইন্ডিয়া তেও বেঙ্গল কেমিক্যালস অস্পৃশ্য। একটু সরকারি যত্নের ছোঁয়া পেলে আজ হয়তো বেঙ্গল কেমিক্যালসের এই দশা হতো না। Tropical অঞ্চলে সাধারণত যে সব রোগের প্রকোপ বেশি, বেঙ্গল কেমিক্যালস সেসবেরই ওষুধ বানায় মূলত। আচার্যের দূরদৃষ্টি! আজ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে বেঙ্গল কেমিক্যালস ত্রাতার ভূমিকা য়। কিছুদিন আগেই যে সংস্থার কর্মীদের বিলগ্নিকরনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। কি করুন, নির্মম পরিহাস!! এ প্রসঙ্গে বলে রাখি এর আগেও বেঙ্গল কেমিক্যালস প্রথম anti snake venom serum (ASVS) তৈরী করেছিলো ভারতে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা জিতবোই। সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যাঁরা দেশের নীতি নির্ধারক, যাঁরা ক্ষমতাসীন তাঁদের অনুরোধ, এর পরে বেঙ্গল কেমিক্যালস কে ভুলে যাবেন না। বেঙ্গল কেমিক্যালস একটা জাতির, একটা দেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক, অহংকারের প্রতীক।

সুমন সিনহা 
০৭/০৪/২০২০

যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া...

যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া...
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে গোটা বিশ্ব এখন দিশেহারা। করোনার ছোবল থেকে আমাদের দেশও বাদ যায়নি। এক কোটি তিরিশ লাখ জনসংখ্যার একটি দেশে এই মহামারী বা অতিমারী কি রূপ নিতে পারে, সেটা এখন মোটামুটি সবার জানা হয়ে গেছে। সরকার lockdown ঘোষণা করেছে। সরকার কি করতে পারত বা কি কি করেনি এসব আলোচনার বাইরে গিয়ে আসুন এই অসময়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কিছু টুকরো টুকরো চিত্র তুলে ধরি। সাম্প্রতিক অতীতে মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যে ভারতবর্ষের ছবি দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে গেছি, করোনার দৌলতে এক অন্য ভারতের ছবি দেখবার চেষ্টা করি। করোনার বিরুদ্ধে ভারতবাসীর আপ্রাণ ও আপোষহীন লড়াইয়ের কিছু কোলাজ, দেশপ্রেমের কিছু নিদর্শন।
বহু ব্যক্তি এবং সংস্থা এই দুর্দশায় সরকারের বা বলা ভালো দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রচারের আলোর বৃত্তের বাইরে যে অসংখ্য, অগুণিত ভারতবাসী নানারকম ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কথা আজ না হয় একটু ভাবি।
যে সমস্ত ডাক্তার, নার্স, আয়া, সাফাইকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও সহকারী সহ স্বাস্থ্যকর্মীগণ দিনরাত সামনের সারিতে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, কোনো শব্দই বোধহয় তাদের স্বীকৃতি দিতে যথেষ্ঠ নয়। আর যে সব ডাক্তার বা নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীগণ উপযুক্ত PPE বা মাস্ক না পেয়েও অক্লান্ত কাজ করে চলেছেন তাঁরা তো শুধু করোনার সাথেই লড়ছেন না, মৃত্যুর সাথেও লড়ছেন। বিশেষতঃ মহানগরীর হাসপাতাল গুলো বাদ দিয়ে গ্রামীণ বা ব্লক এমনকি জেলা হাসপাতাল গুলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থা একবার ভেবে দেখুন। ভাবার সময় ডাক্তার - রোগী অনুপাত টা একটু স্মরণে রাখবেন। এর সাথে যোগ হয়েছে ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরতে পারা পরিযায়ী শ্রমিক ও তার পরিবারের বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা। তাঁদের এই নিরলস সংগ্রামের চিত্র আমাদের স্মৃতিতে যেনো ধূসর না হয়ে যায়। এরকম নয় যে করোনার জন্য অন্য সব রোগ বা অসুখ থেমে আছে। যেসব ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীগণ জরুরী অপারেশন বা চিকিৎসা করে যাচ্ছেন তাঁদের ভূমিকা কোনো অংশেই খাটো যেনো না করি। টিউবারকুলেসিস আমাদের দেশের একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। করোনার প্রকোপে সেটা একটুও কমে যায়নি কিন্তু। lockdown এর এই আকালেও যারা রক্তের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বা রোগীদের কাছে রক্ত পৌঁছে দিচ্ছেন, তাঁরাও যোদ্ধা। lockdown এ প্রসব আটকে নেই বা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্তের প্রয়োজনও থেমে নেই। ভারতবর্ষে প্রসবোত্তর অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া প্রসূতি মায়েদের সংখ্যা নেহাতই কম নয় কিন্তু। না, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষদের নিয়ে আমাদের এই দেশ নয়। আসুন এবার অন্য কিছু ছবি দেখার চেষ্টা করি।

অসংখ্য বয়স্ক সহনাগরিক আজ ঘরবন্দী। তাঁরা একা এবং বাইরে বেরোনো তাঁদের পক্ষে কার্যত সম্ভব নয়। এই সময়ে যে বা যাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধপত্তর পৌঁছে দিচ্ছেন, তাঁরাও কোভিডযোদ্ধা। গবাদি পশুদের নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন যাঁরা, অভুক্ত ফুটবাসীদের মুখে যাঁরা অন্ন তুলে দিচ্ছেন, পাড়ার ছোটো অথবা মাঝারি মুদিখানা দোকানগুলো খোলা রেখে যাঁরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর যোগান চালু রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন, ওষুধের দোকানগুলো খোলা রেখে যাঁরা আমাদের দরকারী ওষুধপত্তর সরবরাহ করে যাচ্ছেন, এঁরা সকলেই এই লড়াইয়ে সামিল। lockdown এ মহিলাদের ঋতুচক্র থেমে নেই। যে সব মহিলারা ঘরে ঘরে স্যানিটারী ন্যাপকিন পৌঁছে দিয়ে অসংখ্য মহিলাদের সাহায্য করে চলেছেন, তাঁরাও তো কোভিডযোদ্ধা। যে সাফাইকর্মীরা রাস্তাঘাট, রেল স্টেশন, এয়ারপোর্ট আমাদের জন্য প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করে চলেছেন, যাঁরা খাদ্য গণপরিবন্টন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত থেকে লড়াই করছেন তাঁরাও এই যুদ্ধে সামিল। জল জঙ্গল পেরিয়ে যাঁরা আদিবাসীদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, যে সব পুলিশকর্মী দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে মানবিকতার নজির রেখে চলেছে এই পরিস্থিতিতে, তাঁরা সবাই এই যুদ্ধের সাথী।
এরকম আরো অনেক অনেক ছবি আছে আমাদের চারপাশে। আর এই সব ছবির চরিত্রগুলো আমার, আপনার সবার কমবেশি পরিচিত বা অপরিচিত। বিশ্বাস করুন এদের নিয়েই আমাদের এই দেশ ভারতবর্ষ, এরা সবাই ভারতীয়। এই বিপর্যয়ে এদের লড়াই আমাদেরই লড়াই, লড়াইয়ের ঘামে ভেজা এদের জামা আমাদেরই জামা। সিয়াচেনের - 35° C তাপমাত্রার গল্প বা দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো'র চিৎকার চেঁচামেচি এঁদের লড়াই কে থামাতে পারে না।
হঠাৎ এই অপরিকল্পিত lockdown এর প্রভাব এসে পড়েছে অসংঘটিত ক্ষেত্রের অগুন্তি পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ওপর। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বোধহয় এরাই। বিভিন্ন জাতীয় বা রাজ্য সড়ক বা অন্যান্য রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে যাঁরা এদের হাতে বিস্কুট, জল, মুড়ি, ফলমূল ও অন্যান্য খাবারদাবার তুলে দিচ্ছে, তাঁদের এই আন্তরিক প্রয়াস আমাদের দেশেরই একটা চিত্র। ভারতেরই কোনো জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডে যখন কোনো জনৈক রামবাবু কে তারই কোনো সহনাগরিক ফিরোজ বসিয়ে খাওয়ায় বা কোনো হিন্দু প্রৌঢ়ের সৎকারে যখন একদল মুসলিম কাঁধে করে তাঁকে 'রাম নাম সত্য হ্যায়' বলে শ্মশানে নিয়ে যায়, তখন চিরাচরিত ভারতের একটা অখণ্ড ছবিই ধরা পড়ে। বা ধরুন ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা যে শ্রমিক রা নিজেদের পরিবার ও গ্রাম কে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে গাছের ওপর নিজেদের কে কোয়ারান্টাইন করে রাখে, তাদের কে কি বলবেন? পরিবার ও দেশ কে ভালো না বাসলে, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলে এরকম করা যায় কি? অন্ততঃ যে সব আহাম্মক বা তাদের বাড়ির লোক বিদেশ থেকে ফিরে শপিং মল, অনুষ্ঠান বাড়ি, মন্দির, মসজিদ, বাজার ঘুরে বেরিয়ে যে সীমাহীন কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের থেকে এই প্রান্তিক, চাহিদাহীন মানুষগুলো অনেক বেশী সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছে। রাষ্ট্র দায়হীন হলেও এরা কিন্তু দায় এড়িয়ে যায় নি। বা ধরুন যে দিনমজুর টি তার স্ত্রীর পা ভেঙে যাওয়াতে কাঁধে করে স্ত্রী কে নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তাঁর এই হিসেবহীন প্রেম ইতিহাসের পাতায় কোনোদিন স্থান পাবে না। কিন্তু তিনিও কি কোভিডযোদ্ধা নন? অথবা হাজারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও যে উজবুকের দল কে মসজিদে নামাজ পড়া থেকে বিরত রাখতে যে সব মৌলবী লাঠি হাতে মসজিদ পাহাড়া দেয়, সেও তো ভারতবর্ষেরই একটা ছবি।
আপনার মতোই আমিও আশাবাদী। খুব তাড়াতাড়ি এই লড়াইয়ে আমরা জয়ী হব, হবই। শুধু অনুরোধ, তারপর যেনো নাম-না-জানা আমাদের এই সহনাগরিক সহযোদ্ধারা আমার, আপনার বিস্মৃতির আড়ালে না চলে যায়।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। জয় হিন্দ।

সুমন সিনহা 
৩০/০৩/২০২০

শঙ্কর মুদি

কয়েক মাস আগে একটা বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম 'শঙ্কর মুদি'। ছিমছাম বাহুল্য বর্জিত চমকহীন একটা সিনেমা যার কেন্দ্রে একজন মুদিখানা দোকানের মালিক। আমাদের সবার পরিচিত পাড়ার মুদিখানা দোকান যেমন হয় তেমনই একটি দোকান ও সেই দোকান নিয়ে তার মালিকের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও হতাশা সিনেমাটির মূল বিষয়। ভূবনীকরনের হাওয়া যেদিন থেকে আমাদের জানালা দিয়ে ঢুকতে শুরু করেছে, আমাদের চাহিদা ও মূল্যবোধ সেদিন থেকেই পাল্টাতে শুরু করেছে। সেই হাওয়ার বেগ যতো বেশী হয়েছে, আর্থ সামাজিক পরিবর্তন তত বেশি হয়েছে এবং এই সব পাড়ার মুদিখানা দোকানগুলোর প্রাসঙ্গিকতা তত কমতে শুরু করেছিলো। প্রলোভনের হাতছানি থেকে আমরা নিজেদেরকে সরিয়ে রাখতে পারিনি। আলোর বন্যা, ঠান্ডা অনুভূতি, বিভিন্ন রকম অফার, স্পেস, ইচ্ছে খুশি ভেতরে ঘুরে বেড়াবার স্বাধীনতা, নানা রকম নাম-না-জানা ব্র্যান্ড এতসব আমাদের পাড়ার মুদিখানা দোকানে তো আর সম্ভব নয়। তাই হঠাত্ করে কিছু দরকার পড়লে মানে বিপদে পড়লে পাড়ার দোকান ঠিক আছে, না হলে কি আর দরকার। খরিদ্দারের চাহিদা মতো দোকানগুলো কিছু কিছু জিনিসপত্তর রাখতে শুরু করলেও আমাদের পছন্দ হলো না, কারণ মন তো পড়ে আছে অন্য কোনো আকর্ষণের দিকে, যেখানে কেনাকাটা আমাদের মূল প্রয়োজনীয়তা (basic need) নয় । ফুড কোর্ট এ খাওয়া, নিজেকে নির্লজ্জ শো-অফ করার নেশায় নিজস্বী(selfie) ও ফটো তুলে সোশাল মিডিয়াতে দেওয়ার তাড়াহুড়ো, উইন্ডো শপিং ইত্যাদির মাঝে আমরা ভুলতে বসেছিলাম পাড়ার মুদির দোকানগুলো টিকিয়ে রাখতে শঙ্কর মুদিদের সংগ্রাম ও ব্যাথাবেদনা। আজ এই অসময়ে যখন আমরা সবাই ঘরবন্দী, করোনার মৃত্যুভয়ে যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ (!!), তখন রোজকার মুদিখানা বা সব্জি বাজার আমাদের কাছে মূল প্রয়োজনীয়তা বা মৌলিক চাহিদা। আর এখানেই শঙ্কর মুদিদের প্রাসঙ্গিকতা। আমাদের অবহেলা বা উন্নাসিকতা দেখে দেখে যাদের গা-সওয়া হয়ে গেছিল, আজ সেইসব শঙ্কর মুদিরাই আমাদের অনুরোধে হয় বাড়ি এসে মালপত্র দিয়ে যাচ্ছে নয় দোকান খোলা রেখে আমাদের যোগান দিচ্ছে। এবং দোকান চালু রাখতে তাদেরকে বাজার থেকে মালপত্র আনতে যেতে হচ্ছে, করোনার মৃত্যুভয় কে তোয়াক্কা না করেই।
হয়তো শঙ্কর মুদিদের প্রয়োজনীয়তা বা প্রাসঙ্গিকতা কখনো ফুরায় না, আমাদের সুবিধেবাদী বিবেকগুলো শুধু সময়ের সাথে সাথে অভিযোজিত হয়ে যায়।

সুমন সিনহা 
২৮/০৩/২০২০
Various contemporary incidents, taking place around us, may not affect us directly, although these affect indirectly few or many of us. Despite limitations and unfavourable situations, still there are few who continues to pen down the correct information and truth ignoring the mockery, ridicule and bad comments made by some people. I am thankful to Prof. Ananda Dasgupta, IISER Kolkata for drawing my attention to a brilliant piece on 'gravity' written by Prof. Amol Dighe, TIFR Mumbai. Prof. Dighe explains gravity very nicely and beautifully in the language of common people, a topic which we started studying from our high school days and clarifies the statement 'we knew about gravity before Newton.' The original article is appended below. Please enjoy the 'easy parts, the not so easy parts and the extremely difficult parts about understanding 'gravity'.'
----------------------------------------------------------------
This post has its origin in the recent statement by the Indian MHRD minister (this ministry controls and provides funds to most higher education institutions in India) that gravity was mentioned much before Newton in ancient Indian astronomical texts.
The first three are observations, the next three theoretical conjectures, while the last one involves some deeper insight. Of course all the above was known before Newton. It is quite likely that most of 1-6 was known to (and done by) ancient Indian astronomers (though I am not an expert in history). I am not sure about 7.
Now while politicians have their ways of making statements that walk the thin line between truth and misinformation (and irking us short-trigger scientists), this is perhaps an opportunity to bring out some important points about how science has progressed, that may be appreciated by everyone.
There are many distinct steps in the understanding of gravity. (I may be missing many) :

1. Noticing that all bodies fall to earth
3. Making measurements and calculations of motions of astronomical bodies
2. Making measurements and calculations of motions of falling bodies
5. Getting the idea that there is some force that makes the astronomical bodies move.
4. Getting the idea that earth pulls the falling bodies to itself
6. Getting the idea that earth may be going around the Sun.
But Newton's work involves insights far beyond these.
7. Realizing that heliocentric system gives simple rules for planetary motion (Kepler's laws).
8. The idea that the same law that governs bodies falling to ground on earth governs planets going around the sun.
(I have restricted myself to pre-Einstein understanding, so no General Theory of Relativity here, which of course improved our understanding of gravity by one more leap.)
9. Showing by astronomical calculations that this law is inverse square law (1/r^2).
10. Realization that the gravitational force of sun and planets acts as if the mass of each body is at its centre.

When one says "Newton discovered gravity", one is normally referring to 8 and 9 above. (Point 10 is rather underappreciated even in the scientific community, however it induced Newton to write his famous treatise "Principia Mathematica ...". See the commentary by S. Chandrasekhar. )

Saying someone "mentioned gravity" earlier is trivializing the meaning of the phrase "Newton discovered gravity", and indeed, of what the discovery means.
19.08.2019

Random Thoughts - 13

Spring - The other side of the coin Nature heralds the advent of spring, a time which symbolizes freshness and renewal and more than this, i...