দিনটা ছিল পনেরোই মার্চ। কে.সি স্যারের বাড়ির গলি যেখানে বড় রাস্তায় এসে মিশেছে, ঠিক সেই মুখটায় দাঁড়িয়েছিল সুপ্রিয়। নতুন সিগারেট ধরা সুপ্রিয় মোড়ের দোকান টা থেকে একটা সিগারেট কিনে অনভ্যস্ত ভঙ্গিতে একটু বেশী সাবধানী হয়েই সিগারেট টা টানছিল। চেনাজানা কেউ যেন দেখে না ফেলে। সুপ্রিয়র তখন বি.এস.সি সেকেন্ড ইয়ার। সময় কাটানোর বেশ ভালো একটা উপায় সিগারেট খাওয়া, তবুও সময় যেন কাটতেই চাইছিল না সুপ্রিয়র। অনেক কিছু ভাবার চেষ্টা করছিলো সুপ্রিয়, বোঝারও। কিন্তু এলোমেলো হাওয়ার মতোই ভাবনাগুলোও বড় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি অবশ্য। তাই চিন্তা ভাবনার অবকাশও স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। সিগারেট টা শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মুখ ঘুরিয়ে দেখে অমলিনা আসছে। সুপ্রিয় কে দেখে যে এতটা অবাক হবে সেটা সুপ্রিয়ও অনুমান করতে পারেনি। তবে মুখে বহু পরিচিত হাসি ফিরিয়ে আনতেও বিলম্ব করেনি অমলিনা। এটা বুঝতেও অমলিনার কোনো ভুল হয়নি যে তার জন্যই সুপ্রিয়র দাঁড়িয়ে থাকা। বুদ্ধিমান, সপ্রতিভ সুপ্রিয় সেটা লুকোবার চেষ্টাও করেনি।
অমলিনা মুখে হাসি নিয়েই জানতে চেয়েছিলো বসন্তের শুরুতেই সকালবেলায় রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ টি। জানতে চাওয়ার মধ্যে হয়তো একটু সূক্ষ্ম ব্যাঙ্গও ছিল। সুপ্রিয় যে একটু অপ্রতিভ হয়ে পড়েনি এই প্রশ্ন শুনে এমনও নয়। তবে উত্তরও দেয় নি। কিছু প্রশ্নের উত্তর হয়না। বা যে উত্তরে গোপনীয়তা রাখার দায় সুপ্রিয়র নেই, সেটা উহ্য থাকাই বরং ভালো। বেশ কিছুটা রাস্তা পাশাপাশি হাঁটার পর যখন অমলিনা বলেছিলো অরগ্যানিক কেমিস্ট্রির কয়েকটা রিয়্যাকশন মেকানিজম বুঝিয়ে দেওয়া যাবে কিনা, তখন সুপ্রিয়র হুঁশ ফিরেছিল। পাল্টা জানতে চেয়েছিলো সুপ্রিয় রিয়্যাকশন মেকানিজম বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কেউ বসন্তের শুরুতে সকাল বেলা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিনা। অমলিনাও উত্তর টি উহ্য রেখেছিলো তবে হাসি চাপা দেওয়ার চেষ্টা টি গোপন করতে পারেনি। আরো কিছুক্ষণ চুপচাপ পাশাপাশি হাঁটার পর বলেছিলো " এবার যেতে হবে রে। আর হ্যাঁ, কেমিস্ট্রি টা কিন্তু একদিন বুঝিয়ে দিস...শোন্ কেরিয়ার টা নিয়ে একটু ভাব, ফিউচার টা সিকিউরড্ হবে। কলেজে দেখা হবে.. বাইইই...।"
শুধু কি কেমিস্ট্রিই প্রিয় ছিল সুপ্রিয়র? বেহিসেবী সুপ্রিয় বুঝতে পারেনা ভবিষ্যৎ জিনিস টাই যখন অনিশ্চিত, তাকে সুরক্ষিত করার নিশ্চয়তা কিভাবে দেওয়া যায়!
বছর কুড়ি পর। সুপ্রিয় তথাকথিত অর্থে প্রতিষ্ঠিত। সুরক্ষিত চাকরি। না, সুপ্রিয় কেমিস্ট্রি পড়েনি বা বলা ভালো প্রিয় কেমিস্ট্রি তার কেরিয়ার হয়নি। সুপ্রিয়'র জগৎটা অনেকটা সীমাবদ্ধ, কিছুটা বিচ্ছিন্নও বোধহয়। কয়েকদিনের জন্য নিজের প্রিয় শহরে সুপ্রিয়। স্মৃতির সাথে এনকাউন্টার! কে.সি স্যারের বাড়ির গলির মোড়ের দোকানটায় সিগারেট কিনতে গিয়ে দেখে সেটি বেশ বড় একটা স্টেশনারী দোকান হয়ে গেছে। এটা কি রাইসিং অফ্ দ্য প্রলেতারিয়েত... সত্যিই কি তাই? একটা সিগারেট কিনে ধরালো সুপ্রিয়। কিছুটা আনমোনা। বড় রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো সুপ্রিয়, কোনো প্রিয় জিনিসই সুপ্রিয়'র জীবনে স্থায়ী হয়নি, প্রিয়রা কখনো ধরা দেয়নি সুপ্রিয়'র কাছে। সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ বোধহয় প্রিয়দের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়... কাঙ্খিত কেরিয়ারও কি দেয়? বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া গুলো মিলিয়ে যেতে লাগলো।
সুমন সিনহা
১১/০৪/২০২১
2 comments:
Sob O-PRIO hoi PRIO der kache... O-KARONE othoba hoito KARONE....
Post a Comment